top of page

সিগারেটের ধোঁয়া


প্রমিলা দেবী তখন আদরের নাতনি তানিয়ার চুল আঁচড়াতে ব্যস্ত, এদিকে তানিয়া কিছুটা বিরক্তি সুরে উফ ঠামি ছাড়ো লাগছে তো।


প্রমিলা দেবী কোনো কিছু না শোনার মতো ভান করে,আপন কাজে ব্যস্ত। তানিয়া আবারও বিরক্তি সুরে বলে ওঠে দেখো ঠামি শেষবারের মতো বলছি, চিরুনি চালানো বন্ধ করো আমার একটুও ভালো লাগছেনা। এদিকে প্রমীলা দেবীও কম যায়না, তিনিও মুখ খানি কাচুমাচু করে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বললেন..ছোটো ছোটো এসব কি ধরনের চুল রাখিস তানিয়া? মেয়ে মানুষ হয়েছিস একটু বড়ো চুল রাখতে পারিসনা? ওই তো ছেলেদের মতো পোশাকের ধরন। তানিয়া এবার ভীষন রকম রেগে যায় এবং রাগে না অভিমানে ঠিক জানা নেই, এক দৌঁড়ে নিজের রুমে দরজাটা বন্ধ করে দেয়। প্রমিলা দেবী নাতনি কে ভীষন ভালোবাসতেন বলেই হয়তো এত গুলো কথা বলে ফেলেছিলো, কিন্তু কথা গুলো তানিয়ার মনের ঠিক কোন জায়গাটায় লেগেছিলো ? এরকম একটা ছোটখাটো প্রশ্ন থেকেই যায়। তানিয়া তখন নিজের বন্ধ ঘরের ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে মিনিট পাঁচেক আয়নার মধ্যে নিজেকে চেনার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও তানিয়া ব্যর্থ হলো, তানিয়া কিছুতেই নিজের চেহারার সাথে নিজের মনের মিল খুঁজে পায়না। তানিয়ার সব সময়ের জন্য মনে হতে থাকে, আমি যা আসলে আমি তা নই..এই সত্যিটা তানিয়া কাউকে বোঝাতে পারেনি শুধু নিজের মধ্যেই লুকিয়ে রেখেছে। তানিয়া ছেলেবেলায় যখন বাবা মায়ের সাথে মার্কেটে যেত, তখন মা বাবা হাজারো সুন্দর সুন্দর ফ্রক দেখালেও ভালোলাগাটা সেই শার্ট প্যান্ট এই সীমাবদ্ধ। নিছকই সেটা ছেলেবেলা ছিলো তাই তানিয়ার বাবা মা একমাত্র মেয়ের এই সামান্য ইচ্ছেটা দু একবার পূরণ করেছিলো। বেশ আনন্দে ভরপুর ছিলো তানিয়ার ছেলেবেলাটা,বড়ো হওয়ার সাথে সাথেই ক্রমশঃ বিধিনিষেধের বেড়াজালে বাধা পড়তে থাকে তানিয়া। পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের চোখ রাঙানির ভয়ে নিজের সামান্যতম ইচ্ছে গুলোকে প্রতি রাতে গলা টিপে মেরে ফেলার কঠিন চেষ্টায় মগ্ন থাকে তানিয়া। তবে এভাবে আর কতদিন ? এই উত্তর তানিয়ার আজও অজানা। ঘন্টা দুয়েক তানিয়ার ঘরের দরজা বন্ধ থাকায়, তানিয়ার মা চন্দ্রা ভীষন ভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে।


------------

চন্দ্রা তানিয়াকে বেশ কয়েকবার ডাকাডাকি করে দরজা খুলে বেরিয়ে আসার জন্য, কিন্তু তানিয়া কিছুতেই দরজা খুলতে চায়না। তানিয়ার ঘরের ভেতর থেকে কান্না জড়ানো কন্ঠে ভেষে আসে মা আমাকে তোমরা একটু একা থাকতে দাও। চন্দ্রা তানিয়ার ব্যবহারে ভীষন ভাবে অবাক হয় আর ভাবতে থাকে, মেয়ের আমার হলো কী? কথায় কথায় রেগে যায়, কারোর সাথে ঠিক মতো কথাটাও বলতে চায়না। এখন আবার ঘরের মধ্যে দরজা আটকে বসে আছে, চন্দ্রা মনে মনে স্থির করে নেয়, নাহ অনেক হয়েছে তানিয়া এখন যতেষ্ট বড়ো হয়েছে ওর একটা গতি করতেই হবে। বেলা তখন দুপর দুটো বেজে পনেরো মিনিট, তানিয়া নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে খাবার টেবিলের সামনে বসলো। তানিয়ার মুখ তখন গম্ভীর, চোখ দুটি যেন রক্ত বর্ণ, মুখ মণ্ডল জুড়ে একধরনের গোলাপী আভা।


চন্দ্রা খানিকটা মুচকি হেসে, তানিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। এবং কিছুটা অবাক সুরে তানিয়াকে প্রশ্ন করতে থাকে , আচ্ছা তানিয়া তোর কি হয়েছে ? আজকাল একটুতেই রেগে যাস। তানিয়া নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল, আসলে মা তেমন কিছু নয়, সামনে পরীক্ষা তাই একটু টেনশনে আছি। চন্দ্রা নিজে একজন অভিনেত্রী হয়েও মেয়ের অভিনয়ের কাছে মনে মনে পরাজিত স্বীকার করতেই হলো। চন্দ্রা মুচকি হেসে বলল, তা বেশ। অন্য কোনো ব্যাপার থাকলে মায়ের কাছে গোপন করিসনা, তানিয়া মুচকি হেসে মাথা নাড়লো এবং মায়ের প্রশ্নে সম্মতি দিলো। এভাবেই কাটতে থাকে বেশ কিছুদিন। হটাৎ একদিন সন্ধ্যেবেলা তানিয়া যখন পড়তে ব্যস্ত, চন্দ্রা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলল, মা তুই কী কোনো ছেলেকে ভালোবাসিস? তানিয়া ভীষন ভাবে অবাক হয়ে যায় এবং কিছুক্ষণ হাসিতে গড়িয়ে পড়লো মায়ের কোলে। চন্দ্রা ভীষন অবাক হয়, তানিয়ার হলো কী ? এমন প্রশ্নে সব মেয়েদেরই হয় ভয় নয়তো লজ্জা দুটোর মধ্যে একটা হয় এমনকি কারোর কারোর আবার ভয় লজ্জা দুটোই হয়। কিন্তু একি.. মেয়ে আমার হেসেই গড়াগড়ি, চন্দ্রা রেগে গিয়ে তানিয়াকে বলতে থাকে, তানিয়া আমি তোমাকে হাসির মতো কোনো প্রশ্ন করিনি। সুতরাং আমি তোমাকে যে প্রশ্নটি করলাম, ভদ্র মতো তার উত্তর দাও। তানিয়া কোনোরকমে হাসি আটকে বলল, আমি ভালোবাসবো কোনো ছেলেকে? চন্দ্রা বলে উঠলো কেনো নয়, এটাই তো স্বাভাবিক।


--------------


এই বয়সে একটা মেয়ের অপর একটি ছেলেকে ভালোলাগতেই পারে এবং সেই ভালোলাগা থেকেই একটা সময় দুজনের মধ্যে ভালোবাসার পরিণতি ঘটবে আর এটাই তো স্বাভাবিক। তানিয়া কিছুটা বিরক্তি সুরে বলে উঠলো, আচ্ছা মা সব সময় এমনটাই কেনো হতে হবে? বলতে পারো? চন্দ্রা মেয়ের কথার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারলনা। চন্দ্রা তানিয়াকে বলল, দেখ মা আমি অত জটিলতা একদম বুঝিনা। তোর বাবা তোর জন্য ছেলে দেখছে, ভালো ছেলে পেলে বিয়ে দিয়ে দেবে স্থির করেছে। যেহেতু আমি তোর মা, সেহেতু তোর ইচ্ছা আনিচ্ছা ভালো মন্দ সমস্তটা দেখার দায়িত্ব আমার। আমি জানি এই বয়সটায় প্রত্যেকেরই জন্যই একটা নিজস্ব ভালোলাগার অনুভূতি জাগে, তাছাড়া আমি বেশ কয়েকদিন ধরেই লক্ষ করছি তুই কেমন অন্যমনস্ক হয়ে থাকিস। তাই বলছি তুই যদি কাউকে ভালোবেসে থাকিস, আমায় খুলে বল, আমি না হয় তোর বাবার সাথে কথা বলবো। তানিয়া নিশ্চুপ হয়ে রয়, চন্দ্রা খানিক অবাক হয় এবং মেয়েকে প্রশ্ন করে তানিয়া মা আমার কি হয়েছে বল আমায়। তানিয়া মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে, আমার কোনো ভালোলাগা নেই মা। আমাকে ভালোবাসতে নেই, আমাকে আমার সবটা লুকিয়ে রাখতে হয়। এখন আর চন্দ্রার বুঝতে বাকি রইলোনা, তার মেয়ে এতদিন ধরে একরকম ডিপ্রেশনে ভুগছে। চন্দ্রা মেয়েকে অনেকটা কোমল হয়ে বলল, তানিয়া এখন এই মহুর্তে আমি শুধু তোর মা নই বন্ধু ও বটে। মা কে বন্ধু ভেবে, তোর সবটা বলতে পারিস। মায়ের কথায় তানিয়া অনেকটা ভরসা পায়, তানিয়া এরকমই একজন বন্ধু চেয়েছিলো যার কাছে নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখা যন্ত্রণা গুলি খুব সহজেই ভাগ করে নেওয়া যায়। তানিয়া নির্ভয়ে বলতে থাকে, মা তুমি এত দিন আমায় আর পাঁচটা মেয়ের মতো মেয়ে ভেবে আসছো ঠিকই কিন্তু এটাই সত্যি নয়। চন্দ্রা মেয়ের মুখে এ ধরনের কথা শুনে, ভীষণ ভাবে অবাক ও বিরক্তি বোধ করে। তাহলে সত্যিটা কি শুনি, চন্দ্রার অজান্তেই কথাটা তানিয়ার উদ্যেশ্যে বের হয়ে এলো। তানিয়াও পুনরায় বলতে শুরু করলো, সত্যিটা তো এই যে..আমি শারীরিক ভাবে মেয়ে হলেও মনের দিক থেকে আমি একজন পুরুষ। আমার ইচ্ছে ভালো লাগা আর পাঁচটা মেয়েদের থেকে একদম আলাদা, অন্যদের মনের মতো করে নিজেকে গড়ে তুলতে তুলতে আমি তো ভালো থাকতেই ভুলে গেছি। এই কথা গুলি শোনা মাত্র চন্দ্রার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো, এবং সাথে সাথেই তানিয়ার গালে সপাটে চড় বসিয়ে দিলো। তারপরই অজানা এক আতঙ্কে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলল চুপ চুপ তানিয়া চুপ, একথা আর কখনও কাউকে বলবিনা বুঝলি। আমি তোকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো, তারপর দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। এসব আজেবাজে ভাবনা আর মাথাতেও আনবিনা বুঝলি, তোর বাবা আর ঠামী যদি জানতে পারে কি হবে বুঝতে পারছিস। তানিয়ার দুচোখ বেয়ে শ্রাবন ধারায় নোনা জল বইতে লাগলো, অসহায়ের মতো তানিয়া চন্দ্রার দিকে চেয়ে...বন্ধু হওয়ার প্রতিশ্রতি দিয়েও মা, বন্ধু কি আর হতে পারলে? তুমি জানো আমি ভুল নই তবুও, সমাজের চোখ রাঙানির ভয়ে ভীত হয়ে তুমিও শেষে আমায় চুপ করিয়ে দিলে।


------------


চন্দ্রা নিজেকে কিছুতেই স্বাভাবিক রাখতে পারছিলোনা, সন্তানের কাছে আজ সত্যিই নিজেকে কেমন যেন অপরাধী অপরাধী অনুভব হচ্ছিলো। শুধুমাত্র কে কি ভাববে এটা ভেবেই সন্তানের যন্ত্রণাটা বোঝার আগেই তাকে কড়া শাষনের বাঁধনে বাঁধলাম, এতে তো নিজেই নিজের সন্তানের জীবনটা এতটা জটিল করে দিলাম । এসবই ভাবতে থাকে চন্দ্রা, মনের মধ্যে একের পর এক জিগ্গাসা বাসা বাঁধতে শুরু করে। যার উত্তর একমাত্র তানিয়ার কাছে, চন্দ্রা কিছুটা স্বভাবিক হয়ে তানিয়ার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল - আচ্ছা তানিয়া তোর ঠিক কবে থেকে এরকম মনে হলো, তুই আর পাঁচটা মেয়েদের থেকে অন্যরকম। এ সমস্তটাই তোর মনের ভুলও তো হতে পারে, তানিয়া মায়ের হাতটি ধরে বলল..আমিও প্রথমটায় তাই ভেবেছিলাম, কিন্তু আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম আমিই ঠিক।



শুরুটা হয়েছিলো, যখন আমি ক্লাস সেভেন। তখন সদ্য ফাইভে ভর্তি হওয়া এক মিষ্টি মেয়ে, যাকে বহুবার বোন ভাবতে গিয়েও কোথাও একটা আটকে গেছিলাম। ওকে দেখার জন্য কেমন যেন পাগল পাগল লাগতো, ওকে দেখার জন্য ছুটে যেতাম ওর ক্লাস রুমে। ওকে দেখার মাঝে আমার মধ্যে, একরকম ভালোলাগা জন্মে গিয়েছিলো। এভাবেই কেটে যায় দুবছর, এই দুবছরের মধ্যে ও আমার খুব ভালো বন্ধু। ওর নাম ছিলো তিথি, তিথি আমায় খুব ভালবাসতো আর আমিও তিথিকে খুব ভালোবাসতাম। ও তখন ক্লাস নাইন আর আমি ইলেভেন, সেসময় তিথিকে রাকেশ নামে একটি ছেলে প্রপোজ করে..আর এই ব্যাপারটা তিথি বারবার প্রশ্রয় দিচ্ছিল। আমি ভীষণ ভেবে রেগে যাই, সাত পাঁচ কিছু না ভেবেই তিথির গালে সপাটে একটা চড় মেরে দিই। এবং বলি, এখন তোমার পড়াশোনার বয়স আর এসব কি চলছে..ও খুব কেঁদেছিলো। সেদিন আড়ালে, আমিও খুব কেঁদেছিলাম। এরপর একদিন ওকে একটি চিরকুট দিয়ে আমার ভালোবাসা প্রকাশ করলাম, তিথি বুঝেই হোক বা না বুঝেই হোক চিরকুটটা তিথি তার সমস্ত বন্ধুদের মাঝে প্রকাশ করলো। এখানেই শেষ নয়, আমায় নিয়ে বন্ধুদের সাথে হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠলো। সেদিন কোনো রকম মন্তব্য করতে পারিনি, শুধু নীরবে চোখের জল ফেলেছি। সব ভুলে পড়াশোনায় মন দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ওরা সব সময় আমায় যেন কেমন দৃষ্টিতে দেখতো। কেউ কেউ তো সরাসরি মন্তব্য ছুড়েছে, হিজড়ে কোথাকার। আমার সহপাঠি দিপা বলেই ফেলেছিলো, হ্যাঁ রে তানিয়া তোর পিরিয়ড হয় তো? আমার চারিপাশে যারা ছিলো সবাই হো হো হো করে হাসিতে লুটিয়ে পড়েছিলো। সেদিনও কোনো প্রতিবাদ করতে পারিনি, তার কারণ সেদিন শুধু আমি একা ঠিক ছিলাম। আমি জানতাম সবার ভুলের মধ্যে , আমার ঠিকটা চাপা পড়ে যাবে। এরপর শুরু হয়, আমার কলেজ জীবন। সেখানে খুঁজে পেলাম আমার ভালোলাগার মতো এক বন্ধু, যে সব সময় আমার ভালোলাগা খারাপলাগার মহুর্ত গুলির সঙ্গী হয়েছে সব সময়ের জন্য।


মনের অজান্তেই কখন জানি ওকে ভালোবেসে ফেললাম, এরপর একদিন সকলের চোখের আড়ালে আমাদের মধ্যে বৈবাহিক ও শারীরিক সম্পর্ক তৈরী হয়। আমাদের দুজনের পৃথিবীতে আমরা তখন, ভীষণ ভাবে হ্যাপি ছিলাম। এভাবেই বেশ কিছুদিন যাবার পর, হটাৎ একদিন আমার ভালোবাসার মানুষের মনে হতে থাকে..এ সম্পর্ক আর বেশিদিন চলতে পারেনা। আমি যেন আবার নতুন করে সব শুরু করি, ওকে যেন ভুলে যাই। সেদিন বুঝলাম এ পৃথিবীতে আমার ভালোবাসার অধিকার নেই, কারণ আমার ভালোবাসা বোঝার মতো কেউ নেই এই পৃথিবীতে। তাই সব কিছু ভুলে পড়াশোনায় মন দিলাম, কিন্তু এত চেষ্টা করেও কিছুতেই ভুলতে পারছিলাম না..পুরোনো দিনের সেই পুরোনো কথা। মনের মধ্যে শুধু একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে,পৃথিবীতে ভালোবেসে সবাই কত সুখি। আমি কেনো ওদের মতো সুখি হতে পারছিনা, একদিন আমার ব্রেস্টফ্রেন্ড আমায় কম্পিউটারে কিসব বের করে দেখালো এবং বোঝালো এটা স্বাভাবিক। এই পৃথিবীতে এমন কিছু সম্পর্ক আছে, যা অনেকের কাছেই অস্বাভাবিক মনে হলেও ওদের কাছে স্বাভাবিক। সেদিনই নিজেকে চিনলাম, আসলে আমি কে? আমি একজন সমকামী। সেদিন থেকে এই সত্যটা সবার থেকে আড়াল করে, নিজের মধ্যে বয়ে বেড়িয়েছি। জানি এই সত্যিটা কেউ স্বীকার করে নেবেনা, তবু সত্যিটা তো সত্যি। ব্যস এইটুকই বলতে পেরেছে তানিয়া, চন্দ্রার দুচোখ জলে ভরে গেলো। মেয়েকে বুকে টেনে নেয় এবং কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো, এতটা কষ্ট নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখে ছিলি। একবারের জন্যেও বুঝতে দিসনি আমায়, কিন্তু কেনো তানিয়া কেনো? তানিয়া মায়ের কোলে মাথা রেখে কান্না মেশানো কন্ঠে বলল, আমি যে তোমাদের মান সন্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারবোনা। আমি জানি সমাজ যেদিন জানতে পারবে তোমার তানিয়া সমকামী সেদিন তোমাদের ওপর যে ঝড় উঠবে, সেই অভিশপ্ত ঝড় আমি কোনোদিন উঠতে দেবোনা মা। শুধু একটাই অনুরোধ, আমাকে আমার মতো থাকতে দাও। জোর করে কারোর কাথে চাপিয়ে দিওনা মা, এতে আমিও সুখি হতে পারবোনা সেও পারবেনা। চন্দ্রা মেয়ের এই আন্তত্যাগকে সন্মান না জানিয়ে পারলোনা, তানিয়া সত্যিই আজ তুই অনেক বড়ো হয়ে গেছিস। এই ঘটনার অনেকগুলো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও চন্দ্রা অনেকবার চেষ্টা করেছে, মেয়েকে অন্যের হাতে তুলে দেবার কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে। তানিয়া এখন হাটচ গ্রুপ অফ কোম্পানির মালিক, সে এখন সকলের মুখে হাসি ফোটায়। কিন্তু রাতের গভীরতায় সঙ্গী শুধু, নোনা জলে ভেজা বালিশ। একদিন যে ওষ্ঠ হতে বাহির হতো, ভালোবাসার উষ্ণ ছোঁয়া। আজ সেই ওষ্ঠ হতে নির্গত হয়, সিগারেটের ধোঁয়া। .



2 comments

Recent Posts

See All
Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

lgbt-bangladesh.png
bottom of page