top of page

Dr. Subrahmanyan Chandrasekhar

আপনি যদি underrated scientists of all time লিখে গুগল করেন তাহলে ২য় নাম যেটা পাবেন তা হল Dr. Subrahmanyan Chandrasekhar, ভারত উপমহাদেশ থেকে যে ৩জন (দুইজন ভারতীয় ও একজন পাকিস্তানের নাগরিক) পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী তার মধ্যে তিনি অন্যতম। যদিও নোবেল পুরষ্কার ঘোষনার সময় তিনি আমেরিকান নাগরিকত্ব পেয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু জন্মসূত্রে তাঁকে আমরা ভারতীয় নোবেল বিজয়ী হিসেবেই ধরতে পারি।


নভোপদার্থবিদ্যা বা জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান বা নভোবস্তুবিদ্যা যে নামেই পরিচিত হোক, এখানে আমি আমার লিখার সুবিধার্থে Astrophysics টার্মটিকেই ব্যবহার করব। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, Astrophysics এ Dr. Subrahmanyan Chandrasekhar এর অনেক অবদান থাকলেও এ উপমহাদেশের অধিকাংশ মানুষের কাছেই তাঁর নামটা খুব বেশি পরিচিত নয়। এমনকি যুক্তরাস্ট্র (USA) ব্যতীত বহির্বিশ্বের অনেক রাস্ট্রের মানুষই তাঁকে খুব বেশি একটা জানেন বা নাম শুনেছেন এমন মনে হয় না, ফলস্বরূপ গুগল তাঁকে আন্ডাররেটেড সায়েন্টিস্ট (underrated scientist) এর তালিকায় নামিয়ে দিয়েছে।

Dr. Subrahmanyan Chandrasekhar (ড.চন্দ্রশেখর) ১০ অক্টোবর, ১৯১০ খ্রিঃ তৎকালীন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার পাঞ্জাবের লাহোরে (বর্তমান- পাঞ্জাব,পাকিস্তান) একটি সম্ভ্রান্ত তামিল হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন রেল-কর্মকর্তা। তাঁর ৬ বছর বয়সে অর্থাৎ ১৯১৬ খ্রিঃ পরিবারের সাথে তিনি লাহোর ছেড়ে আল্লাহাবাদে যান এবং সেখানে ২ বছর বাস করার পর তাঁরা মাদ্রাজে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং আমৃত্যু তাঁর পরিবার মাদ্রাজেই ছিলেন। তাঁর জীবনের প্রথম ১২ বছর ততকালীন সমাজ ব্যবস্থা অনুযায়ী সাধারন সব সন্তানের মতো তিনিও পারিবারিকভাবে শিক্ষা গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য যে, তাঁর পিতা পদার্থবিজ্ঞান, বীজগণিত এবং ইংরেজি বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন এবং তাঁর মা ইংরেজি এবং তামিল উভয় ভাষায় পারদর্শী থাকায় পেশাগতভাবে ইংরেজি সাহিত্যের জটিল অনেক বই ও কিছু বিজ্ঞান বিষয়ক বই তামিল ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। তিনি তাঁর মায়ের কাছে তামিল ভাষা এবং বাবার কাছে ইংরেজি ও বীজগণিত শিখেছিলেন। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ১৯৩০ সালে ভারত উপমহাদেশের প্রথম বিজ্ঞানী হিসেবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী C.V. Raman (Chandrasekhar Venkata Raman) ছিলেন ড. চন্দ্রশেখর (Dr. Subrahmanyan Chandrasekhar) এর আপন চাচা। সুতরাং বলা যেতে পারে, তিনি ধীশক্তিসম্পন্ন পরিবারের (intellectual family) সদস্য ছিলেন।

আমরা রামানুজান এর মতো (ঐ সময়ের ভারতীয়, বিজ্ঞান বিষয়ে পারদর্শী) জ্ঞানীদের বায়োগ্রাফি পড়লে জানতে পারি, তাঁরা জীবনের একটা সময় পার করেছেন হিন্দুশাস্ত্র বা তাঁদের নিজেদের ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে, কিন্তু ড. চন্দ্রশেখর ছিলেন একজন এথিস্ট। এটা তিনি তাঁর বিভিন্ন সাক্ষাকারের মধ্যেও উল্লেখ করেছেন। [“I am not religious in any sense; in fact, I consider myself an atheist.”

—Chandrasekhar, quoted in "Chandra: A Biography of S. Chandrasekhar" by Kameshwar Wali (1991) ]

১৯২২ সালে তিনি ভর্তি হন মাদ্রাজ হিন্দু হাই স্কুলে এবং ১৯২৫ সাল থেকে ১৯৩০ সাল অবধি পড়ালেখা করেন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজে (বর্তমান University of Madras)। সেখানেই তিনি তাঁর বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি একটা রিসার্চ পেপারও পাবলিশ করেন যার টাইটেল ছিল "The Compton Scattering and The New Statistics"। ১৯৩০ সালে তিনি ভারত সরকার থেকে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য শিক্ষা বৃত্তি পান, পরবর্তীতে তিনি ক্যামব্রিজের Trinity College এ ভর্তি হন। তিনি বলেন, ১৯ বছর বয়সে তাঁর আয়ত্বে থাকা ফিজিক্‌স এর থিওর‍ীগুলোকে তারা বা stellar লেভেলে থিঙ্ক করার চেষ্টা করতেন। ফলশ্রুতিতে তিনি যখন জাহাজে প্রথম ইন্ডিয়া থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন, তখনই তিনি তাঁর জনপ্রিয় চন্দ্রশেখর লিমিট (Chandrasekhar Limit) থিওরিটি আবিষ্কার করেন যা এখন পর্যন্ত Astrophysics বা modern physics এর একটি widely acceptable theory. এখন এই চন্দ্রশেখর লিমিট কী জিনিস সেটা একটু পরে ব্যাখ্যা করছি।

১৯৩৩ সালে তিনি প্রফেসর রালফ এইচ ফাউলার (Professor Ralph H. Fowler) এর সুপারভিসনে তাঁর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর পেপার টাইটেল ছিল "Rotating Self-Gravity Prototype/Polytropic distributions"। তিনি ১৯২৯-১৯৩৯ সময়কালে black hole, Stellar structure, Stellar dynamics বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তর পড়ালেখা এবং গবেষণা করেছেন। ক্যামব্রিজের আরেকজন প্রফেসর পল ডীভ্যাক (Prof. Paul Divac) এর উপদেশে তিনি Copenhagen (যেটা কিনা ডেনমার্কের রাজধানী) সেখানে এক বছর The Institute Of Theoretical Physics এ research fellow হিসেবে কাটিয়েছেন। সেখানে তিনি Neils Bohr এর অধীনে কাজ করেছিলেন। ডেনমার্কে অবস্থান করার সময়েই তিনি তাঁর প্রথম বই 'Introduction To Study Of Steller Structure’ বইটি লিখেন। ৯ অক্টোবর, ১৯৩৩ সালে তিনি Trinity college, Cambridgeএ একটি prize fellowship programme এ দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে ৪ বছর মেয়াদে নির্বাচিত হন। Trinity College এ গবেষণাকালে তিনি "Chandrasekhar Limit" এর উপরে একটি সিরিজ পেপার পাবলিশ করেন।

এখন আসি ভারত থেকে ১৯৩০ সালে ব্রিটেনে এসে এই বিজ্ঞানী কেন আবার আমেরিকায় পাড়ি দিলেন সেই ব্যাপারটাতে। বলা বাহুল্য তৎকালীন সময়ে ব্রিটেন বা ইউরোপ ছিল হোম অফ সাইন্স। আমেরিকা তখনো শিক্ষা, গবেষণার দিক থেকে বর্তমান সময়ের মতো এতটা ফ্যাসিনেটিং হয়ে ওঠেনি। আচ্ছা, তো ব্যাপারটা হলো যে Black Hole ব্যপারটা ২১ শতাব্দীর শুরুতেও কিন্তু একটা অজানা, মিথ টাইপ বিষয় ছিল। এখন ভাবুন এই কনসেপ্টটাকে ২০ শতাব্দীর একদম গোড়ার দিকে একজন মানুষ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তখন সমগ্র ইউরোপে তাঁর জন্রার নামকরা বিজ্ঞানীদের মধ্যে ছিলেন আইনস্টাইন (Albert Einstein) এবং আরথার এডিংটন (Arthur Eddington), তিনি যখনই তাঁর(ড. চন্দ্রশেখর) থিওরিগুলা রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিকাল সোসাইটিতে উত্থাপন করেন, বিজ্ঞানী এডিংটন খুব বাজেভাবে তাঁর কাজকে কটাক্ষ করেন, এমনকি শুরুতে অনেকবার আইনস্টাইনও সেগুলিকে অসম্ভব বলে উড়িয়ে দেন। এখন ড. চন্দ্রশেখর চিন্তা করেন, এই ব্রিটেনে অলরেডি এতো প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানী আছে, যাদের এক জবান সবাই বিশ্বাস করে, উনি তো এখানে তার প্রাপ্য বা কাঙ্ক্ষিত recognitionটা পাচ্ছেন না ঠিক এই কারণেই উনি ব্রিটেন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। এটি তাঁর জীবনে একটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ছিল বলেও তিনি বিশ্বাস করেন।

তিনি ১৯৩৭ সালে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে (University of Chicago) ডাক পান এবং যোগদান করেন। ১৯৪২ সালে এসোসিয়েট প্রফেসর, ৪৪এ ফুল প্রফেসর এবং ১৯৮৫ সালে এমিরিটাস প্রফেসর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এখন তাঁর থিওরি ও নোবেল পাওয়ার বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলা যাক, আমরা জানি মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে Georges Lemaître এর দেওয়া big bang থিওরির মাধ্যমে। থিওরিটি বলে যে singularity অর্থাৎ সমস্ত বিশ্ব, নক্ষত্র একটি বিন্দুতে অসীম ঘনত্বে এবং শুন্য আয়তনে আবদ্ধ ছিল (single point of space and time in infinite density and zero volume)। সেই বিন্দুটি unstabilityর কারণে বিস্ফোরিত হয়ে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি। atom, electron, proton, star, galaxy সবকিছু এক বিস্ফোরণ থেকেই এসেছে। এখন যার জন্ম বা সৃষ্টি আছে তার মৃত্যুও আছে। তারারও মৃত্যু আছে, এখন জিজ্ঞেস করতে পারেন তারা? জড় বস্তুর আবার মৃত্যু কিসের? খুবি সহজ বুঝানো, ইংরেজিতে কারো গাড়ির তেল ফুরিয়ে গেলে বা ব্যাটারির কারণে গাড়ি না চললে তারা বলে, "The car is dead.” এর মানে কি? গাড়িটি মারা গেছে? - বুঝলেন জড় বস্তু কিভাবে মরে? তারার মৃত্যু অর্থ এরও ফুয়েল শেষ হয়ে যাওয়া। একটি তারা বা আমাদের সূর্য পারমাণবিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি তৈরি করে টিকে থাকে। এই পক্রিয়া একটা পর্যায়ে শেষ হবে এবং তারাটির মৃত্যু হবে। প্রত্যেকটি তারার ২টা ভাগ্য হতে পারে ১। সে white dwarf এ পরিণত হতে পারে অথবা ২। Neutron star বা black hole এ পরিণত হতে পারে।Black hole আবার ২ রকমের, ১। Rotating ২। Non-rotating। বলে রাখি, আমাদের সূর্য কখনোই Black Hole হবে না। এই যে, কোন তারা white dwarf হবে বা কোন তারা black hole হবে এটিই চন্দ্রশেখর লিমিট (Chandrasekhar Limit) ব্যাখ্যা করে।

The Chandrasekhar limit is the maximum mass of a stable white dwarf star. Consequently, a white dwarf with a mass greater than the limit is subject to further gravitational collapse, evolving into a different type of stellar remnant, such as a neutron star or black hole - অর্থাৎ যদি কোনো তারা সূর্যের ভরের ১.৪৪ গুণের মধ্যে থাকে তবে তা white dwarf এ পরিণীত হবে, এই লিমিট টিই Chandrasekhar limit এবং এটা অতিক্রম করলে সেই তারা এক পর্যায়ে black hole হয়ে যাবে।

১৯৭১-৮৩ সাল অবধি তিনি black hole এর mathematical theoryর উপর অনেক কাজ করেন। ১৯৮৩ সালে তাঁর গবেষণার সকল কাজ তিনি তার 'Mathematical Theory of Black Holes' বই এর মধ্যে তুলে ধরেন। ফলশ্রুতিতে ১৯৮৩ সালেই তিনি William A. Fowler এর সাথে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কারজয়ী হন। নোবেল পেয়েও তিনি খুব একটা খুশি ছিলেন না কারণ তিনি তার জীবনকালে বিজ্ঞানের, বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞান ও Astrophysics এর অনেক শাখায় অবদান রেখেছেন কিন্তু নোবেলে তার শুধু একটা কাজকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।

এইসব ছাড়াও তিনি অনেক বই, পেপারস এবং জার্নাল লিখেছেন আগ্রহ থাকলে আপনারা গুগল করে দেখতে পারেন। তিনি একজন খ্যাতিনামা বিজ্ঞানীর মতো ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র দুইজায়গা থেকেই অনেক সম্মাননা ও পুরষ্কার পেয়েছেন। দেখার বিষয় হল যে আমরা এই উপমহাদেশের লোকেরা আমাদের এই রত্নগুলাকে প্রাপ্য মর্যাদা খুব একটা দিতে পারিনা কিন্তু মার্কিনীরা তাঁদের বিভিন্ন ধরনের স্বীকৃতি দিয়ে মনে রাখেন যেমন ১৯৭৯ সালে নাসা তাদের ৩য় 'Great Observatory’র নাম ড.চন্দ্রশেখর এর নামে নামকরণ করে। চন্দ্রশেখর নাম্বার, ম্যাগনেট হাইড্রোডাইনামিকসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রাবিহীন (Dimensionless) সংখ্যা, তাঁর নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে।গ্রহাণু (asteroid-1958-Chandra) এর নামও চন্দ্রশেখরের নামে রাখা হয়েছে।তাঁর নামানুসারে 'Himalayan Chandra Telescope' নামকরণ করা হয়েছে।রয়্যাল সোসাইটি অফ লন্ডনের ফেলোগ্রাফিক (Biographical Memoirs of Fellows of the Royal Society of London) স্মৃতিচারণে আর জে টেলর লিখেছেন: "Chandrasekhar was a classical applied mathematician whose research was primarily applied in astronomy and whose like will probably never be seen again." - (চন্দ্রশেখর ছিলেন এমন একটি শাস্ত্রীয় ফলিত গণিতবিদ, সে তাঁর গবেষণা প্রাথমিকভাবে জ্যোতির্বিজ্ঞানে করেছিলেন এবং সম্ভবত আর কখনও তাঁর মতো কাউকে দেখা যাবে না)

তাঁর ১৯৭৫ খ্রী. একবার মাইনর হার্ট অ্যাটাক হয় এবং ১৯৯৫ সালের ২১শে আগস্ট ২য় বার হার্ট অ্যাটাকে শিকাগোতেই মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সহধর্মিণী Lalitha Doraiswamy তাঁর (ড.চন্দ্রশেখর) সম্পদের অনেকাংশ University of Chicago তে ডোনেট করেন। ড.চন্দ্রশেখরের নিজস্ব দর্শনের একটি উক্তি দিয়ে আর্টিকেলটি শেষ করছি, তিনি বলেন, "What a scientist tries to do essentially is to select a certain domain, a certain aspect, or a certain detail, and see if that takes its appropriate place in a general scheme which has form and coherence; and, if not, to seek further information which would help him to do that"

0 comments
Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

lgbt-bangladesh.png
bottom of page