top of page

রাগ ভৈরবীর সুর

বাবার কবরের ফলকটায় কারা যেন "নেড়ি কুত্তা" লিখে রেখেছে।পাশে একটা কুকুরের আকৃতি মত।যার পেটের দিক থেকে লিঙ্গের মত কিছু একটা আঁকার চেষ্টা করা হয়েছে।চোখ মুছে ইটের টুকরো দিয়ে ঘসে ঘসে লেখাগুলো মুছে ফেলতে চেষ্টা করে তুবিন।আমি পাশে দাঁড়ানো। তুবিন আমার দিকে তাকাচ্ছে না।তাকালেও কিছু হতো না।অনেকটা অন্ধকার তখন।


.

বাবা আমাদের গ্রামের হাই স্কুলের গনিত শিক্ষক ছিলেন।গুরুগম্ভীর মানুষ।কাজের বাইরে একটা কথাও না।ক্লাস শুরু হওয়ার সাথে সাথে ক্লাসরুমে ঢুকে বোর্ডে তিন চারটে অংক করে দিতেন।তারপর বিরস মুখে অংক গুলো খাতায় তুলে নিতে বলতেন।বাবার ক্লাসে কথা বলা ছিল অমার্জনীয় অপরাধ। কেউ শব্দ করে কেশে উঠলেও তিনি চিৎকার করে বলতেন,"চুপ থাক।চুপ থাক।নাট্যশালা নাকি?" বাবাকেও কেউ ঘাটাতো না।না তার কলিগ, ছাত্র এমনকি হেডমাস্টার ও। তবে স্কুলের পিওন মজিদ বাবার সাথে বাজেরকম বেয়াদবি করে বসতো। একদিন বাবা মজিদকে মারতে মারতে লোক জড়ো করে ফেলেন স্কুল মাঠে।তার দোষ সে বাবাকে ব্যঙ্গাত্মক ভাবে জিজ্ঞেস করেছিলো,"স্যার পাছা চুলকায় খুব।মলুম আছে মলুম?" মজিদের শার্ট বেয়ে রক্ত পড়তে থাকে।তবু সে ভাবলেশহীন ভাবে হাতের আঙ্গুলে মটকা ফুটাতে থাকে। . বাবার স্কুলেই আমি ছাত্র হওয়ার কারনে হোক কিংবা যে কারনেই হোক,বাবাকে আমি সবসময় ভয় পেয়েই চলতাম।ছোটবেলায় বাবাকে নিয়ে আমার তেমন কোন স্মৃতি নেই। তবু মা'র মুখে শোনা,বাবা নাকি স্কুল থেকে এসেই আমাকে কোলে নিয়ে নদীর পাড়ে হাটতেন।গাল ঘসাঘসি,চুমু খাওয়া এসব কিচ্ছুই না।শুধুই কোলে নিয়ে হাটা।বড় হওয়ার পর বাবার দিকে চোখ তুলে তাকাতেও ভয় হতো।যদি চাহনিতে ভুল থাকার কারনে মজিদের মারটা আমার কপালে জুটে যায়? . তুবিন আমার প্রায় দশ বছরের ছোট। সে হওয়ার পর থেকেই তার অনেক রকম রোগ ছিল।শহরে নিয়ে ডাক্তার দেখানো হল।দেখা গেল তার হাড় খুবই দুর্বল।এতটা দুর্বল যে সামান্য নড়াচড়া তেও ব্যথায় কুকড়ে উঠতো।বিছানায় শুতে পারতো না। তার কান্নায় আমাদের বাসায় থাকাও মুশকিল ছিল। আমরা ভেবেছিলাম বাবা হয়তো বিরক্ত হবেন তুবিনের কারনে।সন্ধ্যায় বাবার পছন্দের রাগ ভৈরবী না শুনলে তার মেজাজ খারাপ থাকে। দেখা গেল উল্টোটা। বাবা তুবিনকে কোলে নিয়ে নদীর পাড়ে হাটতেন।তুবিন ও বাবার কোলে কেন জানি একদম শান্ত হয়ে যেত।ব্যথায় কাঁদতো না।বাবা সারারাত হাটতেন তুবিন কে নিয়ে।তুবিন বাবার কোলে ঘুমাতো।সকালের দিকে বাবা বাড়িতে আসতেন। তুবিনকে বিছানায় একটু শুইয়ে স্কুলে যেতেন। আবার স্কুল থেকে এসেই তুবিনকে কোলে তুলে নিতেন।

.

আমাকে একটু ভেবে চিন্তে ভালো ছাত্রের কাতারে ফেলা যায়।এইচএসসিতে রেজাল্ট অনেক ভালো হয়েছিল। বাবার সাথে তখন আমার প্রয়োজনীয় ছাড়া অপ্রয়োজনে তেমন কোন কথায় হতো না।বাবা তার জীবনে গনিতকে যত আপন করে নিয়েছিলেন আমাদেরকে হয়তবা ততটা সাবলীল ভাবে নিতে পারেন নি। চেষ্টা হয়তবা করতেন।কিন্তু দূরত্ব টা কুলিয়ে উঠা সম্ভব হয় নি। এইচএসসি রেজাল্ট শুনার পর বাবার চেহারায় পরিবর্তন না দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম।আমার মনে ক্ষীণ আশা ছিল যে বাবা হয়ত খুশি হয়ে কিছু বলবেন। তিনি শুধু, "ও আচ্ছা" বলেই খবরের কাগজে ডুবে গেলেন।আমিও মন খারাপ করে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে চলে গেলাম। বাসায় ফিরলাম রাত ১২ টার দিকে।বাসায় এসে দেখি ঘরভর্তি মিষ্টি।বাবা ততক্ষনে ঘুমিয়ে গেছেন। মা'র মুখে জানলাম আমাদের আশেপাশের সব বাড়িতে বিতরনের পর ও এতসব মিষ্টি রয়ে গেছে।বাবা তার গণিতে প্রাপ্ত সম্মাননার গোল্ড মেডেল দুটি বিক্রি করে এই আয়োজন করেছেন। আমার চোখ ভেজার আগেই আমি আমার রুমে চলে যাই।

. এইচএসসির পর ঢাকা ভার্সিটিতেও পড়ার সুযোগ হয়ে গেল।বাবা আমাকে স্টেশনে দিয়ে এলেন না।নির্বিকার ভাবেই বিদায় দিলেন।তুবিন তখন কেঁদে ঘর ভাসাচ্ছে।মা'র মুখ ও ছলোছলো। আমি চলে এলাম।সালটা তখন ২০০৭। মোবাইল ফোন তেমন সহজলভ্য হয়ে উঠে নি।গ্রামের বাজারে অবশ্য ল্যান্ডফোন ছিল।তাও আমাদের বাড়ি থেকে দুই ক্রোশ দূর তো হবেই।ফলে তেমন যোগাযোগ করা হতো না বাড়িতে।আমিও ব্যস্ত হয়ে গেলাম পড়ালেখা নিয়ে।বাড়ির খোজ তেমন নেওয়া হতো না। মা অবশ্য প্রতি সপ্তাহে ফোন দিতে কড়া ভাবে বলে দিয়েছিলেন বাড়ি থেকে আসার সময়।বাবার ছন্নছাড়া ভাবটা হয়ত আমার মধ্যেও সংক্রমিত হয়েছিল।আমি ফোন দিতাম না। বাবা সাধারনত হাট-বাজার যেতেন না।উনার ভিড়ভাট্টা পছন্দ না।তবু নাকি বাবাকে প্রতি শুক্রবার মোবাইলের দোকানের আশেপাশে ঘুরঘুর করতে দেখা যেতো।সেসব জেনেছি বাড়ি ফিরে।তাও লোকের মুখে।বাবা কার ফোনের অপেক্ষা করতেন?

.

প্রায় সাত মাস পর আমি বাড়িতে গেলাম।ঈদ উপলক্ষ্যেই আসা।বাড়িতে ঢুকেই বাবাকে সালাম করলাম।বাবা বললেন,"সব ভালো তো?" এতটুকুই।বাবা অবশ্য তখন কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়েছিলেন।একটু জ্বর ছিল।হওয়াটাও স্বাভাবিক। তুবিনের ব্যথাটা পূর্নিমার সময় মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। এদিনও বাবা সারারাত তুবিনকে কোলে নিয়ে ঘুরছিলেন নদীর পাড়ে। আমি বাড়িতে ফেরায় মা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।তুবিনও যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে অনেক দিন পর। মা বাড়ির উঠোনে হাসনাহেনার গাছ লাগিয়েছে।সেখান থেকে ফুলের নেশা জাগানো সুঘ্রাণ আসছিল। অনেকদিন পর একসাথে ইফতারি করে মনে হলো,ঢাকায় যাওয়ার খুব কি দরকার ছিল?

.

বাবার জ্বর একদিন স্থায়ী হয়ে পরদিন একদম সুস্থ। সকালে দেখি বাবা তার সহজাত স্বভাবে খাদি পাঞ্জাবি পড়ে স্কুলের দিকে গেলেন।আজ স্কুল বন্ধ দিবে ঈদের। বাবার প্রিয় পোশাক হল খাদি পাঞ্জাবি। সাথে ধবধবে সাদা পায়জামা আর চামড়ার কালো স্যান্ডেল।ছাত্রছাত্রীদের মনে কাঁপন ধরিয়ে দেওয়ার জন্যে বাবার পাঞ্জাবীটাই যথেষ্ট আসলে। ঈদের কটা দিন ও ভালোই কাটলো গ্রামে।বাবার আবার জ্বর এসেছে।এদিকে আমার ভার্সিটি ও খুলেছে। আমি বাবাকে ডাক্তার দেখানোর কথা মা'কে বলে চলে এলাম ঢাকায়।কিছুদিন পর পরীক্ষা ছিল।মার কথা, বাবার কথা, বাড়ির কথা সবই ভুলে গেলাম।

. প্রায় একমাস পর পরীক্ষা শেষ হল।হাতে প্রায় ১০ দিনের বন্ধ।বাড়িতেই চলে এলাম।বাড়িতে এসে দেখলাম বাবার অসুখটা খুবই বেড়েছে।জ্বরে গা পুড়ে যাওয়ার মত অবস্থা।জ্বরের ঘোরে বাবা কি সব উল্টাপাল্টা বলেন।গনিত নিয়েই কি সব বলেন দিন রাত।রাতেও নাকি তেমন ঘুমান না।বিড়বিড় করেন নিজে নিজে।ডাক্তার তেমন কিছুই ধরতে পারলেন না।সদরে নেওয়ার পর জানা গেল বাবার জলাতঙ্ক হয়েছে।ইংরেজিতে বলে হাইড্রোফোবিয়া। ঈদের আগে তুবিনকে নিয়ে নদীর তীরে হাটার সময় নাকি বাবাকে একটা কুকুর আঁচড় দিয়েছিলো।বাবা তেমন গা করেন নি। বাড়িতে এসে এমন কিছু দেখার জন্যে আমি প্রস্তুত ছিলাম না।দিনকে দিন বাবার পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে থাকে।হাতে তেমন টাকা পয়সা ও ছিল না যে বাবাকে এর চেয়ে ভালো কোন ডাক্তার দেখানো যাবে।আমি তখনো ছাত্র।বাবার সঞ্চয় বলতে মোটে এই ভিটেবাড়িটাই। আমি চোখে অন্ধকার দেখছিলাম।

.

সকাল বেলা হৈচৈ শুনে ঘুম ভাঙ্গে। বাবা নাকি সাত সকালে উঠে সম্পূর্ন নগ্ন অবস্থায় স্কুলে তার ক্লাস রুমে গিয়ে বসে আছেন।মা কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা গেলেন।ভয়ে লোকজন বাবাকে সেই রুমেই বন্দী করে রেখেছে। আমি দৌড় লাগাই স্কুলের দিকে। তুবিন আমার পিছু পিছু। বাবা আমাদের গ্রামে খুবই সম্মানী লোক ছিলেন।আমাদের চোখেও বাবা ছিলেন পর্বতপ্রমাণ একজন মানুষ। সেই মানুষটাকে নগ্ন অবস্থায় দেখে আমার স্রষ্টা কে বলতে ইচ্ছে করছিল, ধরনী দুভাগ হও,আমি আমার লজ্জা লুকাই।তুবিনই প্রথমে কাঁদতে কাঁদতে বললো, "বাবা,বাসায় চলো।" বাবা তুবিনকে দেখে হাসলেন। "ফিবোনাক্কি সংখ্যা কি মনে আছো তো তুবিন?মনে নাই?তোরে না শিখালাম আমি?" আবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,"একটা পাঞ্জাবি দে তো।আমার পাঞ্জাবিটা পাচ্ছিনা" আমি তখনো বেঁচে ছিলাম। সেদিন তুবিনের চেয়েও বেশি কেঁদেছিলো মজিদ।সেই পিওনটা,যাকে বাবা নির্বিকারভাবে পিটিয়েছিলো।

. বাবাকে এখন বাসার এক রুমে বন্দি রাখা হয়।না রেখেও উপায় ছিল না।বাবা সুযোগ পেলেই ঘর থেকে বের হয়ে যান।সেদিন এক ছেলেকে ধমক দিচ্ছিলো ৯ এর নামতা না পারায়।পাড়ার সবাই বাবাকে দেখে হাসে।আড়ালে বাবাকে পাগল ডাকে।আমরা শুনেও না শুনার ভান করি। মা সিজদায় বসে পাগলের মত কান্না করেন।বাবার সারা গায়ে ফুঁ দেন কোরআন শরীফ পড়ে।লাভ হয় না। বাবা ঝিম মেরে বসে থাকেন।বাবার শরীরে তেমন কাপড় রাখা যায় না।পড়ানোর কিছুক্ষন পরেই তিনি নিজের হাতে ছিঁড়ে ফেলেন।আর বিড়বিড় করেন,"গরম, গরম।খোকা, অনেক গরম।" মা তার গয়না বিক্রি করে দেন।বাবাকে ঢাকায় ডাক্তার দেখানোর জন্যে নিয়ে আসি।ডাক্তার রিপোর্ট দেখে হতাশ হন।অনেকটা দেরি হয়ে গেছে ততদিনে। .

তুবিন তবু বাবার আশপাশে ঘুরঘুর করতে থাকে। বাবা তখন নগ্ন অবস্থায় ই থাকেন।আমাদের সবার মানা ছিল তুবিন যাতে বাবাকে এ অবস্থায় না দেখে।ওর ছোট্ট মনে বাবার এই নগ্ন ছবি থাকুক সেটা আমরা চাইতাম না। তবু,পূর্নিমার রাতগুলোতে তুবিনের খুব কষ্ট হয়।জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয় সে বাবার দিকে।বাবা সায় দেন না।বিড়বিড় করেন নিজেনিজে। বাবা পানির জন্যে খুব ছটফট করতেন।তার ছটফটানি দেখে আমাদের বুক ফেটে যেতো।কিন্তু পানি দিলে ভয় পেয়ে যেতেন।খেতেন না।চিৎকার করতেন।এ ঝামেলা এড়াতে বাবাকে পানি দেওয়া হতো না।তিনি জানালা দিয়ে হাত বের করে পানি পানি করে কান্না করতেন।

গণিতের পোকা উপেন আহমেদ কখনো এভাবে কাতর হয়ে পানি চাইবেন,তা আমরা ভাবতেও পারি নি।বিধাতা আমাদেরকে সম্মান দেন,আবার কেড়েও নেন বাজেভাবে।ফিবোনাক্কি সংখ্যারা কি বাবাকে বাঁচাতে পারবে?

. একদিন সকালে তুবিন আমাকে ঠেলে তুলল। বাবা নাকি কেমন যেন করছে। গিয়ে আমার জীবনে দেখে চরম বীভৎস দৃশ্য দেখলাম আমি।বাবা চার পায়ে ভর দেওয়া।গায়ে একটা সুতাও নেই। মুখে পুরনো স্যান্ডেল নিয়ে চাবাচ্ছেন। মা মূর্ছা গেলেন এ দৃশ্য দেখে। তুবিন "বাবা, বাবা " করে ডেকে উঠল।বাবা আমাদের দিকে ফিরে ঘড়ঘড় শব্দ করলেন।ওই চেহারায় আমাদের বাবা একদমই ছিলেন না। যে উপেন আহমেদ এর দিকে কেউ মাথা তুলে তাকাতো না ভয়ে সেই উপেন আহমেদ কে নগ্ন দেখেনি এমন মানুষ খুব কমই আছে আমাদের গ্রামে। এদের উৎপাতে বাবার রুমের জানালাটা বন্ধ করে দেওয়া হল।বাবা আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বললেন,"খোকা,অন্ধকার অন্ধকার।আলো কই, আলো কই?" তুবিন তবু আশা ছাড়লো না,সে বাবার টেপ রেকর্ডার টা জানালার কাছে এনে রাগ ভৈরবী বাজাতো।এ কাজটা সে গোপনে করতো।কিন্তু শব্দের কারনে রাগ ভৈরবী গোপন থাকতো না।এত কষ্ট আমি কোথায় রাখি?

. গ্রামের মানুষেরা নতুন কিছু পেলে বড় উৎসাহ পায়।তাদের সবুজ শ্যামল গ্রামে একটা পাগল আছে,আর তারা তাকে নিয়ে খেলা করবে না,এও হয় না। আমি সেদিন ঢাকায় ছিলাম।ডিপার্টমেন্ট হেড এর কাছে সব ঘটনা বুঝিয়ে যদি ছাত্রত্ব টা রাখা যায়। আমাকে নিষ্ঠুর মনে হতে পারে।কিন্তু এই ভার্সিটিতে পড়ার কারনে বাবা কতটা গর্ব বোধ করতেন সেটা আমি জানি।তাই এই চেষ্টা। বাড়িতে এসে দেখি গ্রামে শালিস বসেছে।মজিদ বাজে এক কান্ড করেছে। আমাদের দুই বাড়ি পরের মুন্সী বাড়ির ছেলে আবদুল নাকি বাবার রুমের সামনে গিয়ে বাবাকে দেখে হাসছিল।বাবাকে ইটের টুকরা মারছিল। মজিদের দেখে সহ্য হয় নি।সে তার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। রক্তারক্তি অবস্থা।আরেকটুর জন্যে জানে বেঁচে গিয়েছে। শালিসের সিদ্ধান্তে মজিদকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।যাওয়ার আগে সে বাবাকে সালাম করে যায়।বাবা তখন চার পায়ে ভর দিয়ে বসে আছেন।তবু কি ভেবে বাবা মজিদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

. বাবা যেদিন মারা গেলেন,সেদিন আমি একদম কাঁদি নি।বাবা মরে গিয়েই আসলে বেঁচে গিয়েছেন।সেদিন বাবার সৎকারের জন্যে মানুষ পাওয়া যায় নি।কবর খোঁড়ার লোকেরা আসেই নি।বাবাকে শেষ গোসলটা আমিই দিয়েছিলাম। বাঁশ কাটার অভ্যাস ছিল না। হাপিয়ে উঠছিলাম।তুবিন বাঁশ কাটতে গিয়ে হাত কেটে ফেলল।বাবার কাফনের কোণাটা ভেজা ছিল তাই। . অনেক্ষন পর তুবিন শব্দ করলো।আমার চিন্তায় ছেদ পড়লো। তুবিন ও কেমন জানি বাবার মত হয়েছে।চুপচাপ।প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না।"নদীর পাড়ে যাবা ভাইয়া?" অনেকদিন হলো যাই না। বাবার মৃত্যুর পর মা সহ আমরা ঢাকা চলে আসি।ওই ঘৃনা ভরা গ্রামে ফিরে যেতে ইচ্ছে করতো না।আজ প্রায় ১০ বছর পর আসলাম।

.

অন্ধকার হয়ে গেছে ততক্ষনে।পূর্নিমার চাঁদ অকাতরে মায়া বিলাচ্ছে।তুবিন কাঁদছে। কেনো কাঁদছে? পুরনো সেই ব্যথা? কোন ব্যথা? হাড়ের নাকি মনের? পূর্নিমার আলোয় চারদিক রহস্যের জগৎ মনে হয়। আমাদের অনেকট সামনে একজন খাদি পাঞ্জাবী পড়া লোক হেটে যাচ্ছে। সাথে রাগ ভৈরবীর সুরও ভেসে ভেসে আসলো......

0 comments

Recent Posts

See All
Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

lgbt-bangladesh.png
bottom of page