top of page

বিজ্ঞানী বেশে বিপ্লবীর নাম আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়।

বাঙালির কাছে তিনি বিজ্ঞানী, ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের কাছে তিনি বিপ্লবী। তাঁর নিজের ভাষায়--- " আমি বৈজ্ঞানিক,গবেষণাগারেই আমার কাজ, কিন্তু এমন সময় আসে যখন বৈজ্ঞানিককেও দেশের আহ্বানে সাড়া দিতে হয়।" সাধারণ বেশভূষায় ও সাদাসিধে জীবন-যাপনে অভ্যস্ত এই স্বদেশী দেশ সেবক, বিদগ্ধ পণ্ডিত, ছাত্রবৎসল অধ্যাপক, আবিষ্কারক বিজ্ঞানী, অগ্রগণ্য ব্যবসায়ী, দরদি সমাজকর্মীর নাম আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়।


আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের জন্ম ঐহিত্যবাহী কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীর, যশাের জেলার রাড়ুলীর কাটিপাড়ায় ২ আগষ্ট ১৮৬১ সালে ( ১২৬৮ সন, ১৮ শ্রাবণ বঙ্গাব্দ)। যা বর্তমান খুলনা জেলার পাইকগাছার থানা রাড়ুলি ইউনিয়নে। তাঁর ডাকনাম ফুলু। পিতা হরিশ্চন্দ্র রায় ছিলেন পণ্ডিত এবং বহুভাষাবিদ। মাতা ভুবনমোহিনী দেবী সেবাপরায়ণা, উদারমনা, সংস্কারমুক্ত এবং নারী শিক্ষায় উৎসাহী আদর্শ নারী ছিলেন। জ্ঞানসাধনা ও সংগীতচর্চার কেন্দ্র হিসাবে এই পরিবারের যথেষ্ট খ্যাতি ছিল।

ছোটবেলা থেকেই তাঁর মেধার উন্মেষ দেখা যায়। সেই ছেলেবেলায় তিনি বাংলা সাহিত্য এবং বিশ্বসাহিত্যের প্রধান রচনাগুলো পড়ে ফেলেন। কলকাতার আলবার্ট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। পরবর্তীতে গিল ক্রাইস্ট বৃত্তি নিয়ে লন্ডন থেকে বিএসসি পাশ করেন। এরপর তিনি রসায়ন শাস্ত্রের উন্নততর গবেষণার জন্য এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিএসসি ডিগ্রী লাভ করেন।

অন্য সব বাঙালি মনীষীর থেকে আচার্যদেব একটা বিষয়ে ছিলেন আশ্চার্য ব্যতিক্রম। তিনিই একমাত্র ব্যতিক্রমী বাঙালি মনীষী যিনি বাঙাল জাতের উন্নতি কল্পে শুধু শিল্প-কলা নিয়ে পড়ে না থেকে শিল্প বাণিজ্যেও মনোযোগী হওয়ার জন্য সারাজীবন প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এরই ধারাবাকিতায় ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠাতা করেন 'বেঙ্গল কেমিক্যাল এবং ফার্মাসিটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড'। যেটা আজও ভারত সরকারের একটা প্রতিষ্ঠান হিসাবে চলমান রয়েছেন।

এছাড়া প্রান্তিক মানুষের উন্নতির জন্য ১৯০৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারী তিনি প্রতিষ্ঠা করেন 'রাড়ুলী সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক'। যা ছিল অবিভক্ত ভারতের গ্রামাঞ্চলে দ্বিতীয় এবং বাংলার প্রথম গ্রামীন সমবায় ব্যাংক। তিনি বিশ্বাস করতেন সমবায়ই পারে জাতপাতে বিভক্ত, দরিদ্র গ্রামকে উন্নয়ন এবং ভ্রাতৃত্বের বাঁধনে বাঁধতে।

তিনি তার সময়ের বাংলা অঞ্চলের শুধুমাত্র সবচেয়ে বড় পণ্ডিত এবং ধনবান ছিলেন না। ছিলেন তাঁর সময়ের সবচেয়ে বড় দাতা। বাংলাঞ্চল জুড়ে তিনি অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাতা, শিক্ষাবৃত্তি, বইপ্রকাশ প্রভৃতি সেবাকার্য দ্বারা বাঙলার উন্নতি কল্পে সচেষ্ট ছিলেন।

রবিঠাকুরের সমসাময়িক, উনার ঘনিষ্ট সহচর এই মনীষীর জন্মদিনকে পশ্চিমবাংলায় বিজ্ঞান দিবস হিসাবে পালন করা হয়। তবে তাঁর জন্মভূমি এখনো অনেকটা অবহেলায় পড়ে আছে। তাঁরই এক পরিবারের সদস্য প্রতিবেশী এক মুসলিম ভদ্রলোকের কাছে উনার পৈত্রিক বাড়ি বিক্রি করে ভারতে চলে যান। পরবর্তীতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মামলা করে জমি উদ্ধার করেন। উপজেলা প্রশাসন রায় বাড়ির ঠাকুর দালানে বারোয়াড়ি দুর্গা পূজাটা চালু রেখেছেন। তবে বাড়িটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করা আশু প্রয়োজন। এছাড়া বাড়িটিতে অনেক অসামাজিক কার্যকলাপ হয় তা থেকে বিরত রাখা। এখানে একটা পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স তৈরি করা।

আচার্যদেব সারাজীবন বাঙালির অন্নচিন্তা দূর কল্পে তাকে নানাবিধ উদ্ভাবনী কার্যে যুক্ত হয়ে চাকরি ভিন্ন উপায়ে জীবিকা লাভের জন্য প্রচেষ্টা করতে সারাজীবন বলে গেছেন। আজকের বাঙালির দূরাস্থায় যা আরো অনেক অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। আচার্যদেব তাঁর নিজের জীবনে যে শাস্ত্রবাক্যটির তাৎপর্য অনুভব করেছেন তা হল:


ত্বয়া হৃষীকেশ হৃদিস্থিতেন

যথা নিযুক্তোহস্মি তথা করোমি।


আজকের আচার্যদেবের সেই পরম মঙ্গলময় জন্মদিনে তাঁর প্রতি রইল সশ্রদ্ধ প্রণাম বা শ্রদ্ধাঞ্জলি। বাঙালির জীবনে তাঁর আশা, বাস্তবে বাস্তবায়ন হোক এই প্রত্যাশা রইল।

0 comments
Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

lgbt-bangladesh.png
bottom of page