top of page

নিতাই ও সালহের নিষিধ্য ভালবাসা

আমার নাম সালেহ এবং এখন যে ছেলেটির পাশে বসে আছি তার নাম নিতাই। নিতাইর পরনে বিয়ের সাজ। এই বিয়ের সাজ নিয়ে নিতাই একটু পরপর হাতে থাকা টিস্যু পেপার দিয়ে চোখ মুসছে। সম্পর্কের ৪ বছরে একটি দিনেও এই ছেলেকে আমি কাঁদতে দেখিনি। আজ কাঁদতে দেখে বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল।



আমি চোখে গোল গোল সাইজের দুটা চশমা ঝুলছে। চশমা গ্লাসের ফাঁকে নিতাই চেহারাটা কেমন যেন অস্পষ্ট। আমি হাত দিয়ে চোখ মুছলাম। নিতাই রেগে তাকালো

.

- উফফ প্লিজ তুমি আবার ভ্যা করে ছেড়ে দিয়ো না

.

ধমকের সুরে বলল নিতাই। পরক্ষনেই চোখের কোনে জল মুছলো। আমি চোখ থেকে হাত সরালাম। নিতাইর সামনে কাঁদা যাবে না। এই মুহুর্তে অজস্র স্মৃতি মস্তিষ্কে ঘুরছে। একটা স্মৃতি বড্ড বেশি স্পষ্ট।

.

কোন একটা খারাপ সময়ে দুজন দুজনকে সামলাতে গিয়ে প্রেমে পরে গিয়েছিলাম দুজন। জদিও আমরা দুজনেই পুরুষ তবুও এই ভাল বাসা তো আর পেন্টের ভেতরে কি আছে তা দিয়ে বিবেচিত হয় নি। ঝগড়া/অভিমা/প্রেমে রাগ/নের পর্ব চুকিয়ে এক রাতে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম দেখা করব। ক্লাস ফাকি দিয়ে ড্যাট নিতাইর একদম পছন্দ না

_"ক্লাস সেরে তবেই আসবে"_ রাগিরাগি কন্ঠে সেইদিন বলেছিল নিতাই

.

সে রাতে গল্প বুনতে বুনতে ঘুমিয়েছি শেষ রাতে। ঘুম ভেঙ্গে দেখলাম ক্লাস শুরু হতে মিনাট ২০ এক বাকি। হুরমুর করে ছুটলাম পেটে কিছু না দিয়েই। ক্লাস শেষে বের হয়ে দিলাম ছুট। সময় গড়িয়েছিল অনেক। পাক্কা ২০ মিনিট দেরিতে হাজির হয়ে দেখলাম কিছু দূরে ্নিতাই দাড়িয়ে। সকাল থেকে শরীরের ক্লান্তি গুলো নিমিষেই দূর হলো নিতাইর কাজল ঘন চোখের দিকে তাকাতেই। আমি যখন মায়াবী ছেলেটির মায়াতে হারাচ্ছিলাম তখন ই চোখ নাচিয়ে কিছু দেখালো নিতাই। টিফিনে করে বানিয়ে আনা নাস্তা

.

- সকালে না খেয়ে ক্লাসে ছুটেছিলে?

.

উপর নিচ মাথা দুলালাম আমি। নিতাই নাস্তা বাড়িয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকালো। ঐ রাঙ্গানোর অর্থ বুঝি আমি , "এখন ই সব শেষ করতে হবে"

.

ভালোবাসা বলতে তখন টিভি নাটকেই দেখেছি। প্রথম বারের মতো অনুভব করলাম। এই অনুভবে আমার যত সমস্যা। চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। আমি চোখ মুসতেই নিতাই চোখ রাঙ্গিয়ে বলল

.

- ক্যান্দো রাম , কাঁদে না।

.

প্রচন্ড খামখেয়ালী অলস ছেলেটি জীবন নিয়ে হুট করে সিরিয়াস হয়ে গেল কারো সংস্পর্শে । এমন কারো স্পর্শ যাকে ছাড়া একটা সময় ভাবতাম আমি অস্তিত্বহীন। নিনিতা এসব মানতে নারাজ, বাঁচতে হবে ।

.

ক্যান্দো রামের চোখে কাঁন্না আসতে চাইলো, আমি দিচ্ছি না। ঘড়ির দিকে তাকালাম। ৬ টা বাজছে, সন্ধা এখন। আজ নিনিতার বিয়ে।

.

ব্যাগে থাকা কিছু একটা বের করতে নিলো নিতাই। ছোট্ট একটা টিফিন বক্স। পরিচিত ঘ্রাণ।আমার দিকে বাড়িয়ে ধরলো বক্সটি। আমি নিতাইর চোখে তাকাতে পারছিনা

.

- এখন ই শেষ করবে । সময় নেই

.

সময় আসলে টুপ করে শেষ হয়ে যায়। প্রতিবার ই ঘুরতে বের হলে বাহানা ধরতাম আমি। দুই চার পাঁচ মিনিট যদি আরো থাকায় যায়... ঘন্টা তিন পার হলেও , "সবে তো এলে, আরো কিছুক্ষণ?" বলতাম আমি। আমার কথায় হাসতো নিতাই। ঐ হাসির দিকে তাকিয়ে বাকি টা সময় কিভাবে কিভাবে যেন শেষ হয়ে যেত ।

.

খাবার গুলো ভিতরে যাচ্ছে না। নিতাইর দিকে তাকালাম। চোখ দুটো লাল। দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলাম সময়টা যদি ধরে রাখা যেতো!

.

নিতাই চোখ মুছে আমার দিকে তাকালো।

.

- আমাকে যেতে হবে

- হুম

- যাওয়ার পর পাগলামো করবে না তো?

.

মাথা দুলালাম আমি। নিতাইর কন্ঠ জড়িয়ে আসছে। নিজেকে সামলে বলল নিনিতা

.

- শোন যেমনটা রেখে যাচ্ছি একেবারে তেমনটাই থাকবে ।

- থাকতে হবে কেন?

- আমি হচ্ছি বাড়ির বড় মেয়ে। বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ের পর তার প্রেমিক এইভাবে না থাকলে লোকে কি ভাববে?

.

নিতাইর কথায় হাসলাম আমি। নিনিতার ঠোটে হাসি চোখের কোনে জল। কাঁপা কাঁপা কন্ঠ বলল নিতাই

.

- হাটার সময় একদম শব্দ করবে না।

.

আমার হাটা নিতাইর যতো রাগ ছিলো। একটুও শব্দ করা যাবে না। নিতাইর কানে অদৃশ্য শক্তি আছে। হাটার মাঝে কথা বলার সময় কথা থামিয়ে বলত নিনিতা

.

- এই তুমি শব্দ করে হাটছ কেন?

আচমকা দাড়ালেই বলত

- এই তোমাকে দাড়াতে বলেছি?

পা টিপে টিপে হাটা ধরতাম ফের। নিতাইর কথা থামিয়ে ফের বলত

- এই তুমি চোরের মতো হাটছ কেন?

.

স্মৃতিগুলো ঘুনোপোকাড় মতো আঘাত করবে জানি। তবুও কাঁদা যাবে না। আজ নিতাইর বিয়ে। ভালোবাসাটা দুজনের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে না। অন্যদের কাঁদিয়ে আমরা আজ হাসতে পারতাম হয়তো। চাইনি দুজনের কেউ সেটি। অন্যেদের হাসি বড্ড বেশি দামি তার চেয়ে।

.

নিতাইর পাশে হাত ধরে হাটছি। জানি ফের ঐ হাত ধরার অধিকার থাকবে না কখনো। নিতাইর বিয়ের শেরোওয়ানি। সম্পর্কে শুরুতে দেয়া সেই শার্ট গুলো লাগেজে আটা। নিতাই একবার বলল তার হরেক রঙের পাঞ্জাবি চায়। একদিন হুট করে নিয়ে হাজির হলাম। সেইবার বেগুনী রঙের পাঞ্জাবি ছিড়েছি বলে তার সেই কি রাগ ! সেই পাঞ্জাবি গুলো বড্ড বেশি যত্ন করে রেখেদিয়েছে। আগা গোড়া সেজে থাকা ছেলেটি পড়নে রেশমী শেরোওয়ানি তে মায়া জড়িয়ে আছে। শব্দে হীন স্মৃতিগুলো খেলছে ...

.

সেইদিন নিতাইকে বিদায় দেয়ার সময় তার চোখের দিকে তাকাইনি। সেইদিন তাকালে আজ দাঁড়াতে পারতাম না হয়তো। আমার চোখে ঝুলে থাকা গোল চোশমার ফাকে আকাশের দিকে তাকালাম। আমার আকাশটা আজো ঝাপসা হয়ে এলো। পকেটে থাকা মানিব্যাগ থেকে নিতাইর সেই দিনের টিস্যু পেপার বের করলাম। টিস্যু পেপারে সেইদিন নিনিতার কাজলা কাল চোখের পানি শুকিয়ে গেছে ঠিকই তবে শুকনো অশ্রূ স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে । আচ্ছা নিতাইর হাতে সেইদিনের পাঞ্জাবি গুলোতে কি আজো শব্দহীন স্মৃতিগুলো খেলা করে??....

0 comments

Recent Posts

See All
Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

lgbt-bangladesh.png
bottom of page