একজন অজ্ঞেয়বাদীর দৃষ্টিতে ইশ্বরের স্বরুপ কেমন হওয়া উচিত ?
বিভিন্ন অজ্ঞেয়বাদী বিভিন্নভাবে দেওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। তবে তাদের সকলের বক্তব্যের মূল পয়েন্টটা সাধারণত একই হয়ে থাকে। তাদের সে সমস্ত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমরা এখানে দেখানোর চেষ্টা করেছি যে একজন অজ্ঞেয়বাদীর দৃষ্টিতে ইশ্বরের স্বরুপ কেমন হওয়া উচিত। আপনি ভগবান, ইশ্বর, আল্লাহ, স্রস্টা, গড, বিধাতা যাই বলেন না কেন আমরা এখানে আলোচানার সুবিধার্থে শুধুমাত্র ইশ্বর শব্দটি'ই ব্যবহার করবো।
পৃথিবীতে সাধারণত দুই ধরনের ইশ্বরের ধারণা প্রচলিত আছে। যথা-
1) ব্যক্তিগত ইশ্বর : এমন ইশ্বর যিনি আপনার ভবিষ্যৎ তৈরী করেন, আপনার জন্ম-মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ করেন, আপনার কৃত কর্মের হিসাব করেন, আপনার প্রার্থনা শোনেন, আপনাকে স্বর্গ এবং নরকে রাখেন ইত্যাদি ইত্যাদি। সকল প্রতিষ্ঠিত ধর্মগুলোর ইশ্বর এই ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত।
এই ইশ্বর মানুষের দ্বারা তৈরি তাই এটি সর্বদা মানুষের সাথে আচ্ছন্ন থাকে। এই ইশ্বরের মনে হয় মহাবিশ্ব কতটা বিশাল সে সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই এবং মানুষকে খুব বেশি প্রাধান্য দেয়। এই ইশ্বর ভুল এবং খোঁড়া বৈজ্ঞানিক দাবী করে যা সহজেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই ইশ্বর নিজেও নিবিষ্ট হয়। এর অস্তিত্বের জন্য মানুষের কাছ থেকে তাঁর নিত্য অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।
সাধারণত দেখা যায় কোনও মহান জ্ঞানী মনন এই ইশ্বরে বিশ্বাস করে না।
বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছিলেন:
" ইশ্বর শব্দটি আমার কাছে মানবিক দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ ও চিন্তার ফল আর কিছুই নয়, বাইবেল সম্মানিতদের সংগ্রহ হওয়া সত্ত্বেও ইহা এখনও আদি রূপকথায় ভরপুর যা সুন্দর শিশুসুলভ .... আমার কাছে অন্যান্য সকল ধর্মের মতো ইহুদি ধর্ম হল সবচেয়ে শিশুসুলভ কুসংস্কারের একটি প্রতিমূর্তি।" [1]
তিনি আরও বলেছিলেন যে,
"ইশ্বর বিষয়ে আমার অবস্থান একজন অজ্ঞেয়বাদী'র মতো । আমি নিশ্চিত যে জীবনের উন্নতি ও জ্ঞান লাভের জন্য নৈতিক নীতিগুলির প্রাথমিক গুরুত্ব সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট বিধানকর্তা, বিশেষত এমন বিধানকর্তা, যিনি পুরষ্কার ও শাস্তির ভিত্তিতে কাজ করেন তার ধারণার প্রয়োজন হয় না " [2]
2) ব্যাক্তিসত্তাহীন ইশ্বরঃ
এই ইশ্বর গেম ডেভেলপারের মতো, তিনি গনিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, বিবর্তন ইত্যাদির সূত্র বা সীমাবদ্ধতা তৈরি করেছিলেন। তিনি সাধারণত মহাবিশ্বের ইভেন্টগুলিতে হস্তক্ষেপ করেন না (অর্থাৎ স্বতন্ত্র , ব্যক্তিগত অনুরোধ, প্রার্থনা ইত্যাদির প্রতি সাড়া দেন না, অলৌকিক কাজ করে না, ব্যাক্তিদের সাথে কথা বলেন না)। তিনি ব্যক্তিগতভাবে আমাদের কাউকেই সৃষ্টি করেন নি (কোনও জীবন বা কোনও নির্দিষ্ট গ্রহ), তার বেঁধে দেয়া আইন ও সীমার মধ্যে এই সবকিছু বিকশিত হয়েছিল। তাঁর কাছে আমরা মানুষ অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে বিশেষ কিছু নই, পৃথিবী অন্য অনেক গ্রহের চেয়ে বিশেষ ভাল কিছু নয়। তিনি আমাদের বিশাল ছায়াপথের ধূলিকণাময় ক্ষুদ্র অস্তিত্বের তুলনায় এই বিশাল মহাবিশ্বকে তৈরি বা অনুকরণ করেছিলেন।
তিনি আপনার বিলুপ্তির বিষয়ে কিংবা আপনি উন্নত বা নিকৃষ্ট প্রাণী হিসাবে বিবর্তিত হন না কেন তিনি এসবের কেয়ার করেন না। আমরা কেবল তাকে বা তাদেরকে একটি উচ্চতর সত্ত্বা বলতে পারি। এটি উচ্চতর প্রাণীদের একাধিক চক্র হতে পারে। যেমন, আমরা যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এতটুকু উন্নত করতে পারি যে তারা আত্ম-সচেতন হতে পারে তবে আমরা যাজকতন্ত্র বা দেবদূতগণের শ্রেনীবিন্যাসকে আরও ভালভাবে বুঝতে পারি। এইজন্যই আমাদের অজ্ঞেয়বাদী (Agnostic) হওয়া দরকার (ইশ্বরের অস্তিত্ব থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে) কারণ আমরা কখনই এই ইশ্বরের উপস্থিতির প্রমাণ বা অস্বীকার করতে পারি না। সে বা তারা বিভিন্ন ডাইমেনশন বা ভিন্ন বাস্তবতায় থাকে আমরা তাদের বাস্তবতা এবং চিন্তার প্রক্রিয়াটি কখনই পুরোপুরি বুঝতে পারি না। তবে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি আমাদেরকে তাদের চিন্তাধারার কাছে নিয়ে যেতে পারে।
আইনস্টাইন বলেছিলেন,
" আমি কোনও ব্যক্তিগত ইশ্বরকে কল্পনা করতে পারি না যিনি ব্যক্তির ক্রিয়াকলাপকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করেন। আমার ধার্মিকতা হচ্ছে, অবাক বিস্ময়ে বিমুগ্ধ নয়নে এক অসীম শৌর্যকে বিনীত শ্রদ্ধায় অবলোকন, যে নিজেকে অতি সামান্যই উদঘাটন করেছে আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বে।
একজন যৌক্তিক মহাপরাক্রমশালী'র উপস্থিতিতে সেই গভীর আবেগময় দৃঢ় বিশ্বাস (যা রহস্যময় মহাবিশ্বে প্রতিভাসিত হয়) ইশ্বর সম্পর্কে আমার ধারণা সৃজন করে।
আমি স্পিনোজার ইশ্বরে বিশ্বাস করি, যিনি নিজেকে প্রকাশ করেন
বিশ্বের বিধিসঙ্গত ঐকতানে, এমন কোন ইশ্বরে নয় যে মানুষের ভাগ্য ও কাজকর্ম নিয়ে নিজেকে উদ্বিগ্ন করে তোলে।[3]
স্ট্রিং ফিল্ড থিওরির সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং পদার্থবিদ মিচিও কাকুকে নিয়ে ২০১৭ সালে মিডিয়ায় আলোড়ন উঠেছিল যখন জানা গেল যে, তিনি নাকি ইশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করেছেন। "The Geophilosophical Association of Anthropological and Cultural Studies" - কাকুর বরাত দিয়ে বলেছিল,
“আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে আমরা একজন বুদ্ধিমানের তৈরী নিয়ম দ্বারা সৃষ্ট একটি বিশ্বে আছি। আমার কাছে এটি স্পষ্ট যে আমরা এমন একটি পরিকল্পনার মধ্যে উপস্থিত রয়েছি যা নিয়ম দ্বারা পরিচালিত হয় এবং যা সর্বজনীন বুদ্ধিমত্তার দ্বারা তৈরি হয়েছিল, সুযোগ হিসাবে নয়। ”
অতঃপর পাবলিক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কাকু বলেছিলেন,
"এটি সর্বজনীন পরিমন্ডলে মানুষের অন্যতম একটি অসুবিধাঃ কখনো কখনো আপনি ভুলভাবে উদ্ধৃত হতে পারেন। আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি হ'ল আপনি কখনো ইশ্বরের অস্তিত্বকে প্রমাণ করতে বা অস্বীকার করতে পারবেন না।"[4]
আবার ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর নিজের টুইটারের এক টুইট এ কাকু বলেছিলেন,।
"আপনি কি ইশ্বরের অস্তিত্বকে প্রমাণ করতে পারবেন? সম্ভবত না।
বিজ্ঞান প্রমাণের উপর নির্ভরশীল যা পরীক্ষণযোগ্য, পুনরুৎপাদনযোগ্য এবং
ভুল হতে পারে। কাজেই ইশ্বর বিজ্ঞানের প্রচলিত গণ্ডির বাহিরে। আবার এটিকে নেগেটিভ হিসেবে ভুল প্রমাণ করাও অসম্ভব, কাজেই আপনি ইশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি নাই কোনটিই প্রমাণ করতে পারবেন না।[5]
২০১৮ সালে huffpost Science এর David Freeman কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে [6] Hayden planetarium এর পরিচালক ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী নীল ডিগ্রাস টাইসন কে তার ইশ্বর বিশ্বাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা তিনি কি উত্তর দিয়েছিলেন চলুন তা দেখে নিই।
DF: আপনি কি ইশ্বরে বিশ্বাস করেন?
NT: আমি ধরে নিয়েছি আপনি কোন ইশ্বর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছেন তা পূর্বনির্ধারিত করে রেখেছেন?
DF: নির্দিষ্ট ইশ্বর আপনি যেমনটা মানেন।
NT: আপনিই একজন যিনি এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছেন। সুতরাং একজন ইশ্বরকে বেছে নিন এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করুন আমি ওই ইশ্বরে বিশ্বাস করি কিনা?
DF: জুডিও -খ্রিস্টান ইশ্বর ।
NT: ঠিক আছে, যদি সেই ইশ্বরকে সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ এবং সর্বদাই ভাল হিসাবে বর্ণনা করা হয় তবে আমি এর প্রমাণ পৃথিবীর কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। তাই আমি অপ্রত্যয়িত (সন্দেহ মুক্ত নয় এমন) রয়েছি। যদি সেই ইশ্বর সর্বশক্তিমান এবং সর্বগুণান্বিত হন তবে তাকে আমি দেখতে পাই না সুনামি যখন কোয়ার্টার-মিলিয়ন বা ভূমিকম্পে কোয়ার্টার-মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করে। আমি আপনার স্বাস্থ্য বা দীর্ঘায়ুর স্বার্থের জন্য ভাল কিছু ভাবতে চাই। এটি আপনার জন্য ভাল এমন কোনও কিছুর একটি সহজ সরল সংজ্ঞা। এটি "ভাল" শব্দের বিতর্কিত বোঝাপড়া নয়। সুতরাং পৃথিবী যদি দু'টি পৃথক ঘটনায় পৃথক হয়, মাত্র দু'বছরে মানুষ অর্ধ মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করতে পারে, তখন আপনার বর্ণনার মতো ইশ্বরের যদি অস্তিত্ব থাকেন তবে সেই ইশ্বর হয়ত সর্বশক্তিমান নন বা সর্বগুণান্বিত নন। এবং তাই আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত নই।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা যা বুঝতে পারলাম -
১) ব্যাক্তিগত ইশ্বর 100% মিথ্যা।
সব ধর্মই মানুষের তৈরি (প্রমাণিত)
২) ব্যাক্তিসত্তাহীন ইশ্বরের অস্তিত্ব ১০০% বাতিল করা যায় না। যে বলবে যায় সেটা মুর্খতা। আবার যে বলবে একজন ইশ্বর থাকতেই হবে সেও মুর্খ।
যদিও আমরা দেখেছি মহাবিশ্বের উৎপত্তি অস্তিত্ব ব্যাখ্যার জন্য পদার্থবিদরা বিভিন্ন গাণিতিক মডেল নির্মাণ করেছেন, বৈজ্ঞানিক জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন, কোনটিতেই ইশ্বরকে আমদানির প্রয়োজন পড়েনি, বরং তারা সেগুলো নির্মান করেছেন পদার্থবিজ্ঞানের জানা জ্ঞানের সাহায্যেই [7]। যেমন, আদ্রে লিন্ডে এবং অ্যালেন গুথের ইনফ্লেশন বা স্ফীতি তত্ত্ব [8] কিংবা পল স্টেইনহার্ট এবং নেইল টুরকের প্রস্তাবিত ‘সাইক্লিক মডেল’ [9] নির্মাণ করা হয়েছে কোন ধরণের ইশ্বরকে আমদানি করা ছাড়াই।
পদার্থ বিজ্ঞানী লিওনার্দো স্নোডিনের সাথে লেখা গ্রান্ড ডিজাইন নামক বইয়ে স্টিফেন হকিং বলেছিলেন,
"মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সূত্রের মতো পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্র কার্যকর রয়েছে, তাই একদম শূন্যতা থেকেও মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্ভব এবং সেটি অবশ্যম্ভাবী। ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃষ্টি’ হওয়ার কারণেই ‘দেয়ার ইজ সামথিং, র্যাদার দ্যান নাথিং’, সে কারণেই মহাবিশ্বের অস্তিত্ব রয়েছে, অস্তিত্ব রয়েছে আমাদের। মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময় বাতি জ্বালানোর জন্য ঈশ্বরের কোন প্রয়োজন নেই ।" [10]
অর্থাৎ পদার্থবিজ্ঞানীরা ঈশ্বর কিংবা এ ধরণের কোন কারিগর ছাড়াই মহাবিশ্বের অস্তিত্বের ব্যাখ্যা দিতে সমর্থ। কিন্তু তারপরে ও আমাদের মনে প্রশ্ন থেকে যায় যে এই পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্রগুলোই বা কেন কার্যকর আছে? এগুলো কোথা থেকে এলো? কেন এলো? কিভাবে এলো?
এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অনেকেই একজন ব্যাক্তিসত্তাহীন (Impersonal) ইশ্বরকে আমদানি করে থাকেন। বাট এমন ইশ্বরের অস্তিত্ব আমাদেরকে একটা সাইক্লিক লুপে আবদ্ধ করে ফেলে, এই ইশ্বরকে কে তৈরি করলো ? সে ক্ষেত্রে বলা যায় এই গড অন্য ডাইমেনশনে থাকে, ওই ডাইমেনশনের সাইন্টিফিক ল' এই মহাবিশ্বের সাথে সেইম নাও হতে পারে। তাই আমরা বুঝতে পারছি না হয়ত। বাট কোনটাই নিশ্চিত করা যাবে না।
কাজেই ব্যক্তিসত্তাহীন ইশ্বরের অস্তিত্ব থাকতেও পারে নাও পারে।
তথ্যসূত্রঃ
[1]. Alice Calaprice (2010) The Ultimate Quotable Einstein.
Princeton NJ: Princeton University Press, p.342
[2]. Alice Calaprice (2010). The Ultimate Quotable Einstein. Princeton NJ: Princeton University Press, p. 340.Letter to M. Berkowitz, 25 October 1950. Einstein Archive 59-215.
[3] Alice Calaprice (2010). The Ultimate Quotable Einstein. Princeton NJ: Princeton University Press, p.325
[4]. https://bigthink.com/robby-berman/michio-kaku-believes-in-god-if-not-that-god
[5].https://mobile.twitter.com/michiokaku/status/1071826559974166528?lang=bn
[6].https://m.huffpost.com/us/entry/us_561297abe4b0dd85030c97fc
[7]. উদাহরণ হিসেবে এখানে বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত কিছু পেপারের উল্লেখ করা যেতে পারে :
David Atkatz and Heinz Pagels, "Origin of universe as Quantum Tunneling effect" Physical review D25 (1982): 2065-73;
S.W. Hawking and I.G.Moss "Super cooled Phase Transitions in the very early Universe", Physics letters B110(1982):35-38;
Alexander Vilenkin, "Creation of Universe from Nothing" Physics letters 117B (1982) 25-28,
Alexander Vilenkin, "Quantum Origin of the Universe" Nuclear Physics B252 (1985) 141-152,
Andre Linde, "Quantum creation of the inflationary Universe," Letter Al Nuovo Cimento 39(1984): 401-405
Victor Stenger, “The Universe: the ultimate free lunch", European Journal of Physics 11 (1990) 236-243. etc.
[8]. Alan Guth, The Inflationary Universe, Basic Books, March 17, 1998
[9]. Endless Universe: Beyond the Big Bang -- Rewriting Cosmic History by Paul J. Steinhardt and Neil, Broadway; Reprint edition (June 3, 2008
[10]. Stephen Hawking & Leonard Mlodinow, The Grand Design, Bantam, 2010
Comments