ছয়মাত্রিক মহাবিশ্বের ধারণা
আমাদের মহাবিশ্বটি দেখতে (যদি সম্ভব হত) ঠিক কেমন হতে পারে ? কেমন হতে পারে এর অাকৃতি আজ সেই সম্পর্কে একটু আলোচনা করার চেষ্টা করছি। শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি সবার কাছ থেকে কোথাও কোন ভুল ত্রুটি থাকলে তা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি একজন সাধারণ ছাত্র, বিজ্ঞান হয়ত তেমন বুঝি না, তারপরও মহাবিশ্ব সম্পর্কে নিজের অর্জিত সামান্য অভিজ্ঞতাটুকু আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করছি।
আপেক্ষিক তত্ত্ব ও উচ্চমাত্রার জ্যামিতির আলোচনা থেকে আমরা জানি যে, আমাদের মহাবিশ্বটি ত্রিমাত্রিক হলেও এটি চতুর্থ মাত্রায় বেঁকে গিয়ে, একটি চতুর্মাত্রিক মহাবিশ্ব তৈরী করেছে । আমরা মহাবিশ্বের ভেতরে বাস করছি বলে আমাদের কাছে সবসময় একে নিখুঁতভাবে ত্রিমাত্রিক মনে হবে। কিন্তু আমাদের মহাবিশ্বটি মূলত একটি চার মাত্রার গোলক। আমরা পৃথিবীতে বাস করি বলে কখনোই আমাদের মনে হয় না পৃথিবী গোলাকার। কারন উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব বা পশ্চিম যেদিকেই যাই না কেন আমাদের কাছে একে একটি সমতল পৃষ্ঠ বলেই মনে হয়। তবে পৃথিবীর বাইরে থেকে তোলা স্যাটেলাইট এর ছবি দেখলে ঠিকই বুঝা যায় পৃথিবী একটি ত্রিমাত্রিক গোলক। অর্থাৎ দ্বিমাত্রিক সমতল পৃষ্ঠ আরেকটি মাত্রায় বেঁকে গিয়ে গোলকের রূপ নিয়েছে। তাই কেউ যদি পৃথিবী পৃষ্ঠের কোনো একটি বিন্দু থেকে যাত্রা শুরু করে চলতেই থাকে, তাহলে একসময় সে আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসবে। তেমনি আমরা যদি আমাদের মহাবিশ্বের বাইরে গিয়ে পুরো মহাবিশ্বটিকে একসাথে দেখতে পারতাম তাহলে দেখা যেত এটি একটি চারমাত্রিক গোলক কিন্তু এখানে একটি সমস্যা আছে। একটি চারমাত্রার গোলক দেখতে কেমন হবে আমাদের মস্তিষ্ক তা কখনোই কল্পনা করতে পারবে না। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। আমরা জানি একটি ত্রিমাত্রিক গোলকের পৃষ্ঠের কোনো প্রান্ত নেই আবার কোনো নির্দিষ্ট কেন্দ্রও নেই। যেমন, ফুটবল একটি একটি ত্রিমাত্রিক গোলক, তাই একটি ফুটবলের পৃষ্ঠের নির্দিষ্ট কোনো কেন্দ্রও নেই। এর পৃষ্ঠের প্রতিটি বিন্দুই মূলত এর কেন্দ্র। এবার লক্ষ করুন , ফুটবল টির পৃষ্ঠের কোনো কেন্দ্র না থাকলেও পুরো গোলাকার ফুটবলটির কিন্তু একটি কেন্দ্র আছে। একটি চারমাত্রার গোলকের পৃষ্টও সম্পূর্ণ গোলক, কোনোটিরই কোনো নির্দিষ্ট কেন্দ্র নেই। এটিই হলো ত্রিমাত্রিক গোলক ও চারমাত্রিক গোলকের ভেতরের মূল পার্থক্য। চারমাত্রিক গোলকের ভেতর ও বাহিরের সকল বিন্দুই একএকটি কেন্দ্র। ফলে গোলকের পৃষ্ঠ বলে আসলে কিছু নেই। আমাদের মহাবিশ্বটি যেহেতু এরকম একটি চারমাত্রিক গোলক, তাই আমাদের মহাবিশ্বেরও কোনো নির্দিষ্ট কেন্দ্র নাই। কিন্তু এমন একটি চারমাত্রিক গোলক সম্পূর্ণ ভাবে দেখতে কেমন হবে তা আমাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব না। এটি হয়েছে শুধুমাত্র আমাদের মস্তিষ্কের কারনে। আমাদের মস্তিষ্ক জন্মগতভাবেই ত্রিমাত্রিক জগতের ধারনা নিয়ে তৈরী হয়েছে। তাই আমাদের পক্ষে এমন কোনো গোলক কল্পনা করা সম্ভব না যা, যার প্রতিটি বিন্দুই একেকটি কেন্দ্র। এখন আসি একটি বাস্তব উদাহরনে । ধরেন আপনি একটা রুমে চেয়ারে বসে আছ। রুমের প্রান্ত থেকে তোমার দূরত্ব দৈর্ঘ্য বরাবর ৫ মি এবং প্রস্থ বরারর ৩ মি। এখন দৈর্ঘ্য বরাবর ৫ মি. এবং প্রস্থ বরাবর ৩মি. এগিয়ে গেলেই কিন্তু আপনার চেয়ারটিকে পাওয়া যাবে কিন্তু আপনি তো আর চেয়ারের তলদেশে বসে নেই বরং আপনি বসে আছেন চেয়ারের উপরে তাই আপনাকে পেতে হলে ওই স্থান থেকে আপনি ঠিক কত মি. উপরে বসে আছেন তাও জানতে হবে। ধরে নিলাম আপনি পৃষ্ঠ থেকে ৩মি. উচ্চতায় বসে আছেন । তাহলে দেখা যাচ্ছে যে ওই রুমটিতে আপনার অবস্থান কে আমরা দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা এই তিনটি মাত্রার সাহায্যে সহজেই নির্ণয় করতে পারি কিন্তু আপনি তো আর সবসময় ওই চেয়ারে বসে থাকেন না। সুতরাং এক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সময় জানতে হবে যে, আপনি ঠিক কখন ওই চেয়ারে বসে আছেন । ধরে নিলাম আপনি ঠিক বিকাল ৩টায় ওই চেয়ারে বসে আছেন । ব্যস এবার তাহলে ওই রুমটিতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে আপনার অবস্থান কে আমরা সম্পূর্ণ ভাবে বর্ণনা করতে পেরেছি । তো আপনার অবস্থান কে নিশ্চিত করতে যেহেতু সময়ের প্রয়োজন হয়েছে সেহেতু সময়কে আমরা আরেকটি মাত্রা হিসেবে ধরতে পারি। আইনস্টাইন তার জেনারেল রিলেটিভিটিতে সময়কে ধরেছেন চতুর্থ মাত্রা হিসেবে। তাহলে এই সময়কে একটি মাত্রা হিসেবে যোগ করলে আমাদের এই মহাবিশ্বের মাত্রার সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচটি। । অর্থাৎ এটি একটি পাঁচমাত্রিক গোলক। এই সময় আবার আরেকটি মাত্রায় বেকেঁ গিয়ে মহাবিশ্বের ইতিহাসটিও একটি গোলকীয় ক্ষেত্রে আবদ্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, মহাবিশ্বের মাত্রা হল মোট ছয়টি ( স্থানের ৩ মাত্রা + সময়ের ১ মাত্রা + স্থানের বেঁকে যাওয়া মাত্রা ১ + ইতিহাসের বেঁকে যাওয়া মাত্রা ১ = ৬
মাত্রা ) যদিও মহাবিশ্বকে সবসময় চারমাত্রিক বলা হয়, তবে সমগ্র ইতিহাসসহ স্বয়ংসম্পূর্ণ মহাবিশ্বকে ছয় মাত্রিক বলা যেতে পারে।
תגובות