ধর্মগ্রন্থগুলোতে বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্ব কি আধুনিক "বিগ ব্যাং" তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ? (পর্ব-২)
র থম পর্বে আমরা সনাতন ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে জেনেছিলাম।
দ্বিতীয় পর্বে আমরা ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ 'কোরান' এ বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করবো।

কোরান অনুযায়ী সৃষ্টিতত্ত্বঃ
প্রথমেই আমরা কোরানে উল্লেখিত সৃষ্টি তত্ত্ব সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ আয়াত দেখে নেই-
২ঃ১১৭ ----->
بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ وَإِذَا قَضَىٰ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ
"তিনি আকাশমন্ডলী ও জমিনকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আনয়নকারী; তিনি যখন কিছু করতে চান তখন সেটিকে বলেন, ‘হয়ে যাও’। অমনি তা হয়ে যায়। "
১১ঃ৭ ----->
وَهُوَ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ فِى سِتَّةِ أَيَّامٍ وَكَانَ عَرْشُهُۥ عَلَى ٱلْمَآءِ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًاۗ وَلَئِن قُلْتَ إِنَّكُم مَّبْعُوثُونَ مِنۢ بَعْدِ ٱلْمَوْتِ لَيَقُولَنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟ إِنْ هَٰذَآ إِلَّا سِحْرٌ مُّبِينٌ
"তিনিই আসমান ও যমীন ছয় দিনে তৈরী করেছেন, তাঁর আরশ ছিল পানির উপরে, তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান যে, তোমাদের মধ্যে কে সবচেয়ে ভাল কাজ করে। আর যদি আপনি তাদেরকে বলেন যে, "নিশ্চয় তোমাদেরকে মৃত্যুর পরে জীবিত ওঠানো হবে, তখন কাফেরেরা অবশ্য বলে এটা তো স্পষ্ট যাদু!"
৫১ঃ৪৭ ----> আমি আকাশ নির্মান করেছি আমার স্বীয় ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহা সম্প্রসারণকারী।
২১ঃ৩০ ---->
وَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا ۖ وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْء
অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিলো ওতোপ্রোতো ভাবে, অতঃপর আমি উভয়কেই পৃথক করে দিলাম, এবং প্রাণবান সমস্থ কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হতে, তবু কি তারা বিশ্বাস করবে না?
৩২ঃ৪ ----> আল্লাহ তিনি যিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও এদের অন্তর্বর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন ছয়দিনে, অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নীত হন। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবক ও সুপারিশকারী
নেই, তবু কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?
৬৭ঃ৩ -----> তিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সাতটি আকাশ। দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোন খুঁত দেখতে পাবে না; আবার তাকিয়ে দেখো, কোন ত্রুটি দেখতে পাও কি?
৬৭ঃ৫------> আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা এবং ওগুলোকে শয়তানদেরকে প্রহার করার উপকরণ করেছি এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জাহান্নামের আযাব।
৮৪ঃ২-৩---> যখন আকাশ ফেটে যাবে এবং স্বীয় প্রতিপালকের আদেশ পালন করবে এবং এটিই তার উপযুক্ত করনীয়।
৪১ঃ১০ ----> তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন (অটল) পর্বতমালা এবং তাতে রেখেছেন বরকত এবং চারদিনের মধ্যে এতে সমভাবে খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন।
৪১ঃ১১ ----> অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করলেন যা ছিল ধুম্র বিশেষ। অতঃপর তিনি ওটাকে ও পৃথিবীকে বললেন তোমরা উভয়েই আসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বললোঃ আমরা আসলাম অনুগত হয়ে।
৪১ঃ১২ ----> অতঃপর তিনি দুইদিনে একে সপ্ত আকাশে পরিণত করলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার বিধান ব্যক্ত করলেন এবং আমি নিকটতম আসমানকে সুশোভিত করলাম প্রদীপমালা দ্বারা এবং করলাম সুরক্ষিত। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা।
২ঃ২৯-৩০ ---> তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আকাশের প্রতি মনোনিবেশ করেন, অতঃপর সপ্ত আকাশ সুবিন্যস্ত করেন এবং তিনি সর্ববিষয়ে মহাজ্ঞানী।
৪১ঃ৯ ----> বল তোমরা কি তাকে অস্বীকার করবেই যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দুইদিনে এবং তোমরা তার সমকক্ষ দাঁড় করাতে চাও? তিনি ত জগতসমূহের প্রতিপালক।
২১ঃ৩৩ ----> আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র, প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে।
৩৬ঃ৩৮ ----> সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চন্দ্রের নাগাল পাওয়া এবং রাত্রির পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা, প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে চলছে।
সহীহ বুখারী, হাদিস নং ২৯৭২ ----->
মুহাম্মদ ইবন ইউসুফ (র) ----- আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী মোহাম্মদ (সাঃ) সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় আবূ যার (রা)-কে বললেন, তুমি কি জানো, সূর্য কোথায় যায়? আমি বললাম আল্লাহ ও তার রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, তা যেতে যেতে আল্লাহর আরশের নিচে গিয়ে সিজদায় পরে যায়।এরপর সে পুনরায় উদিত হওয়ার জন্য অনুমতি চায় এবং তাকে অনুমতি দেয়া হয়। আর অচীরেই এমন সময় আসবে যে,সিজদাহ্ করবে কিন্তু তা কবুল করা হবে না এবং সে অনুমতি চাইবে কিন্তু তাকে অনুমতি দেওয়া হবে না। তাকে বলা হবে যে পথে এসেছ সে পথে ফিরে যাও। তখন সে পশ্চিম দিক হতে উদিত হবে।
[এটা ৩৬ঃ৩৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ]
সহীহ বুখারী, হাদিস নং ২৯৭৩ ----->
নবী বলেছেন, কিয়ামতের দিন সূর্য ও চন্দ্র উভয়কে লেপটিয়ে দেওয়া হবে।
সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬৫৩ ---->
আল্লাহ আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সমস্ত সৃষ্টি জগতের তাকদীর লিখে রেখেছেন। আর তাঁর আরশ ছিল পানির উপর।
সহীহ বুখারী, হাদিস নং ২৯৬৫ ----->
তিনি (নবী মোহাম্মদ) বলেছেন, শুরুতে একমাত্র আল্লাহই ছিলেন, আর তিনি ব্যতীত আর কোন কিছুই ছিল না। তাঁর আরশ ছিলো পানির ওপরে। এরপর তিনি লাওহে মাহফুজে সবকিছু লিপিবদ্ধ করলেন এবং আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন।
ওপরে উল্লিখিত কোরানের আয়াত ও হাদিসসমূহের আলোকে আমাদের মানসপটে ইসলামি সৃষ্টি তত্ত্বের যে রূপরেখা ফুটে ওঠে তা মোটামুটি এরকম -
সৃষ্টির আদিতে আল্লাহ বিরাজমান ছিলেন। তার আরশ ছিলো পানির উপরে। তিনি তখন মহাবিশ্ব সৃষ্টির পরিকল্পনা করলেন এবং "লাওহে মাহফুজে" সবকিছু লিপিবদ্ধ করলেন। তারপর তিনি ছয়দিনে
(ছয়টি সময়কালে বা পর্যায়ে বা যুগে ) মহাবিশ্ব সৃষ্টি করলেন যার সাতটি স্তর রয়েছে।
এবার আমরা দেখবো কোরানের উপরোক্ত আয়াতগুলো আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যা ও কসমোলজির আলোকে সঠিক নাকি ভুল।
ওপরে আমরা দেখেছি যে, পবিত্র কোরান ও হাদিস গ্রন্থে দাবি করা হচ্ছে যে, সৃষ্টির আদিতে আল্লাহর আরশ পানির ওপরে ছিলো। তারমানে, এই দাবি অনুযায়ী মহাবিশ্বের উৎপত্তির আগেই পানির অস্তিত্ব ছিলো। কিন্তু এই দাবিটি অত্যন্ত হাস্যকর ও উদ্ভট ।
কেননা, আধুনিক কসমোলজি অনুযায়ী আমরা জানি, বিগ ব্যাং এর পূর্বে অর্থাৎ সৃষ্টির আদিতে পানির গাঠনিক উপাদান হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের কোন অস্তিত্বই ছিলো না।
আজ থেকে প্রায় ১৩.৭ বিলিয়ন বছর পূর্বে বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে সিংগুলারিটি থেকে যাত্রা শুরু হয় আমাদের মহাবিশ্বের । তারপর থেকে মহাজাগতিক বিবর্তনের মাধ্যমে আমাদের এই মহাবিশ্ব কিভাবে তার বর্তমান অবস্থায় এসেছে, চলুন তার একটা সংক্ষিপ্ত টাইমলাইন দেখে নেয়া যাক-
10^-43 - 10^-34 সেকেন্ড ----->
মহাবিশ্ব উত্তরণের তাপমাত্রা অতিক্রম করতে শুরু করে। এই সময়েই মহাবিশ্বকে পরিচালনা কারী মৌলিক বলগুলো একে অপর থেকে পৃথক হতে শুরু করে বলে ধারণা করা হয়।
10^-34-10^-32 সেকেন্ড ----->
মহাবিশ্বের তাপমাত্রা যথেষ্ট কমে যায় (প্রায় 10^28K) যে, শক্তিশালী তড়িৎচৌম্বক বল ও দুর্বল নিউক্লিয় বল পৃথক হতে সক্ষম হয়।
স্ফীতি যুগ -----> এই সময়ে মহাবিশ্বের স্ফীতি শুরু হয়েছিল। বেশিরভাগ কসমোলজিক্যাল মডেল গুলো সুপারিশ করে যে,এই সময়ে অবিশ্বাস্যরকম উচ্চ তাপ ও চাপে এবং উচ্চ শক্তি ঘনত্ত্বের সাথে মহাবিশ্ব অতি দ্রুত সম্প্রসারিত হয়েছিল এবং এর ফলে মহাবিশ্ব শীতল হতে শুরু করে। এই সময়ে ক্রমাগত পারটিকেল - এন্টিপার্কিকেল জোড়ার সৃষ্টি হয়ে তা সাথে সাথে ধ্বংস হয়ে যেতে থাকে । কিন্তু, এভাবে particle - antiparticle তৈরি ও ধ্বংসযজ্ঞের খেলায় particle তৈরির হার সামান্য বেশি পরিমাণে ছিলো।
(প্রায় ১ বিলিয়ন এ কেবল একটি particle সার্ভাইব করেছিল) এভাবে বেঁচে যাওয়া একটি একটি করে particle তথা ম্যাটার থেকেই আমাদের আজকের এই মহাবিশ্ব এসেছে।
শীতল যুগ ----> স্ফীতি থেমে যাবার পরে মহাবিশ্ব কোয়ার্ক - গ্লুয়ন ও অন্যান্য মৌলিক কণাসহ প্লাজমা আকারে ছিলো। অতঃপর স্থানের সম্প্রসারণের ফলে মহাবিশ্বের ঘনত্ব ও তাপমাত্রা হ্রাস অব্যাহত থাকায় প্রতিটি কণার শক্তিও হ্রাস পেতে থাকে। একসময় তাপমাত্রা আরও কমে গিয়ে হয়তো ১ সেকেন্ডের মধ্যেই তা প্রায় ১ হাজার কোটি ডিগ্রিতে নেমে আসে। তারপর আরও ১০০ সেকেন্ড পরে তাপমাত্রা প্রায় ১ কোটি ডিগ্রিতে নেমে আসে। সময়ের সাথে সাথে তাপমাত্রা কমতে কমতে যখন কয়েক হাজার ডিগ্রি তে নেমে আসে তখন ম্যাটারের মৌলিক কণা কোয়ার্ক ও গ্লুয়ন মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরী করে প্রোটন ও নিউট্রন। এই প্রোটন ও নিউট্রন একত্রে মিলিত হয়ে তৈরি করে প্রথম হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াস। ইলেকট্রন গুলো তখনও নিউক্লিয়াসের কক্ষপথে বাধা পরে নি। তারপর মহাবিশ্ব আরও প্রসারিত হতে থাকে,ফলে মহাবিশ্ব আরও শীতল হতে শুরু করে । এভাবে প্রায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার বছর পরে ইলেকট্রনগুলো তখন নিউক্লিয়াসের কক্ষপথে আটকা পরতে থাকে, ফলে তৈরি হয় প্রথম হাইড্রোজেনের পরমাণু এবং একই সময়ে হিলিয়াম ও লিথিয়াম পরমাণুও সৃষ্টি হয়।
কাঠামো যুগ ----> তারপর প্রায় আরও ২০০-২৫০ মিলিয়ন বছর পরে গ্যাসীয় বস্তুপুঞ্জসমূহ মহাকর্ষীয় বলের প্রভাবে আকৃষ্ট হয়ে সৃষ্টি করে প্রথম তারকা বা নক্ষত্র। এরপরে আরও কয়েক বিলিয়ন বছর ধরে একইভাবে গ্যাসীয় মেঘপুঞ্জ, গ্যালাক্সি, নক্ষত্র ও অন্যান্য এস্ট্রোনোমিকাল কাঠামোসমূহ তৈরী হতে থাকে। এর আরও বহুকাল পরে প্রথম প্রজন্মের নাক্ষত্রগুলোর সুপারনোভা বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্টি হয় ভারী মৌলগুলো যেমন, কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফ্লোরিন ইত্যাদি।
অর্থাৎ বিগ ব্যাং এর পরেও আল্লাহর আরশকে পানির ওপরে ভাসিয়ে রাখার জন্য আমাদেরকে প্রায় ১ বিলিয়ন বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
সুতরাং বিগ ব্যাং এর পুর্বে তথা সৃষ্টির আদিতে আল্লাহর আরশ পানির ওপরে ছিলো, এই দাবীটি মোটেও আধুনিক সৃষ্টি তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
আবার অনেক মুসলিম স্কলারদের দেখেছি যে, কোরানের ২১ঃ৩০ নং আয়াতের আলোকে প্রমাণ করতে চায় যে, এই আয়াতে নাকি "বিগ ব্যাং থিওরি" র কথা বলা হয়েছে। কিন্তু, আমরা যারা মুক্তবুদ্ধির চর্চা করি এবং যারা যারা একটুখানি বিজ্ঞানের খোঁজ খবর রাখি তাদের এটা বুঝতে অসুবিধা হবে না যে, উপরোক্ত আয়াতটিতে বিগ ব্যাং খুঁজতে যাওয়াটা হবে চরম বোকামি ও হাস্যকর। কেননা, ওপরের আলোচনায় আমরা জেনেছি যে, বিগ ব্যাং এর পর প্রাথমিক মুহূর্তগুলোতে মহাবিশ্ব কেবল কোয়ার্ক - গ্লুয়নের প্লাজমা অবস্থায় ছিলো। তারপর প্রথম পরমাণু সৃষ্টি হতেই সময় লেগেছিল প্রায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার বছর এবং প্রথম তারকা বা নক্ষত্র সৃষ্টি হতেই সময় লেগেছিল প্রায় ২০০ মিলিয়ন বছর। তখনও আমাদের সূর্যের জন্ম হয় নি। সৌরজগত সৃষ্টি হয়েছিল মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রায় ৯.১ বিলিয়ন বছর পরে। আমাদের সূর্য হল একটি দ্বিতীয় প্রজন্মের নক্ষত্র। অর্থাৎ আগের একটা নক্ষত্র মারা যাওয়ার পর তার ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর পূর্বে সূর্যের উৎপত্তি হয় এবং তা থেকে প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে উৎপত্তি হয়েছিল আমাদের পৃথিবীর। সূর্য ও পৃথিবী সম্পর্কিত টাইমলাইনটা দেখে নিতে পারেন নিচের টাইমলাইন থেকে-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=163497695158790&id=106687884173105
তাহলে কেউ যদি দাবি করে যে,
"আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিলো ওতোপ্রোতো ভাবে অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম " - এই আয়াতে বিগ ব্যাং কে বুঝানো হয়েছে, তাহলে সেটা হবে একটা ডাহা মিথ্যা কথা। কেননা, বিগব্যাং এর সময় পৃথিবীর কোন অস্তিত্বই ছিলো না।
আবার ৬৭ঃ৫ আয়াতে বলা হয়েছে যে আল্লাহ নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করেছেন প্রদীপমালা তারা। কিন্তু, আমাদের এখানে প্রশ্ন, আল্লাহ নিকটবর্তী আসমান বলতে কি বুঝিয়েছেন। আধুনিক এস্ট্রোনমির আলোকে আমার জানি যে, মহাবিশ্বের কোন স্তর নেই এবং এটি সমতলীয়, তাহলে আল্লাহ এখানে নিকটবর্তী আসমান কিংবা সপ্তস্তর বিশিষ্ট আসমান বলতে কি বুঝিয়েছেন?
আয়াত ২ঃ২৯-৩০ অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, আল্লাহ গ্যালাক্সি কিংবা নক্ষত্রগুলো সৃষ্টির আগেই পৃথিবী সৃষ্টি করে ফেলেছেন যা সম্পূর্ণরূপে আধুনিক সৃষ্টিতত্ত্বের পরিপন্থি। কেননা, আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার আলোকে আমরা জানি যে, প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে আমাদের সৌরজগত ছিলো এক বিশাল ভরের ধূলিকণা ও গ্যাসের মেঘপুঞ্জরূপে যা সৌর নীহারিকা নামে পরিচিত। মহাকর্ষীয় ধ্বসের ফলে এতে বিদ্যমান গ্যাসীয় পদার্থসমূহ ঘুরতে শুরু করে। ধ্বসে পড়া অংশের অধিকাংশ ভরই কেন্দ্রের একটি ছোট স্থানে কেন্দ্রীভূত হয়ে সূর্য গঠন করে, বাকি অংশগুলো চ্যাপ্টা হয়ে জন্ম দেয় একটি ভ্রুণগ্রহীয় চাকতির যা থেকে পরবর্তীতে আমাদের পৃথিবী সহ সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ, প্রাকৃতিক উপগ্রহ, গ্রহাণু এবং অন্যান্য ছোট ছোট বস্তু গঠিত হয়।
সহীহ বুখারীর ২৯৭৩ নং হাদিস অনুযায়ী, কিয়ামতের দিন সূর্য ও চন্দ্র উভয়কেই লেপটিয়ে দেওয়া হবে। তাহলে আমাদের প্রশ্ন থেকে যায়, সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহগুলোর তখন কি অবস্থা হবে, সে সম্পর্কে কিছু বলা হয় নি কেন ?!! নাকি তখন বিজ্ঞানীরা এসব গ্রহ সম্পর্কে জানতেন না বলে মহানবী কিছু বলে যান নি ?
আবার ৩৬ঃ৩৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় সূর্যের পরিভ্রমণ নিয়ে বুখারীর ২৯৭২ নং হাদিসে যেসব কথাবার্তা বলা হয়েছে সেটা দেখলে যেকোনো বিজ্ঞানপ্রেমিরই মাথা ঘুরিয়ে যাবার কথা। সূর্য নাকি রাতের বেলায় আল্লাহর আরশের নিচে গিয়ে সিজদাহ্ দেয় এবং পুনরায় উদিত হওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট অনুমতি চায়।
অথচ আমরা জানি, আমাদের সৌরজগত অবস্থান করছে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে। মহাকর্ষীয় বলের প্রভাবে এই সূর্য তার সকল গ্রহ, উপগ্রহ, ও অন্যান্য এস্টেরয়েড সহ প্রতিনিয়ত মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিকে কেন্দ্র করে এর চারপাশে আবর্তন করে চলেছে। এই মিল্কিওয়ের মতো আরও বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সির সমন্বয়ে আমাদের এই মহাবিশ্ব গঠিত। তাহলে, আমরা দেখলাম যে, মিল্কিওয়ের চারপাশে আবর্তিত হওয়ার জন্য সূর্যকে কারও কাছে অনুমতি চাইতে হয় না, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির তীব্র মধ্যাকর্ষন বলের প্রভাবে সূর্য নিজেই অবিরামভাবে এর চারপাশে পাক খেয়ে চলেছে। নিচের লিংকে প্রদত্ত ভিডিও টা দেখলে এসম্পর্কে অনুধাবন করতে পারবেন -
কিন্তু রাতের বেলা সূর্য আল্লাহর আরশের নিচে গিয়ে সিজদাহ্ দেয় এবং উদিত হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে অনুমতি চায় এসব হাস্যকর কথাবার্তায় ভরপুর হাদিস ও আয়াতগুলো পড়লে এটা বুঝতে আমাদের অসুবিধা হয় না যে, ইসলামি সৃষ্টিতত্ত্ব কখনোই আধুনিক সৃষ্টি তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বিঃদ্রঃ কেউ যদি কোন ভুলভ্রান্তি খুঁজে পান এবং সেটার সঠিক রেফারেন্স দেন তবে আমি তা নির্দিদ্বায় মেনে নিয়ে আমার লেখাটা সংশোধন করে দিব।
------------------- ০ --------------------
তথ্যসূত্রঃ
ড.মুজিবুর রহমান অনুদিত বাংলা কোরান ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত সহীহ
বুখারী।
https://starchild.gsfc.nasa.gov/docs/StarChild/questions/question55.html
https://www.universetoday.com/54756/what-is-the-big-bang-theory/
https://www.scientificamerican.com/article/the-first-stars-in-the-un/
https://astronomy.com/news/2018/03/fingerprinting-the-very-first-stars
https://www.forbes.com/sites/startswithabang/2017/12/21/when-did-the-first-stars-appear-in-the-universe/
https://www.space.com/19175-how-was-earth-formed.html