Happy Men's Day
আমার ক্যাম্পাসে গত বছর সুইসাইড রেট অনেক বেশি ছিলো। সেই সুইসাইডের ৯০ ভাগ ই করেছে ছেলেরা। এটা শুধু আমার ক্যাম্পাসের হিসাব না। সারা দুনিয়ায় ছেলেদের সুইসাইড এর হার মেয়েদের তুলনায় ৩.৫ গুণ বেশি।
খুবই অদ্ভুত না ব্যাপার টা? মেয়েরা কাঁদছে, কাউন্সিলিং নিচ্ছে, দুইদিন পর পর অনেক মেয়ে সুইসাইড এটেম্পট নিচ্ছেও কিন্তু মারা যাচ্ছে আমাদের ছেলেরা। তার মানে আমাদের ছেলেগুলো কারো কাছে কিছু বলছেনা ঠিকই কিন্তু এমন শক্ত এক পদক্ষেপ নিয়ে ফেলছে এমন ভয়ংকর ভাবে যেখান থেকে ছেলেটাকে আর ফেরাতেই পারছিনা। ১৮-৪৫ বছরের মধ্যে পুরুষদের আত্নহত্যা করার হার সবচেয়ে বেশি৷
আমাদের মায়েরা ছেলেগুলো একটু বড় হলে ওদের কাঁদতে মানা করেন। শুধু মায়েরা না। সবাই। কান্না মেয়েদের কাজ। কোনো ছোট ছেলেসন্তান যদি কাঁদে তাহলে সেই বাচ্চাটা মেয়েলি। অথচ মানুষ ই তো কাঁদবে। মানুষের ই তো আবেগ থাকবে। আমরা একটা লাইন টেনে নিজেরা এই মানবিক একটা গুণ কে শক্ত আর দুর্বল এর বৈশিষ্ট্য হিসেবে আখ্যা করে দিলাম। ছেলেগুলোকে শেখাতে ব্যস্ত হলাম ছেলেরা হবে শক্ত। ছেলেরা যত কম কথা বলবে সেটাই তাদের ব্যক্তিত্ব৷ নাটক,সিনেমা, মিউজিক ভিডিও সবখানে একটা চুপচাপ খাম্বা ছেলে যে কথা বলেনা, যে চুপচাপ সে সফল সেই নায়ক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। তার জীবনে একটা প্রজাপতি চঞ্চল মেয়ে আসে যাকে তার ভালো লাগে যাকে সে পছন্দ করে ভালোবাসে৷ তার মানে সেই নীরস ছেলেটার ও একটা প্রজাপতির মত মন আছে। কিন্তু সেই প্রজাপতি কে "ছেলেদের শক্ত থাকতে হয়" "কম কথা বলা ব্যক্তিত্ব" বলে আমরা মেরেই ফেলেছি৷ যার প্রতিফলন পাই এই সব কিছুতে।
মেয়েদের তুলনায় ইকোনোমিকাল ডিপ্রেশন আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে চিন্তা করলে ছেলেদের বেশি বইতে হয়৷ কি আজব এক সমাজ৷ আমি উচ্চ শিক্ষা নেয়ার আগেই বিয়ে দিয়ে দেবে কিনা সেই ভয় যখন আমার মাঝে, তখনি আমার পাশের এক বন্ধুর চিন্তা পাস দিয়ে ছেলেটা কি করবে বাবা মা ভাই বোনের দায়িত্ব নেবার মত কিছু করতে পারবে কিনা। অথচ বাবা মায়ের দায়িত্ব নেবার চিন্তা, পরিবারের দায়িত্ব নেবার দায় মেয়েদের ও ছিলো। আমরা ছেলে গুলোর উপর সেগুলোকে চাপিয়ে দিয়ে ওদের যেমন অসম্ভব চাপে ফেললাম তেমনি মেয়েগুলোকেও ভীষণ অলস বানিয়ে ফেললাম। কখনো কোনো মাঝ বয়সী পুরুষ এর আয় করার পথ বন্ধ হলে তার অবস্থা একবার চিন্তা করেন। বাবা মা বাদ ই দিলাম। স্ত্রী সন্তান দের দেখার একমাত্র লোক সে, সোশ্যাল প্রেসার সাথে একটা আইডেন্টিটি ক্রাইসিস। কার কাছে যাবে? কাকে বলবে? কি বলবে? কীভাবে বলবে? যোগাযোগের রাস্তা আমরা বন্ধ করে দিয়েছিনা?
নানা সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে "মেয়েদের গায়ে হাত তোলাকে" অক্ষমাযোগ্য অপরাধ হিসেবে তুলে ধরা হয়। অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষ ও বলেন " মেয়েদের গায়ে কিভাবে হাত তুলে? কিভাবে পারলো" অথচ পাশেই তাকিয়ে দেখেন তার চেয়ে বেশি মার খেয়ে আধমরা হয়েছে কোনো ছেলে। আমরা সেদিকে দেখিনি। নিউজ ছাপিনি। কেনো ছাপবো? ছেলেরা মার খাবেই৷ ছেলেরা মরে যাবেই। এটা তো স্বাভাবিক ই। ছেলেটার ও যে একটা মানবশরীর, কষ্ট ও যে তার ও কম হয়নি, অপমান যে তার ও কিছু কম হয়নি আমরা কবে ভেবেছি সেসব।
মানুষের জন্য সব কাজ৷ মানুষ চাইলেই সব কাজ করতে পারে। আমরা কাজ গুলো ভাগ করে ফেললাম। এই উপমহাদেশের ছেলেদের পরের মেয়ের উপর বোঝা বানালাম। এই ছেলেরা একেকটা পঙ্গু হয়ে গেলো৷ এদের মধ্যে প্রভুত্ব ঢুকে গেলো। প্রভুরা কীভাবে নিজেদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ করবে? মানসিক ভাবে একটু দুর্বল ছেলেকে "লুইচ্চা" "লেইম" আরো কত কিছু বলে ফেলি। এই লেইম ট্যাগ লাগার ভয়ে কত ছেলে আর কথাই বলেনা। মেয়েদের যেকোনো সমস্যা হুমড়ি খেয়ে পরে সমাধানের দিকে লেগে পরি অথচ একটা ছেলের মানসিক কষ্ট প্রকাশ করবার জায়গা তাকে দিইনা।
মেয়েরা কাঁদবে কথা বলবে সেটা যেমন সহানুভূতির দাবি রাখে, ছেলেরা কাঁদবে কথা বলবে সেটাও তেমনভাবে আদর স্নেহেই শুনতে হবে। ছেলেগুলো কে রোবট বানিয়ে, ওদের ভেতর প্রভুর মনোভাব একদম ছোট বেলা থেকে ঢুকিয়ে আমাদের ছেলেগুলো কে আর মেরে ফেলবেন না প্লিজ। ছেলে হোক মেয়ে হোক আমাদেরই সন্তান, আমাদের ভাই-বোন। মেয়েদের নিয়ে সভা সেমিনার ফুটেজ খাওয়া অনেক হয়েছে। পরিবর্তন আসেনি। কারণ একভাগ মানুষের শিক্ষায় কিছু হয়না বাকি আরেকভাগ কে পুরো অন্ধকারে রেখে। ছেলেগুলোর দিকে একটু তাকান। ওদের যত্ন নিন। ওদের কথা বলতে আর কাঁদতে শেখান। কান্না কথা মানুষের বৈশিষ্ট্য। মেয়েলি বৈশিষ্ট্য না। ভুল শিক্ষায় ছেলেগুলোকে সিগারেট, মদ খেয়ে, রুমের দরজা বন্ধ করে ইউটিউবে গান শুনে, একা সময় পার করে ওদের একাকীত্ব, নিজের কষ্ট ভোলবার ভুল পন্থাগুলো থেকে সরিয়ে আনুন। ছেলেমেয়ে সবার ভালো থাকতে হবে। সবার কথাই শুনতে হবে।
Stop bullying men if they cry. Stop calling them weak if they cry. Take care of men, talk to men on their mental health because men matter too.
Comments