রামায়ণ তথ্য কণিকা আপনি জানেন কি?
সাত কাণ্ড রামায়ণ পড়িয়া সকালে উঠিয়া কয়... আমাদের শোনা বহুল প্রচলিত প্রবাদ হলেও "৭ কাণ্ড রামায়ণ" এর কাণ্ড সংখ্যা আসলে ৫ টি!বিশাল আয়তনের অযোধ্যা কাণ্ড হতে পরবর্তীতে কিছু অংশ নিয়ে আদি/বালকাণ্ড আলাদা গঠন করা হয় বলেই গবেষকদের মত।আর উত্তরকাণ্ড মূল রামায়ণের অংশ কখনোই ছিলনা,এটি অনেক পরবর্তীতে নতুন গল্প লিখে সাধারণ জনগনের মনোরঞ্জন করার জন্যে রামায়ণের যুদ্ধকাণ্ডের পরে যুক্ত করা হয়।রামায়ণের যুদ্ধকাণ্ডের শেষ কয়েকটি শ্লোকেই রামায়ণের সমাপ্তি ঘোষণা করা আছে।
লোকমুখে প্রচলিত যে রাম জন্মের ১০,০০০ বছর আগেই নাকি বাল্মিকী এই রামায়ণ লিখেছিলেন।আদতে এটি সত্য নয়।রামায়ণের অনেকগুলো শ্লোকেই দেখা যায় যে বাল্মিকী আর শ্রীরাম একই সময়ে বসবাসরত মানুষ ছিলেন।আদিপর্বে বাল্মিকী ঋষি নারদকে জিজ্ঞেস করছেন-"কোনস্মিন সাম্প্রতং লোকে..." অর্থাৎ এই মুহূর্তে এমন কোন ব্যাক্তি আছে যাকে সর্বশ্রেষ্ঠ গুণধর হিসেবে বর্ণনা করা যায়?আবার আদিকাণ্ডের দ্বিতীয় অধ্যায়ে বলা হচ্ছে,
প্রাপ্তরাজস্য রামস্য বাল্মিকীর্ভগবানৃষি। চকার চরিতং কৃৎস্নং বিচিত্রপদমর্থবৎ।। অর্থাৎ শ্রীরাম সিংহাসনে আরোহন করার পর(অর্থাৎ বনবাস শেষ করে এসে যখন তিনি সিংহাসনে আরোহন করলেন তার পরে ভগবান ঋষি বাল্মিকী রামের জীবনী রামায়ণ বিচিত্র পদ্যছন্দে রচনা করলেন।
৩)রামায়ণের বিভিন্ন অধ্যায় তথা সর্গের নামকরণ পদ্ধতিও কিন্তু খুব কৌতুহলোদ্দীপক।খেয়াল করে দেখবেন নামকরণগুলো হয় ঘটনাভিত্তিক নয় স্থানভিত্তিক।যেমন বাল(শিশু) কাণ্ড রামের শৈশব-কৈশোরকালের বর্ণনা,অযোধ্যা কাণ্ড উত্তর প্রদেশের অযোধ্যা নামক স্থানের বর্ণনা বলে নামকরণ এরূপ,অরণ্য কাণ্ডও স্থানের উপর ভিত্তি করে কারন ঘটনা অরণ্যে ঘটিত হচ্ছিল।এ সময়ে শ্রী রাম ও মাতা সীতা মহারাষ্ট্রের গোদাবরী নদীর তীরে পঞ্চবটী অরণ্যে বাস করছিলেন।এরপর শ্রী রাম মাতা সীতার খোঁজে যখন দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকের তুঙ্গাভদ্রা নদীর তীরে অবস্থিত হাম্পি নগরীতে তথা কিষ্কিন্ধ্যায় পৌঁছান সেই কাণ্ডের নাম হয় কিষ্কিন্ধ্যা কাণ্ড।যুদ্ধ সংগঠিত হবার ঘটনার উপর ভিত্তি করে নামকরণ হয় যুদ্ধ কাণ্ড।কিন্তু সুন্দরকাণ্ড নামকরণ কি করে হল?
এই সুন্দরকাণ্ড রামায়ণের বাকী সব কাণ্ড থেকে আলাদা কেননা রামায়ণের বাকী ৪ টি কাণ্ডেই মূল বিষয়বস্তু রাম,শ্রীরাম ই তার নায়ক কিন্তু একমাত্র সুন্দরকাণ্ড হল দক্ষিণ ভারতের উপজাতি নৃগোষ্ঠীদের দলনেতা শ্রী হনুমানের উপর ভিত্তি করে লেখা।এই কাণ্ডে হনুমানের গুণাবলী,বীরত্ব ও তাঁর লঙ্কাযাত্রা ই স্থান পেয়েছে।তাঁর মা ছোটবেলায় তাকে আদর করে "সুন্দর" ডাকতেন বলে তাঁর বাল্যকালের নাম অনুসারে এই কাণ্ডের নাম ভগবান বাল্মীকি রেখেছেন "সুন্দর কাণ্ড"।
৪.ঋষি বাল্মীকি কোথায় থাকতেন?কে ছিলেন তিনি? এটা অনেকেই জানেন না যে ঋষি বাল্মিকী থাকতেন উত্তর প্রদেশের অযোধ্যা থেকে আম্বেদকর নগর পর্যন্ত বয়ে যাওয়া গঙ্গা নদীর শাখা তমস নদীর তীরে এক কুটিরে।তাঁর পিতাও একজন বিখ্যাত ঋষি ছিলেন যাঁর নাম ছিল ঋষি প্রচেতা।ইনারা ভৃগু গোত্রের ব্রাহ্মণ ছিলেন।এই নদীতীরে বসেই তিনি শ্রী রামচন্দ্রের জীবনী রচনা করেন।নদীটি মূল জনপদ থেকে বেশ কিছুটা দূরে অবস্থিত ছিল যেখানে নীরবে নিভৃতে বাস করতেন মহামুনি বাল্মীকি।মজার বিষয় হল বনবাস শেষ হবার পর অযোধ্যায় ফেরার পথে এই তমস নদীর তীরের আরেক বিখ্যাত ঋষি ভরদ্বাজের আশ্রমেই একরাত বিশ্রাম নেন শ্রী রাম ও মাতা সীতা।
শেষ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাক্তিত্ব শ্রী রামচন্দ্রের অশেষ গুণসমুদ্রের একটি গুণের কথা দিয়ে-
" কথংচিদুপকারেণ কৃতেণৈকেন তুচ্যতি। ন স্মরতঢ়পকারাণাং শতমপ্যাত্মবন্তয়া।। (অযোধ্যাকাণ্ড ১.১১)
"শ্রীরামের এমনই মহত্ব যে কেউ যদি এমনকি কখনো তার একটিও উপকার করত তিনি তার জন্য আজীবন কৃতজ্ঞ থাকতেন কিন্তু শত অপকার করলেও তা কখনো স্মরণে রাখতেন না।"
Comments