বিমূঢ় কিছু গল্প ও লেসবিয়ান বান্ধবির বিবাহ শোক
মীমের সাথে আজকে আমার পালানোর কথা বা ওকে ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা। প্ল্যান মোতাবেক বিকেল চারটা থেকে ওর জন্য অপেক্ষা করতে করতে পাঁচটা বাজিয়ে ফেলেছি।ওর কিছু হয়েছে কিনা তাও জানি না। জানার কথাও না। ও আমার গার্লফ্রেন্ড না। ত্রিপর্নার গার্লফ্রেন্ড, ওরা দুজনেই মেয়ে, হে ঠিক বুঝেছেন নিষিদ্ধ বেপার সেপার। ত্রিপর্না আমার ভার্সিটি পড়াকালিন ফ্রেন্ড।
আমি কোন ঝামেলায় পড়তে যাচ্ছি নিজেও বুঝতে পারছি না। রাতে একটুও ঘুমাতে দেয়নি।রাতেই আমার বাসায় উঠে বলতে লাগলো “আমারে বাঁচা দোস্ত। মীমের বাবা মা ওর বিয়ে ঠিক করছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পালাবো। তুই আমাদের হেল্প করবি। জীবনে অনেক উপকার করছিস। এই উপকারটাও কর। কসম তোর রূক্ষ যৌবনের, এই উপকারটা করলে আগামী বছর সুন্দর একটা ফুটফুটে ভাতিজা বা ভাতিজি উপহার দিব। আমাদের জন্য উপকারটা না কর। কিন্তু তোর ভাতিজার কথা চিন্তা কইরা উপকারটা কর। তুই উপকার না করলে তোর ভাতিজা মাইন্ড খাবে।”
আমি গাধার মত ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম “দোস্ত আমারে দিয়ে এই গুলা হবে না। তুমি যার সাথে পিরিত করো এই মেয়ের বাবা একজন বিশিষ্ট উকিল। আমি ভুলেও এমন ভুল করতে পারবো না। পরে তোমার শ্বশুর আব্বা আমারে ডজন খানেক মামলা দিয়ে বইসা থাকবে। আর এখনো বিয়ে হয় নাই তার উপরে তোমরা দুইটা লেসবিয়ান এর মধ্যে আমার ভাতিজা নিয়ে আসছো শালী আহাম্মক।” সে অনেক আকুতি মিনতি করে বলতে লাগলো “দোস্ত ওরে আমি অনেক ভালোবাসি বিশ্বাস কর। ভালোবাসার মোহটা অনেক ভয়াবহ, পুর পৃথিবী এই সম্পর্কের বীরুধ আচরন করবে, তার ঊপর শ-খানেক মামলা, মুল্লাদের তরবারি, সামাজিক বহিষ্কার। এতোকিছু জানা, বুঝার পরো আমরা মানুষেরা ভালোবাসি। ভালোবাসা বিশাল একটা ব্যাপার। স্বপ্ন আর কল্পনা দেখলেই তো হবে না। যে স্বপ্ন গুলো আমি দেখিছি সেগুলো আমি আঁকতে চাই। নিজ হাতে রং বসাতে চাই একটু একটু করে। ভালোবাসলে, ভালোবাসার জন্য অনেক কিছু করা লাগে। একটু হেল্প কর না? ওরে না পাইলে আমি নিজেরে শেষ করে দিব।” . এই সামান্য কথাগুলো আমার একদম ভিতরে লেগেছিল। আমি স্বাভাবিক ভাবেই বলেছিলাম “তোর থেকে আমি পাঁচ হাজার টাকা পাই না? দোহাই দোস্ত টাকা গুলো দিয়ে তারপর সুসাইড করিস। আগামী মাসে আমি পাত্রি দেখতে যাবো। পাত্রির ভালো নাম মায়া।হাতে একদম টাকা নেই।পাত্রি দেখতে গেলে খরচের একটা ব্যাপার আছে তাই না?” .
আবিদ কান্নাকাটি করাতে আমি আর ওরে না করতে পারিনি। যখন আমি বলছি “আমাকে কি করতে হবে?” হারামজাদা দাঁত ভ্যাটাকাইয়া একটা হাসি দিয়ে জড়ায় ধরেছিল আর বলেছিল “আমি জানতাম তুই মেয়েদের মত প্রথমে একটু ন্যাকামি করবি। ছাগলের মত ক্যান ম্যা ম্যা করলি?” তারপর আমার এখানেই থেকে গেছে। রাতে একটুও ঘুমাতে দেয়নি। সারা রাত ওর গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলেছে।আমি হাত জোর করে বলেছিলাম “দোস্ত একটু ঘুমাইতে দে। আজকের কথা গুলা জমা করে রাখ।দেখা হলে সব একসাথে গলা দিয়ে বাহির করে দিস।” আমার কথা একটুও শোনে নাই বরং আমাকে বললো “প্রেম কি তুই এটা এখনো বুঝবি না।তুই তো একটা ফার্মের মুরগি। চিপায় বইসা থাকতেই পছন্দ করিস। আমরা কিভাবে প্রেম করি, কিভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলি আজকে এইগুলা দেখে শিখে রাখ। তোর সামনে কাজে লাগবে।এটা বলেই ও ওর মীমকে বলতে লাগতো… . “তোমাকে আমি এতো ভালোবাসলাম কেন? এই ভালোবাসাটা কেমন সাহস জুগিয়েছে বুঝতে পারছো? আকাশের মেঘের মত, বিদুৎতের মত, বহমান নদীর মত জোয়ার ভাটা বইতে থাকে। আমি তোমাকে ছাড়া কেমন করে একা থাকি বলো? রোদের উত্তপ্ত আলোটা থাকবে না তবুও ভিতরটা শুকিয়ে যাবে তোমায় না পাওয়ার বেদনায়। বিকেল চারটায় আমার বন্ধু শোভন তোমাকে নিয়ে আসবে। আমি স্টেশনে অপেক্ষা করবো।”
কথা গুলো যখন বলছিল আমি নিজেই কেমন যেন হয়ে গিয়েছিলাম।” আমি অনুধাবন করলাম ভালোবাসার মোহে কিভাবে মানুষ জড়ায়। এই মোহের এতো শক্তি কেন? চারপাশের জগৎ এই মোহের কাছে এতো দুর্বল হয়ে পড়ে কেন? . মীমের সাথে দেখা হলো আমার আরো কিছুক্ষন পর। আমাকে যখন বললো “কোন রকম বের হয়ে আসলাম। আচ্ছা আমরা এখন পালাবো তাই না? আমার ভিতর একটা অস্থির অস্থির ভাব আনতে হবে না? পালানোর সময় তো চেহারায় অস্থির অস্থির ভাব থাকতে হয়। পালানোর সময় কি আমরা একটু পর পর পিছনে ফিরে তাকাবো কেউ আসছে কিনা দেখার জন্য?” আমি কোন প্রতিভাষ জানলাম না। শুধু ত্রিপর্নার কথা চিন্তা করলাম আর মনে মনে বললাম তোর জীবনে অনেক ফাড়া আছে বান্ধবী। আমি হালকা স্বরে বললাম “আপনি বাসা থেকে যখন বের হয়েছেন তখন থেকেই পালানো কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমার শুধু কাজ হলো আপনাকে ত্রিপর্নার কাছে পৌছে দেওয়া। চেহারায় অস্থির ভাব আনার প্রয়োজন নেই।” .
এটা বলেই আমি হাটতে লাগলাম। যখন কিছুটা পথ চলে আসলাম তখন হঠাৎ করে মীম কান্না করতে লাগলো। আমি বুঝলাম না হঠাৎ করে আবার কি হলো? কাঁদতে কাঁদতেই আমাকে বললো “আপনি হয়তো আমাকে অনেক হাসিখুশি দেখতে পাচ্ছেন শোভন ভাইয়া। আমাকে হয়তো আতেল বা পাগল টাইপের কিছু ভাবছেন। ভাবতেই পারেন। আমার মাথা ঠিক নেই। কিন্তু জানেন কতটা কষ্ট নিয়ে পা বাড়িয়েছি? আমার ভিতরের সত্ত্বাটাকে বার বার প্রশ্ন করেছি, ভালোবাসা কি আসলেই আমাদের মানুষের আত্নার প্রকাশ? শুনেছি ভালোবাসার জন্য কতজন কত কি করেছে। আমি জানি আমার ভেতরে এখন যে ঝড়টা বইছে সেটা পথ হারাবে। হাজার স্বপ্ন ধুলিসাৎ করে অন্য আরেকটা স্বপ্নকে আকড়ে ধরতে হবে। কিন্তু স্বপ্নকে কি আমরা আকড়ে ধরতে পারি? স্বপ্ন মৃত হয়। যতক্ষন পর্যন্ত যে স্বপ্ন পূরণ হয় না সে স্বপ্নকে আমি মৃত বলেই মনে করি। এই মৃত স্বপ্ন শুধু কল্পনায় ভাসে। মৃত স্বপ্নকে যে একটা নাম দিতে পারে তার কাছে এই বিশাল ঝড় কিছুই না।বিশ্বাস করেন পালানোর সাহস আমার কোন কালেই ছিল না। ত্রিপর্নার কথা বাবা মাকে বলেছিও। বাবা মা চায় না এই সম্পর্ক, মানবেই বা কেন ? কোন আইন তো আমাদের বিয়ে মেনেনিবে না।আমি তো মানুষ।মানুষের মাঝেই ভালো লাগা, ভালোবাসা বেঁচে থাকে। তার জন্যই তো মানুষ আরেকটা মানুষকে ভালোবাসতেই পারে। বাবা মায়ের জন্য খুব খারাপ লাগছে। এই যে আমি ত্রিপর্নার কাছে চলে যাচ্ছি এতে আমি আমার বাবা মায়ের কাছে খারাপ হয়ে যাবো। আত্মীয় স্বজনের কাছে খারাপ হয়ে যাবো, ইস্লামিক ভাবে বহিষ্কারও হতে পারেন তারা দুজন । আবার আমি যদি এখন ত্রিপর্নার কাছে না গিয়ে বাবা মায়ের কথা শুনি তখন ত্রিপর্নার কাছে খারাপ হয়ে যাবো। ছলনাময়ী হয়ে যাবো। এই ইট পাথরের নগরীর জঞ্জালে আমাকে নিয়ে কাব্য তৈরি হবে। প্রতারকের কাব্য। আমার কি করার আছে? আমার কি আবার বাবার মায়ের কাছে ফিরে যাওয়া উচিৎ না বলুন উচিৎ না?” আমি অনেকক্ষন ঝিম মেরে থেকে শুধু বললাম “আমার এই ২৬ বছরের জীবনে আমি অনেক কিছু দেখেছি, বুঝেছি।আমার চোখের সামনে যখন এমন কঠিন বাস্তব দৃশ্য হাজির হয় আমার তখন একটা যন্ত্রনা হয়।আপনি একটা কথা বলেছেন “আমরা তো মানুষ। একজকন মানুষের মাঝেই তো ভালো লাগা বেঁচে থাকে যার জন্য অন্য একজন মানুষকে ভালোবাসতে পারে।” কথাটা আমার সব সময় মনে থাকবে। আমি আপনাকে আটকাবো না। ভালো থাকুন।” .
প্রায় দুইটা সপ্তাহ দিন আর রাত আমি নদীর উপর ভেসে চলা একা পদ্ম ফুলের মত অনুভব করলাম। অনুধাবন করি আমাদের জীবনটাও কি এমন? আমি মাথা চুলকাই। ছোট চাচ্চু আমাকে ফোন করে বললো “ভালো আছিস?” আমি বলি “এই তো ভালো। তোমার কি খবর? ছোট্ট তিথি মনি কেমন আছে? ওর বয়স কত এখন সাত না? কত বছর তোমার সাথে দেখা হয় না।সব কিছু আগের মত করা যায় না চাচ্চু?” চাচ্চু দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আমি বুঝতে পারি এই দীর্ঘশ্বাসে হতাশা লুকিয়ে থাকে।দীর্ঘশ্বাস ফেলেই বললো “শুনলাম তোর জন্য নাকি মেয়ে ঠিক করেছে? সব কিছু ভালো করে জেনে নিস।” আমি বুঝতে পারি চাচ্চু কেন আমাকে এই কথাটা বলেছে। আমি শুধু আচ্ছা বলে ফোনটা রেখে দেই। .
আমার চাচ্চুর নাম মুসতাকিম আহমেদ। চাচ্চুর সাথে সম্পর্ক বন্ধুদের মত। আমি যেমন তার সাথে সব কিছু শেয়ার করি তেমনি চাচ্চুও আমার সাথে শেয়ার করে।আমার চাচ্চুকে দাদাভাই বাসা থেকে বাহির করে দিয়েছে। এই বাহির করার কারণটা হলো চাচ্চুর সাথে নাজিয়া সুলতানা নামে একজনের সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে ঠিক করেছিল। ঠিক বিয়ের দিন নাজিয়া সুলতানা বাসা থেকে পালিয়ে যায়। কোথায় গিয়েছে কেউ কিছু বলতে পারেনি। এতে অনেক ঝামেলা সৃষ্টি হয়। দাদাভাই প্রচন্ড রাগ করে। এর বেশ কিছু দিন পর আমি ছোট চাচ্চুকে রুমে একা কান্না করতে দেখি। আমি বুঝতে পারছিলাম না কিভাবে শান্তনা দিব। একজন পুরুষ মানুষ কি এই একটা ঘটনার জন্য কান্না করে? আমি চাচ্চুর কাছে গিয়ে বলেছিলাম “বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মত এমন করে কান্না করছো কেন? ঐ মেয়েরই তো দোষ। নিশ্বচয় উনার রিলেশন আছে। তাই এমন করেছে। আল্লাহর কাছে তো তোমার শুকরিয়া করা দরকার।এমন করার তো মানে হয় না।” চাচ্চু আমার দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে থেকে আবার কান্না করতে করতে বলেছিল “নারে এমন কিছু না।আমার সাথে ওর ফোনে কথা হতো। ওর রিলেশন থাকলে তো আমাকে বলতো। কিন্তু মাঝে মাঝে আমাকে হেসে হেসে বলতো “আমাকে বিয়ে করাটা কি খুব জরুরি? আমাকে বিয়ে না করলে হয় না? আপনার জীবন শেষ হয়ে যাবে আমাকে বিয়ে করলে।পারবেন সামলাতে নিজেকে?” ও এমন কেন করলো? এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। আমি ওকে কথা দিয়েছি সব সময় একসাথে থাকবো যা কিছু হোক। ও অনেক ভালোরে। এমন হতে পারে না। আমার মনে হয় কিছু একটা হয়েছে।আমার ওকে খোঁজে বের করা দরকার। জানা দরকার কেন সে এমন করেছে।” .
আমি সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম চাচ্চু এই নাজিয়া সুলতানার মাঝে কেমন আবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল।ঠিক তিন মাস পর চাচ্চু নাজিয়া সুলতানাকে খুঁজে বের করে এবং জিজ্ঞেস করে কেন এমন করলো? তিনি বলেন “আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি বিশ্বাস করেন। কতবার ভেবেছি আপনাকে সব বলে দেই কিন্তু পারিনি বিশ্বাস করেন পারিনি।আমার ফ্যামিলি কেউ চায়নি বিষয়টা আপনারা জানেন। আমি বলেছিলাম কেন বলতে চাও না? লুকানোর কি আছে? উনাকে জানতে হবে। পরে ঝামেলা হবে। আমি উনাকে ঠকাতে চাই না। কিন্তু আমার বাবা হ্যাঁ আমার বাবা আমার গালে একটা চড় মেরে বলেছিল বেশি বুঝোস? চুপ করে থাক।বেশি লাফিও না” আমি আপনাকে ঠকাতে চাইনি মুসতাকিম সাহেব। আমার বিয়ে হয়েছিল একটা। বিয়ের দশদিনের মাথায় আমার স্বামী রোড এক্সিডেন্ট এ মারা যান। আমি আপনাকে ঠকাতে চাইনি।আমার মন বলতো কেউ আমাকে খোঁজ করুক বা না করুক কিন্তু আপনি আমাকে খোঁজে বের করবেন। এবার বলুন আমি পালিয়ে ঠিক করেছি না? বলুন ঠিক করেছি না? কাউকে কষ্ট পেতে হলো না। আমিই সবার কাছে খারাপ হয়ে বিষয়টা কাধে বহন করে বের হয়ে গেলাম। . চাচ্চু সেদিনই এই নাজিয়া সুলতানাকে বিয়ে করে ফেলে এবং বলে কথা দিয়েছিলাম একসাথে থাকবো যা কিছু হোক। থাকবেন না আমার সাথে?” নাজিয়া সুলতানা অনেকক্ষন কান্না করেছিল। আর এই বিষয়টার কারণে দাদাভাই চাচ্চুকে বাসা থেকে বের করে দেয়। চাচ্চু আমাকে মাঝে মাঝে ফোন করে বলে “জানিসরে শোভন তোর চাচি মাঝে মাঝে কান্নাকাটি করে আমাকে বলে “আমাকে এতো ভালোবাসলেন কেন? আমার জন্য এতো কিছু সহ্য করছেন। আমি কি এই ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা রাখি? বলুন রাখি?” আমি কিছু বলি নারে। বলার কি প্রয়োজন আছে? ওর তো কোন দোষ নেই।” .
২০১৭ ডিসেম্বর মাস। মায়া জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। এবার ছুটিতে বাড়িতে আসবে। আম্মা ঠিক করেছে এই মাসের শেষের দিকে মায়াকে দেখতে যাবে। মায়া হলো আম্মার বান্ধবীর মেয়ে। আমি যখন ছবিতে দেখেছিলাম আম্মা আমাকে বলতে লাগলো “আমি মা হয়ে বলছি আব্বাজান, আমার বান্ধবীর মেয়ে যেমন তেমন মেয়ে না।অনেক লক্ষি একটা মেয়ে। ছবি দেখে এই মেয়ের প্রেমে একদম ফিদা হয়ে যা। আমি হুকুম দিলাম।আর মেয়ের নাম্বার তোর টেবিলে রেখে আসছি। রাতে ফোন দিয়ে প্রেমের আলাপ করে নিস” আমি শুধু হাসছিলাম। আব্বা পত্রিকা পড়া বাদ দিয়ে মায়ের কথা শুনে বলেছিল “আমার প্রেসারের ঔষধটা কোথায় যেন?” . এতোদিন ধরে মায়ার ছবিটা আমি বার বার দেখেছি। কি অদ্ভুত সুন্দর ওর চোখ দুটো। যতবার আমি ছবিটার চোখের দিকে তাকিয়েছি ঠিক ততবার মনে হয়েছে চোখ দুটো ঝকঝক করছে। আমি এই ছবির মাঝেই ওর চোখ দুটো ছোয়ার চেষ্টা করতাম। ওর খোলা চুল গুলোয় হাত বুলিয়ে দিতাম। কিন্তু আমি মায়াকে কোন ফোন দেইনি। একদিন হুট করেই আমি মায়াকে ফোন করে চুপ করে থাকলাম। মায়া ওপাশ থেকে হ্যালো হ্যালোই বলে যাচ্ছিল।আমি ফোনটা কেটে দিয়েছিলাম।কথা বলার সাহস পাচ্ছিলাম না।তার অনেকক্ষন বাদে ও নিজে থেকেই ব্যাক করে বললো “কি অদ্ভুত ফোন কাটলেন কেন শোভন সাহেব?” আমি ঘাবড়ে যাই। ভাবতে লাগলাম আমার নাম কি করে জানলো? আর চিনলোই বা কিভাবে? আমি বেশ অবাকের স্বরে বললাম “আপনি আমাকে চিনেন?” মায়া হাসে। তারপর বলে “এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা কি জরুরী? তা বলুন আমাকে দেখে দেখে রাতের ঘুম হারাম করেছেন তাই না? চোখের নিচে কি কালি পড়েছে?” আমি আরো অবাক হই। বুক ধরফর করে। কপাল ছুয়ে দেখি আমি ঘেমে গেছি। আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। আমি নেড়ে উঠি, আমার ভিতরে হাজার প্রশ্ন তৈরি হতো লাগলো। আমার চুপ থাকা দেখে ও বলেছিল “এতো ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই জনাব। ছোট বেলায় আপনার সাথে আমার বিয়ের সব কথা ঠিক করা হয়। আপনার মা আর আমার মা দুজনে বান্ধবী ছিল তো তাই। যাকে প্রাণের বন্ধু বলে। অবশ্য আপনাকে আপনার মা হয়তো কিছু বলেনি। আমার আম্মু ঠিকি আমাকে বলেছে। কিছুদিন আগেই আপনার নাম্বারটা আপনার মা আমাকে দিয়েছে। অবশ্য পড়ালেখার মাঝে যেন কোন ঝামেলা না হয় সে ব্যাপারে আম্মু আমাকে আগে থেকেই সতর্ক করে দিয়েছিল। তাই তো এতো বছর কত ছেলের প্রপোজ ফিরিয়ে দিয়েছি। ভালো করেছি না? তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নিন তো। আমার প্রেম করতে ইচ্ছে করে।” আমি হাসছিলাম শুধুই হাসছিলাম। এর পর অনেকদিন ধরে আমরা রাতের বেলা বায়োস্কোপের গল্প শুরু করে দিতাম।সুযোগ পেলেই আমি ওকে শরৎচন্দ্র অথবা সমরেশ শোনাতাম। ও মনোযোগ দিয়ে শুনতো আর আমাকে বলতো “আমি একজন ভালো শ্রোতা তারজন্য আমার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা দরকার হু।” . সময়টা শীতকাল। ডিসেম্বর মাস হলেই পুরো শহরে কুয়াশার রাজত্ব শুরু হয়। কনকনে এই শীতে ভিতরের অলসতা বিদায় দিয়েও পা বাড়াতে হয় চাকরি জীবনে। দুপুর যখন হলো আমি একটু তাড়াতাড়িই অফিস থেকে বের হয়ে গেলাম। যখন রিকশায় উঠতে যাবো ঠিক তখন আবিদ আমার সামনে কোথা থেকে এসে গালে একটা চড় লাগিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। আমি বললাম “চড় মারসোস ভালো কথা। কই ছিলি এতোদিন? তুই ভালো আছিস? আমাকে মাফ কর। আমার কিছু করার ছিল নারে। তুই মীমরে ভুল বুঝিস না। ওর হাত পা বাধা এটা কি তুই বুঝোস? লাইফটাকে আমরা যেমন করে ভাবি লাইফটা আসলে তেমন না।” আবিদ হাসে আমার কথা শুনে। আমি আবার বলতে লাগলাম “পাগল হইছিস? আমাদের ভিতরের আত্মাটাকে যখন ভালোবাসা ছুয়ে যায় তখন ভিতরটাই আলাদা একটা জগৎ হয়ে যায়।বাহিরের জগৎ আর ভিতরের জগৎ অনেক তফাৎ।আমাদের ভিতরে ছোট ছোট সুন্দর কল্পনা তৈরি হয় যেটাকে আমরা যেমন করে সাজাই। কিন্তু কি অদ্ভুত এই ভিতরের কল্পনা গুলো বাহিরের বা এই দুনিয়ায় এর কোন দাম নেই। এর দাম কেউ দিতে পারে না।” ত্রিপর্না কান্না করে। আমি তাকে শান্তনা দেই না। এই শান্তনা দেওয়ার আমার শক্তিটা নেই। সে কান্না করতে করতেই বললো “ওর বিয়ে হয়ে গেছেরে। আমি কিছু করতে পারি নাইরে। আমি যাকে ভালোবাসি, যার চোখে চোখ রেখে হাজার স্বপ্ন বুনতে পারবো, যার ভালো লাগা মন্দ লাগা আমি বুঝতে পারি, যার মন খারাপ হলে আমারও মন খারাপ হয়, যার সাথে আমি ওয়াদা করি একসাথে থাকবো, যে জীবনটার মাঝে তাকে ঠায় দিয়েছি সে জীবনটাকে অন্যরা কেন মেনে নেয় না? তাদের এতো সমস্যা কেন? কেন? কেন? আমি তো মানুষ। যার সাথে মীমকে বিয়ে দিয়েছে সেও তো একজন মানুষ। আমরা লেসবিয়ান তাই আমার কাছে দেয়নি? ওর ভালবাসা থেকে আমার ভালবাসা অনেক আলাদা তাই? আজ যদি আমার পুরুষ হতাম ঠিকি দিত তুই বুঝতে পারছোস? আমি কি মেয়েটা খারাপরে বন্ধু? বল না? আমি কি খারাপ?” আমি ওরে জড়িয়ে ধরলাম।আর বললাম “তুই খারাপ হতে যাবি কেন? কে তোরে খারাপ বলছে ওর নামটা বল।” ত্রিপর্না কান্না করতে থাকে আর আমাকে জড়িয়ে ধরে রাখে। কতক্ষন জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো আমি ঠিক জানি না। .
আমি বিমূঢ় হয়ে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবি রাত কেন এতো গম্ভীর হয়। কেন দিন গুলো আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যায়। কেন চাঁদটার দিকে তাকালে নিজেকে একা লাগে? চোখ ভিজে? ঠিক এমন সময় মায়া ফোন করে বললো “আজকে তাহলে কি শোনাবেন?” আমি কিছুক্ষন ঝিম মেরে থেকে বললাম “আজ শরৎচন্দ্র বা সমরেশ শোনানোর ইচ্ছা নেই মায়া। আজকে আমাকে বুঝো। আমার মন বুঝো। দেখো এই রাতের আকাশ আর আকাশের বিন্দু বিন্দু তারা গুলো কেমন করে ঝড় তৈরি করে মনের ভিতর। যে ঝড়ে অসীম চাওয়া থাকে।কিন্তু এই চাওয়া গুলো আমরা ছুয়ে দিতে পারি না কেন বলতে পারো?” মায়া ঝট করে আমাকে বললো “মন খারাপ?” আমি কিছু বলি না। মায়া কেমন করে আমার এই ব্যাপারটা বুঝতে পারলো জানি না। আমার চুপ থাকা দেখে ও বললো “চুপ করে শুনোন আমি কি বলি, দেখুন আপনার মন আমি কেমন করে ভালো করে দেই। আব্বু মাঝে মাঝে আমাকে ফোন দিয়ে বলে “মায়া তোর আম্মু আমার সাথে অভিমান করেছে। অভিমান ভাঙছে না কি করবো?” আমি তখন বাবাকে হাবিজাবি শিখিয়ে দেই। আমার না বাবা মায়ের এই অভিমান গুলো ভালো লাগে। ভালো লাগে শীতের সোনালী রোদে নীলকন্ঠ হয়ে আকাশজুড়ে মুক্ত ডানায় ঘুরে বেড়াতে। আবার মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ভরা লেকের মাঝে পদ্মফুল হয়ে ভাসতে। আমি কি আপনার পদ্মফুল হতে পারি জনাব?” আমার ভিতরটায় যেন প্রাণ ফিরে পায়। আমি এই কথার প্রতিভাষ না দিয়ে বললাম “আমি কি তোমার সাথে দেখা করতে পারি?” সে হেসে বলে “কেন মন ছটফট করছে বুঝি? কিছুদিন পরেই তো বাড়িতে আসবো তখন চোখের মাঝে বন্ধি করিয়েন। আমার যে কারো চোখে বন্ধি হতে ইচ্ছে করে।” .
তারপরদিনই আমি ঢাকায় গিয়ে মায়ার সাথে দেখা করি। মায়া তার মামার বাসায় থাকে। তারসাথে যখন দেখা হলো আমি তাকে খুব লাজুক অবস্থায় দেখি, ভাবি ফোনে কথা বলা আর আমার সামনে এখনের মায়া দেখতে কেমন? আমি বার বার তার ঝকঝকে চোখ দুটোর মাঝে তাকিয়ে থাকি। সে আমাকে বলে “ভয় লাগে এমন করে কি দেখেন? মন বুঝি সইলো না দেখার জন্য?” আমি তাকে বলি “চোখ বুজলেই তোমাকে আমি আমার হৃদয়টা দিয়ে এখন আঁকতে পারি।নীলরঙ্গা বৃষ্টি বা আকাশের মেঘের সমুদ্রে এখন চাইলেই ভাসতে পারি। ভাসবে?” মায়া আমার দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকে আর বলে “আমাদের গল্পের সূচিপত্র তো হলো এবার গল্পটা না হয় শুরু করি? আমি চাই আমাদের গল্পটা সমাপ্ত না হোক। হাজার হাজার বছর ধরে যেন আমাদের গল্পটা এভাবেই চলুক।” . আমি মায়াকে কথা দেই আমাদের গল্প কখনো শেষ হবে না। ঠিকি শেষ হলো না। এই গল্পের মাঝে আরেক গল্প এসে হাজির হলো। যে গল্পের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। সারাটাদিন আমি মায়ার সাথে ছিলাম। একটু রাত করেই যখন বাড়ি ফিরছিলাম হাটতেই হাটতেই ঠিক তখন একটা টয়োটা এভাঞ্জার এমপিভি গাড়ি আমাদের ক্রস করে গেলো। তখন রাত নয়টা। তারপর গাড়িটা আবার কিছুক্ষন পর আস্তে আস্তে পিছন থেকে ব্যাক করলো। তিন চারজনের মত ছিল।ওরা টিটকারি মারতে শুরু করলো। মায়া ভয় পেয়ে আমার হাত আগলে ধরে আস্তে আস্তে বলতে লাগলো কিছু বলার দরকার নেই চুপ করে থাকুন। আমি চুপ করেই ছিলাম আর ওদের দিকে দেখছিলাম।এর কিছুক্ষন পর কিছু বুঝে উঠার আগেই গাড়ি থেকে নেমেই আমাকে দুজন ধরে আর বাকি দুজন মায়াকে জোর করতে লাগলো গাড়িতে তোলার জন্য। আমি বার বার বলতে লাগলাম “ভাই কি হচ্ছে এগুলা? প্লিজ এমন করবেন না। আপনাদের কাছে হাত জোর করি।” মায়া চিৎকার করতে লাগলো। বার বার নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করলো। ওরা আমাকে একটা চড় মেরে আমার পেট বরাবর পিস্তল ধরে বললো “চুপ মাঙ্গেরপোলা, একদম ভুড়ি ফাটায় দিমু চিল্লাইলে। মনের তৃপ্তি মিটাতে পারিনা বহুত দিন। ওরে খাইয়া আজকে তৃপ্তি মিটামু।” আমি বারবার বলতে লাগলাম ভাই তোমাদের পায়ে পড়ি এমন কইরো না।আল্লাহ এটা সহ্য করবে না। ভাই ভাই ও ভাই।” ওরা আমার কথা শুনলো না।একজনের নামটা আমি শুনতে পেরেছিলাম যখন রাশেদকে একজন ডাক দিয়ে বললো “রাশেদ,গাড়িতে তুলছি উঠ তোরা। সেই রাশেদ আমাকে আরেকটা চড় মেরে একটু জোড়েই বললো “শালা নিজে বাঁচলে বাপের নাম।এই মাইয়ার লাইগা এতো লাফাইতিস কিল্লাইগা? ওরা একেকটা মাগী হয়। মাগীদের জন্য গলা ফাটাইয়া কান্না করা লাগে না।এসব মাগী শহরে বহুত পাবি। যা ভাগ শালা।” এটা বলেই আমাকে একটা লাথি মেরে গাড়িতে উঠৈ ওরা গাড়ি টান দেয়। মায়ার ব্যাগটা রাস্তায় পড়ে থাকে। যখন আমাদের সাথে এমন হচ্ছিল কয়েকজন লোক আর গাড়ি সামনে দিয়ে যায় কেউ এগিয়ে আসেনি। কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আমি জানি না মায়ার সাথে কি অত্যাচারটা হবে। আমি দৌড়াতে থাকি গাড়ির পিছনে।আর চিৎকার দিয়ে বলছিলাম আশেপাশের তাকিয়ে থাকা লোকজনকে “আমার মায়াকে বাঁচান” একটা বারের জন্য কেউ আমার কথা শুনেও শুনতে পাচ্ছিলো না। . ঠিক পাঁচ কি সাত মিনিট পর আমি মায়াকে দেখি বিমুঢ় হয়ে কেমন করে হেটে আসছে। আমি দৌড়ে কাছে যেতেই দেখি সামনে পুলিশ চেক পোস্ট। গাড়িটাও আছে।
আমি মায়াকে ধরে বলি “তুমি ঠিক আছো? ঠিক আছো তুমি?” মায়া কথা বলে না। আমি আবার বলি বার বার বলি একটা সময় মায়া কান্না করে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি বুঝতে পারছিলাম ওর পুরো শরীর কাঁপছে। সেই রাশেদ গাড়ি থেকে বের হয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে বলে “শালীর কপালটা ভালো।” তারপর একজন বয়স্ক হাবিলদার নেইম প্লেটে লেখা আজগর উনি বললো “স্যার সামনে নির্বাচন। এমন এখন করা উচিৎ না। আপনার ভাই এর মান ইজ্জত আছে না? ” ওখানে তখন কোন এস আই ছিল না। আমি যখন বিষয়টা বললাম “হাবিলদার আজগর আমার কাছে এসে কানে কানে বললো “আপনি ওদের চিনেন? ওরা খুব ভয়ংকর। ওদের হাত অনেক লম্বা।মেয়েটারে নিয়ে বাড়িত যান।একটা গোসল দিয়ে সুন্দর একটা ঘুম দিতে বলবেন। দেখবেন কিছু মনে নাই। এসব মনে রাখতে নেই।সামান্য একটা দূর্ঘটনা মনে করবেন। ওরা মানুষ ভালো না। দু রাকাত নফল নামাজ পড়বেন কত বড় একটা ফাড়া এই মেয়েটার উপর গেছে বুঝছেন। এখন যান।” আমি অসহায় এর মত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। যে আইনের ভরসা করি সে আইনই ওদের কথা বলে ওদের পা চাটে।আমি সব শুয়োর আর জানোয়ারের চোখ গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি।আমার ভিতরটা খন্ড খন্ড হয়ে যায়। . আমি সারারাত ঘুমালাম না। আমার ভিতরের অসহায়ত্বটা কেমন করে উঠে। ঠিক মাঝরাতে আমি ফোন দেই। মায়া কান্না করতে থাকে। আমি বুঝলাম আমাকে কি করতে হবে। তার ঠিক পর দিনই আমি মায়াকে নিয়ে থানায় মামলা করলাম। যখন মামলাটা করতে চাইলাম তখন ওসি হারুন আমাকে বললো “বাচ্চা পোলাপাইন একটু দুষ্টামি করছে। ছোট বেলায় সবাই একটু একটু দুষ্টামি করেই। আর যাদের নামে মামলা করতে আসছেন এই দেশটা কিন্তু তারাই চালায়। তারা যদি জেলে থাকে দেশ কেমন করে চলবে?” মায়া হঠাৎ করে রেগে বললো “লজ্জা করে না ওদের পক্ষ হয়ে কথা বলতে? আপনার মেয়ে আছে? আজ যদি আপনার মেয়ের সাথে এমন হতো তখন এটাকে কি বলতেন? দুষ্টামি? ছিহ।” আমি বললাম “আসলে সত্য কথা হলো ওরা কেন সাহস পায় জানেন? এই আপনাদের জন্য। আপনাদের এমন সাপোর্ট আর জানোয়ার গুলোর জন্যই এই দেশটার এই অবস্থা। দেশটা নষ্ট হয়ে গেছে।” তারপর ওসি হারুন আমাদের মামলা নিলেন। নেওয়ার সময় বললেন “কিছুই হবে না। আপনাদের ভালোর জন্যই বলছিলাম। আপনাদের বয়স তো তেমন না। ভাবছি বুঝালে বুঝবেন। যাকগা আপনাদের ব্যাপার।” .
বাবা মায়েরা এই খবর পেয়ে ঢাকায় চলে আসে। আমি মাথা থেকে বিষয়টা সরাতে পারিনা। যেই চোখে তাকালে আমি বুঝতে পারতাম চোখ গুলো ঝকঝক করতো। সেই চোখে আমি এখন জল দেখি, কষ্ট দেখি। মায়া আমাকে বলে “আমার যদি কিছু একটা হয়ে যেত আপনি তখন কি করতেন? আর আমার কিছু হলে আমি আপনার সামনে কখনো মুখ দেখানোর সাহস পেতাম না।” আমি মায়াকে বলি “মায়া আমাদের জীবনে হাজার হাজার গল্প থাকে। সে গল্পে একসময় যুদ্ধ করতে হয়।এই জীবন সংগ্রামে যু্দ্ধ করেই শ্বাস নিতে হয়। বেঁচে থাকতে হয়। আমাদের গল্প এখনো শেষ হয়নি। গল্পটা যে অনেক বাকি অনেক। .
আমি অফিস থেকে আরো কিছুদিনের ছুটি নিলাম। কয়েক দিনের ভিতরে এদিকে বিষয়টা কেমন করে যেন মিডিয়ার কাছে পৌছে গেলো। ঠিক দুপুর বেলা ওকে যখন আমি ভার্সিটিতে থেকে আনতে গেলাম। সেই রাশেদরা আবার আমাদের সামনে হাজির হলো। আমাকে বললো “কতবড় সাহস মামলা চুদাইতে গেছোস।কলিজা অনেক বড় তোগো।বিচার চোদায়? এই ভার্সিটির সামনে থেকে বাসায় যাইতে পারবা নাকি তার গ্যারান্টি আছে? শুনছি এই মাইয়ারে সামনে বিয়া করবি? ওরে তো সেদিন খাই নাই। না খাইতেই এতো লাফালাফি করতাছোস?” আমার প্রচন্ড রাগ হয়। মাথার মেজাজ গরম হয়ে যায়। মায়া একটা চড় মেরে এক দলা থুথু ওর মুখে ছিটিয়ে মারে। আমি বললাম “কুত্তার বাচ্চা তোরা কি মানুষ? জানি না কত মানুষকে খুন করছিস, গুম করছিস, কত মেয়ের ইজ্জত নিছিস। তোদের মত জানায়োর গুলার সাথে কথা বলতেই তো ঘৃনা লাগে। শুয়োরের বাচ্চা তোরা ভাবছিস তোদের অত্যাচার সবাই মুখ বুঝে সহ্য করবে? তোদের পিছনে অনেক বড় বড় মানুষের হাত আছে? তাদের ক্ষমতা নিয়ে চলিস। এই দেখ আমার পিছনে কেউ নেই। আমার কি আছে জানোস? সৎ, মনের জোর। নিজের পরিশ্রমে পেটে অন্ন দেই। তোদের মত জানোয়ারের মত না। মারবি? মার শুয়োরের বাচ্চা।মার? . মায়ার ভার্সিটির বন্ধুরা এগিয়ে আসাতে ওরা পিছিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বলে গেলো “ভালোই যদি চাস তাইলে মামলা তুইলা নিস।” বাবা মায়েরা বুঝাতে লাগলো “দরকার নাই এসব ঝামেলার। যা হবার হইছে। ওদের শক্তির সাথে আমরা পেরে উঠবো না। এরকম অনেকের সাথে এমন হয়। যাদের সাথে হয় তারা একটা আশা নিয়ে থাকে ওদের পাশে কেউ দাঁড়াবে কিন্তু কেউ দাঁড়ায় না। এখন দেখ আমাদের সাথেও হলো। আমরাও চাচ্ছি আমাদের পাশে সবাই এসে দাঁড়াক। কেউ আসবে না। এটাই এখনকার সমাজ। সবাই যার যার জীবন নিয়ে ভাবে। আমরা আর এসব ঝামেলা চাই না।” আমি মায়াকে নিয়ে ভাবি। যে কোন সময় ওর কিছু হয়ে যেতে পারে। নিজেকে শান্তনা দিলাম। কিন্তু আমার ভিতরের আগুন নিভে নাই। .
২০১৯ ডিসেম্বর মাস। দেখতে দেখতে অনেক সময় পার করে দিলাম।মায়াকে বিয়ে করলাম।মায়া যখন ঘুমিয়ে যায় আমি প্রায় মায়ার মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকি আর ভাবি এ পদ্মফূল কেমন করে ঘুমায়? আজকেও আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ঠিক এমন সময় একজন ফোন করে বললো “তাহলে ঘুমিয়ে গেলেন? মনে করেছি একজন না একজন জেগ উঠবে। পারলেন ঘুমিয়ে যেতে?” আমি বললাম “কে?” উনি বললেন “আজগর। হাবিলদার আজগর।” আমি অবাক হই। আমি কিছুক্ষন চুপ করে থাকলাম। তারপর বললাম “আমাকে কেন এমন করে বললেন? কি চান?” উনি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো “সেদিন রাতে আমি না থাকলে আপনার স্ত্রী মায়ার কি হতো জানি না। ওর মত আমারও একটা মেয়ে ছিল। আমার মেয়েটার সাথেও এমন করছে সেই জানোয়ার গুলা। আমি বাপ হয়ে কিছু করতে পারি নাই বাজান। আমি একটা দিনও ঘুমাতে পারি না। আমার মেয়েটা প্রায় ঘুমের মাঝে এসে বলে “আব্বু কি দরকার এই আইনের পেশায় থেকে? তারচেয়ে বরং মরে যাও।” আমি মরতেও পারি না। কষ্ট লাগে। আমার মেয়েটা ঘৃনায় মুখটা কাউকে দেখাতে পারে নাই। শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করলো। সাতটা বছর ধরে আমি সুযোগের অপেক্ষায় আছি।আল্লাহর কাছে সব সময় বলে আসছি ওই জানোয়ার গুলার মৃত্যু না দেখে যেন না মরি। আপনাদের এমন প্রতিবাদ দেখে ভাবছিলাম সময় হয়েছে। কিন্তু আপনারাও এমন করে ঘুমিয়ে গেলেন? সত্যি পারলেন?” আমি মায়ার দিকে তাকালাম। তার অনেকক্ষন পর আমি বললাম “আমার সাথে দেখা করুন।” হাবিলদার আজগর চাচা আমার সাথে দেখা করলেন, আমাকে সব কিছু বললেন। এটাও বললেন রাজনীতিতে এখন ঝামেলা চলতেছে বিরোধী দলের সাথে তাই সবাই কেমন হয়ে আছে। রাশেদও এসবের থেকে একটু দুরে তবে প্রতি মাসে কক্সবাজার আসে মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করে। চাচাকে বললাম তাহলে রাশেদের সাথে কক্সবাজার দেখা হচ্ছে। .
রাশেদের গাড়িটা যখন সামনে আসলো আজগর চাচা তখন গাড়িটা থামালো। আয়নার গ্লাসটা রাশেদ নামাতেই চাচা বললেন “আরে স্যার আপনি? এখানে কি মনে করে? অবসর নিলাম একবছর হয়ে গেলো। আপনার সাথেও দেখা হয়ে গেলো। ভালো আছেন?” সে কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো। আজগর চাচা তাকে দ্বিধায় না ফেলতে আবার বললেন আমাদের একটু নামায় দিবেন সামনে একটু দয়া করে? আমি জানি আপনি না করবেন না।” আমি মাঙ্কি টুপি পরে থাকলাম। এমনিতেই শীত পড়ছে। রাশেদ আর কিছু না ভেবেই গাড়িতে উঠালো। কিছু দুর যাওয়ার পরই আমি বললাম “গাড়িটা একটু থামান।” ও আজগর চাচাকে বললেন “কি মিয়া এখানেই নাইমা যাইবা” আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম “ভাইজান মুতে ধরছে। মুতবো।” রাশেদও নামলো আমাদের সাথে আমারো ধরছে এটা বলে। আমি এটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। ওরে বললাম “পৃথিবীটার মাঝে জানোয়ারে ভরে গেছে। এটা কি আপনি বিশ্বাস করেন?” সে হাসতে লাগলো। আজগর চাচার মনে হয় হাসিটা পছন্দ হয়নি উনি একটুও দেরি করলেন না। জানোয়ারের বাচ্চা সাতটা বছর ধরে এটার অপেক্ষায় আছিরে” এটা বলেই ওকে কয়েকটা কোপ দেয়। কোপ খাওয়ার পরই ও মাটিতে পড়ে যায়। আমি বললাম “চাচা একমিনিট আপনি ওরে নিয়ে কি করবেন আমি জানি না। যা ইচ্ছা করেন। ওর সাথে আমার একটু হিসেব আছে।” আমি মাঙ্কি টুপিটা খুলে বললাম “বাইঞ্চোদের বাচ্চা চিনছোস আমারে? আজকে একটু ভয় কর। দেখ মরন যখন কাছে আসে কেমন লাগে। বিশ্বাস কর শুয়োরের বাচ্চা আমার মায়া এখনো মাঝ রাতে চিৎকার দিয়ে উঠে। ভয় পায়।এই জিহ্বা দিয়ে ওরে মাগী বইলা ডাকছিলি না?” আমি ওর জিহ্বাটা কেটে ফেলি।ওরে বলি এখন ডাক।ডাক না?” ও ছটফট করতে থাকে। আজগর চাচা ইচ্ছা মত কোপ মারতে লাগলো।আমি বাধা দেই না। চাচা চিৎকার দিয়ে বললো “আম্মা একটারে মারছি। তুমি উপর থেকে দেখতেছো আম্মা? যারা আমার থেকে তোমারে কাইরা নিছে আমি কাউরে ছাড়বো না আম্মা।কাউরে না। .
আজকেও মায়ার ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। হঠাৎ করে ও জেগে উঠে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে “আপনি সব সময় এমন করে আমাকে দেখেন তাই না?” আমি ওর চুল কানে গুজে দেই। তাকে বলি “তুমি বলেছিলে না, তোমাকে চোখের মাঝে বন্ধি করতাম? আমি প্রতিদিন তোমাকে চোখে বন্ধি করি মায়া।” মায়া আমার বুকে আসে। আমি ওকে জড়িয়ে নেই। আমার বুকের পশমে সে নাক মুখ ঘষতে লাগলো। আমি বললাম “আমাদের গল্প কি আরো বাকি?” মায়া আমার ঠোটের সামনে ঠোট এনে বলে “সমাপ্ত করতে চান?” আমি মাথা নেড়ে না সূচক ইশারা দেই। মায়া বিমূঢ় হয়ে বললো “তাহলে এই পদ্মফুলকে শুধু জড়িয়ে রাখেন হাজার বছর ধরে খুব খুব
Comments