পবিত্র বেদে বিজ্ঞানঃ কুশ উদ্ভিদ ও আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্র
আমরা সকলেই জানি যে পবিত্র অথর্ববেদ এবং ঋগ্বেদে অনেক ধরনের উদ্ভিদের ঔষধী ব্যবহারের কথা বলা আছে এবং সেসকল উদ্ভিদের বর্ণনাও বেদ এবং আয়ুর্বেদে পাওয়া যায়। এসব উদ্ভিদের অনেকগুলোর ই পরিচয় বর্তমানে বিজ্ঞানীরা বের করতে পেরেছেন, আবার অনেকগুলোর পারেননি যেগুলোর পরিচয় বের করার চেষ্টা চলছে । দেখা গেছে বেদে ঠিক যেভাবে বর্ণিত আশ্চর্যজনকভাবে আধুনিক বিজ্ঞানও তাদের সেরূপই ঔষধী গুণ আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে।পবিত্র বেদে বর্ণিত ঠিক এমনই কিছু উদ্ভিদকে নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব আজ -
কুশ উদ্ভিদ
বৈজ্ঞানিক নাম- Desmostachya bipinnata { Tadch grass, Sacrificial grass, Sacred Kusha grass }
[ রাজ্য :Plantae বর্গ: Poales পরিবার: Poaceae গোত্র : Desmostachya প্রজাতি: D. bipinnata ; সপুষ্পক , একবীজপত্রী ]
কুশ (Demostachya bipinnata), একটি কোঁকড়ানে ঘাস প্রজাতি যার মূল কিছুটা মোটা , মধ্যকাণ্ড খাড়া, ১-১.৫ ফুটের মত । পাতা সরু ও পাতলা, গোড়া থেকেই শুরু হয় , ২ সেমি চওড়া ও সূচাগ্র শীর্ষ । বীজ ১সেমি চওড়া ও চ্যাপ্টা ।
কুশ উদ্ভিদ মূলতঃ যজ্ঞস্থলে ব্যবহৃত হয় । বেদে বর্ণিত হয়েছে -
অগ্নিরুক্থে পুরোহিতো গ্রাবাণো বর্হিরধ্বরে ।
ঋচা যামি মরুতো ব্রহ্মণস্পতিং দেবাঁ অবো বরেণ্যম্ ॥
ঋগ্বেদ ০৮।০২৭।০১
অনুবাদঃ (উক্থে) স্তুতির জন্য (অগ্নিঃ) সর্বাধার ঈশ্বর (পুরোহিতঃ) অগ্রগণ্য এবং প্রথম স্থাপনীয় (অধ্বরে) যজ্ঞের জন্য (গ্রাবাণঃ) প্রস্তর খণ্ডও স্তুত্য তথা ব্যবহৃত হয় । (বর্হিঃ) কুশ আদি তৃণেরও প্রয়োজন হয় , এজন্য আমি (ঋচা) স্তোত্র দ্বারা (মরুতঃ) বায়ু থেকে (ব্রহ্মণস্পতিম্) স্তোত্রাচার্য্য থেকে (দেবান্) এবং অন্যান্য বিদ্বানগণের নিকট থেকে (বরেণ্যম্) শ্রেষ্ঠ (অবঃ) রক্ষণাবেক্ষণ (যামি) কামনা করি ॥
ভাষ্যকারঃ পণ্ডিত শিবশঙ্কর শর্ম্মা, আর্যসমাজ
মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী তাঁর ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা গ্রন্থের বেদবিষয়বিচার নামক অধ্যায়ে কুশ সম্পর্কে বলছেন -
কুশ রাখিবার কারণ এই যে, ইহার দ্বারা যজ্ঞশালার মার্জন হইয়া থাকে ও আরশােলা আদি কোন জীব বেদি মধ্যস্থ অগ্নিতে যাইতে পারে না।
ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা - মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী , বঙ্গানুবাদঃ শ্রীশঙ্করনাথ পণ্ডিত
সংস্কৃত গ্রন্থে আমরা নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে কুশের উল্লেখ পাই -
স দর্ভ চমস স্রুক্কা স সমিৎ কুসুমোচ্চয়া ।
বিশ্বামিত্রেণ সহিতা বেদিঃ জজ্বাল স ঋত্বিজা ॥
বাল্মিকী রামায়ণ ১-৩০-৯
অনুবাদঃ তখন কুশ, চমস, স্রুক, সমিৎ ও কুসুম সমুচ্চয়ে পরিব্যাপ্তা সেই বেদি, উপাধ্যায়, পুরোহিত, ঋত্বিক এবং বিশ্বামিত্রের সাথে জাজ্বল্যমান হয়ে উঠলো৷
অনুবাদঃ স্বামী জগদীশ্বরানন্দ সরস্বতী, আর্যসমাজ
দীক্ষিতান্ জটিলান্ মুণ্ডান্ গঃ অজিন অম্বর বাসসঃ ।
দর্ভ মুষ্টি প্রহরণান্ অগ্নি কুণ্ড আয়ুধামঃ তথা ॥
বাল্মিকী রামায়ণ ৫-৪-১৫
অনুবাদঃ হনুমান রাবণের মস্তক মুণ্ডিত, পরিধানে গোচর্ম, জটাধারী, মুষ্টিতে কুশধারী গুপ্তচরগণকে দেখলেন ।
অনুবাদঃ পঞ্চানন তর্করত্ন, বঙ্গবাসী প্রেস
নিম্ব-কুশ-আম্রক-পিত্থ-আদীনাং পঞ্চ-ভাগঃ ॥
কৌটিল্য অর্থশাস্ত্র ০২.১৫.৩৯
অনুবাদঃ নিম, কুশ, আম, কপিত্থ প্রভৃতির বীজ থেকে ১/৫ অংশ তেল পাওয়া যায় ।
মূল অনুবাদঃ আচার্য উদয়বীর শাস্ত্রী , আর্যসমাজ
কুশ দর্ভ , শ্যামাক, কুশ, সূচ্যাগ্র, সূচীমুখ, দীর্ঘপত্র, বর্হি, ও মুঞ্জ এই নামেও শাস্ত্র ও গ্রন্থান্তরে উল্লেখিত হয়েছে । শব্দকল্পদ্রুমে বলা হয়েছে -
দর্ভঃ, পুং, (দৃণাতি বিদারয়তীতি । “দৄদলিভ্যাং ভঃ ।” উণাং ৩ । ১৫১ । ইতি ভঃ ।) কুশঃ । ইত্যমরঃ । ২ । ৪ । ১৬৬ ॥ উলপতৃণম্ । ইতি রত্ন-
মালা ॥ কাশঃ । ইতি শব্দরত্নাবলী ॥
ভিষগার্যরচিত অভিধান মঞ্জরী অনুযায়ী -
দর্ভস্তু দীর্ঘপত্রঃ ক্ষুরপত্রো যজ্ঞসংস্তরণঃ
বর্হিঃস্যাদ্দৃষ্টিশস্ত্রং যাজ্ঞীয়াহ্বঃকুশঃ সমন্ত্রশ্চ।।
অভিধান মঞ্জরী ১৭.২৪৫
রাজদর্ভো মহাদর্ভো মহামূলো মহাকুশঃ।
মহাপত্রীতি কথিতঃ শব্দৈঃ পর্যায়বাচকৈঃ।।
অঃমঃ ১৭.২৪৬
আমাদের আয়ুর্বেদিক নিঘণ্টু শাস্ত্রে বলা হয়েছে -
কুষ্ঠ-বাতাস্র-পিত্তাস্র-গুল্মোপ-কুশ-কামলাঃ ।
ব্যঙ্গাগ্নি-নাশ-সংমোহ-রক্ত-ৎবঙ্-নেত্র-মূত্র-তাঃ ॥
অষ্টাঙ্গহৃদয় সূত্রস্থান ১১.৯
বীজপূরক-মৃদ্বীকা-বট-বেতস-পল্লবান্ ।
মূলানি কুশ-কাশানাং যষ্ট্য্-আহ্বং চ জলে শৃতম্ ॥
অষ্টাঙ্গহৃদয় চিকিৎসাস্থান ১.৭১
কুশো দর্ভস্তথা বর্হিঃ সূচ্যগ্রো যজ্ঞভূষণঃ ।
ততোঽন্যো দোধেপত্রঃ স্যাৎ চুরপ দর্ভদ্বয়ং ত্রিদোষঘ্নং মধুরন্তুবরং হিমম্ ।
মূত্রকৃচ্ছ্রাশ্মরীতৃষ্ণাবস্তিরুকপ্রদরাস্রজিৎ ॥
ভাবপ্রকাশ নিঘণ্টু পূর্ব্বখণ্ড প্রথম ভাগ
দর্ভঃ স্নিগ্ধো হিমঃ স্বাদুঃ কষায়ঃ কফপিত্তহা।
বির্সপদাহকৃচ্ছ্রাশ্মতৃষ্ণাবস্তিবিকারনুৎ।।
কৈয়দেব নিঘণ্টু ১.১২৪২
সারানুবাদঃ দর্ভ বা কুশ ( স্নিগ্ধো) তৈল বা স্নেহযুক্ত ( হিমঃ) ঠাণ্ডা (স্বাদুঃ) মিষ্ট (কষায়ঃ কফপিত্তহা) ত্রিদোষের বিশেষতঃ কফের ( বির্সপ ) Herpes ( দাহ) প্রদাহ [ gastritis, neuropathy, burning sensation in eyes etc ] ( কৃচ্ছ্রাশ্মতৃষ্ণাবস্তিবিকারনুৎ/ মূত্রকৃচ্ছ্রাশ্মরীতৃষ্ণাবস্তিরুকপ্রদরাস্রজিৎ) অস্মরী - রক্তগত কারণ [ menorrhagia, nasal bleeding ] ( বস্তিবিকার) মূত্রাশয় বিকার ( অস্র) অস্মরীর ন্যায় ( বিষ) বিষাক্ততা - এই ক্ষেত্রসমূহে দর্ভ বা কুশের উপযোগীতা রয়েছে ।
অথর্ববেদ ১১.৬.১৫ তে দর্ভ বা কুশ ঘাসকে শরীরের শত্রুনাশক,প্রাণবর্ধক,রোগনাশক বলা হয়েছে।
পঞ্চ রাজ্যানি বীরুধাং সোমশ্রেষ্ঠানি ব্রূমঃ ।
দর্ভো ভঙ্গো যবঃ সহস্তে নো মুঞ্চন্ত্বংহসঃ ॥
অথর্ববেদ ১১.৬.১৫
অনুবাদঃ ঔষধীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও রোগ প্রতিরোধক এমন ৫ উদ্ভিদজ্জ ঔষধের বর্ণনা করা হচ্ছে - সোম তথা সকল ঔষধী উদ্ভিদ , কুশ, ভঙ্গ, যব, সহ এই পঞ্চরাজ্য রূপ ঔষধীর দ্বারা হে পরমেশ্বর আমাদের ব্যাধি থেকে মুক্ত করো ।
ভাষ্যকারঃ পণ্ডিত বিশ্বনাথ বিদ্যালংকার, আর্যসমাজ
একে অথর্ববেদে মৃত্যু ও ক্রোধনাশীও বলা হয়েছে ।
অয়ং দর্ভো বিমন্যুকঃ স্বায় চারণায় চ ।
মন্যোর্বিমন্যুকস্যায়ং মন্যুশমন উচ্যতে ॥
অথর্ববেদ ৬.৪৩.১
অনুবাদঃ এই দর্ভ বা কুশ নামক ঘাস বিশেষ আত্মীয় ও অনাত্মীয় সকলের জন্য ক্রোধরূপ মন্যু নাশক । এই দর্ভ বা কুশ মন্যু তথা মৃত্যুরূপ ক্রোধের উপশম।
ভাষ্যকারঃ পণ্ডিত বিশ্বনাথ বিদ্যালংকার, আর্যসমাজ
অন্যত্র কুশকে উগ্র তথা তীব্র কার্যকরী ঔষধীও বলা হয়েছে ।
শতকাণ্ডো দুশ্চ্যবনঃ সহস্রপর্ণ উত্তিরঃ ।
দর্ভো য উগ্র ওষধিস্তং তে বধ্নাম্যায়ুষে ॥
অথর্ববেদ ১৯.৩২.১
অনুবাদঃ বহুভাবে সাহায্যকারী , অপ্রতিরোধ্য , বহু পালক, উৎকৃষ্ট এই দর্ভ বা কুশ উগ্র ঔষধীরূপ । তোমার ( প্রজার) দীর্ঘ জীবনের জন্য আমি ( শাসক) তা ধারণ করি ( যাতে নীরোগ ও সবল থেকে দেশের ন্যায়বিচার ও নেতৃত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারি ।
ভাষ্যকারঃ পণ্ডিত ক্ষেমকরণ দাস ত্রিবেদী, আর্যসমাজ
চরক সংহিতা,সুশ্রুত সংহিতা,অষ্টাঙ্গ হৃদয় সূত্রে একে মধুর বিপাক ও অগ্নিদীপন (হজমে সাহায্যকারী) বলা হয়েছে । মূত্রাল(প্রস্রাবে সাহায্যকারী বা Diuretics)হিসেবে একে চরক সংহিতার সূত্রস্থানের ৪.১৫ তে উল্লেখ করা হয়েছে । সুশ্রুত সংহিতার সূত্রস্থানের ৩৮/১০-১১ তে একে মুত্রক্রুচ্ছহর বা প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশনে উপকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।আর প্রকৃতপক্ষেই বিখ্যাত মেডিকেল সায়েন্স বিষয়ক জার্নাল পাবমেডে প্রকাশিত একটি রিসার্চ পেপারে ২৯ জন স্বেচ্ছাসেবীর উপর চালিত পরীক্ষায় দেখা গেছে কুশ ঘাস ডাইউরেটিকস হিসেবে এবং প্রস্রাবের ইনফেকশন দূরীকরণে কাজ করছে।রিসার্চ পেপারটির লিংক- https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3665103/#!po=2.00000
এছাড়াও কুশঘাসকে স্তন্যজননা(Galactogogue বা মায়ের স্তনে দুগ্ধ উৎপন্নকারী), রসায়ন( Anti Oxidant), বাত-পিত্ত-কফনাশকারী ইত্যাদি রূপে বর্ণনা করা হয়েছে এই প্রাচীন গ্রন্থসমূহে ।
শরাসঃ কুশরাসো দর্ভাসঃ সৈর্যা উত ।
মৌঞ্জা অদৃষ্টা বৈরিণাঃ সর্বে সাকং ন্যলিপ্সত ॥
ঋগ্বেদ ১.১৯১.৩
অনুবাদঃ সেই বিষযুক্ত জীবাণুগুলো লুকিয়ে আছে লতাপাতায়,পুকুরে ও ডোবায়, কুুুশ ঘাসে,হ্রদে,স্রোতে, মুঞ্জ মূলে,পাতায় ও বৃক্ষে।একসাথে তারা পরজীবিরূপে সর্বত্র লেগে থাকে।
অনুবাদঃ ড. তুলসীরাম শর্ম্মা , আর্যসমাজ
আধুনিক বিজ্ঞান থেকে আমরা জানি যে নোংরা উদ্ভিজ্জ খাদ্যে ও অপরিস্কার পানিতে থাকে রোটা ভাইরাস ,E.histolytica প্যারাসাইট যেগুলো মানুষের অন্ত্রে গিয়ে বিষ নিঃসরণ করে [ The toxic rotavirus protein NSP4 induces age- and calcium ion-dependent chloride secretion, disrupts SGLT1 (sodium/glucose cotransporter 2) transporter-mediated reabsorption of water, apparently reduces activity of brush-border membrane disaccharidases, and activates the calcium ion-dependent secretory reflexes of the enteric nervous system. ] যার ফলে ডায়রিয়া,ডিসেন্ট্রি হয়ে থাকে । বিভিন্ন পরজীবীসমূহ লার্ভা,ডিম প্রভৃতি রূপে দলবদ্ধভাবে পানির স্রোতে বা পুকুরে,ডোবায় বা হ্রদে থাকে।যেমন Schistosoma Hematobium নামক পরজীবি যা হ্রদে বা পুকুরে,স্রোতে থাকে এবং সেখানে স্নান করলে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে আমাদের মূত্রথলিতে রোগ সৃষ্টি করে।
আবার Hookworms সহ বিভিন্ন প্যারাসাইট বিভিন্ন উদ্ভিদে,পাতায়,শাক সবজিতে লেগে থাকে যা ফলমূল শাকসবজি ভালো করে না ধুয়ে খেলে আমাদের অন্ত্রে প্রবেশ করে এবং রোগব্যাধি সৃষ্টি করে।পবিত্র বেদ অনুজীববিদ্যার এই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়গুলোই তুলে ধরেছে।
রাসায়নিক পরীক্ষায় এর মূলে Cylindrin, Arundroine ও Feninole isoarborinole পাওয়া গিয়েছে । এর মূল ঝাঁঝালো,কিছুটা মিষ্টি। যেসব রোগের ঔষধ তৈরীতে ব্যবহৃত হয়- ১.ডায়রিয়া [ Decoction, 40-50 mL ] ২.ডিসেন্ট্রি [ ঐ ] ৩.এস ডাইউরেটিক [ ঐ ] ৪.এজমা [ পেস্ট ব্যবহার করা হয় ] ৫.হাইপারডিপসিয়া ৬. পাইলস্ [ বল মূল ( বৈজ্ঞানিক নাম- Sida cordifolia) ও কুশ মূল ব্যবহার করা হয় ] ৭. স্তনদুগ্ধ বৃদ্ধি [ গরম দুধের সাথে 40-50 mL ] ৮. কাটা বা ক্ষতস্থান [ কুশের সাথে নিম,হলুদ ও ত্রিফলা ব্যবহার করা হয় ] এগুলো থেকে আয়ুর্বেদিক ঔষধও রয়েছে অশ্মরী কাশ্য , মূত্রবিরচনীয় কাশ্য, চন্দনাদি তৈল, কর্পূরাদি অর্ক, বটগাজনকুশরস, P – Lact granule প্রভৃতি । অর্থাৎ, আধুনিক বিজ্ঞান নিশ্চিত করছে যে ইত্যাদি রোগের প্রতিষেধকরুপে কাজে লাগে । এই কুশঘাস হিন্দু সংস্কৃতিতে বিশুদ্ধিকরণ এর কাজে ব্যাবহৃত হয়। যজ্ঞসহ বিভিন্ন পবিত্র অনুষ্ঠানে পবিত্র জল ছিটানোর কাজেও কুশঘাস ব্যাবহৃত হয়। Centre for Nanotechnology and Advanced Biomaterials (CeNTAB) and the Centre for Advanced Research in Indian System of Medicine (CARISM) of the SASTRA University এর একদল গবেষক কুশ ঘাস নিয়ে গবেষণায় চমকপ্রদ কিছু ফল পেয়েছেন।
আশ্চর্যের এখানেই শেষ নয় ! পবিত্র অথর্ববেদের ৬.৪৩.২ এ বলা হয়েছে কুশঘাসের মূল নাকি ভুরিমূল সমুদ্রম্অবতিষ্ঠাতি দর্ভঃ পৃথিব্যা বা ভূমিপৃষ্ঠ হতে একদম গভীরে জল স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত।
অনুবাদঃ পণ্ডিত বিশ্বনাথ বিদ্যালংকার, আর্যসমাজ
আর আধুনিক উদ্ভিদবিজ্ঞানের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি বেদে উল্লেখিত ঔষধি ঘাসসমূহের মধ্যে একমাত্র কুশ ঘাসের মূল ই ভূমির নিচে ৫ ফুট পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে !
শ্রীগীতাতে যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই কুশ ঘাসের আসন কে ধ্যান করার জন্য উৎকৃষ্ট হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
শুচৌ দেশে প্রতিষ্ঠাপ্য স্থিরমাসনমাত্মনঃ ৷
নাত্যুচ্ছ্রিতং নাতিনীচং চৈলাজিনকুশোত্তরম্ ॥১১॥
তত্রৈকাগ্রং মনঃ কৃত্বা যতচিত্তেন্দ্রিয়ক্রিয়ঃ ৷
উপবিশ্যাসনে যুঞ্জ্যাদ্ যোগমাত্মবিশুদ্ধয়ে ॥১২॥
গীতা ধ্যানযোগ / ৬.১১-১২
অনুবাদঃ যোগ অভ্যাসের নিয়ম এই যে, কুশাসনের উপর মৃগচর্মের আসন, তার উপরে বস্ত্রাসন রেখে অত্যন্ত উচ্চ বা অত্যন্ত নীচ না করে, সেই আসন পবিত্র স্থানে স্থাপন করে তাতে আসীন হবেন। সেখানে উপবিষ্ট হয়ে চিত্ত, ইন্দ্রিয় ও ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রিত করে চিত্ত শুদ্ধির জন্য মনকে একাগ্র করে যোগ অভ্যাস করবেন।
পবিত্র বেদের এই অতিপ্রাকৃত জ্ঞান ছড়িয়ে দিন সকলের মাঝে !
Comments