top of page

গান্ধারীর ১০১ টি সন্তানের জন্ম দান এবং বিজ্ঞানের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ যাত্রা

Writer's picture: Just Another BangladeshiJust Another Bangladeshi

বেদব্যাস যা করে গেছে প্রায় ৫২০০ বছর আগে, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান তা করার চেষ্টা করছে সবে। হিন্দু ধর্মের এই বিজ্ঞানকে জানতে ও বুঝতে হলে অবশ্যই মহাভারত জানতে হবে





মহাভারতের অনেক ঘটনারই, বর্তমানের প্রেক্ষাপটে বাস্তব ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব হয় না, যেমন- যজ্ঞের আগুন থেকে দ্রৌপদী ও ধৃষ্টদ্যম্নুর জন্ম; যোদ্ধাদের অবিশ্বাস্য তীর যুদ্ধ, যেখানে তীর নিক্ষেপ করেই সৃষ্টি করা যায়-আগুন, জল, ধোঁয়া বা একটি তীর থেকে হয় একাধিক তীর, এরকম আরো অনেক ঘটনা আছে, যার মধ্যে একটি হলো- গান্ধারীর ১০১ সন্তানের জন্ম।


মূল ঘটনা জানা না থাকলে মনে হবে, এটা কিভাব সম্ভব ?

কোন নারীর পক্ষে এক জীবনে ১০১টি সন্তানের জন্ম দেওয়া ! যেখানে সন্তানের জন্ম নারীর ঋতুচক্রের সাথে সম্পর্কিত, যেই ঋতু শুরু হয় ১২/১৩ বছর বয়সে এবং চলতে থাকে ৪৫ বা খুব বেশি হলে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত ?

তাহলে এই ৩০/৩৫ বছরের মধ্যে কিভাবে ১০১ সন্তানের জন্ম দেওয়া সম্ভব ?

প্রতি বছর ১ টি করে হলেও তো সর্বোচ্চ ৩৫ টি হবে; কোন কোন নারীর এক সাথে ২, ৩ বা ৪ টি বা তারও বেশি সন্তান হয়, কিন্তু এটা তো রেগুলার ঘটনা নয় যে, প্রত্যেকবারই ৩/৪ টি সন্তান হয়ে ৩০/৩৫ বছরে ১০১ টি সন্তান হবে ?

আর এভাবে প্রতিবছর কোন নারীর পক্ষে সন্তান ধারণ এবং প্রসবও সম্ভব নয়, কারণ তাহলে তার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়বে এবং খুব দ্রুত তার মৃত্য হবে।


পশ্চিম বঙ্গের এক মুসলিম মহিলা এ পর্যন্ত ২৩ টি সন্তানের জন্ম দিতে পেরেছে, তার সন্তান ধারণের বয়স এখন প্রায় শেষের দিকে, তাই সম্ভবত আর সন্তানের জন্ম দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব হবে না। এটাই বাস্তব, সমগ্র জীবন ধরে কোন ধরণের জন্ম নিয়ন্ত্রণ না করলে একজন মহিলার পক্ষে ২০/২৫ টি সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব। কিন্তু তাহলে গান্ধারী ১০১ টি সন্তানের জন্ম দিলো কিভাবে ?


গান্ধারী, ১০০ পুত্রের জননী হবে, এটা ছিল তার জন্য শিবের বর এবং এই ১০০ পুত্রের মৃত্যু তার জীবদ্দশাতেই হবে, এটা ছিল তার পূর্ব জন্মের পাপের ফল। পূর্ব জন্মে সে নাকি খেলার ছলে ১০০ টি ফড়িং মেরেছিল।


যাই হোক, ধৃতরাষ্ট্রের সাথে গান্ধারীর বিয়ে হওয়ার পর সবাই যখন জানতে পারলো যে, গান্ধারীর ওপর শত পুত্রের বর আছ, তখন সবাই খুশি হলো; কিন্তু কিভাবে সে এই শত পুত্ররে জন্ম দেবে, সে ব্যাপারে কারো কোন ধারণা ছিল না, সবাই ভেবেছিলো একটির পর একটি করে সে শত পুত্রের জন্ম দেবে।


যা হোক, গান্ধারী অন্তঃসত্ত্বা হয় এবং সন্তান প্রসবের নির্ধারিত সময় পার হয়ে যায় তবু তার প্রসব হয় না, এটা নিয়ে গান্ধারীকে সহ্য করতে হয় একদিকে গর্ভের যন্ত্রণা অন্যদিকে পারিবারিক যন্ত্রণা। কেন তার সন্তান প্রসব হচ্ছে না, এটাও নাকি গান্ধারীর দোষ! পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ হলে যা হয়, যা ই ঘটুক, সব দোষ নারীর!


যাই হোক, গর্ভ ধারণের প্রায় দুই বছর পর গান্ধারীর প্রসব হয়, কিন্তু সেটা কোন মানব শিশু নয়, একতাল মাংস পিণ্ড। এরপর বিষয়টি প্রথম বুঝতে পারে রাজমাতা সত্যবতী, সে বুঝতে পারে যে, এই একতাল মাংসপিণ্ড আসলে ১০০ সন্তানের বীজ, যাকে আমরা আধুনিক বিজ্ঞানের ভাষায়, সদ্য সৃষ্টি হওয়া ভ্রুনও বলতে পারি; সে উপলব্ধি করে, গান্ধারীর কাছ থেকে তারা যেভাবে শত পুত্র কামনা করছিল, সেইটাই তো ছিল একটা অযৌক্তিক ভাবনা; এভাবে কি কোন মেয়ে ১০০ সন্তানের জন্ম দিতে পারে ?

এরপর এই মানব শিশুর বীজগুলো কিভাবে মানব সন্তানে পরিণত হবে, সেই ব্যবস্থা করার জন্য সত্যবতী, সংবাদ দেয় মহাজ্ঞানী বেদব্যাসকে।


ব্যাস এসে বুঝতে পারে সেখানে ১০০ টি নয় ভ্রুন রয়েছে ১০১ টি, তাই সেই মাটির নিচে একটি ঘর প্রস্তুত করিয়ে, (যেভাবে হ্যাচারিতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে মুরগীর ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা উৎপাদন করা হয়) সেখানে নানা পদার্থের মিশ্রন ঘটিয়ে এক ধরণের আরক তৈরি করে এবং ১০১টি মাটির কলসের মধ্যে সেই আরকগুলো প্রয়োজন মতো রেখে তার মধ্যে একটি করে ভ্রুনকে রাখে, এভাবে সেই কলসের মধ্যে ভ্রুণগুলো বড় হতে থাকে এবং একটা সময় পূর্ণ মানব শিশুত পরিণত হয়ে কলস ভেঙ্গে বের হয়ে আসে, জন্ম হয় গান্ধারীর শত পুত্র এবং ১ টি কন্যার।


এখন এই ঘটনাটিকে আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে বিবেচনা করা যাক। আমরা অনেকেই জানি যে, বর্তমানে টেস্টটিউব পদ্ধতির মাধ্যমে মানব শিশুর জন্ম দেওয়া সম্ভব হচ্ছে, কিন্তু এই টেস্ট টিউব পদ্ধতিটা আসলে কি ?


যখন কোন নারীর মাসিক বা ঋতুচক্র নিয়মিত হচ্ছে অর্থাৎ শরীরে ডিম্বানুর সৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু কোন কারণে সেই ডিম্বানু পুরুষের শুক্রানু দ্বারা নিষিক্ত হয়ে মানব ভ্রুনের পরিণত হচ্ছে না, তার মানে গর্ভধারণ হচ্ছে না, এমন পরিস্থিতিতে সেই নারীর ডিম্বানুকে সংগ্রহ করে পুরুষের শুক্রানু দ্বারা নিষিক্ত করে ভ্রুণের সৃষ্টি করা হয় এবং সেই ভ্রুণকে আবার নারীর গর্ভে স্থাপন করা হয়, সেখানেই বেড়ে ওঠে সেই ভ্রুণ এবং জন্ম হয় একটি মানব শিশুর। এই পদ্ধতিকেই বলা হয় টেস্ট টিউব পদ্ধতি। কিন্তু অনেকে মনে করে এই পদ্ধতিতে বোধহয় একটি মানব শিশুর জন্মই হয় টেস্টটিউব বা ল্যাবরেটরিতে। আসলে ব্যাপার তা নয়, এই পদ্ধতিতে শুধু মানব ভ্রুণের জন্ম দেওয়া হয় টেস্ট টিউবে, পরে আবার তাকে মাতৃগর্ভেই স্থাপন করে বেড়ে উঠার সুযোগ দেওয়া হয় এবং শেষ পর্যন্ত মায়ের গর্ভ থেকেই জন্ম হয় সেই সন্তানের ।


আরেকটা পদ্ধতি হচ্ছে ক্লোন। এই পদ্ধতিতে কোন একটি প্রাণীর দেহের একটি কোষকে কালচার ক’রে, ভ্রুনের জন্ম দিয়ে, তাকে সমজাতীয় অন্য একটি প্রাণীর গর্ভে স্থাপন ক’রে সেই প্রাণীর জন্ম দেওয়া হয়, কিন্তু এই পদ্ধতিতে নতুন জন্ম নেওয়া প্রাণীটি, যে প্রাণীর দেহ থেকে কোষ সংগ্রহ করে তার জন্ম দেওয়া হয়েছে, তার হুবহু অনুরূপ হয় এবং তার মধ্য কোন স্বাতন্ত্রতা থাকে না, এজন্যই এটাকে বলা হয় ক্লোন বা হুবহু নকল। কিন্তু এই উভয় ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের যে সীমাবদ্ধতা, তা হলো- দেহের বাইরে ভ্রুনের সৃষ্টি করা সম্ভব হলেও, সেই ভ্রুণের বেড়ে উঠার জন্য তাদেরকে কোন মাতৃগর্ভের সাহায্য নিতেই হচ্ছে, এমন একটি ল্যাবরেটরি বা পরিবেশ তারা এখন পর্যন্ত তৈরি করতে পারে নি, যেখানে তারা সৃষ্টি করা ভ্রুণের বৃদ্ধি ঘটাতে সক্ষম, যে কাজটি প্রায় ৫ হাজার বছর পূর্বেই করে গিয়েছেন মহামুনি বেদব্যাস!


বিষয়টি একবার ভাবুন আর চিন্তা করুন আধুনিক বিজ্ঞানের চেয়ে কত আধুনিক বা ফাস্ট ছিলো হিন্দু ধর্মের বিজ্ঞান ।


কেউ কেউ বলত পারেন, মহাভারতের এই গল্পগুলো আজগুবি এবং এগুলোকে বিজ্ঞানের অগ্র পথিক বা পথ প্রদর্শক ব’লে মেনে নেওয়া যায় না। যেমন- অর্জুনের এক তীর থেকে শত শত তীর তৈরি হওয়া।


অর্জুনের একটি তীর থেকে শত শত তীর তৈরি হওয়া মানে একবার নিক্ষেপে শত শত মানুষের মৃত্যু, এটা কি এখন সম্ভব হচ্ছে না ? বর্তমানে একটা ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করে কি শত শত বা হাজার হাজার বা লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটানো সম্ভব হচ্ছে না ?


মহাভারতের এই সব ঘটনাকে যদি আজগুবি বলে মনে করি, তাহলে তো পুরো মহাভারতকেই অস্বীকার করতে হয়, তাহলে মহাভারতের যে ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্নগুলো এখনো আছে, যেমন- কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ক্ষেত্র; পাণ্ডবদের রাজধানী ইন্দ্রপ্রস্থ, যা বর্তমানে দিল্লি শহরের একটা এলাকার নাম; দ্বারকা নগরী, কাশী; গান্ধার রাজ্য, যার বর্তমান নাম আফগানিস্তান; এগুলোকেও তো অস্বীকার করতে হয়, কিন্তু এগুলোকে আপনি অস্বীকার করবেন কিভাবে ?


মহাজ্ঞানী বেদব্যাস, মানুষের দেহের বাইরে মানব ভ্রুণের বেড়ে উঠার পদ্ধতি আবিষ্কার ক’রে সেই ৫ হাজার বছর পূর্বেই ১০১ টি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন; শুধু তাই নয়, তিনি জানতেন, ঠিক কখন যৌন সঙ্গমের ফলে মাতৃগর্ভে মানব ভ্রুণের জন্ম হয়। তাই তিনি মাত্র একবার করে সঙ্গম করে, অম্বিকার গর্ভে একটি সন্তানের জন্ম দেন, যার নাম ধৃতরাষ্ট্র; অম্বালিকার গর্ভে জন্ম দেন পাণ্ডুর এবং এক দাসীর ইচ্ছা পূরণে তার গর্ভে জন্ম দেন বিদুরের। শুধু তাই নয়, এছাড়াও তিনি জানতেন, নারী গর্ভে মানব শিশুর জন্ম হওয়ার সময় তার মায়ের মনোবৃত্তি অনুসারে সেই সন্তানের চরিত্র এমন কি শারীরিক লক্ষ্মণও প্রকাশ পায়।


ঘটনাটি এরকম : সন্তানের জন্ম হওয়ার আগেই অম্বিকা এবং অম্বালিকার স্বামী বিচিত্রবীর্য মারা গেলে, রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সন্তানের জন্ম দেওয়ার তাগিদ থেকে, নিয়োগ পদ্ধতি অনুসারে, যে নিয়োগ পদ্ধতিতে বিশেষ প্রয়োজনে সন্তান উৎপাদনের জন্য কোন সাধু পুরুষকে নিয়োগ করা হয়, যিনি কাম ও মোহের উর্ধ্বে এবং যিনি যৌন সঙ্গম করবেন দায়িত্ব পালনের জন্য, কামনার বশে নয়; সেই নিয়োগ পদ্ধতি অনুসারে, অম্বিকা ও অম্বালিকার শাশুড়ি সত্যবতী, বেদব্যাসকে আহ্বান করেন এবং তার পুত্রবধূদের গর্ভে সন্তান উৎপাদনের জন্য বলেন। কিন্তু অম্বিকা ও অম্বালিকা এই বিষয়টি মেনে নিতে পারছিল না। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রয়োজনে এবং শাশুড়ির আদেশে যখন তারা বেদব্যাসের সাথে মিলিত হতে বাধ্য হন, তখন অম্বিকা চোখ বন্ধ করে ছিল এবং অম্বালিকা ভয়ে পান্ডু বর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এই কারণে দায়িত্ব শেষ করে এসেই বেদব্যাস সত্যবতীকে জানিয়েছিলেন, অম্বিকার পুত্র হবে অন্ধ এবং অম্বালিকার পুত্র হবে পাণ্ডু বর্ণের; এছাড়াও অনাগত সন্তান সম্পর্কে বেদব্যাস যা যা বলেছিলেন, পরে দেখা গেলো সেই সব দোষ গুণ নিয়েই ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডু ও বিদুরের জন্ম হয়েছে। এখন চিন্তা করুন, বেদব্যাস কত বড় চিকিৎসা বিজ্ঞানী ছিলেন ?


এই নিয়োগ পদ্ধতি নিয়েও মুসলমানদের চুলকানির শেষ নেই। এটা শুনেই তারা বলবে, এটা কি রকম ব্যবস্থা বা এটা অনৈতিক বা হিন্দু ধর্ম যৌনতার ধর্ম ইত্যাদি ইত্যাদি।


আমি একটা কথা মাঝে মাঝেই বলি যে, ‘যে ধর্ম বাস্তবতাকে স্বীকার করে না, সেটা কোন ধর্ম নয়’ এবং রামায়ণে একটা কথা লিখা আছে যে, “যেখানে সত্য নেই, সেটা কোন ধর্ম নয়।”


মহাভারত লিখেছেন বেদব্যাস এবং তিনি যদি সত্যকে লুকোতে চাইতেন, তাহলে শুধু লিখে দিতেন যে, ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডুর জন্মের পর তাদের স্বামী বিচিত্রবীর্য মারা গিয়েছিল, আর বিদুর ছিল এক দাসীর পুত্র, তার পিতার নাম অমুক; ব্যাস, কেউ কি এ নিয়ে আর কোন কথা বলতে পারতো, না কেউ এ বিষয়ে সত্য অনুসন্ধান করে পরে বেদব্যাসক কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারত ?

এর কোন কিছুরই সম্ভাবনা ছিল না; কারণ, পরবর্তীতে মহাভারতের পুরো কাহিনীর মধ্যে এই ঘটনা নিয়ে কোন জটিলতার সৃষ্টি হয় নি। তাই এই ঘটনাকে আড়াল করে গেলে কোন সমস্যারই সৃষ্টি হতো না। তবু বেদব্যাস সত্যকে গোপন করেন নি; কারণ তিনি জানতেন, “যেখানে সত্য নেই, সেটা কোন ধর্ম নয়।” আর সত্যকে অস্বীকার করা কখনো উচিত নয়, কারণ সেটা মানুষের ধর্ম নয়। সনাতন ধর্ম এই রকম সততার ধর্ম, যার অনুসারী হিন্দুরা।


মহাভারতে যে নিয়োগ পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে, সেই নিয়োগ পদ্ধতির বাস্তবতা এখনও সমাজে আছে কিনা, এবার সেদিকে একটু নজর দেওয়া যাক।


সমাজে যত দম্পতি সন্তান না হওয়া জনিত সমস্যায় ভোগে, এদের মধ্যে বেশির ভাগ সমস্যা পুরুষের। যখন কোন মেয়ে এটা বোঝে যায় যে সমস্যা তার নয়, তার স্বামীর; তখন চিকিৎসার আড়ালে, সুযোগ থাকলে সে চেষ্টা করে অন্য ভাবে সন্তান নিয়ে তার স্বামী এবং স্বামীর পরিবারকে খুশি করার এবং নিজের পরিবারকে রক্ষা করার। এই চেষ্টাটাই হলো, পরিবারের মধ্যে সুযোগ থাকলে বাড়িরই অন্য কোন পুরুষ বা তার বাপের বাড়ির কোন পুরুষ বা তার স্কুল কলেজের কোন বয়ফ্রেন্ড বা সাবেক প্রেমিকের সাথে সেক্স। এইভাবে যখন সন্তান গর্ভে আসে, তখন সেটাকে তার পরিবারের লোকজন চিকিৎসার সফলতা বলেই মনে করে।


এছাড়াও আধুনিক চিকিৎসায় যাদের কোনভাবেই সন্তান হয় না এবং এইভাবে গোপনে যারা কাউকে নিয়োগ করতেও সক্ষম হয় না বা সেই মন মানসিকতাও যাদের নেই, তারা বা তাদের পরিবার দ্বারস্থ হয় পীর ফকিরের কাছে, তারা নানাভাবে সেই মেয়েদেরকে ব্যবহার করে তাদের গর্ভে সন্তান উৎপাদন করে দেয়, কিন্তু সংসার রক্ষার খাতিরে মেয়েরা সেই ঘটনাকে চিরদিন গোপনই রাখে এবং পরিবারের লোকেরা বিশ্বাস করে, সেই পীর বা ফকিরের দোয়াতেই তাদের সন্তান লাভ হয়েছে। কিন্তু আসল সত্য চেপে যেতে বাধ্য হয় ঐ মেয়ে এবং ঐ পীর ফকিরের নাম তখন ফুলে ফেঁপে উঠে এবং তার ব্যবসা তখন আরও বেড়ে যায়। ঠিক এই ধরণের একটি ঘটনা নিয়ে তসলিমা নাসরিন একটি ছোট গল্প লিখে পীর ফকিরের দোয়ায় সন্তান লাভের গোমর ফাঁস করেছিলেন। কেউ যদি সেই গল্পটা পড়ে থাকেন, তাহলে ব্যাপারটা আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। এভাবে স্বামীর আড়ালে- পীর ফকির বা নিকটস্থ আত্মীয় পুরুষ দ্বারা জন্ম নেওয়া সন্তানের সংখ্যা দেশে হাজার হাজার নয় লাখ লাখ। তাছাড়াও খুব কম মেয়েই আছে, যারা মন মানসিকতায় খুব চরিত্রবতী হওয়া সত্ত্বেও, স্বামীর দ্বারা সন্তান উৎপাদন না হলে গোপনে অন্য পুরুষের দ্বারস্থ হয় না। কিন্তু এই ঘটনা চিরদিন গোপনই থেকে যায়, আর পুরুষেরা সেই সন্তানকে নিজের সন্তানই মনের করেই লালন পালন করে। এগুলোই নিয়োগের ঘটনা, যা সমাজে প্রতিনিয়ত আড়ালে আবডালে ঘটে চলেছে। হিন্দু ধর্ম এই সব বাস্তবতা বা সত্যকে অস্বীকার করে না; তাই মহাভারতে এগুলো গোপন করার সুযোগ থাকলেও কেউ তা গোপন করে নি।


এখন দেখা যাক, নারীগর্ভের বাইরে ভ্রুণকে বেড়ে তোলার বা এই ভাবে সন্তানের জন্ম দেওয়ার বাস্তবতা বা তার গ্রহনযোগ্যতা কতটুকু ?


ওপরেই বলেছি, টেস্টটিউব ই হোক বা ক্লোন হোক, বিজ্ঞানীদেরকে, ভ্রুণকে বড় করার জন্য আবার সেই নারী শরীরকেই আশ্রয় করতে হয় বা হচ্ছে; তার মানে আধুনিক বিজ্ঞান এখনও সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারে নি, যেখানে নারী শরীরের বাইরে কোন ভ্রুণকে তারা বড় করে তুলতে পারেন; কিন্তু এই কাজটি বেদব্যাস করে গেছেন সেই ৫ হাজার বছর আগে, যেটা ওপরেও বলেছি; বিজ্ঞান একদিন সেই জায়গাতেও পৌঁছবে, মহাভারতে সেই ইঙ্গিতই দেওয়া হয়েছে। যেমন- কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ২৮০ মাইল দূরে হস্তিনাপুরে থাকা সঞ্জয়কে বেদব্যাস দেখিয়েছিল লাইভ মানে সরাসরি, সেই সরাসরি দেখানোর জায়গায় কি বিজ্ঞানীরা কি এখন পৌঁছতে পারে নি ? বর্তমানে, হাজার হাজার মাইল দূর থেকে টিভির লাইভ সম্প্রচার, বেদব্যাসের সেই প্রযুক্তিরই বাস্তবায়ন। এরকম ভাবেই নারী শরীরের বাইরে মানব ভ্রুণের বেড়ে উঠার পদ্ধতিও বিজ্ঞানীরা একদিন আবিষ্কার করবে, যার পথ দেখিয়ে গেছেন মহাবিজ্ঞানী বেদব্যাস; কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এর কি খুব দরকার আছে ?


আমরা জানি, সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতি বছর পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ নারী মারা যায়। শুধু তাই নয়, একটি সন্তানকে ৯/১০ মাস গর্ভ ধারণের যে কষ্ট, এটা প্রতিটা নারীর জন্য এক বিরাট যন্ত্রণা এবং তাকে জন্ম দিতে গিয়ে একটি নারীকে যে পরিমান কষ্ট করতে হয় তার তো কোন তুলনাই নেই, এই কষ্ট নাকি এক সাথে শরীরের অনেকগুলো হাড় এক সাথে ভাঙ্গার সমান। এ তো গেল শারীরিক সমস্যা, যেটা সব নারীর জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু কোন নারী যদি কর্মজীবী হয়, তাকে একটা সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য যে পরিমান স্যাক্রিফাইস করতে হয়, সেটাও তো অনেক। তাকে চাকরি থেকে দীর্ঘদিন ছুটি নিতে হয়। সরকারী চাকরি হলে এই ছুটি হয়তো পাওয়া যায়, কিন্তু বেসরকারি জব কোম্পানিগুলো এই ধরণের ছুটিকে বরদাস্ত করে না, সে ক্ষেত্রে চাকরিই চলে যায় বা ছাড়তে হয়। এই সব কষ্ট এবং সামাজিক সমস্যাকে অনায়াসেই দূরে রাখা যায়, যদি সন্তানের জন্ম নারীর শরীরের বাইরে ঘটানো যায়, যেই পথ দেখিয়ে দিয়ে গেছেন মহামুনি বেদব্যাস।


যে সব নারী নিজেদের গর্ভে সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম হচ্ছে না বা যারা সন্তান ধারণ ও প্রসবের কষ্টকে স্বীকার করতে চাচ্ছে না, তারা কিন্তু অলরেডি ‘সারোগেসি’ পদ্ধতির আবিষ্কার করে ফেলেছে, যে পদ্ধতিতে নিজেদের ডিম্বানু ও শুক্রানুর মিলন ঘটিয়ে, তাকে অন্য এক নারীর গর্ভে স্থাপন করা হয় এবং সেই নারী, সেই সন্তানের জন্ম দেয়; এই নারী হতে পারে নিজেদের কেউ বা ভাড়া করা কেউ। বর্তমানের ভারতে তো এই ধরণের ঘটনা বহু ঘটছে, যাকে খাস বাংলায় বলা হচ্ছে “গর্ভ ভাড়া দেওয়া বা নেওয়া”। দেশ বিদেশের বহু বিখ্যাত বা অখ্যাত ব্যক্তিরা এই পদ্ধতিতে সন্তানের মা বাবা হচ্ছে; শুধু যে যাদের সন্তান হচ্ছে না তারাই নয়, যারা সন্তান জন্ম দানে সক্ষম তারাও ঝামেলা ও কষ্ট এড়াতে টাকার বিনিময়ে এইভাবে সন্তানের পিতা মাতা হচ্ছে; আর এই সার্ভিস দেওয়ার ফলে বহু গরীব নারীও, ধনীদের কাছ থেকে এক সাথে বেশ মোটা টাকা আয় করতে পারছে। তার মানে প্রয়োজন থাকলে বা না থাকলেও নিজেদের শরীরের বাইরে সন্তান জন্ম দেওয়ার ব্যাপারটা আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হচ্ছে, এর মানে হলো এর বাস্তবতা রয়েছে। কিন্তু এই বাস্তবতা পূরণে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মাতৃ মুত্যুর আশংকাও কিন্তু যাচ্ছে না। তার মানে টাকার বিনিময়ে নিজেদের কষ্ট এবং সমস্যা অন্যের ঘাড়ে দিলেও, মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনাকে কিন্তু এড়ানো যাচ্ছে না। অথচ এই সম্ভাবনাকে মানুষ এড়াতে পারে বা পারবে ভবিষ্যতের কোন একদিন, যেই পথ বেদব্যাস দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন ৫ হাজার বছর আগেই, নারী শরীরের বাইরে ভ্রুণকে বেড়ে তুলে মানব শিশুর জন্ম দেওয়ার মাধ্যমে।


গান্ধারী কিভাবে ১০১ টি সন্তানের জন্ম দিয়েছিল এবং এই ঘটনার মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে কিভাবে হিন্দুধর্ম পথ দেখিয়েছে বা দেখাচ্ছে এবং মহাভারতের প্রথা “নিয়োগ পদ্ধতি” কিভাবে সমাজে এখনও বেঁচে আছে বা সেই প্রথার বাস্তবতা কোথায়; এই সকল বিষয়, আশা করছি সকলকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।


জয় সনাতন।


২৬.৪.২০১৭ তারিখে বিবিসি বাংলা কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্টটি দেখে নিন নিচে-


যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীর বলছেন, তারা একটি কৃত্রিম গর্ভ তৈরি করেছেন।

ভবিষ্যতে প্রিম্যাচিউর বা অকালে জন্ম নেয়া শিশুদের বাঁচিয়ে রাখতে এটা ব্যবহার করা যাবে।

এই 'অতিরিক্ত-জরায়ু সহায়তা' যন্ত্রটি ভেড়ার উপর পরীক্ষা করে সাফল্য পাওয়া গেছে।

গবেষকরা বলছেন, তাদের উদ্দেশ্য হলো প্রিম্যাচিউর শিশুদের ফুসফুস এবং অন্যান্য প্রত্যঙ্গ যাতে সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে সেটা নিশ্চিত করা।

এই যন্ত্রটি মূলত একটি প্লাস্টিক ব্যাগ, যার ভেতরে রয়েছে কৃত্রিম অ্যামনিওটিক ফ্লুইড।

এটার ভেতরের পরিবেশ অনেকটা জরায়ুর ভেতরের পরিবেশের মতো।

বিজ্ঞানীর ধারণা করছেন, আর তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে মানবদেহে পরীক্ষা করে দেখবার জন্য প্রস্তুত করা যাবে এটিকে।


12 comments

Recent Posts

See All

12 Comments


Lokhon 7898
Lokhon 7898
Aug 21, 2020

আর্টিকেলটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো…

Like

Mondira Paul
Mondira Paul
Aug 21, 2020

সত্যি কথা বলতে যাদের মন চুলকানিতে ঢাকা তাদের তো অন্য ধর্মের কথা শুনে চুলকানি হবেই

Like

Rimjim Akter447
Rimjim Akter447
Aug 21, 2020

ঠিকই বলেছেন সত্যিই -যেখানে সত্য নেই, সেটা কোন ধর্ম নয়

Like

Peiontika Bosu
Peiontika Bosu
Aug 21, 2020

লেখাতে অনেক তথ্য উঠে এসেছে যা আমাদের সকলেরই জানা অনেক প্রয়োজন…

Like

Abir Basak8807
Abir Basak8807
Aug 21, 2020

পোস্টটি পড়ে অনেক কিছু বুঝতে পারলাম ।

Like
Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

lgbt-bangladesh.png
bottom of page