কালো জাদু পর্বঃ ৪র্থ
আসাদ খুব পেরেশান হয়ে আছে। বৃষ্টি কিছুতেই থামছে না। আমি চিন্তা করছি.. আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না কেন? আমি চিন্তা করলাম, আমি যে একদমই কথা বলতে পারছি না তা সবাইকে বুঝতে দেয়া ঠিক হবে না। সবাই বলছে আজ আর যাওয়া লাগবে না। খালা একটু পর পর ই ফোন দিয়ে বলছেন চলে আসতে। আসাদের চাচাতো ভাই এক সিএনজি ড্রাইভার কে ফোন দিয়ে বলল আসতে । ওই লোক বৃষ্টির মাঝেই 15 মিনিট এর মধ্যে চলে এলো, আসাদ আমায় তাড়াতাড়ি ধরে গাড়িতে উঠিয়ে দিল। তখন আসাদ এর চাচাতো বোন বলল তোমরা কিছু খেয়ে গেলে না? আসাদ বলল আরেকদিন আসব। আমার ভাই অসুস্থ হয়ে গেল তাই আর থাকতে পারলাম না। আসাদ যখন গাড়িতে উঠলো তখন আসাদের চাচাতো ভাই বলল.... আম্মা ফোন দিয়ে বললো তোমাদের একদম না যেতে। আমি আসাদ কে হাতে ইশারা দিয়ে বুঝালাম তাড়াতাড়ি চলো। আসাদ বলল আরেক দিন আসব সময় করে চাচী কে বলে দিবেন। ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দিল, তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে আর মাঝে মাঝে বর্জপাত ও হচ্ছে। গাড়ি চলছে.... আসাদ আমায় বলল মাসুদ কথা বল? আমি অনেক চেষ্টা করেও কথা বলতে পারলাম না। আমি আসাদ কে ইশারায় বুঝালাম তাবিজ কই? আসাদ পকেট থেকে বের করে দিল আমার হাতে, আমি হাতে নিয়ে দেখি কালো রঙের একটি তাবিজ। আমি আমার নিজের কাছে রেখে দিলাম। খালা একটু পর পর ফোন দিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। আমরা যখন মাঝ রাস্তায় তখন আসাদের চাচাতো ভাই ফোন দিয়ে বলল... আম্মা খুব রাগ করেছেন তোমরা চলে গেছ বলে। আসাদ বললো আমি বাসায় গিয়ে চাচীর সাথে ফোনে কথা বলব। আমরা আসাদের বাসার নিচে চলে এলাম। খালু আর ছোট ভাই বাসার নিচেই অপেক্ষা করছিলেন আমাদের জন্য। আমরা বাসায় গেলাম। খালা বললেন কথা বল মাসুদ?কিন্তু আমি অনেক চেষ্টা করেও কথা বলতে পারছিলাম না। ছোট ভাই দুধ গরম করে এনে দিল একটু খেলাম। মনে হচ্ছে গলা টা ফুলে গেছে। খালু বিভিন্ন দুআ পড়ে ফু দিচ্ছিলেন আমার গলায়। প্রায় 30 মিনিট পর আমি আস্তে আস্তে কথা বলতে পারলাম। মামা কে ফোন দিয়ে সব ঘটনা খুলে বললাম এবং এটাও বললাম যে আমি কেন কথা বলতে পারছিলাম না? মামা বললেন তুমি যখন সেন্স হারিয়ে ফেলো তখন আসাদের চাচী সেখানে এসে চিন্তা করেছে, পুকুরের ঘাটে কেন এমন হলো? তখন সে নিজের বাসায় গিয়ে ওই কবিরাজ কে ফোন দিয়ে সব বলল , তখন ওই কবিরাজ বলে আপনি তাড়াতাড়ি ওই ছেলেকে আটকান তা না হলে সব শেষ হয়ে যাবে, আরো বলে ওই ছেলে তাবিজ উঠিয়ে ফেলেছে। এটা কি করে সম্ভব, এই টুকু একটা ছেলে এত বড় কাজ কি করে করলো ? আর তাই আসাদের চাচী তোমাদের আটকানোর চেষ্টা করে, কিন্তু আল্লাহর রহমতে তোমরা চলে আসতে পেরেছ। যদি সে তোমাদের আটকাতে পারতো তাহলে অনেক ঝামেলা করত। মামা আরো বললেন এখন তুমি এক কাজ কর, এই এই নিয়মে তাবিজ টা নষ্ট কর। আমি বললাম মামা ওরা আবার ওই পুকুরে তাবিজ ফেলবে না তো ? মামা বললেন আবার তাবিজ ফেললে ও এর কোন কাজ হবে না ইনশাল্লাহ । আমি মামার কথা মত সব কাজ শেষ করে পরের দিন আমার বাসায় চলে আসলাম।
প্রায় এক মাস কেটে গেলে সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল। একদিন আসাদ আমাদের বাসায় বেড়াতে আসলো। দুই ভাই মিলে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গেলাম, আড্ডা চলছিল বেশ ভালোই। একদিন আমরা মার্কেটে গেলাম কিছু কেনাকাটা করতে। কেনাকাটা শেষ করে স্টেশন এর রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসছিলাম, কারণ মেইন রোডে খুব জেম থাকে। আমরা কথা বলতে বলতে হেঁটে আসছিলাম তখন মামা ফোন দিল। আমি ফোন রিসিভ করতেই মামা বললেন মাসুদ তোমরা বামে সরে পড় এখন ই.....। আমি মামার কথা বুঝতে পারছিলাম না ঠিক তখনই আমাদের দুইজন কে কে যেন বাম দিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। আমার ফোন হাত থেকে পড়ে গেল আর আমরা ও মাটিতে পড়ে গেলাম। আমি ডান দিকে চেয়ে দেখি একটা ধবধবে দুধের মত সাদা সাপ যা প্রায় 10 হাত লম্বা হবে, আমাদের পিছন থেকে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। আমরা খুবই ভয় পেয়ে গেলাম। আমি তাড়াতাড়ি ফোন হাতে নিয়ে মামাকে ফোন দিলাম...। মামা বললেন এখন কোন কথা নয় যতো তাড়াতাড়ি পারো তোমরা বাসায় যাও তারপর আমায় ফোন দাও অনেক জরুরী কথা আছে। আমি আসাদ কে নিয়ে তাড়াতাড়ি একটা রিকশা করে বাসায় চলে এসে মামাকে ফোন দিলাম। মামা বললেন আসাদের চাচী এক বড় মাপের কালো জাদুর কবিরাজের কাছে গিয়ে আসাদের পরিবার আর তোমার উপর কুফুরি সাপ চালনা দিয়েছে । এই সাপ তোমাদের কামড় দিবে না, তার কাজ হচ্ছে তোমাদের পায়ে পেচিয়ে ধরা। আর এই সাপ যদি একবার তোমাদের কারো পায়ে পেচিয়ে ধরতে পারে তা হলে সে সাথে সাথেই মারা যাবে। তখন তোমাদের খুব কাছাকাছি এই সাপ চলে এসেছিল আর তখন আমি খানকায় বসে আমল করছিলাম তখন আমার জীন ছাত্র আমির হামজা সব জানায় আর সে তোমাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় আর ওই সাপ টা কে তাড়িয়ে দেয়। এখন এই সাপ তোমার খালার বাসার দিকে যাচ্ছে তুমি এখন ই ফোন করে তাদের এই এই দুআ পানিতে পড়ে সারা ঘরে ছিটিয়ে দিতে বল আর আগামি কাল সকালে তাদের সবাইকে তোমাদের বাসায় চলে আসতে বল, তা না হলে অনেক বিপদ হয়ে যাবে। আর এই সাপ দিনে কোন ঝামেলা করবে না। তারপর তুমি কি করবে আমি বলে দিব। আমি হতবাক হয়ে মামার কথা শুনছিলাম কি বলবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমি নিজেকে একটু শক্ত করে মামা কে বললাম এটা তো অনেক বড় বিপদ, আমি কি করে সামলাবো মামা? মামা বললেন আমার জন্য এই কাজ কোন ব্যাপার না, কিন্তু আমার তো হাত পা বাঁধা, আমি যদি কোন ততবির করি তাহলে তোমার মামীর খুব ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই আমি শুধু তোমায় খবর আর দিক নির্দেশনা দিতে পারবো মাসুদ।
আমি বললাম আল্লাহ ভরসা.... আমি পারবো মামা আপনি দুআ করবেন।
মামার সাথে কথা শেষ করে আমি খালাকে ফোন দিয়ে সব জানাই। খালা ভয়ে চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করে দিল। আমি যে দুআ পড়তে বলেছি খালু তা পড়ে সারা ঘরে ছিটিয়ে দিলেন। খালু যখন বারান্দার পাশে পানি ছিটাতে গেলেন তখন তিনি ওই সাদা সাপ দেখতে পান, পানি দেয়ার সাথে সাথে অদৃশ্য হয়ে গেল। খালু ও বেশ ভয় পেয়ে যান। সারা রাত খালা খালু ছোট ভাই ভয়ে খাট থেকে ই নামেন নাই। এই দিকে আমি আসাদ আমাদের বাসার সবাই ও বেশ ভয় পাচ্ছিলাম। অনেক আতংক নিয়ে আমরা সারা রাত টা কাটাই। পরের দিন খুব ভোরে খালারা সবাই রওনা দিয়ে আমাদের বাসায় চলে আসে.....।
Commentaires