top of page

যুক্তিবাদীদের চোখে ধর্মনিরপেক্ষতা

ধর্মনিরপেক্ষতা' বা Secularism শব্দটা নিয়ে রয়েছে প্রচুর বিভ্রান্তি, সঙ্গে হয়েছে বিকৃতও। এর উৎপত্তি ইউরোপে। ' Secularism' এর আভিধানিক অর্থ - " An ism does not related with religion and non entity to any supernatural existence "। অর্থাৎ ধর্মের সঙ্গে কোনরূপ সম্পর্কিত নয় এমন একটি মতবাদ হল ধর্মনিরপেক্ষতা। নিরপেক্ষ অর্থাৎ কোনো অথবা কারোর পক্ষেই নয়। ধর্মনিরপেক্ষ মানে সর্বধর্মসমন্বয় নয়, এর অর্থ রাষ্ট্র কোনো ধর্মের পক্ষেই থাকবেনা, সমস্ত ধর্মের ক্ষেত্রেই থাকবে নিরপেক্ষ বা সম্পর্ক বর্জিত।


ভারতের সংবিধান ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি থেকে চালু হয়। এবং ১৯৭৬-সালের ১১ নভেম্বর ভারতের পার্লামেন্ট অনুমোদিত এবং ১৮ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরিত ৪২তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে ভারতের সংবিধানে ' Secular ' শব্দটা যুক্ত হয়। ভারতীয় সংবিধানের মুখবন্ধের ( Preamble) প্রথম অনুচ্ছেদে ' ধর্মনিরপেক্ষ ' ( Secular) শব্দটি ব্যাবহার করা হল। যেখানে বলা হয়েছে - " We The People Of India, having solemnly resolved to costitute India into a SOVEREIGN, SOCIALIST, SECULAR, DEMOCRATIC, REPUBLIC and to secure to all its citizens; "। অর্থাৎ, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতান্ত্রিক, প্রজাতন্ত্র হল সংবিধানের মৌলিক নীতি। প্রতিটি নাগরিকদের কর্তব্য হচ্ছে বিজ্ঞানমনস্কতা, মনুষ্যত্ব এবং অনুসন্ধিৎসা ও সংস্কার সাধনের মানসিকতার বিকাশ ঘটানো। "It shall duty of every citizen of India to develop the scientific temper humanism and the spirit of inquiry and reform.{Article 51A(h)Part iv A}"।

রাষ্টের সংবিধানের তৃতীয় খন্ডে, নাগরিকদের ছয়টি (৬) মৌলিক অধিকার দেওয়া হয়েছে। যেমন - (১) সাম্যের অধিকার, (২) স্বাধীনতার অধিকার, (৩) শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার, (৪) ধর্মীয় অধিকার, (৫) সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার, (৬) শাষনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার।

আমজনতার বৃহৎ অংশ ' ধর্ম ' বলতে উপাসনা / প্রতিষ্ঠানিক ধর্ম এবং ধর্মগ্রন্থ বলতে উপাসনাধর্ম বিষয়ক বই-পত্র কেই বোঝেন। অভিধানে ' ধর্ম ' বা ' রিলিজিয়ন ' ( Religion) শব্দের অর্থ লেখা হয়েছে - (১) ধর্ম মানে - সাম্প্রদায়িক, ঈশ্বর উপাসনা, রীতি-নীতি, ঈশ্বর এবং পরলোকের অস্তিত্বে বিশ্বাস। যেমন -হিন্দু, খ্রীষ্টান, ইসলাম ইত্যাদি ৪২০০ প্রকার। (২) Religion [ রিলি'জন ]n. ধর্ম : human recognition of a personal God entitled to obedience.. আবার, (৩) ধর্ম মানে - গুণ ( Property) বৈশিষ্ট ( Characteristic)। যেমন - আগুনের ধর্ম বা গুণ দহন, জলের ধর্ম বা গুণ তরলতা, তরোয়াল এর ধর্ম বা গুণ তীক্ষ্ণতা ইত্যাদি। ধর্মবিশ্বাস ; any system of faith and worship বোঝায়।

ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলোর সংবিধানে ' ধর্মনিরপেক্ষ ' ( Secular) র সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যেখানে স্পষ্ট ভাবে লেখা রয়েছে, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনীতি, রাজনীতি ও শিক্ষানীতি হবে সম্পূর্ণ ধর্ম বর্জিত। রাষ্ট্রনায়কগণ কোনভাবেই প্রকাশ্যে ধর্ম-আচরণ করতে পারবেন না। সংবিধান যেহেতু প্রতিটি মানুষকেই ধর্মীয় অধিকার দিয়েছে তাই কেউ যেমন ধর্মচারণ করতে পারেন,আবার তেমনই কেউ ধর্মহীন ভাবে জীবনে এগিয়ে চলতে পারেন। একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সাধারন মানুষ থেকে রাষ্ট্রনায়কগণ প্রকাশ্যে নয়, তবে ব্যাক্তিগত ভাবে ভাবে ধর্মাচরণ করতে পারেন। সংবিধানের এই কথাটা কে গ্রাহ্য করেন না কোনো রাষ্ট্রনেতাই। তাই তো, ভোটনির্ভর বা গোদীলোভী রাজনৈতিক দল কেউই রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতার আসল চেহারাটা প্রকাশ করেন না নিজেদের রাজনীতির স্বার্থেই। ওরা ধর্মেও আছে, জিরাফেও আছে। ঝোলে- ঝালে- অম্বলে সবেতেই আছে। আসলে ভোটব্যাঙ্ক এর স্বার্থে কেউই আমজনতার তথাকথিত " ধর্মবিশ্বাস " কে আঘাত করতে চান না। ধর্ম শুধুমাত্র ঠিকে আছে শাষকগোষ্ঠি এবং তাঁদের চালিকাশক্তি পুঁজিপতিদের জন্যেই। শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকারের দাবীর জন্য সংগ্রাম কিংবা ক্ষোভের আগুনে জল ঢ্লাতে আজ তাই " ধর্ম " হচ্ছে এক সুন্দর কার্যকর অস্ত্র। কারণ রাষ্ট্রশক্তি ভালো করেই জানেন ধর্ম নামক মারাত্বক আফিমের নেশায় ডুবে থাকা জনগণ কোনো প্রশ্নই তোলেন না, উলটে যুক্তি-বুদ্ধি সব বাক্সবন্দি করে রাষ্ট্রশক্তির হ্যাঁ তে ' হ্যাঁ ' এবং না তে ' না ' মেলায় শেখানো তোঁতাপাখির মতন। এইমূহুর্তে সেই গল্পটা মনে পরছে যেখানে পথচ্যুত একজন ব্যাক্তিকে একজন মাতাল প্রশ্ন করছে, " দাদা একটু ধর্ম হবে, বিড়ি জ্বালাবো? ব্যাক্তিটির অবাক হয়ে পালটা প্রশ্নের উত্তরে মাতাল টি জানায়, আরে দাদা ধর্ম দিয়ে তো দেশ জ্বলছে আর সামান্য একটা বিড়ি জ্বলবে না। " এটাই কিন্তু বাস্তব চিত্র।

এক শ্রেণীর ধান্দাবাজ রাজনৈতিক ও তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের মগজধোলাই এর কল্যাণে বর্তমানে ' ধর্মনিরপেক্ষ ' বা ' Secular ' শব্দটির অর্থ - ধর্মের ক্ষেত্রে এক খাবলা নিরপেক্ষতা, দু খাবলা পক্ষপাতিত্ব মিলিয়ে এক বিচিত্র স্ববিরোধীতার খিঁচুড়ি এবং সংবিধান রাস্তার পরে ধুলোয় খায় লুটোপুটি।

রাষ্ট্রকে ধর্মবর্জিত রাখতে রাষ্ট্রনায়ক, সাংসদ ও সরকারি আমলাদের প্রকাশ্যে ধর্মচারণ বে-আইনি। Sercular বা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে ধর্ম কেবল ব্যাক্তিগত বিশ্বাস ও আচরণের ব্যাপার হতে পারে। সংবিধান মতে ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ বা Secular Country। এ-দেশের সংবিধানের মর্যাদা দিতে সাংসদীয় গণতন্ত্রে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোকে হতে হবে প্রকৃত অর্থেই ধর্মনিরপেক্ষ ( যা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার গোদী লোভী দের কাছে)। অনেকেই হয়তো জানেন না, এই শর্তকে লঙ্ঘন করলে, অর্থাৎ অ-ধর্মনিরপেক্ষ কাজকর্মের সাথে জড়িয়ে থাকলে সংবিধানের ১৯৮৯ সালের রিপ্রেজেন্টেশন অফ দ্য পিপল ( এমেন্ডমেন্ট) অ্যাক্টের ২৯ এর ধারা বলে ঐ রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি খারিজ করার বিধান রয়েছে।

একটি রাষ্ট্রকে প্রকৃতঅর্থে ' ধর্মনিরপেক্ষ বা Secular গড়ে তোলা খুব সহজও নয় আবার খুব যে কঠিন সেটাও নয়। এর জন্য প্রয়োজন আন্তরিকতা এবং সদিচ্ছা। ভারতীয় জনতা পার্টির দাবী, পৃথিবীতে যদি ৫৫ টি মুসলিম রাষ্ট্র থাকতে পারে তাহলে ভারত কেন ধর্মনিরপেক্ষ থাকবে? তাই, ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানাতেই হবে। যারা এমন দাবী তোলেন তাঁরা এটা হয়তো ভুলে থাকতে চায়, একটি রাষ্ট্র, হিন্দু, ইসলাম কিংবা খ্রিষ্টান যাই হোক, সেখানে আমজনতা কি দারুন সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে রয়েছেন? বেকারত্ব কি মুছে গেছে কিংবা জাত-পাত বিভেদ কিংবা ধনী- গরিবের বিভেদ কি আদৌ দূর হয়েছে? পাকিস্তানের কথাই ভাবুন। সেখানকার রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। শেখানে একশ্রেণীর মানুষ স্বাচ্ছন্দে থাকলেও একটা বড় অংশের মানুষই গরিব। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে আজপর্যন্ত কোনো নেতা-মন্ত্রী পারেন নি পাকিস্তান কে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিনত করতে এবং দেশের চিত্রটাকে আমূল বদলে দিতে। বাংলাদেশ কে ইসলামিক রাষ্ট্রে গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছেই, সরকারেরও প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মদত রয়েছে এই কাজে। খোঁজ নিলেই দেখা যাবে ওপার বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই অর্থনৈতিক ভাবে খুবই দুর্বল এবং বেকারত্বের হার উর্ধমুখি।

আজ থেকে বহুবছর আগে শ্রদ্ধেয় কবিগুরু তাঁর লেখার মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছিলেন - " দেশ মাটিতে নয়, মানুষে গড়ে ওঠে। দেশপ্রেম মানে দেশের মাটিকে ছুঁয়ে শপথ নেওয়া কিংবা একটা মানচিত্র কে ভালোবাসাও নয়। দেশপ্রেমের অর্থ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ শোষিত, বঞ্চিত, অবহেলিত, নিরন্ন, বিপন্ন মানুষের প্রতি প্রেম। " মোরা তোমাদেরই লোক, গরিবি হটাও ইত্যাদি শ্লোগান দিয়ে এইসব গরিবগুর্ব মানুষের প্রতি মিথ্যে প্রেম দেখিয়ে রাষ্ট্র কে ধর্মের মোড়কে মুড়ে ফেললেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? না, কোনদিনই হবে না, হতে পারেও না। একটি রাষ্ট্র কে প্রকৃত অর্থে ধর্মনিরপেক্ষ গড়ে তুলতে গেলে যা করতেই হবে-

১- রাষ্ট্রের শিক্ষানীতি, রাজনীতি ধর্মবর্জিত করতে হবে। সরকারি কিংবা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান, ধর্মীয় নেতার জীবনী পাঠ, ধর্মীয় শ্লোগান, পঠন-পাঠনে ধর্মীয় নেতাদের জীবনী এবং প্রতিষ্ঠানিক ধর্মচেতনা বৃদ্ধিকারী বিষয় অন্তর্ভুক্তিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। সংবিধানের ২৮ নং ধারায় ভারত রাষ্ট্রের " ধর্মনিরপেক্ষ " চরিত্রের প্রতিফলন আছে। এতে বলা হয়েছে-

ক) সম্পূর্ণভাবে সরকারী অর্থে পরিচালিত কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোন ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া চলবে না। খ) ১ নং উপধারায় বর্ণিত কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোন ট্রাস্ট বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা স্থাপিত হয়েও যদি সরকার দ্বারা পরিচালিত বা প্রশাসিত হয় তবে নিজস্ব মতে ধর্মশিক্ষা দিতে পারবে না। গ) নিজের ইচ্ছা না থাকলে কোন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে বা অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে অভিভাবকদের বিনা অনুমতিতে কোন শিক্ষাপ্রার্থীকে সরকারী অর্থ সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষা বা নির্দেশনামা গ্রহনে বাধ্য করা যাবে না।

২- আমজনতার দেওয়া করের টাকায় হজ যাত্রা,ইমাম কিংবা পুরোহিত ভাতা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।

৩- যেহেতু, সংবিধানগতভাবে শুধু পদাধিকারী নন, কোনও দলও প্রকাশ্যে ধর্মীয় আচরণ করতে পারেন না। সেইজন্য এ-বিষয়ে কঠোর ভাবে নজর রাখতে হবে।

৪- Secularism শব্দটার বিকৃত নয়, বরং প্রকত অর্থ টা ঠিক কি সেটা আমজনতাকে বোঝাতে হবে। সর্বধর্মসমন্বয়ের গালগল্প ছেড়ে বাস্তব সংজ্ঞাটাকে গ্রহণ করতে হবে।

৫- উৎসবের অযুহাত দেখিয়ে কোনো নেতা-মন্ত্রীর প্রকাশ্যে কোনো পূজো প্যান্ডেলের উদ্বোধন, ইফতার পার্টি কিংবা অন্যকোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাওয়ায় কঠোর হতে হবে।

৬- ধর্মের দোহাই দিয়ে নিরিহ পশুদের হত্যা নিষিদ্ধ করতে হবে। কেউ প্রকাশ্যে পশুবলি বা কুরবানি দিচ্ছে জানতে পারলে সেই ব্যাক্তিকে " দ্য ক্রুয়েলটি টু এনিম্যাল অ্যাক্ট ১৯৬৯ " অনুযায়ী সাজা দিতে হবে। কিংবা এই বিষয়ে সচেতন করতে কোনো পন্থা গ্রহণ করতে হবে।

৭-সংবিধানের ১৯ নং ধারার ২ নং উপধারায় বলা হচ্ছে ধর্ম, জাতি(race), বর্ণ(cast), ভাষার কারণে কোন নাগরিককে সরকারী বা সরকারী অর্থ সাহায্যে পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে বাধা দেওয়া চলবে না।

৮- সরকারি অর্থে যা কিনা আমজনতার দেওয়া Tax এর টাকায়, সমস্ত প্রকার ধর্মীয় অনুষ্টান বন্ধ করতে হবে এবং পুলিশ লাইনে কোন উপাসনালয় তৈরী হওয়া আটকাতে হবে। দুরদর্শনের মতন সরকারি প্রচার মাধ্যমে ধর্মীয় প্রচার নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।

৯- সরকারি অথবা বে-সরকারি আবেদনপত্রে কোনও ব্যাক্তির Religion এবং Cast জানতে চাওয়া চলবে না। সম্প্রতি বোম্বে হাইকোর্ট এর রায়ে সুস্পষ্ট ভাবে জানানো হয়েছে কোনো ব্যাক্তি Religion কলামে ধর্মের উল্লেখ জানাতে বাধ্য নন। কেউ চাইলে Religion কলামে -হিন্দু, ইসলাম, খ্রীষ্টান ইত্যাদি না লিখে HUMANISM লিখতেও পারেন।

১০- কোনো রাজনৈতিক দল সাম্প্রদায়িক কাজের সাথে জড়িত থাকলে অথবা সাম্প্রদায়িক, বিদ্বেষমূলক, উস্কানিমূলক বক্তব্যে রাখলে ১৯৮৯ সালের রিপ্রেজেন্টেশন অফ দ্য পিপল (এমেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট এর ২৯ (এ) ধারা মতে সেই রাজনৈতিক নেতার কিংবা পুরো দলের স্বীকৃতি খারিজ করতে হবে।

১১- বিজ্ঞানের পঠন-পাঠন এর যায়গায়, বিজ্ঞান কংগ্রেসের মঞ্চে, স্কুল-কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্তপ্রকার ধর্মীয় আলোচনা এবং অবৈজ্ঞানিক বিষয়ের প্রচার কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। সংবিধান স্বীকৃত বিজ্ঞানমনষ্কতার প্রচার এবং প্রসারে রাষ্ট্র যদি ব্যার্থ হয়,তাহলে কোনো ব্যাক্তি কিংবা সংগঠনের এই কাজে কোনরকম হস্তক্ষেপ করতে পারবে না রাষ্ট্র সেদিকে নজর দিতে হবে।

প্রিয় পাঠক, একবার গভীরভাবে ভাবুন তো, ওপরের ১১ টি পয়েন্ট কি খুবই কঠিন নাকি খুবই সহজ? অপ্রিয় সত্যি এটাই যে, রাষ্ট্রশক্তি চাইলে আমজনতাকে মুক্তমনা, বিজ্ঞানমনষ্ক গড়ে তুলতেই পারে। কিন্তু কেন করেনা জানেন, কারণ রাষ্ট্র বেশ ভালো মতই জানে যারা অন্ধবিশ্বাস, ভাববাদ, ঈশ্বরবাদ ইত্যাদিকে আকঁড়ে ধরে থাকেন তাঁরা কোনদিনই শোষণমুক্তির কথা চিন্তাতেই আনে না। সেবা দিয়ে যেমন শোষণমুক্তি ঘটানো সম্ভব নয়, তেমনই কুসংস্কারে আচ্ছন্ন মানুষ, নেতৃত্বহীন জনগণ কোন প্রশ্নই তোলে না। আর এভাবেই শাষণ -শোষণ- তোষণের রাজনীতি করে, আমজনতাকে ধর্মের নেশায় ডুবিয়ে রেখে বিদেশের সুইসব্যাঙ্ক ফুলেফেঁপে উঠতে থাকে। আমজনতার বৃহত্তর অংশ যদি নিজেদের ন্যায্য অধিকারের দাবীতে সরব হয় তাহলে শোষণ প্রক্রিয়াটাই ব্যাহত হয়।

ধর্মনিরপেক্ষতা মানে মন্দির-মসজিদ-গীর্জা - গুরুদ্বার -গুম্ফায় গিয়ে প্রকাশ্যে ধর্মচারণ এবং প্রচারমাধ্যমে সেসব ফলাও করে প্রচার করা নয়। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে প্রকাশ্য রাজপথে বিফ খেয়ে কতটা ধর্ম -নিরপেক্ষ প্রমাণ করাও নয়, এটা তখনই ভালো যখন দুই ধর্মের মানুষকে নিয়ে বিফ এবং পর্ক দুটোই একসাথে খাওয়া অথবা কে বিফ খেলো, কে পর্ক খেলো সেসব না দেখে, কে সারাদিন অভুক্ত রইলো সেটা দেখা। সর্বধর্মসমন্বয়ের গল্পো শুনিয়ে ধর্মের নামে বিদ্বেষ,হিংসা টাও ভণ্ডামি তাই ধর্মনিরপেক্ষ মানে দুদুও খাবো আবার তামুকও খাবো, কিংবা ধর্মে ও জিরাফে একত্রে সহাবস্থানও নয়। ধূলো পরা ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রয়োগ করতে আন্তরিক হলে ভণ্ডামো ছেড়ে এই শব্দটাকে সংবিধানের পাতা থেকে তুলে এনে বাস্তবের মাটিতে প্রয়োগ করতেই হবে, এর কোনও বিকল্প নেই। Secularism বা ধর্মনিরপেক্ষর প্রকৃত সংজ্ঞাটা এসে যদি বিকৃত হওয়া সংজ্ঞাটা তার চরিত্র হারায় এবং কেউ আন্তরিকভাবে এর প্রয়োগ করতে উদ্যোগী হন তাহলেই এই লেখা স্বার্থক।

ঋণ স্বীকার : প্রবীর ঘোষ, সুমিত্রা পদ্মনাভন, পরেশ দেবনাথ এবং সন্তোষ শর্মা।

0 comments
Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

lgbt-bangladesh.png
bottom of page