top of page

নাস্তিকতাই স্ট্যালিন কর্তৃক গনহত্যার জন্য দায়ী?


নাস্তিকবিদ্বেষীরা নাস্তিকতা নিয়ে যেসব অভিযোগ তোলেন তার কোনোটার সাথেই নাস্তিকতার কোনো যোগসূত্র নেই। তাদেরকে প্রায়ই এমন অভিযোগ তুলতে দেখা যায় যে, নাস্তিকতাই লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী কিংবা নাস্তিকতার কারণে গনহত্যা হয়!

কি হাস্যকর অভিযোগ রে বাবা! এরকম গোমূর্খের মতো অভিযোগ যারা তোলেন তারা যে অত্যন্ত ভ্রমাত্মক এবং তাদের মাথাভর্তি যে মরুভূমির গরম বালু ছাড়া কিছু নেই তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

নাস্তিকতা মানে কি? নাস্তিকতা মানে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসের অভাব বা অবিশ্বাস। ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না এমন একজন মানুষের করা খুন বা ধর্ষণের জন্য তার ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস না করাকে বা নাস্তিকতাকে দায়ী করা ঠিক ততোটাই হাস্যকর ও অর্থহীন যতোটা হাস্যকর ও অর্থহীন মূলা খায় না এমন একজন মানুষের করা খুন বা ধর্ষণের জন্য তার মূলা না খাওয়াকে দায়ী করা।

নাস্তিকবিদ্বেষীদের নাস্তিকতার বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ তোলার পেছনে উদ্দেশ্য কি? তারা মূলত বোঝাতে চান যে, নাস্তিকতা মানবসভ্যতার জন্য খুবই খারাপ বা ভুল এবং তা কঠোরভাবে দমন করা প্রয়োজন। তারা বোঝাতে চান, একজন নাস্তিক সমাজের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ, তাই সমাজে নাস্তিকদের কোনো জায়গা নেই। মূলত, কেউ নাস্তিক হলে তাকে যেন হত্যা করা হয় নয়তো, জেলে বন্দী করে রাখা হয়। নাস্তিকদের বিরুদ্ধে সেই জুলুম নির্যাতন উস্কে দিতেই নাস্তিকবিদ্বেষীদের নাস্তিকতার বিরুদ্ধে এই অর্থহীন অভিযোগ।

আমরা যদি ধরেও নেই যে নাস্তিকবিদ্বেষীদের অভিযোগটি সঠিক, আমরা যদি ধরেও নেই যে নাস্তিকতাই স্ট্যালিনের করা গনহত্যার জন্য দায়ী, তাহলে কি এটা প্রমাণিত হয় যে নাস্তিকরা ভুল বা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস না করা ভুল? ‘নাস্তিকতা মানবসভ্যতার জন্য খারাপ’ এটি প্রমাণিত হলে কি ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়ে যাবে? আমরা যদি ধরেও নেই যে ইসলাম সমাজে শান্তি নিয়ে আসে আর নাস্তিকতা গনহত্যা, তাতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয় না।

নাস্তিকবিদ্বেষীরা আসলেই বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বরে বিশ্বাস না করা একজন মানুষকে খুন/ধর্ষণের দিকে নিয়ে যায়। শাঁকচুন্নিতে বিশ্বাস না করা আপনাকে কোনদিকে নিয়ে যায়? যারা শাঁকচুন্নিতে বিশ্বাস করেন না তাদের করা যেকোনো অপরাধের জন্য কি তাদের শাঁকচুন্নিতে বিশ্বাস না করা দায়ী?

স্ট্যালিন একজন নাস্তিক হয়ে একটি খুনী শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করেন। তাই দাবি করা হয়, নাস্তিকতা মানুষকে খুনী বানায়। স্ট্যালিন কেবল একজন নাস্তিক ছিলেন না, তিনি একজন পুরুষও ছিলেন। সেইসূত্রে আমরা কি দাবি করতে পারি যে, একজন পুরুষের ‘পুরুষত্ব’ কোটি কোটি মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী? বা, একজন পুরুষের পুরুষত্বই তাকে খুনী বানায়? বা, পুরুষ হওয়াটা একজন মানুষের ভুল? আমি যদি কোনো ইসলামী সন্ত্রাসের জন্য ইসলামকে দায়ী করি তাহলে আমাকে যারা বলবে, ‘তিনি সহিহ মুসলিম ছিলেন না, তার অপকর্মের দায় তার, ইসলামের নয়’, ঠিক তারাই বিশ্বাস করেন এবং প্রচার করেন যে, স্ট্যালিনের অপকর্ম সমূহের জন্য তার নাস্তিকতাই দায়ী!

আমি একজন নাস্তিক আর আমার ন্যায়পরায়ণ হওয়ার জন্য ঈশ্বর বা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করার কোনো প্রয়োজন নেই। নাস্তিকবিদ্বেষীদের সমস্যা, তারা এই বিষয়টা কোনোভাবেই বুঝে উঠতে পারে না যে ঈশ্বর বা ধর্মে বিশ্বাস না করে একজন মানুষ কিভাবে ন্যায়পরায়ণ হতে পারে। এই বিষয়টি বুঝার মতো মানসিক সামর্থ্য তাদের নেই। যারা নাস্তিকদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, আমার মনে হয় না তাদের অধিকাংশই এবিষয়ে কখনো গভীরভাবে ভেবে দেখেছেন যে ঈশ্বরে বিশ্বাস না করে বা কোনো ধর্মে বিশ্বাস না করে কিভাবে একজন মানুষ ন্যায়পরায়ণ হতে পারে। অধিকাংশ ধর্মবিশ্বাসী আস্তিক মনে করেন, একজন মানুষ ধর্মের কারণে ভালো খারাপের পার্থক্য বুঝতে পারেন, ঈশ্বরের ভয়ে খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে পারেন। সেইজন্য তারা মনে করেন, যারা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না বা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেন না তারা যেকোনো সময় যেকোনো মানুষকে খুন করতে পারেন, নিজের মা-বোনকেও ধর্ষণ করতে পারেন। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, তাদের ঈশ্বর-বিশ্বাস বা ধর্মবিশ্বাসই তাদেরকে যেকোনো সময় যেকোনো মানুষকে খুন করা বা নিজের মা-বোনকে ধর্ষণ করা থেকে বিরত রাখে। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, তাদের মধ্যে ঈশ্বর-বিশ্বাস বা ধর্মবিশ্বাস না থাকলে তারা হয়তো যেকোনো সময় যেকোনো মানুষকে খুন করতে পারেন, নিজের মা-বোনকেও ধর্ষণ করতে পারেন।

ঠিক কি নাস্তিকদেরকে যেকোনো সময় যেকোনো মানুষকে খুন করা থেকে বিরত রাখে? ঠিক কি নাস্তিকদেরকে ধর্ষণ করা থেকে বিরত রাখে? আমি একজন নাস্তিক এবং আমি মানুষকে খুন করা থেকে বিরত থাকি, আমি মানুষকে ধর্ষণ করা থেকে বিরত থাকি। কারণ আমি তা করতে চাই না। ধর্মবিশ্বাসী আস্তিকরা মনে করেন, যদি আকাশ থেকে কোনো ঈশ্বর তাদের ওপর নজর না রাখেন তাহলে তারা যতখুশি খুন যতখুশি ধর্ষণ করতে পারেন, যা আমি করতে চাই না। আমার কোনো ইচ্ছা নেই কারো শ্বাসরোধ করার, আমার কোনো ইচ্ছা নেই কাউকে যন্ত্রণা দেয়ার। আমি শান্তিপূর্ণভাবে এবং নির্ভয়ে বেঁচে থাকতে চাই। আমার লক্ষ্য, আমার প্রতিবেশীদের সহযোগী হিসেবে গ্রহণ করা ও তাদের সহযোগী হওয়া আর এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা যেখানে আমি নির্ভয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকতে পারবো এবং আমার প্রতিবেশীরাও নির্ভয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকতে পারবে, যাদেরকে ছাড়া আমি নির্ভয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকতে পারবো না। আর সেজন্য কোনো ঈশ্বরে বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই।

নাস্তিকতা কি কোনোভাবেই কোনোকিছুর কারণ?

ধরুন, আমি একটি হ্রদে সাতার কাটতে চাই, তবে সেই হ্রদে সাতার কাটা নিষিদ্ধ। কেউ যদি সেই হ্রদে সাতার কাটে তাহলে তাকে ৩০০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। সেই হ্রদে সাতার কাটার ওপর জরিমানা আরোপ করা হয়তো আমাকে সেই হ্রদে সাতার কাটা থেকে বিরত রাখবে। ঠিক একইভাবে, কোনো ঈশ্বর যদি আমাকে চুরি/খুন/ধর্ষণ ইত্যাদি অপকর্মের জন্য জাহান্নামের ভয় দেখায় তাহলে আমার দ্বারা সেইসব অপকর্ম হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পাবে।

ধর্মবিশ্বাসী আস্তিকরা মনে করেন, ‘ঈশ্বরে বিশ্বাস যদি একজন মানুষের দ্বারা খুন/ধর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে, তাহলে ঈশ্বরে অবিশ্বাস একজন মানুষের দ্বারা খুন/ধর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে’।

না, এরকম ধারণা একদমই ভুল। আমি যদি সেই হ্রদে সাতার কাটতে চাই তাহলে সেই হ্রদে সাতার কাটার ওপর জরিমানা আরোপ হওয়াটা আমাকে তা থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে পারে। তবে, আমি যদি সেই হ্রদে সাতার কাটতে না চাই এবং সাতার কাটার জন্য যদি কোনো জরিমানা না থাকে, তাহলে জরিমানা না থাকাটা আমার মধ্যে সাতার কাটার ইচ্ছে তৈরি করবে না। আমি যদি জেনে থাকি, সেই হ্রদের নিচে প্রচুর ধনদৌলত লুকানো আছে, তাহলেই আমার সেখানে সাতার কাটার ইচ্ছা তৈরি হতে পারে। অবশ্যই কোনো বাধ্যকারী কারণ থাকতে হবে যা আমাকে বাধ্য করবে কাজটি করতে।

ঈশ্বরে বিশ্বাস না করাটা কোনোকিছুর জন্যই কোনো বাধ্যকারী কারণ নয়।

নাস্তিকতার মূলে কোনো নিয়ম-নীতি নেই, কোনো আদেশ-নিষেধ নেই, কোনো উপদেশাবলি নেই, কোনো বৈধতা-অবৈধতা নেই। আস্তিকরা এক বা একাধিক ঈশ্বরের অস্তিত্ব দাবি করে এবং নাস্তিকরা তাদের দাবি বিশ্বাস করে না। ‘আমি কোনো ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না’ এবং ‘আমি বিশ্বাস করি ঈশ্বর বলে কিছু নেই’, এই কথা দুটির কোনোটাই কোনো নিয়ম বা আদেশ নয়। এই কথা দুটির কোনোটাই কোনোকিছুর বৈধতা বা অবৈধতা প্রকাশ করে না।

একজন নাস্তিক কি করলো না করলো তার দায়ভার নাস্তিকতার না। ঠিক যেমন একজন শাঁকচুন্নিতে অবিশ্বাসী কি করলো না করলো তার দায়ভার শাঁকচুন্নিতে অবিশ্বাস করার না।

স্ট্যালিনের সমস্যা তার নাস্তিক হওয়ায় নয়, বরং একজন খুনি সর্বগ্রাসী একনায়ক হওয়ায় ছিলো!

5 comments
Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

lgbt-bangladesh.png
bottom of page