top of page

জ্বির জাতির ইতিহাস ২য় পর্ব


পাক কালামের ব্যাখ্যায় পাওয়া যায় যে, মহানবী (সা)-এর যামানায় একদল জ্বিন পবিত্র কোরআন মাজীদ তেলাওয়াত শ্রবন করে কোরআনের প্রতি এবং হুজুর (সা) এর প্রতি ইমান আনয়ন করে এবং একথা তারা স্বজাতিয়দের কাছে প্রকাশ করে। তাদের এই প্রকার ইমান গ্রহনের কথা আল্লাহ পাক তার প্রিয় রাসূলকে জানানোর জন্য সূরা জ্বিন অবতীর্ণ করেন। আল্লাহ পাক বলেন, আমি জ্বিন জাতিকে তেজস্কর আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছি এবং মানব জাতিকে নম্র মাটি দ্বারা তৈরি করে গৌরবান্বিত করেছি। মানব জাতির সৃষ্টিলগ্নে সর্বপ্রথম একজন মানুষ অর্থাৎ আদি পিতা হযরত আদম (আ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতঃপর তার দ্বারাই মানব জাতি বংশ বিস্তার লাভ করেছে। অনুরূপভাবে জ্বিন জাতিরও একজন আদি পিতা ছিল এবং তার দ্বারাই জ্বিন জাতির বংশ বিস্তার ঘটেছে। জ্বিন জাতির সেই আদি পিতার নাম “ক্ষুমা” এবং “জান্না” তার উপাধি। তার আরেকটি নাম “মারজ”। এই জ্বিন আবুল জ্বিন ও তারাননুস নামেও মানব সমাজে পরিচিত। মানব জাতির মধ্যে যেমন একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে বিয়ে ও মিলন প্রথার মাধ্যমে সন্তান জন্মলাভ করতঃ ধীরে ধীরে বংশ বিস্তার ঘটেছে, ঠিক অনুরূপভাবে জ্বিনদের মধ্যেও বিয়ে-শাদি ও সন্তান জন্ম হয়ে সমগ্র জগতে তারা ছড়িয়ে পড়েছিল। জ্বিন জাতি আগুনের সৃষ্টি বিধায় তাদের প্রকৃতিতেই উগ্রতার ভাব প্রকাশ পাচ্ছিল। ন্যায়-নীতি অনুসরণ না করে এবং ন্যায়-অন্যায়, সৎ-অসৎ কাজের মধ্যে কোন প্রকার বিচার না করে যখন যা ইচ্ছা তাই করতে লাগলো। তাছাড়া প্রতিটি কাজে-কর্মে উগ্রতা, রূঢ়তা এবং বদমেজাজির লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে। নিজেরা পরস্পর ঝগড়া-বিবাদ শুরু করে দেয়। এহেন অবস্থা প্রকাশ পেতে থাকায় আল্লাহ পাক তাদের উপর কিছু আদেশ নিষেধ এবং বাধ্য-বাধকতা আরোপ করতঃ তাদেরকে রীতি-নীতি অনুসারে চলার নির্দেশ দিলেন এবং তাদের মধ্য হতে একজন বাদশাহ ও পয়গম্বর প্রেরণ করেন। তিনি আল্লাহ পাকের আদেশ-নিষেধ জানিয়ে তাদেরকে সৎপথ অবলম্বন এবং অসৎপথ বর্জন করার জন্য প্রেরনা ও উদ্দীপনা দান করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জ্বিনেরা বেশ কিছুদিন তাদের বাদশাহ তথা তাদের পয়গম্বরের নির্দেশ প্রতিপালন করে সৎপথে থেকে দিনাতিপাত করল। কিন্তু শেষে পর্যন্ত তাদের অসৎ প্রবৃত্তি চাঙ্গা হয়ে তারা সৎপথ পরিত্যাগ করে অসৎ পথ অবলম্বন করল এবং এতে বাধাদানকারী বাদশাহ তথা পয়গম্বরকে হত্যা করে ফেলে।এভাবে তারা তাদের অসৎ কর্মের প্রতিবন্ধকতা দূর করে ভীষণ পাপাচারী হয়ে উঠে। পরম করুনাময় আল্লাহ পাক জ্বিনদেরকে সুপথে আনার জন্য পুনরায় একজন পয়গম্বর প্রেরন করেন। কিন্তু এ-ই পয়গম্বরের প্রচেষ্টাও ব্যার্থ হয়। মাত্র কিছু সংখ্যক জ্বিন তার হেদায়েত মেনে সুপথে ফিরে আসে। আর অধিকাংশ জ্বিনই পয়গম্বরের কথা অমান্য করে পাপাচারে নিমজ্জিত থাকল। শেষ পর্যন্ত এ যাত্রাও জ্বিনেরা পয়গম্বরকে কতল করে ফেলে। আল্লাহ পাক অতিশয় মেহেরবান। তাই জ্বিনদের অন্যায় ও অপরাধের শাস্তি প্রদান না করে আবারও তাদেরকে হেদায়েত করার জন্য একজন পয়গম্বর পাঠালেন। এভাবে আবুল জ্বিনের (জ্বিনদের আদি পিতা) পর হতে প্রায় ছত্রিশ হাজার বছর সময়ের মধ্যে জ্বিনেরা বহু সংখ্যক পয়গম্বর হত্যা করার পর আল্লাহ পাক জ্বিনদের প্রতি ভীষণ নাখোশ হলেন এবং তাদেরকে উচ্ছেদ করার জন্য আসমান হতে অসংখ্য ফেরেশতা প্রেরণ করলেন। ফেরেশতাগণ মহান প্রভু আল্লাহ পাকের নির্দেশক্রমে কোটি কোটি জ্বিনকে হত্যা করল। শুধুমাত্র যে সব ঈমানদার জ্বিন পাপী জ্বিনদের ভয়ে বনে-জঙ্গলে, পাহাড়-পর্বতের গুহায় আল্লাহ পাকের ইবাদতে লিপ্ত ছিল তারাই ফেরেশতাদের হাত হতে রক্ষা পেল। দুনিয়ায় অধিকাংশ জ্বিন এভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও গুটিকতক জ্বিন যারা রক্ষা পেল তাদের বংশ বৃদ্ধি পেয়ে কালক্রমে পুনরায় জ্বিনদের দ্বারা দুনিয়া পরিপূর্ণ হয়ে উঠল। কিন্তু তাদের অধিকাংশই পাপাচারে নিমজ্জিত থাকল। তাদেরকে সৎপথে প্রত্যাবর্তনের জন্য আল্লাহ পাক পুনরায় একজন পয়গম্বর নিযুক্ত করলেন। কিন্তু এবারও তারা হেদায়েত কবুল করল না। কিছু সংখ্যক জ্বিন ব্যাতীত অধিকাংশই বিপথে রয়ে গেল। উক্ত পয়গম্বরের সাঙ্গেও শত্রুতা করল। শেষ পর্যন্ত এবারেও তারা পয়গাম্বরকে হত্যা করল। তাদের অত্যাচার-অনাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কিছু সংখ্যক জ্বিন বনে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়ে গোপনে আল্লাহ পাকের মগ্ন থাকল। আল্লাহ পাক পাপিষ্ঠ জ্বিনদের অনাচারে ক্রুদ্ধ হয়ে তাদেরকে শাস্তি প্রদানের জন্য পুনরায় আসমান হতে অসংখ্য ফেরেশতা প্রেরণ করেন। ফেরেশতাদের হাতে পাপী জ্বিনেরা নিহত হলো এবং সামান্য সংখ্যক পূন্যবান জ্বিন পৃথিবীতে বেঁচে থাকল। এই পূন্যবান জ্বিনদের মধ্যে একজন শিক্ষিত ও ধার্মিক জ্বিন ছিল। তার নাম ছিল “চালপালিশ”। এবার আল্লাহ পাক তাকেই জ্বিনদের বাদশাহ এবং ধর্মীয় নেতা নির্ধারিত করলেন। খুব অল্প দিনের মধ্যেই চালপালিশ ইবাদাত-বন্দগী, আল্লাহ প্রেম ও প্রজা পালনে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করলেন। তিনি নিজের ধর্ম পথে দৃঢ় থেকে আল্লাহ পাকের ইবাদতে মশগুল হলেন এবং স্বজাতিকেও যথাযথভাবে ধর্ম পথে পরিচালনা করতে লাগলেন। বেশ কিছুদিন যাবৎ জ্বিন জাতির উপর চালপালিশের একচ্ছত্র আধিপত্য ও জ্বিনদের ধর্মপথে অবস্থিতি অক্ষুণ্ণ থাকল। অতঃপর আবার বহু সংখ্যক জ্বিন পথভ্রষ্ট হয়ে গেল। তাদের দেখাদেখি স্বয়ং চালপালিশও নীতি ভ্রষ্ট হয়ে অন্যায় ও অবাঞ্চিত কর্ম শুরু করে দিল। সৎ পথে আর থাকতে পারল না। তিনি একথা বেমালুম ভুলে গেলেন যে, তিনি আল্লাহর প্রেরিত ও মনোনীত একজন নেতা। আল্লাহ পাক স্বীয় কৃপায় “জিব্রাইল (আ)” কে প্রেরণ করে চালপালিশকে সতর্ক করে দিলেন যে, তুমি তোমার দায়িত্ব কর্তব্য ভুলে গিয়ে কোন পথে চলেছ? এটি যে তোমাকে ধ্বংসের পথে পৌঁছে দিবে এটা তুমি বুঋতেছ না কেন? ফেরেশতা জিব্রাইল (আ) এর সতর্ককরণে চালপালিশের চেতনা ফিরে এলো। সে সৎ ও সঠিক পথে প্রত্যবর্তন করতঃ পুনরায় নিজের এবং জাতির কল্যাণে ব্রতী হল। জ্বিনদের হেদায়েতে বিশেষভাবে আত্মনিয়োগ করল। কিন্তু যার যা নির্দিষ্ট পরিণতি, ঘুরে ফিরে সে যে সেখানেই গিয়ে হাজির হবে। দুষ্ট জ্বিনদের প্ররোচনায় চালপালিশের পুনরায় পদস্খলন ঘটল। সে পাপাচারের স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দিল। এবার আর তার অপরাধ আল্লাহ পাক সহ্য করলেন না। চলবে....




তথ্য সুত্রঃ

কাসাসুল আম্বিয়া (উর্দ্দু) মাওলানা তাহের সুরাটী (ভারত) অনুবাদঃ আলহাজ্ব মাওলানা মোঃ সামসুল হক এম. এম.

0 comments
Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

lgbt-bangladesh.png
bottom of page