top of page

একজন ইমাম সা‌হেব

ঘটনাটা এক ইমামের কাছ থেকে শুনা। ইমাম সাহেবের নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা।

বরিশালের কোনো একটা মসজিদে চাকরি করতেন ইমাম সাহেব।তিনি ছিলেনঐ এলাকার খুব শ্রাদ্বেয় একজন ব্যক্তি।তাকে সবাই ভালোবাসতো একমাত্র তার সততার জন্য।

এলাকার মধ্যে নাম ডাক আর সততার ফলে এলাকার মধ্যে যে কোনো বিচার হলে ইমাম সাহেবকে সবাই ডাকতেন বিচারে।


তো একদিন ইমাম সাহেেবের এক বন্ধুর ছেলের বিচার ডাকা হলো।সব সময়ের মতো ঐ বিচাররও ইমাম সাহেবকে ডাকা হলো।

ঐ দিন ছিলো শুক্রবার।একদিকে তার বন্ধুর ছেলের বিচার অন্য দিকে ওনার ছেলের প্রচন্ড জ্বর। রওনা দেয়ার আগে ইমামের বউ ওনাকে যেতে না করলেন যেহেতু ওনার ছেলের অবস্থা খুব খারাপ।

কিন্তু বন্ধুকেও না করতে পারছেনা যেহেতু আজ ওনার অতি নিকটের বন্ধুর ছেলের বিচার।তোসকাল ভোরে ওনি বাড়ী থেকে রওনা দেন।কারণ ওনার বাড়ী থেকে ওনার বন্ধুর বাড়ীর দূরত্ব ২০ মাইল।এর মাঝে রাস্তা দিয়ে হেটে যেতে হয় তারপর নদি পথে ৩ ঘন্টা যেয়ে আবারও বহুদূর হেটে যেতে হয়।তখনতো এখনকার মতো এত গাড়ি ছিলনা।তাই পায়ে হেটে যেতে হতো।

তো ইমাম সাহেব যথা সময়ে রা দিয়ে যথা সময়ে বন্ধুর বাড়ীতে গিয়ে উপস্থিত হলেন।ওনার বন্ধুর বিচার শেষ হতে হতে প্রায় সন্ধা হয়ে গেল।

বিচারের আগে ওনার বন্ধুকে বলেছিল ওনাকে বিচারের পর এ পর্যন্ত আগিয়ে দিয়ে আসতে।কিন্তু বিচারের পরে কোনো একটা কারণে ওনার বন্ধু ওখান থেকে অন্যকোথাও চলে যায়। ইমাম সাহেব চিন্তা করেন বন্ধু যখন নেই তখন তো আমাকেই একাই যেতে হবে।

তাই ওনি দেরি না করে তখনি রওনা দেন।প্রায় ২ ঘন্টা ধরে ওনি হাঁটার পর এশার আযান শুনতে পেলেন।কিন্তু কোথা থেকে আযানটা আসছে সেটা ওনি বুঝতে পারছেন না যেহেতু চারদিকে অন্ধকার।এতক্ষণ ওনি অন্ধকারেই হাঁটছিলেন।আনফরচুনেটলি বাড়ী থেকে ওনি টর্চ আনতে ভুলে গিয়েছিলেন।

আযান শুনার পর ওনি সিদ্ধান্ত নেন নামায না পরে ওনি আর সামনে এগোবেনা।তাই ওনি আশে পাশে মসজিদ খুজতে লাগলেন।রাস্তাটা নির্জন হওয়ায় ওখান দিয়ে খুব কম মানুষ চলাচল করে।তাই তিনি এমন কাউকে পাচ্ছেননা যাকে আশে পাশের মসজিদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।তাছাড়া আশেপাশে তেমন কোনো বাড়ী ঘরও নেই।তো ওনি হঠাৎ সামনে একজন লোককে আস্তে দেখলেন।

ঐ লোকটার বর্ণনা এমনঃ লোকটার হাইট ৬ ফুট আর পুরো শরির কালো কাপড়ে ঢাকা।

ইমাম সাহেব ঐ লোকটাকে মসজিদ সম্পর্কে জিঞ্জাসা করলে ঐ লোকটা একটা রাস্তা দেখিয়ে দেন। ইমাম সাহেব কোনো রকম চিন্তা না করেই লোকটার দেখিয়ে দেওয়া রাস্তাটা দিয়ে সামনে যেতে থাকলেন।তো একটা পর্যায়ে ওনি আযানের আওয়াজটা শুনতে পাননা।ইমাম সাহেব বুঝতে পারলেন তিনি মসজিদ থেকে আরও দূরে সরে চলে এসেছেন।এবার ইমামম সাহেব বুঝতে পারলেন লোকটা তাকে ভুল পথ দেখিয়েছেন।

কিছুক্ষণ দাড়িয়ে ওনি চিন্তা করলেন এখন আর পিছনে যাওয়ার উপাও নেই।

কারণ অন্ধকারে সে কোন রাস্তা দিয়ে কিভাবে এসেছে তা মনে নেই।তাই ওনি আবার সামনের দিকে হাঁটা ধরলেন।কিছুদূর যাওয়ার পর ওনি একটা বাড়ী দেখতে পান।বাড়ীতেএকজন মহিলা ছিল।ওনি মহিলাকে বললেন এখানে কোনো মসজিদ আছে কিনা।তো মহিলা একটা রাস্তা দেখিয়ে দিলে ইমাম সাহেব ঐ রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগলেন।কিছুদূর যাওয়ার পর একটা মসজিদ দেখেতে পেলেন।

ওনার ভাষায়ঃ এমন মসজিদ,এতো সুন্দর মসজিদ আমার সারা জিবনে কখনো দেখিনী।

ওনি মসজিদের সামনে দাড়িয়ে চিন্তা করেন এখানে এত সুন্দর মসজিদ আছে তাতো কেও আমাকে বলেনি।কিছুক্ষণ চিন্তা করে ইমাম সাহেব মসজিদের ভেতরে গেলেন।ওনার মতে মসজিদের মধ্যে এত সুগ্রাণ আর এতো আরাম যা কখনো ওনি দেখেননি।মসজিদের ভেতর ঢুকতেই ওনার সকল ক্লান্তি দূর হয়ে গেল।কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ওনি সুন্নত নামাজ পরেন।সুন্নত শেষ করার পর ওনি দেখলেন মসজিদে মুয়ার্জিন ছাড়া আর কেউ নেই।যেহেতু ওনি একা তাই তিনি ফরয নামাজ পরার জন্য উঠে দাড়ালেন।আর তখনি ওনাকে অবাক করে দলে দলে লোকজন মসজিদে ডুকতে লাগলো।ওনি লক্ষ করলেন সবার চেহারা এক আর সবার মাথা থেকে পা পর্যন্ত সাদা কাপড়ে ডাকা।আর ওনিই একটু অবাক হলেন।কারণ গ্রামের মসজিদে সাধারণত এত লোকজন হয়না এশারের সময়।

সবার সাথে ওনিও দাড়ালেন নামায পড়ার জন্য।তখন ঐ লোকগুলো ওনাকে হাতের ইশারায় বললেন নামায পড়ানোর জন্য।ওনি চিন্তা করলেন আমার সাথে যা ঘটছে তা মোটেও সাধারণ কিছুনা।এখন যদি ওনি ঐ লোকদের বিরুদ্ধে যায় তাহলে ওনার ক্ষতি হতে পারে।তাই ওনি নামায পড়াতে গেলেন।নামায শেষ করার পর ওনি আক্ষেপ করতে লাগলেন আমি নামায কেন শেষ করলাম।

কারণ ঐ মসজিদে এতো আরাম আর শান্তি যে ওনার ওখান থেকে বেড়ুতে মন চাচ্ছেনা।কিন্তু মন পরে রয়েছে বাড়ীতে।কেননা ওনার ছেলের অসুখ।যে করেই হোক ওনাকে আজ বাড়ী পৌছাতেই হবে।তো ওনি যখন মসজিদ থেকে বেড় হবেন এমন সময় ঐ লোকগুলো ওনাকে চেপে ধরলেন খেয়ে যাওয়ার জন্য।ওনি আর দ্বিমত করেননি কারণ ওনি বুঝতে পারেন ওনার সাথে অলৌকিক কিছু হচ্ছে।ওনার সামনে অনেক ফল দেওয়া হল।ওনি খেলেন।ওনার মতে আমি এত স্বাদের ফল জীবনে আর কখনো খাইনি।খাওয়া দাওয়া শেষ করে ওনি আবার বাড়ীর পথে রওনা দিলেন।একটা সময়ে ওনি নদীর কাছে গিয়য়ে পৌছান।তখন গভির রাত।আশেপাশে কোনো নৌকা দেখতে পেলেননা।তিনি জোরে দুবার চিৎকার করে বললেন কেউ আছে কিনা।যখন তিনি কোনো রিপলাই পেলেন না তখন ওনার মাথার পাগরিটা বিছিয়ে তার ওপর বসলেন।ওনি সিদ্ধান্ত নিলেন ফযরের আযান না হওয়া পর্যন্ত ওনি এখান থেকে নড়বেন না।এবাবে অনেক্ষণ বসে থাকার পর ওনি একদল মানুষকে নদীর ঘাটের দিকে আসতে দেখেন।একটু কাছে আসার পর ওনি দেখেন এ লোকগুলো ঐ লোকগুলো যাদের সাথে তিনি নামায পড়ে ছিলেন। এবার ঐ লোকগুলোর সাথে একটা লাশ রয়েছে।তো ইমাম সাহেব কিছু সূরা পড়েন যাতে লোকগুলো ওনার কোনো ধরনের ক্ষতি করতে না পারে।লোক গুলো কাছে আসলে ওনি জিঞ্জাসা করলেন আপনারা কোথায় যাবেন?লোকগুলো কোনো কথা বলেনা।ওনি আবার জিঞ্জাসা করেন আপনারা কোথায় যাবেন?এভাবে ৩ বার জিঞ্জাসা করার পর ওনাদের মধ্যে একজন বলে আমরা আপনাদের বাসায় যাব।তো ইমাম সাহেব বলেন আমার বাসায় যাবেন ভালো কথা কিন্তু এ লাশটা কার?তখন লোকগুলো বলে এটা আপনার ছেলের লাশ।আপনি আমাদের সাথে চলেন।এ কথা শুনার পর ইমাম সাহেব কিছুটা ভয় পায় এবং বলেন দেখুন আমি আপনাদের কোনো ক্ষতি করেনি।আপনারা আপনাদের রাস্তায় যান,আমাকে আমার মত থাকতে দেন।একথা শুনার পর লোকগুলো নদীর পানিতে ডুব দিয়ে কোথাও যেন চলে গেল।এরপর ফযরের আযান হলে ইমামের পরিচিত একজন মাঝি আসে ইমাম সাহেবকে নিয়ে যেতে।

৩ ঘন্টা নদী পথে যাওয়ার পর ওনি যখন ওনার বাড়ীর কাছাকাছি আসলেন তখন দেখেন এলাকার মানুষ জন এসে ওনাকে শান্তনা দিচ্ছেন।ওনি চিন্তা করলেন সবাই আমাকে সান্তনা দিচ্ছে কেন?

নিশ্চয় বাড়িতে কিছু একটা হয়েছে।তো ওনি যখন বাড়িতে পৌছেন তখন দেখেন ওনার ওঠানে লোকজন ভিড় করে দাড়িয়ে আছে।ওনি ভিড় ঠেলে ভেতরে ডুকে দেখলেন ওনার ছেলেকে ওঠানে শুয়ে রাখা হয়েছে।ওনি দেখলেন ওনার ছেলের লাশ ফুলাফাপা।ওনি চিন্তা করলেন আমিতো জ্বর দেখে গিয়েছিলাম।জ্বরেতো এমন হওয়া কথা না।ওনার স্ত্রিকে কথাটা জিঞ্জা করলে ওনার স্ত্রি বললেন আজ ফযরের সময় ওনার ছেলের জ্বর এতই বেড়ে গিয়েছিল যে ওনার ছেলে পাগল হয়ে পুকুরেতে গিয়ে ঝাপ দেয়।তো অনেক খোজা খুজিরপরও ওনার ছেলেকে পুকুরে পাওয়া যায়নি।একটা সময় ওনার ছেলের লাশ নিজে থেকেই ভেসে উঠে।এ ঘটনার পর ইমাম সাহেবের একটা আক্ষেপ থাকে যে আমি যদি ওনাদের সাথে যেতাম তাহলে হয়তো আজ আমার ছেলেকে এ অবস্থায় দেখতাম না।

0 comments
Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

lgbt-bangladesh.png
bottom of page