top of page

পূত্র সন্তান ও কন্যা সন্তান কেন হয়, একটি সহীহ হাদিসের বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ।

হাদীসে আছে জৈনেক ইয়াহুদী একদিন নবী মোহাম্মদ এর কাছে সন্তান সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন -

"পুরুষের বীর্য সাদা এবং মেয়েলোকের বীর্য হলুদ। যখন উভয়টি একত্রিত হয়ে যায় এবং পুরুষের বীর্য মেয়েলোকের বীর্যের উপর প্রাধান্য লাভ করে তখন আল্লাহর হুকুমে পুত্র সন্তান হয়। আর যখন মেয়েলোকের বীর্য পুরুষের বীর্যের ওপর প্রধান্য লাভ করে তখন আল্লাহর হুকুমে কন্যা সন্তান হয়।" [1]


এখন প্রশ্ন হল হাদীসের এই বক্তব্য কি বিজ্ঞানসম্মত ? চলুন এই বিষয়ে জেনে নেয়া যাক।

Embriology 'র আলোচনা থেকে আমরা জানি, মানুষসহ উচ্চ শ্রেণির জীবের যাদের লিঙ্গভেদ আছে তাদের দেহে মিয়োসিস কোষ বিভাজনের ফলে গ্যামেট উৎপন্ন হয়। গ্যামেট হল জননকোষ যা সন্তানের লিঙ্গ তৈরির জন্য দায়ী। গ্যামেট 2 প্রকার। পুরুষ গ্যামেটকে শুক্রানু (Sperm) বা পুং-জনন কোষ এবং স্ত্রী গ্যামেটকে ডিম্বানু (Ovum) বা স্ত্রীজননকোষ বলে। [2]

Image: Sperm and Ovum during

fertilization

স্তন্যপায়ী প্রানীতে শুক্রাণু শুক্রাশয়ে এবং ডিম্বাণু ডিম্বাশয়ে উৎপন্ন হয়ে থাকে। নারী-পুরুষের যৌনমিলনের ফলে পুরুষের শুক্রাণু দ্বারা নারীদের ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়। শুক্রাণু যখন ডিম্বাণু  কোষকে নিষিক্ত করে তখন জাইগোট সৃষ্টি হয় যা মাইটোসিস কোষ বিভাজনের মধ্যদিয়ে পরবর্তীতে ভ্রুণ গঠন করে এবং একসময় শিশু জীবে পরিনত হয়।[3]

ভ্রূণ হল ডিম্ব বা মায়ের জরায়ুতে থাকা অবস্থায় কোনও প্রাণীর প্রাথমিক বিকাশ পর্যায়। মানুষের ক্ষেত্রে এটা হল মায়ের জড়ায়ুতে নিষেকের পর থেকে পরবর্তী আট সপ্তাহ অবধি অবস্থা এবং অষ্টম সপ্তাহের পর থেকে জন্মদানের পূর্ব পর্যন্ত অবস্থাকে বলা হয় শিশু (fetus) বা সহজ কথায় যাকে আমরা গর্ভের সন্তান বলে থাকি [4]

Image: Development of Human Embrio


এই গর্ভের সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে তা নির্ধারিত হয় ক্রোমোজমের মাধ্যমে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্যানুযায়ী পৃথিবীর বেশিরভাগ নারী 46 XX ক্রোমোজম বিশিষ্ট এবং বেশিরভাগ পুরুষ 46 XY ক্রোমোজম বিশিষ্ট। যদিও কিছু ভিন্নতা রয়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে কোনও ব্যক্তির সেক্স ক্রোমোজোম এবং জিনের বিভিন্ন ধরণের সংমিশ্রণ থাকতে পারে, বিশেষত যারা LGBT হিসাবে চিহ্নিত হন। উদাহরণস্বরূপ, phychological Medicine জার্নালে ২০১৪ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, Xq28 নামক একটি নির্দিষ্ট X ক্রোমোজোম এবং ক্রোমোজোম 8 -তে একটি জিন সম্ভবত সমকামী পুরুষদের মধ্যে বেশি রয়েছে। তবে আমরা এখানে শুধুমাত্র স্বাভাবিক নারী-পুরুষদের নিয়ে আলোচনা করবো যারা 46XX বা 46XY ক্রোমোজম বিশিষ্ট। মানব জননকোষের ২৩ জোড়া ক্রোমোজমের মধ্যে এক জোড়া থাকে লিঙ্গ নির্ধারনি ক্রোমোজম যাকে সেক্স ক্রোমোজম বলা হয় । আর বাকী ২২ জোড়াকে বলা হয় অটোজোম। সেক্স ক্রোমোজমের মাধ্যমেই নির্ধারিত হয় সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে। পুরুষের একজোড়া সেক্স ক্রোমোজম হল XY এবং নারীদের সেক্স ক্রোমোজম হল XX। দৈহিক মিলনের ফলে যদি পুরুষের Y ক্রোমোজম নারীর X এর সাথে মিলিত হয় তবে সন্তান হবে ছেলে। আর যদি পুরুষের X গিয়ে নারীর X এর সাথে মিলিত হয় তবে সন্তান হবে মেয়ে। অর্থাৎ সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারনের জন্য পুরুষের শুক্রাণুই প্রধান চলক ফ্যাক্টর। [5]

Image: 23 Sets Chromosome of Human

গর্ভের সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারন বিষয়ক এই সহজ বিজ্ঞানটুকু আমরা ক্লাস ৯ এ থাকতেই জেনেছি। তাই এখানে উচ্চতর ক্লাসের বায়োলজি নিয়ে আলোচনা করার কোন প্রয়োজন হচ্ছে না।

কাজেই উপরোক্ত হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী, পুরুষের বীর্য নারীর বীর্যের উপর কিংবা নারীরটা পুরুষের উপর প্রাধান্য লাভের ফলে সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারিত হয় এই তথ্যটা হাস্যকর।


তাছাড়া আলোচ্য হাদীসে এটাও বলা হয়েছে যে, পুরুষের বীর্য সাদা এবং মেয়েলোকের বীর্য হলুদ। এই তথ্যটাও অত্যন্ত হাস্যকর।

আচ্ছা আমাদের রঙিলা রসুল কি এটা জানতেন না যে মেয়েদের বীর্য বলে কিছু নেই? পুরুষের বীর্য সাদা তাঁর এই কথাটা ঠিক আছে কিন্তু মেয়েদের বীর্য হলুদ বলে তিনি আসলে কি বুঝালেন, আমার মাথায় ডুকতেছেনে না। 🤔


কেননা মেডিক্যাল সায়েন্স আমাদেরকে বলে যে মেয়েদের বীর্য বলে আসলে কিছু নেই। যৌন মিলনের সময় তাদের যোনি থেকে একধরনের পিচ্ছিল তরল নির্গত হয় যাকে ভেজিনাল ফ্লুইড বা কামরস বা যোনিস্রাব বলে। এটা ছেলেদের ক্ষেত্রেও হয় তবে এটা আসলে বীর্য না। [6]

কিছু কিছু ১৮+ মুভিতে দেখানো হয় যে,

অর্গাজমের সময় মেয়েদের যৌনাঙ্গ থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল ফিনকি দিয়ে বের হয়। ওটা আসলে মূত্রত্যাগ যা মূত্র ছিদ্র দিয়ে বের হয়। অর্গাজমের সময় এইধরনের মূত্রত্যাগকে বলা হয় squirting। তবে এই সময় মূত্রের সাথে কিছু বিশেষ গ্রন্থি হতে নিঃসৃত তরলও মিশে থাকতে পারে, যা সাধারণত মূত্রে থাকে না।[7]

Image : External Female Anatomy

Vaginal Discharge

আর যেহেতু মেয়েদের বীর্য বলে কিছু নেই, কাজেই সেটার রং হলুদ হওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। তাই উপরোক্ত হাদীসটি পড়ে আমার শুধু এটাই মনে হয়েছে যে, তৎকালে নবী মোহাম্মদ ক্রোমোজমের মাধ্যমে লিঙ্গ নির্ধারন কিংবা মেয়েদের যে বীর্য বলে কিছু নেই এই তথ্যটা জানতেন না। কেননা যদি জানতেনই তাহলে পুরুষের বীর্য মেয়েলোকের বীর্যের উপর কিংবা মেয়ে লোকেরটা পুরুষের উপর প্রাধান্য লাভের ফলে সন্তান ছেলে বা মেয়ে হয়, এরকম উদ্ভট কথা কখনোই বলতেন না।

---------------------------0--------------------------

তথ্যসূত্রঃ

1. সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমি), অধ্যায় ৩ , পরিচ্ছদ ৮, হাদিস নং ৬০৩


2.https://www.nature.com/scitable/definition/gamete-gametes-311

3.http://www.wisegeek.com/what-is-sperm.htm

4.https://www.britannica.com/science/embryo-human-and-animal

5.https://www.livescience.com/amp/27248-chromosomes.html


6. https://doctor.ndtv.com/faq/do-women-reach-climax-the-same-way-as-men-9844

http://teenhealthsource.com/blog/vaginal-fluids

7.https://www.healthline.com/health/healthy-sex/female-ejaculation#takeaway


 
 
 

10 comentarios


Cosmic Alean
Cosmic Alean
17 ago 2020

ধন্যবাদ ভাই 😍

Me gusta

Asad Noor
Asad Noor
17 ago 2020

সুন্দর লিখেছেন।

ধন্যবাদ আপনাকে।


- Asad Noor

Me gusta

Cosmic Alean
Cosmic Alean
17 ago 2020

ধন্যবাদ Zonaki

Me gusta

Zonaki
Zonaki
16 ago 2020

পোস্টটি পড়ে অনেক কিছু বুঝতে পারলাম

Me gusta

Layla 75
Layla 75
16 ago 2020

আমি সাইন্স বিশ্বাস করি

Me gusta
Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
lgbt-bangladesh.png
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

bottom of page