সমাজতন্ত্রের উৎপত্তি (Rises of Socialism)

আধুনিক যুগের অন্যতম প্রভাবশালী এবং সমাজসংস্কারকমূলক আন্দোলন শিল্পবিপ্লব থেকেই উদ্ভূত। উনবিংশ শতাব্দীতে গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের ন্যায় এই আন্দোলন সমগ্রবিশ্বে তুমুল আলোড়নের সৃষ্টি করে। প্লেটো, থমাস মুর প্রমুখ চিন্তাবিদদের লেখনীতে পুরাতন সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ন্যায়, সততা, বিচার ও সুষম বন্টণের মাধ্যমে নতুন সমাজপ্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ফরাসি বিপ্লবের সমাজসংস্কারমূলক ব্যবস্থাগুলো ঘুণেধরা সমাজকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে এবং ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি সাংবাদিক Babeuff সমাজতান্ত্রিক নীতির উদ্ভাবন করে কলকারখানার লভ্যাংশ সরকারের মাধ্যমে বন্টণের প্রয়াস পান। ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব শুরু হলে শ্রমিকশ্রেণী যে সুযোগ সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করে তাকে সুনিশ্চিত করার জন্যই সমাজতন্ত্রের আবির্ভাব হয়। শিক্ষার প্রসার, স্বৈরাচারী সরকার ও গোঁড়া খ্রিস্টান ধর্মের অধঃপতন, গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবোধের উন্মেষ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সহায়ক ছিল। শিল্পবিপ্লব পুঁজিপতি, শিল্প-মালিক এবং দরিদ্র শ্রমিকদেএ মধ্যে বিরাট ব্যবধানের সৃষ্টি করে; কারণ, আয়ের একটি বিরাট অংশ মালিকগণ আত্মসাৎ করত এবং কায়িক পরিশ্রম করেও শ্রমিক-শ্রেনীকে দুঃখ - দুর্দশার ভিতর দিয়ে কালাতিপাত করতে হত। সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল পুঁজিপতি মালিকদের শোষননীতি। সমাজতন্ত্রের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ব্যক্তিমালিকানা-স্বত্ব (Private ownership)-এর স্থলে রাষ্ট্রীয়করণ পদ্ধতির মাধ্যমে উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ এবং সুষ্ঠু আয়বণ্টন ব্যবস্থা।
সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল প্রধানত তিনটি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে, যেমন -
(ক) ব্যক্তিগত মূলধন ও মূলধনি সম্প্রদায়ের বিলুপ্তি ;
(খ) শ্রমিকশ্রেণীর কল্যাণ
(গ) উৎপাদনের উপাদানগুলো - জমি, শ্রম, মূলধন,ব্যবস্থাপনার উপর রাষ্ট্রের অধিকার স্থাপন।
সমাজতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর পূর্বেই ইংরেজ মনীষী জেরেমি বেনথাম, জেমস মিল ও জন স্টুয়ার্ট মিল এদের হাত ধরে। তাঁরা অবশ্য ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপ অথবা উৎপাদন রাষ্ট্রীয়করনের সমর্থন করেন নি, বরং শ্রমিককল্যানকর ব্যবস্থার পক্ষপাতি ছিলেন। ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি কৃষকশ্রেণী থেকে উদ্ভুত ফ্রাঁসোয়া বেইবিউফ ( Francois Babeuff) সর্বপ্রথম সমগ্র জাতীয় আয় সরকার কর্তৃক বণ্টনের দাবি জানান এবং সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন পরিচালনা করতে গিয়ে তিনি ধৃত ও নিহত হন।
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে একশ্রেণির আদর্শবাদী সমাজতান্ত্রিক চিন্তাবিদদের আবির্ভাব ঘটে। এঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ফ্রান্সের সেন্ট সাইমন ( St. Simon ), চার্লস ফারিয়ার(Charles Fourier) এবং ব্রিটেনের রবার্ট আওয়েন (Robert Owen) , টমাস হজস্কিন (Thomas Hodgskin),উইলিয়াম থমসন (William Thompson).
তাদের এই আদর্শবাদী সমাজতন্ত্র ইওটোপিয়ানিজম বা অবাস্তব আদর্শবাদ নামে পরিচিত কারণ, ইহা ছিল অবাস্তব ও অলীক। এটা ছিল উচ্চ আশা, সাম্যবাদ, মানবতাবোধ ও সমতার ভিত্তিতে পরিকল্পিত একটি আদর্শ মাত্র। এই মতবাদ প্রকৃতপক্ষে শ্রমিকশ্রেণীর কোন কল্যাণসাধন করতে সমর্থ হয়নি ; কারণ, বাস্তববাদী সমাজতন্ত্রের আবির্ভাবে ইওটোপিয়ানিজম সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় এবং এর পরিবর্তে কমিউনিজম ও মার্কসিজম-এর উদ্ভব হয়।
মার্কসবাদী সমাজতন্ত্র তথা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের উথান নিয়ে পরবর্তী পর্বে আলোচনা করবো (চলবে)
Theory thik chilo employment kora possible na, karon manush jontro na, input beshi dela output beshi ashbe ta bola Jay na..