আল্লাহ বনাম মানুষ কার ক্ষমতা বেশি?
১) মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়ে না। অর্থাৎ প্রকৃতিতে যা কিছু ঘটে (যেমনঃ মেঘ,বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, তুফান, ভূমিকম্প ইত্যাদি) তার সবই আল্লাহর ইচ্ছাতে ঘটে। কোন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হবে কোন অঞ্চলে হবে না সেটা আল্লাহর নিয়োগকৃত ফেরেশতা মিকাইলের ইচ্চানুযায়ী হয়। কিন্তু মানুষ আজ আল্লাহকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজেরাই কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টিপাত ঘটানোর টেকনোলজি আবিষ্কার করে। Artificial Precipitation নিয়ে বিস্তারিত পড়তে এখানে যান-
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Cloud_seeding
2) আল্লাহর ইচ্চাতেই একটা মানবশিশু বিকলাঙ্গ বা ত্রুটিপূর্ণ দৈহিক গঠন নিয়ে জন্ম নেয়। যেমন, ঠোট কাটা, জোড়া মাথা, জোড়া কোমর, পেট থেকে হাত-পা বের হওয়া ইত্যাদি। কিন্তু আজকে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাকে একটি সুন্দর স্বাভাবিক জীবন উপহার দিতে পারেন। যেমন, শিশুর ঠোঁট কাটা, গর্ভাবস্থায় ওপেন হার্ট সার্জারি, মাতৃগর্ভে TGA সার্জারি সহ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও জটিল অনেক সার্জারিতে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আজ সফল।
৩) আগেকার দিনে খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে মানুষ ফসল ফলাতে পারত না কিন্তু বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ মানুষ ডিপ সেলু মেশিন ও সেচ পাম্পের মাধ্যমে অধিক ফসল ফলাতে পারে।
খরা, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়
, সিডর , ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যদি আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়ে থাকে তাহলে আমি বলব আল্লাহর চেয়ে আজ মানুষের শক্তি অনেক বেশি। কারণ মানুষ এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের অধিকাংশই আজ জয় করতে পেরেছে। এক কথায় মানুষ আজ প্রকৃতির অনেক কিছুকেই নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে গেছে।
৪) আলেম ওলামারা যেমন বলে রোগ নিরাময় করার একমাত্র ক্ষমতা আল্লাহর হাতে। তিনি মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য রোগ বালাই দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমরা দেখি অনেক অমুসলিম ও নাস্তিক সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশসমূহের মানুষেরা কোন ইশ্বর, আল্লাহ বা ভগবানকে না ডেকেও শুধুমাত্র ডাক্তারদের দেয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধের উপর ভরসা করেই রোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। এই ওষুধসমূহ নিশ্চই আল্লাহ আকাশ থেকে তৈরী করে পাঠিয়ে দেন নি। এগুলো মানুষ আবিষ্কার করেছে তাদের নিজস্ব জ্ঞান বুদ্ধি ও পর্যবেক্ষনকে কাজে লাগিয়ে।
৫) আল্লাহ মানুষকে যেসব ফসলি বীজ দিয়েছেন সেগুলো থেকে আজ ভালো ফলন পাওয়া যায় না। যেমন, ধানের কথায় বলা যাক। আগেকার দিনে ধানের যেসব জাত প্রচলিত ছিল সেগুলো থেকে খুব বেশি ফলন পাওয়া যেতো না। অনেক সময় অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে সব ফসল নষ্ট হয়ে যেতো। কোন ফলন পাওয়া যেতো না। কৃষকদের জীবনে নেমে আসতো অনাবিল দুঃখ কষ্ট। কিন্তু আজ বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ কৃষিতে বিপ্লব এনেছে। কৃষিবিজ্ঞানীরা উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল ধানের একাধিক জাত উউদ্ভাবন করেছে যা খরা সহনশীল ও অধিক ফলনশীল। যেমন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এই পর্যন্ত ১০২ টি (৯৫ টি ইনব্রিড ও ৭ টি হাইব্রিড) উচ্চ ফলনশীল আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে যা বন্যা লবনাক্ততা, খরা, শৈত্য প্রবাহসহ অন্যান্য প্রতিকূল পরিবেশে সহনশীল। বিস্তারিত জানুন এখানে http://www.brri.gov.bd/site/page/c9b706ef-077d-465c-8279-2c7d42be2edf
চিত্রঃঃ উচ্চ ফলনশীলধানের
অনুরূপ, বিভিন্ন ফল ও সবজির ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানীরা আজ একাধিক উচ্চফলশীল ও হাইব্রিড জাত উদ্ভাবন করেছে। যেমন, হাইব্রিড পেপে,হাইব্রিড বেগুন, হাইব্রিড আম, হাইব্রিড পেয়ারা, হাইব্রিড লিচু ইত্যাদি। কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবন ও আবিষ্কার সম্পর্কে অল্প কথায় বলে শেষ করা যাবে না। এসব উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ফসলী বীজ নিশ্চয় আল্লাহ আকাশ থেকে তৈরি করে পাঠিয়ে দেন নি এগুলো মানুষ উদ্ভাবন করেছে তাদের নিজের বুদ্ধি বিবেক ও পর্যবেক্ষনলদ্ধ জ্ঞানের আলোকে।
আল্লাহ যেখানে নিজের ইচ্ছায় খরা, বন্যা, বৃষ্টি ইত্যাদি দিয়ে কৃষকের ফসল নষ্ট করে দেন সেখানে কৃষি বিজ্ঞানীরা এসব প্রতিকূল পরিবেশ টিকে থাকার উপযোগী একাধিক ফসলী জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাহলে এক্ষেত্রে কার ক্ষমতা বেশি?
৬) আল্লাহ বলেছেন মায়ের গর্ভের সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে সেটা কেবল তিনিই জানেন। অথচ চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ আজ শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই অর্থাৎ মায়ের জরায়ুতে থাকাকালীন সময়েই শিশুর লিংগ পরিচয় জানতে পারে। এমনকি মায়ের জয়ায়ুর বাহিরেও যে টেস্টটিউবে বেবি জন্ম দেয়া যায় আল্লাহ সম্ভবত সেটা জানতেনই না।
৭) আল্লাহ বলেছেন, অদৃশ্যের জ্ঞান কেবল তাহারই হাতে।[কোরান ৩৪ঃ০৩] অথচ বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ মানুষ অদৃশ্য জগতের অনেক জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন। যেমনঃ ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, পরমাণু জগত, অতিপারমানবিক কণিকাদের জগত, কোয়ান্টাম জগত, বিভিন্ন ধরনের রেডিয়েশন ইত্যাদি।
৮) আল্লাহ কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য মুমিনদেরকে কেবল লোহ নির্মিত তলোয়ার ও উঠ, ঘোড়া দিয়েছেন। কিন্তু আজ কাফির মুশরিক, ইহুদি নাসারাদের দল এমন সব পরমাণু অস্ত্র তৈরি করেছেন যা একটা দেশকে তছনছ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগবে। হাইড্রোজেন বোমা,এটম বোমা, নিউট্রন বোমা, মিশাইল সহ বিভিন্ন পারমাণবিক ক্ষেপনাস্ত্রের কথা নাহয় বাদ দিলাম। আজকের দিনের ডিনামাইট, গোলাবারুদ, কামান, পেট্রোল বোমা, রাইফেল ইত্যাদির সাথে যদি আল্লাহর দেয়া উট আর তলোয়ারের তুলনা করি কার ক্ষমতা বেশি বলে মনে হয় আপনার ?
৯) আল্লাহ তার পবিত্র কালাম কোরান সংরক্ষণের জন্য তৎকালে তার বান্ধাদেরকে কেবল খেজুর পাতা, কালি, পশুর চামড়া, পাথর ইত্যাদি দিয়েছিল কিন্তু মানুষ তার জ্ঞান বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে একসময় কম্পিউটার, টেপরেকর্ডার ইত্যাদি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় যার ফলে কোরান সংরক্ষণ করা অনেক সহজ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে কার ক্ষমতা বেশি?
১০) আল্লাহর ঘর ‘কাবা’ (Quran 3:96) মুহম্মদের মৃত্যুর পর কয়েকবার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় ! কাবার কালো পাথর (Black stone) বিদীর্ণ হয় বহু খন্ডে, Qarmatians-রা সেটা চুরি করে এবং বহু বছর পরে তার বিনিময়ে মুক্তিপন আদায় করে ! সর্ব শক্তিমান আল্লাহ কেন সমগ্র মুসলিম জাহানের এই পবিত্র ঘর এবং পাথর কে বাঁচাতে কোন ধরনের পদক্ষেপ নিলেন না ? তাহলে কি আল্লাহর ক্ষমতা নাই ?
http://en.wikipedia.org/wiki/Kaaba#After_Muhammad
http://www.al-islam.org/kaaba14/1.htm
http://en.wikipedia.org/wiki/Black_Stone#History_and_tradition
আল্লাহর হুকুম ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্নাহ অনুসরণের মাঝে অবশ্যই মানুষের কল্যাণ রয়েছে, আপনি তখনই বুঝতে পারবেন , যখন চলার চেষ্টা করবেন. আল্লাহর হুকুম ও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্নাহ অনুসরণ না করার মাঝে অবশ্যই মানুষের অকল্যাণ ও ক্ষতি রয়েছে, আপনি আজ না হয় কাল অবশ্যই বুঝতে পারবেন, ইনশা আল্লাহ.