পৈতা কি? পৈতা কেনো দেয়া হয়?
যজ্ঞোপবীত বা পৈতার অপরনাম প্রতিজ্ঞাসূত্র বা ব্রতসূত্র। আটবছর থেকে বার বছর বয়সের ভেতর
প্রতিটি বৈদিক ধর্মালম্বীর উপনয়ন আবশ্যক এবং উপনয়নের মাধ্যমে এই পবিত্র সুত্রটি সে গুরুকর্তৃক
প্রাপ্ত হয়।যদিও বর্তমানে পুরুষশাসিত ঘুনে ধরা সমাজ নারীদের থেকে এই অধিকার কেড়ে নিয়ে বেদের বিরুদ্ধাচরন করছে। প্রতিটি পৈতা তিনটি আলাদা সূত্রকে গিট দিয়ে বেঁধে তৈরী। এই
গিট বা বন্ধনকে ব্রহ্মগ্রন্থি বা ঈশ্বর কর্তৃক
প্রদত্ত গ্রন্থি বলা হয়।এই তিনটি সূত্র ঈশ্বর কর্তৃক নির্দেশিত প্রতিটি মানুষের তিনটি ব্রত বা ঋন বা দায়িত্বের প্রতীক।কি সেই তিনটি ঋন যা প্রত্যেকটি মানুষকে শোধ করতে হয়?
স সূর্যস্য রশ্মিভিঃ পরিব্রুথম তন্তু
তন্বস্ত্রিব্রুথ ম যথাবিদে।
প্রশিশো নবিয়সি পথিরজনীনমুপা
যথি নিষ্কৃতম।
(ঋগ্বেদ ৯.৮৬.৩২)
অনুবাদ: এই তিনসূত্র পরিধান করতে হয় জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য জানতে। যে ব্যক্তি যজ্ঞোপবীত
ধারন করেন তিনি গুরুর কাছে এটা অবগত হন যে তিনটি ঋন তার শোধ করতে হবে-দেব,পিতৃ,ঋষি।
১) দেবঋণ- ঈশ্বর কর্তৃক প্রদত্ত আমাদের বেঁচে থাকার অপরিহার্য এ পৃথিবী,পরিবেশ ও প্রানীকুলের
প্রতি দায়িত্ব। পৃথিবী কে সুন্দর করে গড়ে তোলা,পরিবেশ শুদ্ধ করা ও জীবে সেবা করা দেবঋণের অন্তর্গত।
২) পিতৃঋণ-পিতামাতার প্রতি ঋন। নিঃস্বার্থ ভাবে এই দুই জীবন্ত দেবতা আমাদের মানুষ করেন,তাদের
যথাসাধ্য সেবাযত্ন করা আমাদের কর্তব্য।
৩) ঋষিঋণ-প্রাচীন বৈদিক ঋষিগন থেকে শুরু করে নিজের গুরু- শিক্ষক,এরাই আমাদের প্রকৃত মানুষ করে গড়ে তোলেন। এদের সেবা,অনুসরন করাই ঋষিঋণ।
পঞ্চগিট-যজ্ঞোপবীত বা পৈতাতে মোট পাঁচটি গিট থাকে। এই পাঁচটি গিট উপরোক্ত ঋনসমূহ পরিশোধে পাঁচটি বাঁধার কথাকে স্মরন করিয়ে দেয়-কাম,ক্রোধ, লোভ,হিংসা,মোহ। অবস্থান-যজ্ঞোপবীত বাঁম কাধ থেকে ঝুলিয়ে ডান দিকের কোমর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে কেননা এত সূত্রটি ঠিক হৃদপিন্ডের উপর দিয়ে যায় যার মাধ্যমে প্রতীকিভাবে বোঝানো হয় নিজের দায়িত্বগুলো হৃদয় থেকে পালন
করতে।
Commenti