জ্বিন জাতির ইতিহাস ৩য় পর্ব
চালপালিশের পয়গম্বরির এক হাজার বছর পূর্ণ হয়ে গেল। অতপর আল্লাহ পাকের নির্দেশে আসমান হতে অসংখ্য ফেরেশতা জমিনে এলেন। তাঁরা এসে চালপালিশসহ সমগ্র্র জ্বিন জাতিকে বিনাশ করে দিলেন কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় এ যাত্রাতেও সামান্য সংখ্যক জ্বিন কোনভাবে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেল। তাদের কতৃক বংশ বিস্তার হয়ে পৃথিবী পুনরায় জ্বিন জাতিতে পূর্ণ হয়ে উঠল। তারা পাপাচারে পৃথিবীকে জাহান্নাম তুল্য করে ফেলল। আল্লাহ পাক তাদের মধ্য হতে বিলীকা নামক জনৈক জ্বিনকে পয়গম্বরী তথা বাদশাহী প্রদান করতঃ জ্বিনদের উপর তার শাসন ও হেদায়েত কার্য পরিচালনার জন্য নির্দেশ প্রদান করলেন। বিলীকা তদানুযায়ী কাজ শুরু করে দিলেন। অচিরেই জ্বিনদের ধর্মভাব ও সুখ-শান্তি ফিরে এলো।
বিলীকা যখন বাদশাহী ও নবুয়ত প্রাপ্ত হয়েছিল তখন তাঁর বয়স হয়েছিল পঁচিশ হাজার বছর। এই বয়সে সে জাতির উপর কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়ে ছত্রিশ বছর তা পালন ও রক্ষা করে। অতঃপর তার মধ্যেও পরিবর্তন আসে। দীর্ঘদিন পর তার অধিনস্ত জ্বিনেরা যেমন পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে তেমনি সেও পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ে। ফলে আল্লাহর গজবও আবার নেমে আসে। এতে করে বিলীকাসহ জ্বিন জাতি ধ্বংস প্রাপ্ত হয়ে পড়ে। অবশ্য কিছু সংখ্যক জ্বিন অনিবার্য কারণে পূর্বের নিয়মে রক্ষা পেয়ে যায়। অতঃপর তাদের বংশ বৃদ্ধি পেয়ে পুনরায় পৃথিবী জ্বিনদের আবাসে পরিণত হল। এবার আল্লাহ পাক তাদের শাসন ও সৎপথ প্রদর্শনের জন্য “হামুস” নামক একজন মহৎ জ্বিনের উপর দায়িত্ব অর্পণ করলেন। এবার তাকেই আল্লাহ পাক জ্বিনদের বাদশাহ ও পয়গম্বর নিযুক্ত করলেন। হামুসকে পয়গম্বরী প্রদান করার পর আল্লাহ পাক তাকে তাঁর পূর্ববর্তী পয়গম্বরদের পরিণতির কথা জানিয়ে সাবধান করে দিলেন যে, নির্দেশ অনুযায়ী তুমি তোমার দায়িত্ব ও কর্তব্য সমূহ যথাযথভাবে পালন কর। অন্যথায় তোমার অবস্থা পূর্ববর্তীদের চেয়ে খারাপ হবে। এর প্রতি উত্তরে হামুসও আল্লাহ পাকের নিকট স্বীয় কর্তব্য পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিল, হে আল্লাহ! আমি সমগ্র জীবনে মনে প্রাণে আপনার নির্দেশ পালন করে যাব। তাতে কোন প্রকার ত্রুটি করব না। হামুসের যামানায় জ্বিনেরা বেশ কিছুদিন ভালোভাবে চলল, তারা সৎ জীবন-যাপন করল। আল্লাহ পাকের নির্দেশ পালনে কোনরূপ অন্যথা করল না। কিন্তু এরপরই পুনরায় কুপথে ধাবিত হবার জন্য প্রলুব্ধ হয়ে পড়ল। দেখতে দেখতে তারা আল্লাহর প্রতি নফরমান হয়ে গেল। হামুস বহু চেষ্টা করেও তাদেরকে সুপথে আনয়ন করতে পারল না। বরং তারা হামুসকেই উল্টো ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতে লাগলো। কেহ কেহ তাঁকে নানাভাবে প্রলোভনও দেখাতে লাগলো যে, সে যদি তাদের পথে চলে আসে, তাহলে তারা তার বহু স্বার্থসিদ্ধি করে দিবে। প্রথম প্রথম হামুস তাদের কথায় কর্ণপাত না করলেও শেষ পর্যন্ত নিজের মনোবল অক্ষুণ্ণ রাখতে ব্যার্থ হল। সে তাদের দলে ভিড়ে গেল। অতঃপর কে কাকে সৎপথ প্রদর্শন করে। স্বয়ং হেদায়েতকারীই যখন গোমরাহদের দলে শামিল হল, তখন জ্বিনদের মধ্যে পাপের বন্যা বয়ে চলল। এ সময় জ্বিনদের আদি পিতা “তারাননুস” এর সৃষ্টির পরে এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার বছর অতিক্রান্ত হয়েছিল। এ সময় জ্বিন জাতির উপর আল্লাহ পাকের ক্রোধ পুনরায় বর্ষিত হল। তিনি ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলেন, তোমরা এবার সমগ্র জ্বিন জাতিকে বিনাশ করে ফেল। আল্লাহ পাকের নির্দেশানুযায়ী অগণিত ফেরেশতা অস্ত্র নিয়ে পৃথিবীর বুকে অবতীর্ণ হলেন। এবার জ্বিনেরাও পূর্বের ন্যায় থাকল না। তারাও অস্ত্র নিয়ে ফেরেশতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামল। ফেরেশতাগণ হাজির হলে উভয় পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হল। কিন্তু ফেরেশতারা ছিলেন আল্লাহর বলে বলীয়ান, তাদের সঙ্গে সামান্য জ্বিনেরা পারবে কেন? তারা প্রাণপণ যুদ্ধ করে একজন ফেরেশতাকেও হত্যা করা তো দূরের কথা সামান্যতম আহতও করতে পারল না। বরং তারা নিজেরাই ফেরেশতাদের আঘাতে ধরাশায়ী হতে লাগল। শেষ পর্যন্ত দু’চারটি জ্বিন মাত্র পাহাড়-পর্বত ও বনে-জঙ্গলে আত্নগোপন করে প্রাণ রক্ষা করল এবং অবশিষ্ট সমস্ত জ্বিনই ফেরেশতাদের হাতে প্রাণ বিসর্জন দিল। (কথিত আছে যে, জ্বিনদের এই অবাধ্যতার কারণে আল্লাহ পাক একে একে পাঁচবার জ্বিনদের বিনাশ করেন, আর শেষবার জ্বিনেরা এতটাই বেপরোয়া এবং অবাধ্য হয়ে উঠে যে, তারা ফেরেশতাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়ার সাহস দেখায়। কিন্তু ফেরেশতাদের মৃত্যু একমাত্র আল্লাহর দ্বারাই সম্ভব।) এ সময় ফেরেশতাগণ জ্বিনদের মধ্যে একটি কম বয়সী সুন্দর বালক জ্বিনকে দেখতে পেয়ে তাদের মনে মমতার উদ্রেক হল। তারা তাকে হত্যা না করে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা জানাল, হে আল্লাহ! এই বালক জ্বিনটির প্রতি আমাদের হৃদয়ে দয়া-মায়ার উদ্রেক হয়েছে। আপনি অনুমতি দিলে আমরা তাকে আসমানে নিয়ে এসে পরম যত্নে লালন-পালন করব। আল্লাহ পাক ফেরেশতাদের প্রার্থনা কবুল করলেন এবং তাদের অনুমতি দিলেন। ফেরেশতারা এই সুন্দর বালক জ্বিনের নাম রাখলেন “ইবলীস”। ফেরেশতাগণ যখন তাকে প্রথম আসমানে নিয়ে এলেন তখন উক্ত বালক জ্বিনের বয়স হয়েছিল এক হাজার বছর। বালক জ্বিনটির প্রতি ফেরেশতাগণের হৃদয়ে এহেন দয়া-মায়ার উদ্রেক হওয়ার পিছনে অবশ্যই আল্লাহ পাকের কোন নিগূঢ় উদ্দেশ্য নিহিত ছিল।
তথ্য সুত্রঃ কাসাসুল আম্বিয়া (উর্দ্দু) মাওলানা তাহের সুরাটি (ভারত) অনুবাদঃ আলহাজ্ব মাওলানা মোঃ সামসুল হক এম. এম.
Comments