প্রেসিডেন্ট এরশাদের সময়ে ঢাবি থেকে গোল্ড মেডেল পাওয়া এক ম্যাডাম আমার দিকে তাকিয়ে বিতৃষ্ণ গলায় জানতে চেয়েছিলেন,
"আউট বই কেন পড়? এইগুলার ফায়দা কি?"
আমি খানিকক্ষণ তব্ধা মেরে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে। তারপর খুব ধীর গলায় জানতে চাইলাম,"আউট বই বলছেন কাকে? গল্পের বইকে?"
তিনি বললেন,"পাঠ্য বইয়ের বাইরে সবই তো আউট বই!"
"রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি, বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী- এইগুলাও তাইলে আউট বই?"
তিনি নাক সিটকে বললেন,"অবশ্যই আউট বই!"
এই গোল্ড মেডেল পাওয়া আন্টি টাইপ মহিলাটি ছিলেন আমাদের পাশের ফ্লোরের ভাড়াটিয়া। কোন একটা কলেজে জিওগ্রাফি পড়াতেন। তার মুখে এমন কথা শুনব, জীবনে ভাবি নাই!
তিনি বললেন,"চাষাভুষা পরিবারের ছেলে তুমি। মন লাগিয়ে ক্লাসের পড়া পড়ো। ভালো একটা রেজাল্ট কর। আখেরে কাজে লাগবে। চাকরীর বাজারে রেজাল্ট খায়। রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি খায় না।"
আমি খানিকটা উদ্ধত গলায় বললাম,"চাকরি পাওয়ার ধান্ধায় পড়াশোনা করছি না ম্যাডাম। আমার ধান্ধা অন্য!"
"অন্য মানে?"
"সিনেমা বানাব! গল্প উপন্যাস লিখব!"
"হ্যা, আমি শুনেছি। পড়াশোনা বাদ দিয়ে তুমি নাকি এখনই খুব কাব্য-কবিতা লিখে বেড়াচ্ছ। কবিতা তোমাকে ভাত দেবে না! এইগুলা মস্তিষ্কের আবর্জনা ছাড়া কিছুই নয়। এখন হয়ত আমার কথা শুনে মন খারাপ করছ তুমি। কিন্তু একদিন ঠিকই বুঝবে! কিন্তু আফসোস, সেইদিন হাজার কান্না করেও গল্প-উপন্যাস পড়ে নষ্ট করে দেওয়া সময়গুলি আর ফেরত পাবে না!"
মহিলার কথা শুনে সত্যিই খানিকটা ভয় পেয়ে গেলাম। গল্প-উপন্যাস পড়তে ভালোবাসি। বড় বড় মনীষীদের লেখা পড়লে নিজেকে খুব বড় মনে হয়। মহৎ কিছু করার ইচ্ছে জাগে প্রাণে। তাই পড়ি। কিন্তু এর যে একটা ভয়াবহ মন্দ দিক আছে কখনো ভেবে দেখি নি।
সেইদিন সন্ধ্যা বেলাতেই একটা অদ্ভুত কান্ড করলাম। টেবিলের দুইপাশে থরে থরে সাজানো সবক'টা 'আউট বই' হ্যাচকা টানে নিচে ফেলে দিলাম। প্রথমে ফ্লোরে। ফ্লোর থেকে ঠেলে পাঠিয়ে দিলাম পালঙ্কের নিচে।
এই ঘটনার দুইমাস পর ছোট্ট একটা দুঃসংবাদ কানে এল। গোল্ড মেডেল পাওয়া আন্টির একমাত্র কন্যা সিমরান নিশিরাতে ইয়াবা সহ পুলিশের ধরা খেয়েছে। নগদ পয়সাকড়ি এবং পলিটিকাল প্রভাব খাটিয়ে মেয়েকে তিনি ঠিকই থানা থেকে বের করে নিয়ে এসেছেন, কিন্তু খবরটা গোপন রাখতে পারেন নি।
পত্রিকার পাতায় নেশাগ্রস্ত সিমরানের ছবি দেখে আমার বুকের ভেতর আগুনের হল্কা বয়ে গেল। এই মেয়েটাকে মনে মনে খুব সমীহ করতাম আমি। তখন অবধি দূর হাওর তল্লাট থেকে আসা অতি হাবাগোবা টাইপ একটা ছেলে আমি। বাসার ভেতরে লুঙ্গি পরি, বাইরে গেলে ঢিলেঢালা প্যান্ট।
অন্যদিকে শর্ট হাতার টিশার্ট এবং স্কার্ট পরা অতি উচ্চবর্গের একটা মেয়ে সিমরান। ওর সাথে প্রেম করার মতো দুঃসাহস আমার নেই।
তবে দূর থেকে চোরা চোখে ওকে দেখে খুব আরাম পেতাম। বারান্দা ছিল পাশাপাশি। সিমরানের ছিল অঘুমের অসুখ। প্রায়শই রাত্রিরে মেয়েটাকে একাকী বারান্দায় পায়চারি করতে দেখতাম।
কানে হেডফোন। পনি-টেইল করা সিল্কি চুল। বাম হাতে রূপালী চেইনের ঘড়ি, ডান হাতে মূল্যবান পাথর বসানো রিস্ট-ব্যান। পরনে শুধুমাত্র একটা টিশার্ট এবং খাটো-প্যান্ট। এই মেয়ের দিকে সরাসরি কখনো চোখ তুলে তাকানোর সাহস হয় নি আমার। দূর থেকে প্রায়ই অভিভূত চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছি, আর নিজের বুকের বা পাশে হাত রেখে বেসামাল ধুকপুকানি অনুভব করেছি।
আমার একমাত্র ভরসার জায়গা ছিল সিমরানের মা। আমাদের গোল্ডমেডেল পাওয়া আন্টি। বিচিত্র কোন একটা কারণে তিনি আমাকে বেশ স্নেহ করতেন। নিজ থেকেই সেধে এসে পড়াশোনার খবর নিতেন। হাওরে আমাদের কী পরিমাণ জমিজমা আছে, তার হিসেব নিতেন। বর্গাচাষীদের ভাগজুখের খবর জানতে চাইতেন।
সেবার বৈশাখে আমরা প্রায় এক হাজার মণ ধান উঠিয়েছি শোনার পর তিনি অভিভূত কণ্ঠে বললেন,"এই ছেলে তো রীতিমতো দেখছি জমিদার পুত্র!" আমি বিনয়ে গলে গেলাম! কিন্তু তার এই প্রশংসা বাণীর বিপরীতে একটা শব্দও উচ্চারণ করলাম না!
এরপর যখনই কোন ঘরোয়া অনুষ্ঠান হতো, দাওয়াত পেতাম। তিনি যখন অচেনা কারও সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতেন, খুব তৃপ্তি সহকারে এই খবরটা পরিবেশন করতেন,"এই যে, ওর নাম নূর। ওরা হল হাওর তল্লাটের জমিদার!"
প্রথম প্রথম আমার লজ্জা হতো। কিন্তু একটা মিথ্যেও বারবার শুনতে শুনতে সত্যের মতো মনে হয়। হাওর এলাকায় হাজার মন ধান পাওয়া একশটা গৃহস্থ পরিবার থাকা সত্ত্বেও নিজেকে আমি রাজপুত্র হিসেবেই ভাবতে শুরু করলাম। বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টপার হিসেবে প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেবের হাত থেকে গোল্ড-মেডেল পাওয়া একজন হবু শ্বাশুড়ির প্রনোদণা ছিল আমার সবচাইতে আস্থার জায়গা।
শুধুমাত্র সিমরানে সঙ্গে বিয়ে হতে পারে, এই কথা ভেবে হবু শ্বাশুড়িকে খুশি করার জন্য যাবতীয় আউট-বইকে খাটের নিচে চালান করে দিয়েছিলাম আমি। কিন্তু ইয়াবা সহ ধরা খাওয়ার পর সিমরানের উপর থেকে আমার যাবতীয় প্রেমানুভূতি বাষ্পের ন্যায় বাতাসে মিলিয়ে গেল। তার স্থলে জন্ম নিল এক রাশ বিরক্তি।
এক সন্ধ্যায় খাটের নিচে হাত বাড়িয়ে কয়েকটা কবিতার বই টেনে বের করলাম। দীর্ঘ ছয়মাস পর আবারও আউট বই হাতে নেওয়া। মাঝখানে একটা ডিভোর্সের ক্ষত। খুব লজ্জা লাগছিল। তবুও অনেক রাত অবধি ম্লান গলায় আবুল হাসান পড়লাম..
রাত দুইটা দিকে ওপাশের বারান্দা থেকে একটা হৈ-হল্লার শব্দ কানে ভেসে এল। কেউ একজন সিমরানকে লাঠি পেটা করছে। নিশ্চয়ই সিমরানের বাবা। লোকটা ডিফেন্সে জব করে। কিন্তু আচার-আচারণ অতীব নিম্ন শ্রেণির। সিমরান কাঁদছে। 'ও-বাবা গো, ও-মাগো'! হাউমাউ কান্না। ওর কান্না শুনে মনটাই খারাপ হয়ে গেল৷ এত চমৎকার আর স্মার্ট একটা মেয়ে, জানোয়ারের মতো মার খাচ্ছে৷ আর বাচ্চা শিশুর মতো ডুকরে কান্না করছে।
সেই রাতেই সিমরানকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। ওর জন্যে আগের চেয়েও বেশি ভালোবাসা জন্ম নিল আমার মনে। কবিতার বই বন্ধ করে চুপচাপ নিজের ঘরে চলে এলাম। এরপর কিছুদিন সবই ঠিকঠাক মনে হল। সিমরানের মা, যথা সময়ে কলেজে যাচ্ছেন। বাবা অফিসে যাচ্ছে। সিমরান, কানে হেডফোন লাগিয়ে একাকী বারান্দার এককোনে বসে গান শুনছে। আর আমি? কবিতার বইগুলো আবারও কাঠের নিচে পাঠিয়ে দিয়ে ক্লাসের পড়ায় মন দিয়েছি। সিমরানের খুব কষ্ট। এই কষ্ট থেকে ওকে উদ্ধার করতে হবে। তার আগে অবশ্যই ভালো রেজাল্ট করে খুব ভালো একটা জব আমাকে ম্যানেজ করে নিতে হবে। সিমরানের চামার টাইপ পিতা হাওরের জমিজমায় তুষ্ট হবে না। একে তুষ্ট করতে হলে অবশ্যই একটা প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকুরী আমাকে বাগিয়ে নিতে হবে।
সেবার আমি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে উঠলাম। আগের চেয়ে একটু স্মার্ট হয়েছি। বাসায় লুঙ্গির বদলে শর্টস, পাজামা, থ্রী কোয়ার্টার পরি। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আগের মতো কবিতা কপচাই না। খুব ম্যানলি ভাব নিয়ে সিগারেট পুড়াই। সিমরানের সাথেও টুকিটাকি কথা বলতে শুরু করেছি।
"তারপর, সিমরান যাচ্ছে কেমন তোমার দিনকাল?"
"এই তো ভাইয়া, ভালো!"
"পড়াশোনা?"
"চলছে একরকম!"
"তোমাদের ক্যাম্পাসটা খুব সুন্দর। খুব শান্ত, ছিমছাম। সকলেই ওয়েল-ড্রেসড। অভিজাত পরিবারে ছেলেমেয়ে-।"
সিমরান ম্লান মুখে হাসে। সে কিছুতেই জানতে চায় না, কখন আমি ওদের ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম। কেন গিয়েছিলাম? জানতে চাইলেও সত্যটা বলা যেতো না। মাঝেমধ্যে অকারণেই ওর ক্যাম্পাসে যাই, দূর থেকে শুধুমাত্র এই মেয়েটাকে দেখার জন্য।
নিজের কাছেই অবাক লাগে। সিমরান কিন্তু এইসব জানে না। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমাদের বিয়ের পর এইসব পাগলামির কথা যখন সে শুনতে পাবে, কী ভীষণ অবাকই না হবে!
কিন্তু আশ্চর্য। সিমরানকে অবাক করার ক্ষমতা আমাদের ছিল। ডিপার্টমেন্টের এক ফ্যাকাল্টিকে আচমকা একদিন বিয়ে করে সে নিজেই আমাদের সবাইকে চমকে দিয়েছে।
এই বিয়েটা সিমরানের বাবা মা কেউই প্রথমে মেনে নেয় নি। লোকটার বয়স ছিল সিমরানের চাইতে দ্বিগুণ বেশি। তার উপর সেকেন্ড ম্যারেজ। আগের বউ ঢাকাতেই থাকে। ডিভোর্স হয়েছে। দুইটা বাচ্চাও আছে।
সিমরানের সঙ্গে প্রকাশ্যে আমার কোন সম্পর্ক ছিল না। প্রেম তো নয়ই, এমন কি বন্ধুত্বও নয়। তাই ওর বিয়ের কথা শুনে আমি শোক করতে পারি নাই৷ চুপচাপ দরজা বন্ধ করে কেঁদেছি। একটার পর একটা সিগ্রেট পুড়িয়েছি। সিগ্রেটে নেশা হচ্ছে না দেখে কিছুদিন গাঞ্জা সেবন করলাম।
আমি নিজেকে একলা ঘরে অবরুদ্ধ রেখে যখন একটার পর একটা সিগারেট পুড়াচ্ছি, সিমরান তখন কী করছে? ওহ, আমি ভাবতে পারি না। আধবুড়ো এক ষাণ্ডামারা পুরুষ এসে আমার প্রিয়তম মেয়েটাকে কেড়ে নিয়ে গেছে! কষ্ট লাগে, অতলান্ত কষ্ট!
বিয়ের ছয়মাস পর সিমরান প্রথম তার স্বামীকে নিয়ে মার কাছে আসে। ওদের মধ্যে সব মিটমাট হয়ে গেছে।
সিমরানের স্বামীকে আমি দূর থেকে দেখেছি। জীবনে এই প্রথম কোন পুরুষের সৌভাগ্য দেখে ঈর্ষা হল আমার। নিজেকে ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে... কিন্তু নাহ। সিমরান তো আমার প্রেমিকা ছিল না। ওর জন্যে আত্মহত্যা করেও তৃপ্তি পাব না। লোকে আমাকে আহাম্মক ভাববে।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে "মীন মানুষের কান্নাগুলি" নামে আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ বের হল। সেবার এপ্রিলেই সিমরানের প্রথম সন্তান হল। কন্যা সন্তান।
প্রথম বই ছাপা হওয়ার পর অল্প একটু নামডাক হল আমার। সিমরান আমার ফ্রেন্ড লিস্টে ছিল। একদিন আচমকাই ইনবক্সে নক দিয়ে জানতে চাইল,"কেমন আছেন প্রিয় কবি?"
একটা মাত্র বাক্য। বিশেষত শেষের দুইটা শব্দ আমার বুকের ভেতর ঝড় বইয়ে দিল। "প্রিয় কবি!" আমার আজন্ম তপস্যার নায়িকা সিমরান আমাকে 'প্রিয় কবি' বলে সম্বোধন করেছে!
ছোট্ট করে উত্তর দিলাম,"ভালো আছি৷ তোমার কি খবর?"
"এই তো, বেঁচে আছি!"
ওর উত্তর শুনে থমকে গেলাম। বেঁচে আছি মানে কী? সে কি সুখে নেই? অথচ ফেসবুকে ওর কত সুন্দর সুন্দর ছবি দেখি। মেয়ের ছবি। স্বামীর ছবি। নিজের ছবি। নামীদামী রেস্তোরাঁয় খাবার খাচ্ছে। ব্লকবাস্টারে সিনেমা দেখছে।
উতলা হয়ে জানতে চাইলাম,"কি হয়েছে সিমরান? কোন সমস্যা?"
সিমরান উত্তর দিল না। আমার এই আকুতিভরা মেসেজ সে সীন অবধি করল না। কষ্ট পেলাম। খুব কষ্ট!
এই ঘটনার সাত মাস পর সে আবার নক দিল।
"নতুন কী লিখছেন?"
"কবি ও কঙ্কাবতী নামে একটা উপন্যাস লিখছি।"
"আচ্ছা বেশ। নিরন্তর শুভকামনা!"
পালটা উত্তরে আমি লিখলাম,"নিরন্তর ভালোবাসা!" কিন্তু এই মেসেজ সীন হল না। সিমরান লগ আউট দিয়ে চলে গেল!
এরপর চলে গেছে আরও প্রায় দেড়টা বছর। ফেসবুকে টুকটাক লেখা দেই। পত্রপত্রিকায় লেখা আসে, ফেসবুকে শেয়ার দেই। সিমরান এইসব লেখায় লাইক দেয়, লাভ স্যাম দেয়। কিন্তু ইনবক্সে দেওয়া সেই মেসেজ আর সীন হয় না। নিজেকে খুব তুচ্ছ বলে মনে হয় আমার। কিন্তু কার উপর অভিমান করব আমি? সিমরান তো আমার প্রেমিকা নয়। কোন কালেই ছিল না।
নিজের শরীর উপর অকারণেই খুব টর্চার করি ইদানীং। মৃত্যুর স্বাদ পাইতে বড় ইচ্ছে হচ্ছিল ক'দিন ধরে। কীভাবে আত্মহত্যা করলে সিমরান একটু হলেও কষ্ট পাবে, একটু হলেও করুণা ধারা বর্ষিত হবে ওর চোখ থেকে, এই কথা ভেবে দিন কাটাচ্ছি।
এমনই এক দুঃসহ বিষাদের কালে সেই খবরটা আমার কানে এল। সিমরান আত্মহত্যা করেছে। ওর মেয়ের বয়স তখন সাড়ে তিন। হাসিখুশি সংসার জীবনের বয়স মাত্র পাঁচ বছর।
এখনও মাঝেমধ্যে অবাক বিস্ময়ের প্রশ্ন করি,"কেন আত্মহত্যা করেছিল সিমরান?"
আর্থিক কষ্ট তো ওদের ছিল না। স্বামীর সঙ্গে বনিবনাও ভালোই ছিল। অন্তত দূর থেকে তাই মনে হয়েছে।
মেয়েরা নিজের সুখগুলিকে বড় বেশি দেখিয়ে বেড়ায়। কষ্টগুলিকে মূল্যবান মণিরত্নের মতো এতবেশী গভীরে লুকিয়ে রাখে যে কিছুতেই তল পাওয়া যায় না।
সিমরানের গোল্ড-মেডেল পাওয়া মা ওকে বুঝতে পারে নি। আমার মতো অতি উচ্চবর্গের একজন কবির আবেগ দিয়েও ওকে অনুভব করতে পারি নি।
সিমরান আমার বন্ধু ছিল না, প্রেমিকা তো নয়ই। তবুও এক সমুদ্র বিষাদে আচ্ছন্ন হৃদয় নিয়ে ওর কথা ভেবে ভেবে প্রায়শই আমি একাকী সিগারেট পুড়াই।
ইদানীং টাইমলাইনে যখনই কোন মেয়ের হাসিখুশি ছবি দেখি, ভয়াবহ বিষণ্ণ বোধ করি।
আমি জানি, এইসব হাসিমুখের আড়ালে অতলান্ত কষ্ট লুকিয়ে আছে। এও জানি, পৃথিবীর কোন পুরুষের পক্ষেই এইসব কষ্ট স্পর্শ করা সম্ভব নয়।
প্রিয় নারী... প্রিয়তম সিমরান... সে নেই... সে মারা গিয়েছে। মিশে গিয়েছে মীন মানুষের সমাধিতে...
প্রিয়তম সিমরান.. সে কখনো আমার কোন গল্পের নায়িকা ছিল না। কখনো হবেও না.. সে আমার একহাজার কোটি বছরের বিষাদমাখা এক আরাধনা! সে আমার তুচ্ছতম মানুষজন্মের চির অধরা এক দেবী!
Comments