হিরো এমন হয়
তখন তিনি নিজ হাতে বিস্কুট বানানো শিখেছেন, খুব ইচ্ছে ছিল প্রথমবারের মতো হাতে বানানো বিস্কুট খাইয়ে দিবেন ভালোবাসার মানুষটিকে, বানিয়েছিলেন, সাথে করে নিয়েও যাচ্ছিলেন কিন্তু গন্তব্যে আর পৌঁছানো হয়নি।
১৯৯৩ সনে ঢাকা থেকে বান্দরবন যাওয়ার পথে রোড এক্সিডেন্টে মারা যান জাহানারা কাঞ্চন
শুটিং এ ছিলেন, হোটেল থেকে ফোন আসে, বলে, 'আপনি ঘাবড়াবেন না, আপনার স্ত্রীর আসার কথা ছিল, গাড়িটা অ্যাকসিডেন্ট করেছে, উনারা মোটামুটি ভালো, আপনি শুটিং প্যাক করে চলে আসুন।'
হোটেলে ফিরলেন, ইতিমধ্যে অন্যরা জেনে গেছে জাহানারা কাঞ্চন আর নেই কিন্তু ইলিয়াসকে জানানো হয়নি।
'আমি হোটেলে ফিরে আসরের নামায পড়লাম, সবাই তাগাদা দিচ্ছিল তাড়াতাড়ি চলেন। হাসপাতাল যাওয়ার পথে রাস্তায় যেতে যেতে গাড়িটা দেখলাম, মনটা কেমন শূন্য হয়ে গেল। গিয়ে দেখলাম বাচ্চাদুট কাঁদছে, আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম।'
এ যাবতকালে দেশের ইতিহাসে সবচাইতে ব্যবসা সফল সিনেমা (প্রথম তিনমাসে প্রায় চল্লিশ কোটি টাকা) যার টিকেট পেতে আগের দিন সন্ধ্যা থেকে লাইন দিয়ে দাঁড়াত দর্শক, সেই বেদের মেয়ের জোছনার নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন প্রায় সাতাশ বছর ধরে স্ত্রীর ছবি বুকে নিয়ে তিনি নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে রাস্তায়।
ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়েছেন, সুপার হিট নায়ক থেকে সড়ক পরিবহনের সন্ত্রাসীদের চোখে হয়েছেন ভিলেন, তাকে নিয়ে ট্রল হয়েছে, আজও প্রতিদিন পাচ্ছেন মৃত্যুর হুমকি
কিন্তু তিনি রাজপথ ছাড়েননি, নিরাপদ সড়কের দাবীতে গত সাতাশটি বছর ধরে তিনি 'ওয়ান ম্যান আর্মি' হয়ে লড়ছেন
ফোরলেন, ডিভাইডার, হাইওয়ে পুলিশ, একমুখী চলাচল, নিরাপদ সড়ক দিবস, সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন
একজন ইলিয়াস কাঞ্চনের সংগ্রাম।
নিজেদের মাটিতে ইলিয়াস কাঞ্চনের অর্ধেক জীবনের সন্ধান পেলেও বলিউড হলিউড একের পর এক দুর্দান্ত অটোবায়োগ্রাফিক মুভি তৈরি করে হইচই ফেলে দিত।
রাষ্ট্র দিত সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান।
কুশপুত্তলিকা জ্বালানো, শ্লোগানে দুই গালে জুতার বাড়ি দেয়রা ইচ্ছা, ব্যানার হত্যার ইচ্ছা প্রকাশ এইসব ছোট বড় সংব্বর্ধনা ব্যাতিত আমরা তাকে কিছুই দিতে পারেনি, তিনি হয়তো আশাও করেন না। কিন্তু
প্রতিটা সমাজ বাস্তব জীবনে একজন হিরো প্রত্যাশা করে
সৌভাগ্য আমরা একজন ইলিয়াস কাঞ্চন পেয়েছিলাম
অসাধারণ লিখসেন ভাই……..
একদম ঠিক লিখছে…..
তথ্যবহুল ব্লগ
অসাধারণ লিখসেন ভাই......
পোস্টটি সত্যিই অসাধারণ