হিন্দুদের হারানো গৌরব
পাঁচখণ্ডে রচিত "পঞ্চসিদ্ধান্তিকা" গ্রন্থের অন্যতম "সূর্যসিদ্ধান্ত" এর নির্যাস থেকে বীজগণিতের জনক আল খোয়ারিজম তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ "আল জাবর ওয় আল মুকাবলা" রচনা করেন। যেখান থেকে "এল জ্যাবরা" তথা আজকের বীজগণিতের রূপান্তর। আর ওই বিখ্যাত "পঞ্চসিদ্ধান্তিকা" যিনি রচনা করেন তিনি প্রাচীন ভারতের বিস্ময় প্রতিভা এবং ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যার জনক "বরাহমিহির"! প্রকৃত নাম মিহির আর তার পূর্বে বরাহ তথা শূকর! কি বিচিত্র! তাই না? কেন নামের পূর্বে বরাহ তার ব্যাখ্যা লেখার শেষাংশে উল্লেখ করছি। তার আগে আসুন এই বিস্ময় প্রতিভাকে চিনে নিই।
বরাহমিহির একাধারে জ্যোতির্বিদ, গণিতজ্ঞ ও দার্শনিক ছিলেন। অতীতে চৈত্র ও বৈশাখকে ফাল্গুন মাস হিসেবে বিবেচনা করা হত। তিনিই বৈশাখকে প্রথম মাস হিসেবে বিবেচনা করতে বলেন। তিনি পৃথিবী ও চন্দ্রের গতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতেন। ভারতীয় পঞ্জিকা লিখনে তাঁর সূত্র বৈপ্লবিক ভূমিকা রাখে। আসুন বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর অবদান জেনে নিই:
১। জ্যোতির্বিদ্যা: তিনি এই বিষয়ে অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিনটি হল: "পঞ্চসিদ্ধান্তিকা", "বৃহৎসংহিতা" ও "বৃহজ্জাতক"। পঞ্চসিদ্ধান্তিকা নিয়ে শুরুতেই বলেছি। এর পাঁচটি খণ্ডের নাম হল: সূর্য সিদ্ধান্ত, রোমক সিদ্ধান্ত, পৌলিশ সিদ্ধান্ত, পৈতামহ সিদ্ধান্ত ও বশিষ্ঠ সিদ্ধান্ত।
বিভিন্ন পাথরের বিবরণ, সূর্য ও চন্দ্রের প্রভাব, স্থাপত্য বিদ্যা, আবহ বিদ্যা ও পূর্ত বিদ্যা নিয়ে রচিত তাঁর বৃহৎসংহিতা একটি অনন্য গ্রন্থ। বৃহৎজ্জাতকও জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক গ্রন্থ।
২। গণিত: বরাহমিহির n সংখ্যক বস্তু থেকে r সংখ্যক বস্তু পছন্দ করার সমস্যাটিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেন। ত্রিকোণমিতিতে তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু সূত্র হল:
Sin2x + cos2x =1(সাইন হোল স্কয়ার টিটা)
Sinx= Cos(π/2-x)
1-cos2x/2= Sin2x
বরাহমিহির গুপ্ত যুগের রাজত্বকালে ৫০৫ খৃস্টাব্দে জন্মে ৫৮৭ খৃস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজসভায় তিনি ছিলেন নবরত্নসভার অন্যতম। বিক্রমাদিত্যের পুত্র এক ঝড়ের বিকালে সূর্যাস্ত শেষে বরাহ আকৃতির লৌহদণ্ডের আঘাতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যান। রাজপুত্রের কুষ্ঠি গণনা করে মিহির নামের এক মহা জ্যোতিষি আশঙ্কা করেছিলেন যে ১৮ বছর পূর্ণ হলে সূর্যাস্তকালে বরাহের আক্রমণে রাজপুত্রের রক্তক্ষরণ জনিত কারণে মৃত্যু হতে পারে। আর ঠিক সেটাই হয়েছিল। প্রকৃত বরাহ না হলেও বরাহ আকৃতির লৌহদণ্ডের আঘাতেই রক্তক্ষরণ হয়ে রাজপুত্রের মৃত্যু হয়। অনন্য,অমোঘ ভবিষ্যদ্বাণী করে মিহির নামের ওই জ্যোতিষি জগৎ জোড়া খ্যাতি লাভ করেন তার তাঁর নামের পূর্বে অলংকার স্বরূপ বরাহ উল্লেখ করা হয়। আর তিনিই জ্যোতিষ সম্রাট, গণিতজ্ঞ ও দার্শনিক মহামতি "বরাহমিহির"!
ভারতের দিল্লীতে সংসদ ভবনের সামনে বরাহমিহিরের সম্মানে এক দেয়ালিকা অঙ্কিত আছে। কিন্তু আমরা কিরূপে এই মহামতিকে চিনতে পারি? ছাত্রাবস্থায় তাঁর নাম ও অবদান কিছুই শুনিনি! কোথাও উল্লেখও নেই! আজ থেকে দেড় হাজার বছর পূর্বে যখন প্রযুক্তি উন্নত ছিলনা তখন কেবল স্বীয় মেধার বদৌলতে তিনি যে জ্ঞান,বিজ্ঞানের চর্চা করেছেন তা ভাবতেই বিস্ময়াভিভূত হয়ে তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।
আসুন আমরা জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা করে হিন্দুদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হই।
আমাদের সবাইকে মিলিয়ে আমাদের হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার জন্য উদ্যোগী হতে হবে
এরকম আরো পোস্ট চাই ভাই এ বিষয়টি নিয়ে
অসাধারণ লিখেছেন ভাই………
ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব
জ্বি ভাই আমিও আছি