সাপ রুপি জ্বিনের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড়
এটা পুরানঢাকার একসময়ের বিখ্যাত মাদ্রাসার ঘটনা।ফজরের পরে মাদ্রাসার ছাত্রদের ক্লাসে হঠাৎই সাদা ধবধবে একটি সাপের আগমন ঘটে।সেটি কোন প্রকার ভয় প্রদর্শন না করেই একটি জায়গায় ফনা তুলে ছাত্রদের দিকে যেন তাকিয়ে থাকে।
আলী ইবনু তালীব নামক দুঃসাহসি একটি ছেলেই প্রথমে সাপটি দেখে এবং সে নানান কৌশলে মেরে ফেলার ফন্দি আঁটে। তবে অনান্য ছাত্ররা নিরাপদ দূরত্বে দাড়িয়ে ওস্তাদজীর আসার অপেক্ষায় থাকে।আলী সবাই কে বুঝায় এটা ধৈর্যের সময় নাহ হুজুর আসতে দেরি হলে এটা আমাদেরকে মেরে ফেলে পালিয়ে যাবে অথবা লুকিয়ে পড়বে তখন দ্বিতীয়বার এসে আমাদের উপর হামলা করলে?? এরচে ভালো নাহ একে মেরে ফেলা নয়??বলার পরই আলী নিজের রেহেল হাতে সাপটির পেছন দিক থেকে মারতে এগিয়ে যায়।অথচ সাপটা কিন্ত শান্তশিষ্ট হয়েই সবাই দেখছে।তাকে মোটেও আক্রমনাত্মক মনে হয় নাহ।তাছাড়া জীবনে কখনো কেউ সাদা সাপের দেখা পেয়েছে??
থাকুক নাহ বেচারা হুজুর এসে না হয় যা করার করবেন এই ছিলো বাকি ছাত্রদের মতামত। তবে আলী কারোর কথার পরোয়া করে??সে ঠিকই পেছনে থেকে চুপিচুপি গিয়ে তিনটা রেহেল একত্রে করে সাপটার মাথা থেঁতলে মেরে ফেলে!!এরপরই হুজুর এসে উপস্থিত হন এবং আলী কে বকাবকি করে পড়াশোনা শুরু করিয়ে দেন।সেদিন রাত্রেই মাদ্রাসায় নেমে আসে ভয়াবহ দূর্যোগ!!একে একে মাদ্রাসার প্রতিটি স্টুডেন্ট হঠাৎই অজ্ঞান হয়া শুরু করে এবং নানান ভাবে চেষ্টা করেও কাউকে সুস্থ করা যাচ্ছিলো নাহ।আলীর অবস্থা হয় সবচেয়ে ভয়ানক। তার শরীর নীল হয়ে যায়!!এবং জ্বরে পুড়তে থাকে শরীর। সবাইকেই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।মোটামুটি সবাই সুস্থ হলেও সুস্থ হয় নাহ আলী।তাকে দেখে মনে হয় সাপের দংশনে আহত হয়েছে তবে কোন ভাবেই তাকে পরীক্ষা করে প্রমান করা যায় নাহ যে তাকে সাপে কামড়েছে।অদ্ভুত অসুস্থতা।দীর্ঘদিন হাসপাতালে রেখেও অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকরা হার মেনে গিয়ে আলী কে বাসায় নিয়ে যেতে বলে দেন।অত্যন্ত বাচ্চাটা বাসায় মারা তো যাবে।তাকে বাসায় নিয়ে চলে যায় তার স্বজনরা। মাদ্রাসার বড় হুজুর দীর্ঘদিন পর সফর থেকে ফিরেন নিজের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায়।এসে এই ঘটে যাওয়া ঘটনা পুরোটা শুনেন এবং আলীর বাসায় ছুটে যান।আলীর বাবা মাকে বলে কয়ে তাকে আবার মাদ্রাসায় নিয়ে আসেন।যেখানে ঘটনা ঘটেছিলো(সাপ হত্যার জায়গা)সেখানে আলী কে শোয়ানো হয়।এরপর বড় হুজুর সেদিন উপস্থিত থাকা সকল ছাত্রদের সেখানে জড়ো করেন।এবং বাকি সবাই কে কক্ষ থেকে বেড়িয়ে যেতে বলেন।উপস্থিত ছাত্রদের উদ্দেশ্য করে বলেন আজকে এখানে যেটাই ঘটবে কেউ কোন অবস্থায় ভয় পাবে নাহ।কিছুদিন আগে তোমাদের এই ভাইটি নিজের অজান্তেই একটা জ্বীন কে মেরে ফেলছে। তার শাস্তি হিসেবে সে আজ মৃত্যুর মুখে পতিত হতে চলেছে। আজ আমি জ্বিনের সর্দার কে ডেকে এনে জিগ্যস করবো অজান্তে ভুল করার শাস্তি কি এমন হয়??আমি জ্বিনের সর্দার কে তোমাদের সম্মুখে উপস্থিত করবো এবং একপর্যায়ে তোমাদের সাক্ষাী দেয়া লাগতে পারে।হুজুর কিছুক্ষণের মধ্যেই সে জ্বিন কে হাজির করেন।
তাকে অভিযোগ এর সুরে বলতে থাকেন এটা কি অন্যায় নয়??ছেলেটা নিজের অজান্তে একটা নয় হয় ভুল করেছে সেক্ষেত্রে এতবড় শাস্তি??এটার বিচার করুন আপনি জ্বিনের সর্দার!! এরপর গরগর করতে করতে একজন বলেন হত্যার বদলে হত্যা কথাটা কি কুরআনে আছে??জবাবে হুজুর বলেন হ্যা অবশ্যই আছে তবে এরপরই কিন্তু মাফ করে দেয়ার আয়াত তো আছে!!জ্বিনে বলে সেটা ব্যক্তিগত ব্যপার হত্যা না ক্ষমা করা হবে।এরপর হুজুর বলেন তাহলে সে জ্বিনটা কেন ক্ষতিকর সাপের রুপে উপস্থিত হয়েছিলো??স্বরুপে কেন আসেনি??সে যদি নিজের স্বরুপে আসতো বরং আমার ছেলেরা দৌড়ে পালাতো!!আর তখন যদি কোন ভাবে আমার এই ছাত্র তোমাদের ছেলেটাকে মেরে ফেলতো তখন আমিও বলতাম হত্যার বদলে হত্যা।জ্বিনের দিক থেকে উত্তর পাওয়া যায় না কোন।আমার ছেলেটা সাপ থেকে ক্ষতি আশংকা করে মেরে ফেলছে সে জানতো নাহ সেটা একটা জ্বিন!!জ্বিন এবার বলে উঠলো সত্যি জানতো নাহ??হুজুর সব ছাত্রদের জিগ্যেস করেন কিরে বলোস নাহ কেন আলী জানতো সেটা জ্বিন??সব ছাত্র একত্রে বলে ওঠে নাহহহহ।জ্বিন আবার বলে আচ্ছা ঠিক আছে ছেলেটা আল্লাহর হুকুমে সুস্থ হয়ে যাবে।
আর আমাদের দলের জ্বিনটা ছিলো অল্পবয়সী। বেচারা মায়ের বারন করা স্বত্বেও এখানে কুরআনের আওয়াজে মুগ্ধ হয়ে ছুটে এসেছিলো।কে জানতো এখানে চলে আসাটা তার কাল হবে!! বলেই বিদায় নেয় জ্বিন। এর বেশকিছু দিন পরেই সুস্থ হয় আলী।
コメント