সুনিতা উইলিয়ামসের ইসলাম গ্রহণ?
সুনিতা উইলিয়ামস
সুনিতা উইলিয়ামস (জন্ম ১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৫) যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর কর্মকর্তা এবং নাসার মহাকাশচারী। তিনি এক্সপিডিশন ১৪ এর সদস্য হিসাবে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে নিযুক্ত হন এবং তারপর এক্সপিডিশন ১৫ তে যোগদান করেন। নারী মহাকাশচারীদের মধ্যে তিনি দীর্ঘতম মহাকাশ ভ্রমনের (১৯৫ দিন) রেকর্ডধারী।
তাঁর বাবা ড. দীপক পান্ডে একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং তাঁর মা বন্নী পান্ডে একজন খ্রিষ্টান। সুনিতা উইলিয়ামসের উভয় ধর্ম বিশ্বাসের প্রতি অনুরাগ আছে [১] এবং একজন গনেশ ভক্ত হিসেবে পরিচিত [২]।
দাবী
বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ব্লগ, ফোরাম এবং প্রচুর শেয়ার হওয়া ইমেইল অথবা গন মেসেজে দাবী করা হয় যে, সুনিতা উইলিয়ামস চাঁদ থেকে ফেরার পর হিন্দুধর্ম থেকে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন।
এখানে কয়েকটি দাবীর উদাহরণ দেওয়া হল :
-মাশাল্লাহ, সুনিতা উইলিয়ামস ( প্রথম ভারতীয় নারী যিনি কয়েক মাস আগে মহাকাশ ভ্রমণ করেছেন ) ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছে। কারন, চাঁদে থাকাকালে তারা পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে সম্পূর্ণ পৃথিবীকে অন্ধকার দেখেছিল শুধু দুটি স্থান ব্যতিত যেগুলো ঝলমল করছিল এবং স্ফুলিঙ্গের (আলো) মত দেখাচ্ছিল। তারা দেখে চমকে গেল এবং টেলিস্কোপের সাহায্যে দেখে বুঝল যে সেই দুটি জায়গা ছিল “মক্কা” আর “মদিনা” মাশা আল্লাহ! তারপর তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে পৃথিবীতে পৌঁছানোর পরে তারা “ইসলাম” গ্রহণ করবে। সুতরাং গর্ববোধ করুন যে আপনি একজন মুসলমান। আল্লাহ হাফেজ…! [৩] -সুনিতা উইলিয়াম,২রা জুলাই ২০০৭ এ চাঁদে গমনকারী প্রথম ভারতীয় নারী, বলছেন যে চাঁদ থেকে তিনি টেলিস্কোপের মাধ্যমে পুরো পৃথিবীকে অনেক কালো এবং অন্ধকার দেখেছেন, শুধু দুটি স্থান ছাড়া যেগুলো উজ্জ্বল এবং ঝলমল করছিল। স্থান দুটি ছিল,“মক্কা” এবং “মদিনা” (সৌদিআরব)। শুধু তাই না, যেখানে কিনা চাঁদে সব ধরনের তরঙ্গ পৌছাতে ব্যর্থ সেখানে তিনি আযান শুনেছেন। সুবাহানাল্লাহ…[৪] – মুসলমানদের জন্য মহাআনন্দের খবর… সুনিতা উইলিয়ামস, মহাকাশে যাওয়া এক নারী ইসলাম গ্রহন করেছে!! কারন মহাশুন্যে থাকাকালে পুরো পৃথিবী তাঁদের কাছে ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখালেও এর দুইটি জায়গা স্ফুলিঙ্গের মত ঝলমল করছিল।টেলিস্কোপ দিয়ে তাঁরা বুঝতে পেরেছিল জায়গা দুটি “মক্কা” আর “মদিনা”। পৃথিবীতে নামার সাথে সাথে তাঁরা ইসলাম গ্রহনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। আলহামদুলিল্লাহ্ , আল্লাহ তাঁদের হেফাজতে ফিরিয়ে এনেছেন। মুসলমান হিসেবে আপনাদের গর্ব করা উচিত। সবাই বলেন সুবাহান আল্লাহ্…[৫]
বিশ্লেষণ
লিখিত দাবী
উপরের দাবীর বিপক্ষে,সুনিতা উইলিয়ামস চাঁদে নয়, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিল। শেষ চাঁদে অবতরণের ঘটনা ঘটে (এপোলো ১৭)[৬] ১৯৭২ সালের ৭ ডিসেম্বর।এখন পর্যন্ত ইউজিন এন্ড্রিও স্যারমান ই শেষ ব্যাক্তি যে চাঁদে হেটেছিল। [৭]
এমনকি তিনি “মহাকাশ ভ্রমনকারী প্রথম ভারতীয় নারী” নন। ভারতীয়-আমেরিকান নভোচারী কল্পনা চাওলা ছিলেন মহাশুন্যে যাত্রাকারী প্রথম ভারতীয় নারী। [৮]
দাবী করা হয়েছে যে, তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পৃথিবীতে ফিরেই তাঁরা ইসলাম গ্রহন করবে। যাইহোক, সুনিতা উইলিয়ামস আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন যাত্রা কালে তিনি ভগবত গীতার একটি সংকলন এবং ভগবান গণেশের একটি ছোট প্রতিমূর্তি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন [৯]। ২২ জুন ২০০৭ এ পৃথিবীতে ফেরার পর ইসলাম গ্রহন করার কোন লক্ষনই দেখান নি তিনি। বাস্তবে তিনি দাবি করেছেন,আল্লাহ্ নয় বরং ভগবান গণেশ তাকে দেখে রেখেছেন।
নারীদের মধ্যে মহাশুন্যে অবস্থানের নতুন রেকর্ড গড়ার পর ভারতীয়-আমেরিকান নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস এখন মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার লক্ষ স্থির করেছেন। উইলিয়ামস, আন্তর্জাতিক মহাকাশ ষ্টেশনে ১৯৫ দিন অতিবাহিত করার পর ২২ জুন ফিরে এসে বলেন যে, চাঁদে না হলেও সে মঙ্গলে যেতে আগ্রহী। তিনি আরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন পুরো ভারতবাসীকে,বিশেষ করে তাঁর নিজের রাজ্য গুজরাটবাসীদেরকে, যারা পৃথিবীতে তাঁর নিরাপদে ফিরে আসার জন্য প্রার্থনা করেছিল। উইলিয়ামস আনন্দের সাথে জানান, স্পেস স্টেশনে দীর্ঘ পীড়াদায়ক মুহূর্তগুলোতে ভগবান গীতার একটি সংকলন এবং ভগবান গণেশের একটি প্রতিমূর্তি সঙ্গে রাখার কথা। “আমি জানতাম গণেশ আমাকে দেখে রেখেছিল,” তিনি বলেছিলেন। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক মহাকাশচারী সভায় যোগদানের জন্য হায়দ্রাবাদ সফর করবেন তারপর তিনি গুজরাট এবং দিল্লীর আত্নীয় স্বজনের সাথে দেখা করবেন। [১০]
তিন মাসেরও বেশী সময় পরে অক্টোবর ২০০৭ এ ইন্ডিয়া টুডে’র এক সাক্ষাৎকারে তিনি চাঁদে যাওয়ার ইচ্ছার পুনরাবৃত্তি করেন।
“মহাশুন্যে গীতা এবং গণেশ ই আমাকে স্থির থাকতে সাহায্য করেছিল। যারা জীবনটাকে দৃষ্টিসীমায় নিয়ে এসেছিল।”, সুনিতা উলিয়ামস ইন্ডিয়া টুডে’র সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। যে দেশে কিনা বিশ্বাস করে যে সৌন্দর্য ট্রফিগুলি একটি জিনগত অধিকার, সেখানে তারা তাকে সত্যিকারের মিস ইউনিভার্স বলছে। উইলিয়ামস মহাকাশে ভগবান গণেশের প্রতিমূর্তি এবং ভগবত গীতার একটি সংকলন নিয়েছিলেন সাথী হিসেবে । তিনি তার মহাকাশ যাত্রার আগে গুরুত্বের সাথে কখনো গীতা পড়েননি, যদিও তার বাবা তাকে শৈশবে মহাকাব্য – রামায়ণ ও মহাভারত এর কথা বর্ণনা করেছিলেন। তিনি বলেন (উইলিয়ামস): “মামুলি শোনালেও,এটি আপনাকে শান্ত করবে। পৃথিবীর চারপাশে আবর্তিত ছোট্ট এক মহাকাশযানে, আপনি অনেক কিছু করছেন, কখনও কখনও এগুলোকে কাজ মনে হয় … সম্ভবত আপনি ভুলে গিয়েছেন কোথায় আছেন, আপনি কি করছেন … কিন্তু গণেশ বা গীতা আপনাকে ফিরিয়ে আনবে। অর্জুনের বিচার ও কষ্টের কথা পড়তে ভালো লাগে এবং এটা আপনার জীবনের দৃষ্টিকোণটাকে ধরে রাখে। ” ৪২ বছর বয়সে, উইলিয়ামস এখনও পর্যন্ত মহাশুন্যে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে তার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেন, যারা স্পেসে যেতে আগ্রহী তাঁদের জন্য। তিনি বলেন: “যদি আমার সুযোগ থাকে, আমি চাঁদে যেতে চাই।” [১১]
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায় যে, ২০১২ সালে সুনিতা মহাকাশ ভ্রমণের সময় উপনিষদের ইংরেজী অনুবাদ বহন করবে :
যখন সুনিতা উইলিয়ামস পৃথিবীর হাজার হাজার মাইল দূরে তার মহাকাশ শাটল উইন্ডো থেকে মহাবিশ্বকে পাখির দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পারবেন, তখন তিনি উপনিষদের চিরন্তন সত্যকে বুঝতে চেষ্টা করবেন। ভারতীয় আমেরিকান মহাকাশচারী – ১৪ই জুলাই থেকে ছয় মাস অতিবাহিত করবেন -হিন্দু ধর্মগ্রন্থের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটির ইংরেজি অনুবাদ তার সাথে বহন করবেন। নভোচারী তার দ্বিতীয় স্থান অডিজিতে কোয়ারেন্টাইনে (প্রস্তুতিমূলক এমন গোপনীয় জায়গা যেখানে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকতে হয় এবং সব ধরনের রেস্টিকশন থাকে) যেতে প্রস্তুত, যার ফলে পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখা আরও কঠিন হয়ে উঠবে। উইলিয়ামস ২০০৬ সালে ছয় মাসের জন্য আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে কাজ করেছিলেন। তিনি কাজাকিস্তানের বাইকোনুর কসমেড্রোম (মহাকাশ যান চলাচলের পোর্ট) থেকে দুজন অন্যান্য মহাকাশচারী, একজন রাশিয়ান এবং একজন জাপানী নাগরিকের সাথে উড্ডয়ন করবেন।[১২]
অতিপ্রাকৃত ছবি
বিভিন্ন দাবিতে আরও বলা হয়েছে যে, উইলিয়ামস চাঁদের উপর থাকাকালে অলৌকিক ঘটনা দেখেছিল, যেখানে সমগ্র পৃথিবী অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল,শুধুমাত্র মক্কার ও মদিনা বাদে[৩][১৩], যা “স্ফুলিঙ্গের” এর মত জ্বলছিল।
এই দাবিগুলির সঙ্গে ছিল ইসলামের সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান, মক্কার মসজিদ আল হারাম এবং মদিনায় মসজিদ আল-নববী শীর্ষস্থানীয় ছবি। এসকল স্থাপনাগুলো উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত ছিল যার চারপাশ অন্ধকার দিয়ে ঘেরা।
এই নির্দিষ্ট চিত্র গুলোর ইন্টারনেটের মাধ্যমে ২০০৬ সালের মে মাসে মুসলিমদের কাছে ছড়িয়ে পড়েছিল। [১৪] উইলিয়ামস ২০০৬ সালের ৯ ডিসেম্বর তাঁর সহযাত্রী সহ উড্ডয়ন করেন এবং ২০০৬ সালের ১১ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নোঙর ফেলেন। [১৫] অলৌকিক চিত্র গুলো প্রকাশের ছয় মাস পরে!!
আসল ছবি গুলোর প্রকৃত উৎস spaceimaging.com, এবং ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরের। [১৬] যদিও মসজিদ আল হারাম এবং মসজিদ আল-নববী এই ছবি গুলোতে বেশ আকর্ষণীয় বলে মনে হয়, তবে এই প্রতিফলক সাদা মার্বেলে নির্মিত স্থাপনা গুলোতে অতিপ্রাকৃত কিছুই নেই, এবং এদের চারপাশ ঘিরে অন্ধকারও নেই।
এই ইমেজ গুলো ওয়াটারমার্ক মুক্ত সংস্করণ গুলো spaceimaging.com যা ৪ এমবি ডাউনলোডের মতো বড়, বিক্রয়ের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয় তবে যে এই ধাপ্পাবাজির পিছনে ছিল সে কিনে নেয় নি। বিক্ষিপ্ত চিত্র গুলোর কাছে থেকে দেখলে ওয়াটারমার্ক গুলো এখনও দৃশ্যমান।
আস্তাক-ফিরুল্লা এতো বড় মিথ্যা
তোর ব্লগের নাম হওয়া উচিত ছিল প্রপাগান্ডা ডট কম
আল্লায় তানেরে আর তোরে দুগুরেঊ হেদায়েত দেউক্কা।