সৌদি আরবে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও ভিন্নধর্ম নিষিদ্ধ
সৌদি আরব পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেখানে ভিন্ন ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চা করতে পারেনা । সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে সৌদি আরবের ৭৪% নাগরিক হলেন সুন্নি মুসলিম, ২০% শিয়া এবং ৬% অন্যান্য মাযহাবভুক্ত ।
ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মীয় আইন ইসলাম সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় ধর্ম এবং সৌদির আইনে সকল নাগরিককে মুসলমান হতে হবে । সৌদি আরবের আইনে অমুসলিমদের ধর্ম প্রচার করা অবৈধ এবং মুসলমানদের অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া (ধর্মত্যাগ) মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ । বাইবেল ,গীতা, ত্রিপিটকসহ অন্য ধর্মের যেকোনো ধর্মগ্রন্থ নিয়ে সৌদি আরবে প্রবেশ, ধর্মীয় উপকরণ বিতরণ, মুসলমানদেরকে ভিন্নধর্মে উদ্বুদ্ধকরণসহ ধর্মান্তরিত করা অবৈধ । এখানে ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রকাশ্য উপাসনা নিষিদ্ধ । সৌদি আরবের নাগরিকত্ব পেতে হলে কোন অমুসলিমকে অবশ্যই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে । সৌদি আরব ওয়াহাবীবাদ অনুসরণ করে এবং সেখানে ইসলামের অন্যান্য মাযহাবগুলোকেও যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না ।
ব্যক্তিগত পর্যায়েও ধর্ম চর্চায় বাধা প্রদান করা হয় । সৌদি আরবের ধর্মীয় পুলিশ নিয়মিতভাবে খ্রিস্টানদের বাড়িতে অনুসন্ধান করে বলে জানা যায় । খ্রিস্টান কর্মীদের বড়দিন বা ইস্টার উদযাপনসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী কর্মীদের ধর্মীয় উৎসব করার অনুমতি নেই । ২০০৭ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আহমদিয়া ধর্মাবলম্বীদের, বিদেশী অনুসারীদের গ্রেপ্তার ও বিতাড়িত করার অভিযান বন্ধ করার জন্য বাদশাহ আবদুল্লাহকে অনুরোধ করেছিল ।
মানবাধিকার লংঘন A- দায়েরকৃত কোন মামলায় অপরাধ প্রমাণীত হবার পর যদি আদালত কর্তৃক কোন ক্ষতি পূরণের রায় দেওয়া হয় তবে সেই অর্থ বন্টিত হবে নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে, ১- একজন মুসলমান পাবে নির্ধারিত ক্ষতিপূরণের সম্পূর্ণ অংশ । ২- একজন ইহুদী বা খ্রিস্টান পাবে অর্ধেক অংশ । ৩ - অন্য ধর্মাবলম্বীরা পাবে ষোল ভাগের এক ভাগ । B- শিয়াদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হয় । আশুরার মতো শিয়া উৎসব ও শিয়া সাম্প্রদায়ের উপাসনায় অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে এবং জনসমাগমের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় । C- অভিভাবকত্ব আইন অনুসারে একজন নারী পিতা, স্বামী ,ভাই,ছেলে সন্তান ব্যতীত একা কোথাও যেতে পারবেনা । একটি মেয়ে তার খালাতো ভাইয়ের সাথে খালার বাসায় যাওয়ার পথে ধর্ষিত হয়েছিল ।সে আদালতে মামলা দায়ের করেছিল এবং সেই মামলায় ধর্ষকরা বেকসুর খালাস পেয়েছিল এবং উল্টো মেয়েটির ৬ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল । মেয়ে পক্ষের উকিলের ওকালত নামাও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল । আদালতের রায়ে বলা হয় খালাতো ভাই তার আইনগত কোনো অভিভাবক নয় ।
এই রকম নানা বৈষম্যের প্রতিবাদ করতে গিয়ে মানবাধিকার কর্মীদের নির্যাতন, নারী নির্যাতন ও বিভিন্ন মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য মার্চ ২০১৯ জেনেভাতে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের এক বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশের সবগুলো সহ মোট ৩৬টি দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে সৌদি আরবের কড়া নিন্দা করেছিল। অধিকাংশ পশ্চিমা দেশ এতদিন পর্যন্ত সৌদিদের প্রকাশ্য সমালোচনা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছিল । ইউরোপীয়দের যুক্তি ছিল - মধ্যপ্রাচ্য একটি জটিল বিপজ্জনক অঞ্চল, এবং তার মোকাবেলায় সৌদি আরবকে চটানো ঠিক হবেনা । এরই পরিপেক্ষিতে সৌদি আরব বিভিন্ন সংস্কারমূলক কর্মসূচি প্রণয়ন করতে বাধ্য হচ্ছে ।
বর্জন নীতি পণ্ডিত বার্নার্ড লুইসের মতে, আরব উপদ্বীপে অমুসলিমদের স্থায়ী বাসস্থান থেকে বাদ দেওয়ার সৌদি নীতি একটি পুরনো এবং ব্যাপকভাবে অনুমোদিত মুসলিম নীতির ধারাবাহিকতা: খলিফা উমরের মৃত্যুশয্যায় উচ্চারিত আজ্ঞা ছিল : "আরবে দুটি ধর্ম বিদ্যমান না থাকুক" । ইহা পূরণ করার জন্য ইহুদি ও খ্রিস্টানদের আরব থেকে অপসারণ করার আদেশ দেন। প্রশ্নবিদ্ধ লোকেরা ছিল উত্তরের খাইবারের মরূদ্যানের ইহুদী এবং দক্ষিণের নাজরানের খ্রিস্টানরা।
সৌদি আরবে ধর্মহীনতা সৌদি আরব সরকারীভাবে নাস্তিকদের সন্ত্রাসী হিসাবে চিহ্নিত করে থাকে । সৌদি আরব বা কোন বিদেশী অধিবাসী "এই দেশটি যে ইসলামিক ধর্মের উপর ভিত্তি করে আছে এ সম্পর্কে প্রশ্নবিদ্ধ করলে" এর জন্য কমপক্ষে ২০ বছরের জেল হতে পারে। সৌদি আরবে মানবাধিকার কর্মী, লেখক ও ব্লগার নির্যাতন,নানাবিধ অনাচার-অবিচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় মানুষ ক্রমশ ক্ষুব্দ হয়ে উঠছে । তাই ২০১০ সালের দিক থেকে রাজ্যে নাস্তিকদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান । নাস্তিক জনসংখ্যা পাঁচ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে বলে মনে করা হয় । ফলে সরকার আতঙ্কিত হয়ে ২০১৪ সালে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও পেইজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন ।
Comments