top of page

সমস্ত রোগব্যাধি হচ্ছে শয়তানের সৃষ্টি?

এ ধরনের ঘোষণা দিতেন খৃস্টান পাদ্রীরা। সবধর্মগুরুরাই মানুষকে আতঙ্কে রাখার জন্য এমন ঘোষণা দিতেন। মধ্যযুগের পোপ সেন্টপলের এমন ঘোষণার কথা ইতিহাসে পাওয়া যায়।সমস্ত রোগব্যাধিই হয় শয়তানের সৃষ্টি না হয় ধর্মকর্ম ঠিকমতো না করার জন্য স্রস্টার গজব। প্লেগ, কলেরা, বসন্ত, ফ্লু, দুর্ভিক্ষ, পঙ্গপালের হামলা, বজ্রপাত, বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, ধুমকেতু ইত্যাদি সবই ছিল এক, সবার জন্যই ছিল এক দাওয়াই। পীর-মুর্শিদ, সাধু-সন্তু, পোপ-পুরোহিতদের কাছে দয়া/আশির্বাদ চাও, তাদের মাধ্যমে স্রষ্টার কাছে মুক্তি চাও। তিনিই শয়তাদের হাত থেকে রক্ষা করছেন এবং গজব সরিয়ে নিবেন।

যখন ইউরোপে প্রথম টিকা আবিষ্কার হল তখন খৃস্টান পাদ্রী/ধর্মযাজকগণ খুবই সরব হয়ে উঠলেন। কলেরা-বসন্ত, প্লেগের প্রতিষেধক টিকা নেয়া ছিল সম্পূর্ণ ধর্ম বিরোধী কাজ, মহাপাপ, স্রষ্টার শাস্তির বিরুদ্ধে কাজ, শয়তানকে ক্ষেপিয়ে তোলার কাজ! মানুষ দেখছিল যারা টিকা নিচ্ছে তারা সুস্থ থাকছে, রোগে সংক্রমিত হচ্ছে না। ফলে চার্চের ভয় দেখানো সত্ত্বেও তারা বাঁচার জন্য টিকা নিতে বাধ্য হল। ভারতের মানুষের ধারণা ছিল- এটা সাধু-সন্ত পীর-আউলিয়াদের পুণ্যভূমি এখানে প্লেগ হবে না। প্লেগ সাদাদের রোগ। আমাদের হুজুরগণ যেমন চিল্লাইয়া বলছিলেন, মুসলমানদের করোনা হবে না, লেইখ্যা রাখেন, হলে কোরান ভুল! কিন্তু ভারতীয়দের হতাশ করে প্লেগ ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছিল। উনিশ শতকের শেষ দিকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল কলেরা। বিজ্ঞানীরা বুঝেছিলেন, জীবাণু রহস্য পূর্ণাঙ্গভাবে বুঝতে পারলে রোগব্যাধি চিরদিনের জন্য জয় করার কোনো না কোনো উপায় বের হবেই। রাশিয়ার ইহুদি চিকিৎসা বিজ্ঞানী ওয়াল্ডিমার হাভকিন কলেরা ও প্লেগের টিকা আবিষ্কারের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। ১৮৯৩ সালে তিনি কলকাতায় আসেন মানুষকে বাঁচাতে। কিন্তু মানুষতো ধর্মীয় নিষেধের ভয়ে টিকা নিতে চাচ্ছে না। শেষে তিনি নিজের শরীরে টিকা দিয়ে বুঝালেন কলেরার টিকার কোন ক্ষতি নেই। মানুষ দেখলো, টিকা নিলেই বেঁচে যাচ্ছে। তখনও মানুষ ধর্মীয় নেতাদের বিধি-নিষেধ মানে নি।


১৮৯৬ সালে বোম্বেতে প্লেগের উপদ্রব দেখা দিল। হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে আর শহর ছেড়ে পালাচ্ছে আরো বেশি মানুষ। ওয়াল্ডিমার হাভকিন বোম্বেতে পৌঁছে টিকা তৈরির কাজে নেমে পড়লেন। প্লেগের টিকা তৈরি সহজ ছিল না। দিন-রাত সাধনা ও বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তিনি প্লেগের টিকাও আবিষ্কার করে ফেললেন। এবারও নিজেই প্রথমে টিকা নিলেন। নিজের দেহে সফলতা প্রমাণ হলে তা দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন রক্ষা করলেন। বিপরীতে গীর্জা কি করেছে?

পোপ সেন্ট অগাস্টিন ঘোষণা করে, যে চিকিৎসক মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ করবে তারা কসাই! শব ব্যবচ্ছেদ করলে পরকালে শেষ বিচারের দিনে তারা কিভাবে দাঁড়াবে? চিকিৎসা হতে হবে রক্তপাতহীন! অথচ তারা নিজেরাই লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে। তাদের ক্রসেডে রক্ত ঝরাতে সমাস্যা হয়নি, ডাইনি অভিধা দিয়ে হাজার হাজার নারীকে হত্যা করতে বিবেকে বাধেনি, ব্রুনোর মতো বিজ্ঞানীকে হত্যা করতে পিছপা হয়নি।

গীর্জার মতে ধুমকেতু ছিল অগ্নিবান। হ্যালী সাহেব যখন আবিষ্কার করে ফেললেন যে পৃথিবী থেকে ৭৬ বছর পরপর ধুমকেতুটি দেখা যাবে তখন চার্চের গোমর ফাঁস হয়ে যায়। গীর্জার মতে বজ্রপাত ছিল অবিশ্বাস, গীর্জা মেরামত না করা ও পাদরিকে ঠিকমতো বেতন না দেয়ার ফল। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন আবিষ্কার করেন, দুটি মেঘের মধ্যে বৈদ্যুতিক আধানের নির্গমন হল বজ্রপাত। এটি মেঘ এবং ভূমির মধ্যেও হতে পারে। এ আধানের মান মেঘের উপরের অংশে নিচের অংশের চেয়ে বেশি হয়। এরকম বিভব পার্থক্যের কারণেই ওপর হতে নিচের দিকে বৈদ্যুতিক আধানের নির্গমন হয়। ভবনে বজ্রপাত নিরোধক শলাকা বসালেই তাতে আর বজ্রপাত হবে না। চার্চ এ বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে তাদের মিথ্যাচার চালিয়ে যেতে থাকে। তারা গীর্জায় বিদ্যুৎ-নিরোধক শলাকা স্থাপন না করার নির্দেশ জারি করে। শলাকা লাগানো বাড়িগুলো এমনকি পতিতালয়গুলো রক্ষা পেলেও শলাকাহীন চার্চগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হতেই থাকে, মারা যেতে থাকে শত শত ঘণ্টাবাদক। গ্যালিলিওর দূরবীণ ছিল তাদের কাছে শয়তানের যন্ত্র। যাজকদের আহবান করার পরও তারা একবারও দূরবীণের ভিতর দিয়ে মহাবিশ্ব দেখার সাহস অর্জন করতে পারেনি। ভেবেছিল তাতে ধর্মের সর্বনাশ হয়ে যাবে।

আজও বহু মানুষ অন্ধত্ব ধারণ করে আছে। ভাবে আলোর দিকে তাকালেই সর্বনাশ হয়ে যাবে। বাস্তবিক অন্ধ থাকলেই তারা বিপদে পড়বে, তাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে, সর্বনাশ হবে।

Comments


Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
lgbt-bangladesh.png
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

bottom of page