সন্তানেরা অকৃতজ্ঞ হলে দায়ী কে?
আমাদের পাশের ফ্লাটে এক দম্পতি থাকেন। তাদের ফুটফুটে দুটো মেয়ে। একজন ক্লাস নাইনে অন্যজন সিক্সে পড়ে। বিকালে ইফতারি দিতে গিয়ে দেখি বাচ্চাদের চাচা ঈদের উপহার পাঠিয়েছে। অথচ ভাবী নির্দ্বিধায় বলছে কেমন সস্তা জামা পাঠিয়েছে মনে হয় ফুটপাত থেকে কেনা, এত রুচি খারাপ এদের। বড় মেয়েটা সুর মেলাচ্ছে মামার জামাটা কত সুন্দর, মনে হয় চাচী দিছে এই ফকিন্নি জামা। এই যে বাচ্চার মুখ থেকে যে অকৃতজ্ঞতার সুর বেরুলো, আমাদের সন্তানেরা অকৃতজ্ঞ হলে দায়ী কে? আমরাই! আমরা যদি সামান্য কিছু পেলেও যদি দামহীন একটা ফুল পেয়েও দাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হতাম, এই অক্সিজেন গ্রহণ করার জন্য আল্লাহ কে ধন্যবাদ জানাতাম তবে সন্তানটির ও কৃতজ্ঞতা বোধ সৃষ্টি হতো। বৃদ্ধ বয়সে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে পাঠালে সন্তানের দায় ২০% হলে ৮০% দায়ী পিতা-মাতা। জন্ম থেকে যুবক পর্যন্ত গড়ার সময় কৃতজ্ঞতা, মমতাবোধ, সম্মান যদি শেখানো যায় সে সন্তান বিপদগামী হতে পারে না। পিতা-মাতাকে যদি দেখে দাদা-দাদীর সেবা করতে তবে সেই সন্তানের বেসিক গ্রো হবে সেবা না করা অপরাধ। বাড়ির অধীনস্তদের সাথে মন্দ ব্যবহার, তুচ্ছ -তাচ্ছিল্য, তুই তোকারী করতে না দেখলে সে কোথা থেকে এগুলো শিখবে? আমরা যদি অন্যের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞ থাকতে না শেখাই তারা কি আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে? একটা শিশু থাকে কাদামাটির মতন৷ তাকে আপনি যেভাবে গড়বেন, সে তেমন হবে। মনে রাখবেন, কৃতজ্ঞতা থেকে শুরু করে সমস্ত মহৎ গুণাবলি শিক্ষা সাপেক্ষ, তাই সন্তান কে যদি কৃতজ্ঞ বা মহৎ দেখতে চান, তাহলে নিজে সেই আমল করুন। মনে রাখবেন, Example is better than advice! গৃহকর্মীকে তুই না বলে আপনি বলুন বাচ্চা তাই শিখবে, নিজের মা-বাবার ন্যায় শ্বশুর-শ্বাশুড়ি কে সম্মান করুন ছোট বাচ্চাটি তাই শিখবে৷ বাড়িতে মেহমান আসলে মন থেকে আপ্যায়ন করুন-চলে যাবার পর সমালোচনা করবেন না, বাচ্চা সমালোচনা শিখবে না। গীবত,পরনিন্দা, মিথ্যাচার,দুর্ন ীতিকে ঘৃণা করুন- বাচ্চা ও ছোট বেলা থেকে অন্যায়কে ঘৃণা করবে। ছুটির দিনে একটা চমৎকার বই নিয়ে সময় কাটান,বাচ্চা ও আপনার দেখাদেখি তে দুষ্টুমি বাদ দিয়ে আপনার পাশে ( আমার নিজের চোখে দেখা, আমার ৩ বছরের ভাতিজা আমার বই পড়া দেখে ওর ছড়ার বই নিয়ে এসে আমার পাশে পড়ার অভিনয় করে)। কবি শেকসপিয়ার তার নাটক কিং লীয়ারে বলেছেন, "যে সন্তান অকৃতজ্ঞ তার দাঁতের ধার সাপের চেয়ে ও বেশি" - শেক্সপিয়ার কিন্তু ছেলেমেয়েদের কে আমরা না শিখালে কৃতজ্ঞ হবে কিভাবে? অকৃতজ্ঞতা খুবই স্বাভাবিক -আগাছার মতন এটি এমনি এমনিই জন্মে। কৃতজ্ঞতা একটা চমৎকার গোলাপের মতন। তাকে যত্ন করতে হবে, জল দিতে হবে, রক্ষা করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা আপনি আপনাকে থেকে শুরু চারপাশকে মন থেকে ভালোবাসুন, সন্তানও ভালোবাসতে শিখবে। তখন আর আর কবির মতন বলতে হবে না পরের জন্মে মানুষ হবো। বরং এক জন্মেই পরিবার হবে মানুষ গড়ার বুনিয়াদ। তখন আর নারী সহিংসতা, নির্যাতন, ধর্ষণ হবে না। পৃথিবীটা হবে একটা সুন্দর ফুল।।।
Comments