top of page
Writer's pictureJust Another Bangladeshi

শ্রদ্ধেয় দূরের বন্ধু


কেমন আছেন ? আপনার আমন্ত্রণের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ । ঢাকায় আসলে অবশ্যই আপনার সাথে দেখা করার চেষ্টা করবো । তবে - ঢাকায় আমার থাকার জায়গার সমস্যা নাই - ঘনিষ্ট বন্ধুরা আছে , আত্মীয়স্বজনরা আছে - কিন্তু ঢাকায় আমার আসতে ইচ্ছা করে না । কেনো ? - সেই গল্পটা আরেকদিন বলবো ।



কেনো আসতে ইচ্ছা করে না- তার দুইটা কারণ আছে । তার একটা কারণ আজ বলবো না কিন্তু অন্য কারণটা আজকে বলি : তা হলো - আমি হলাম প্রচণ্ড অলস আর ঘরকুনো । আমি ভালো করে কথা বলতে , গল্প করতে পারি না - সুতরাং আমার সান্নিধ্য আপনাদের বিরক্তই করবে । তাই , আমি শত চেষ্টা করলেও আপনাদের আনন্দ দিতে পারবো না , রে বন্ধু ।


অতএব আমার সাথে খাতির করার আগেই জানিয়ে দিচ্ছি যে - আমার মধ্যে মজার কিছুই নাই !! আমার আচরণে বিচিত্র ভাব আছে - যেইটাকে সবাই বলে মেয়েলী আচরণ - এই কারণে মানুষপুরুষ ও মানুষনারী সহ সর্বোপরি সবাঈ আমাকে অস্বাভাবিক ও বাকা নজরে দেখে - বাজে টিটকারী ও ঠাট্টা করে - কেউই বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না ।


এই কারণে - আমিও নিজেকে সংকুচতিত ও গুটিয়ে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি । যদিও আমি আগে খুব মিশুক ছিলাম - যখন ঢাকায় থাকতাম তখন পেশাগত কাজের পরেই সারাটা সময় বাসার বাইরেই থাকতাম - শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আশপাশ সহ , প্রায় পুরো ঢাকা শহরটাই চষে বেড়াতাম - আনন্দ ও উৎসবের খোঁজে , মানুষের স্নেহ , সান্নিধ্য ও ভালোবাসার সন্ধানে -


তীর্থের কাক কিংবা চৈত্রের চাতকের মতো ব্যাকুল নয়নে মানুষ দেখতাম আর বেহায়ার মতো সবার সাথে মিশে মানুষদের মানসিকতা বুঝতে চেষ্টা করতাম - মানুষের মন ও চোখের গভীরে ঢুকতে চেষ্টা করতাম - একটা কাছের মানুষের খোঁজে - একটা মনের মানুষের উষ্ণতার ছোঁয়া পেতে - খুব বেশি না , সামান্য একটু ভালোবাসা পেতে -


কিন্তু মানুষের তাচ্ছিল্য , অপমাণ , ঠাট্টা , টিটকারি , অবহেলা ছাড়া - মানুষ হিসেবে ন্যুনতম সম্মান , ভালোবাসা , স্নেহসান্নিধ্য কিছুই তো পাই নাই - বন্ধু । কিন্তু এর মধ্যেই কারো সান্নিধ্য যে একেবারেই পেতামনা না , তাতো না , পেতাম !! কেউ কেউ দয়া কিংবা ভালোবাসার ভান করে আমার সাথে স্বার্থের খাতির জমাতো - কেন জানেন ? আমার এই শরীরটার লোভে !!


বলছি সে কথা ! বন্ধু , আপনি আজ ঢাকায় আমন্ত্রণ করে তো ভালোই করেছেন - আমন্ত্রণ প্রসঙ্গে আপনাকে উদ্দেশ্যে করে সেই তখন থেকে যে একটা লেখা লিখতে শুরু করেছি - এখনো সেইটাই লিখে যাচ্ছি - - তরতর করে লেখা আগাচ্ছে ! চেষ্টা করছি একটি গল্প লিখতে কিন্তু গল্প হচ্ছে না - হয়ে যাচ্ছে , স্মৃতিচারণ বা আত্মকথা !!


আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও ভালোবাসা জানাই , আমন্ত্রণের জন্য - নাহলে - এই লেখাটা আজকে প্রসব হতো না । যাইহোক , লেখাটা আবার শুরু করি , পরে আবার কথা হবেখন । - প্রথমেই একটা কথা বলে নেই - তা হলো - আমি সমপ্রেমকামীতা-কে অবশ্যই সমর্থন করি এবং সবসময়ই করবো !! আর হ্যাঁ আমি নিজেও একজন সমপ্রেমকামী মানুষ ।


মানুষপুরুষ , মানুষনারী ও মানুষহিজড়া বা মানুষবৃহন্নলা সবার প্রতিই সমান আকর্ষণ বোধ করি অর্থ্যাৎ সবাইকেই পছন্দ করি এবং মানুষ হিসেবে সবাইকে সমান শ্রদ্ধা ও সম্মান করি । সর্বোপরি সবাইকেই ভালোবাসি - - আমি কাউকে ঘৃনা করতে পারি না । মানবতাবাদ ও নারীবাদ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান হবার পর থেকে - কখনই কাউকে ঘৃনা করি নাই ।


আমার যে ভালোবাসার কি এক ক্ষমতা এবং মানুষকে ভালোবাসার কি যে এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিলো (এখনো কি কিছুটা অবশিষ্ট আছে ?) - ভেতরে ভতরে আমি কাউকে ভালোবাসার এবং কারো ভালোবাসা পাবার জন্য - কি তুমুল ও তীব্র প্রত্যাশা , কতটা আকুলিবিকুলি করতাম (এখনো কি করি ?) - তা আমি লিখে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না !!


কথায় আছে না - অতি বড় ঘরনী না পায় ঘর , অতি বড় সুন্দরী না পায় বড় !! আমার হয়েছিলো - সেই মরন দশা , সেই করুন অবস্থা !! আর , আমার এই গোপন আকাঙ্ক্ষাই আমাকে মনের মানুষ খুঁজতে তাড়না দিতো - যেইহেতু মানুষনারীরা আমাকে তখন পাত্তাই দিতো না , তাই যেই মানুষপুরুষই আমার দিকে একটু গভীর চোখে তাকাতো (তাকিয়ে দয়া করতো আর কি) - তার চরণেই নিজেকে সঁপে দিয়ে ধন্যধন্য মনে করতাম ।


এবং আমার সেই দূর্বলতাই আমার জন্য কাল হতো !! সেই নির্মম দূর্বলতার কারণেই - মানুষপুরুষের দিকে আমি ব্যকুল নয়নে বেহায়ার মতো তাকাতাম । আমার সেই নির্দয় একাকীত্ব কি আমার শরীরের ভঙ্গিতে , চবনেবলনে হাহাকারের মতো ফুটে উঠতো ?? আর তাই কি , আমার ভালোলাগার সেই মানুষপুরুষরা - আমার সেই দূর্বল মুহূর্তের সুযোগটাই নিতো !! ?? হয়তো !!


তাই , তারা আমার সাথে বন্ধুত্ব ও প্রেমের অভিনয় করে - আজিজের উপরে কোন এক লিটন(!)-এর বাসায় বা Flat-এ নতুবা PG Hospital-এর 'কোনাকানছি'-তে কিংবা ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কোনো হলের এক ঘরে কিংবা কোনো চিপায়চাপায় অথবা ছবির হাঁটের পিছন দিয়ে গিয়ে , সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কোন এক অন্ধকার গাছের নিচে নিয়ে - আমার শরীরটা চেপেচিপে খামছে ছিড়ে খেতো ।


আমার চুমু খেতে খুব ভালো লাগতো , তাই আমার মানুষপুরুষ সঙ্গীর ঠোঁট চুমু খেতে গেলে তখন তারা চুমুর ভঙ্গিতে আমার ঠোঁট , গাল ও গলা কামড়ে দাগ বসিয়ে দিতো , দাঁত দিয়ে কামড়ে কানেরলতি প্রায় ছিঁড়ে ফেলার উপক্রম করতো - আমি হঠাৎ পাওয়া ব্যাথায় চট করে মুখ সরিয়ে নিতাম - চুমু নাকি মধুর - কিন্তু সেই মধুর স্বাদ আমার উপভোগ করা হতো না - একরাশ যন্ত্রণা ছাড়া ।


তাদের উত্থিত পৌরুষদণ্ড দিয়ে আমাকে বিদ্ধ করে তারা চরম সুখ নিতো - আর পুরুষের আদরলোভী আমি - যন্ত্রণায় থরথর করে কাঁপতাম !! কিন্তু আমার গুহ্যদ্বারের সেই তীব্র ব্যাথা কি আমার পুরুষ সঙ্গীটা একটু বোঝার চেষ্টাও করতো ? না । স্পষ্ট বুঝতাম করতো না । বরং যদি সেইটা বলে ফেলতাম - তখন মনে হয় জিদ করে আরো বেশী জোরে দিতো !!


আমি অবাক হয়ে ভাবতাম - আমাকে আমার সঙ্গী এতো ব্যাথা দিচ্ছে কেনো - আমরা সানন্দে রাজী হয়েই তো একে অপরকে আদর করতে , ভালবাসতে এসেছি - তাহলে এখন তার এতো জিদ ও রাগ উঠে যাচ্ছে কেনো ; আমি কি দোষ করেছি !! ?? না কি , সে নারীর প্রেমে ব্যর্থ হয়ে , নারীকে চেয়ে , না পেয়ে - নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো - হিসেবে , আমাকে ভোগ করতে এসেছে !! ??


আমি তখন যতোই বলতাম - একটু আস্তে করো , এতো জোরে আমি নিতে পারছি না ! কিন্তু আমার সঙ্গী রেগে গিয়ে চাপা ঠোঁটে বলতো - "কেনো , এখন ব্যাথা লাগে কেনো রে , মাগি ? যখন আমার শরীর ঘইষাঘইষা খাতির করে চোদা খাইতে চাইছিলি - তখন মনে ছিলো না যে , পরে ব্যাথা লাগবে !!" আচ্ছা , আমি তো পুরুষ , তাহলে আমাকে লাগানোর সময় - বিকৃত কন্ঠে "মাগি" বলে ডাকছে কেনো !! ??


আমি যদি বলতাম যে - 'যৌনতার আনন্দ করতে এসে যদি এইভাবে জোরে জোরে দাও , তবে কি আমি মজা পাবো ? তুমি জোরে লাগিয়ে মজা পাচ্ছো , কিন্তু আমাকে তো মজা দিচ্ছো না । একটু নরমভাবে , আদরের সাথে করলে তো আমিও মজা পেতাম । যৌনতা তো কখনো একপাক্ষিক হতে পারে না , এইটা তো দুইজনেরই আনন্দের ব্যাপার , তাইনা ?'


তখন আমার সঙ্গীরা ঝাঁঝের সাথে দাত চিবিয়ে চিবিয়ে উত্তর দিতো - "আরে তুই তো মাইগ্যা , তুই পুরুষত্বের মর্ম কি বুঝবি , তোর সাথে কি এইরম বড় শিশ্ন আছে রে মাগি ? আর যাও আছে সেইটা তো খারানোর সঙ্গে সঙ্গেই ঝড়ে পড়ে , সুতরাং একটা উত্থিত শিশ্নের না লাগাইতে পারার যন্ত্রণা - তুই কি বুঝবি রে মাইগ্যা , হিজড়া !! ?? পুরুষের চোদা খাইতে আইছো , চুপ কইরা চোদা খাও , কথা কম !!"


তারা রাক্ষুসের মতো আগ্রাসী ক্ষুধায় আমাকে কামড়ে , খামছে , চিপেচেপে , টিপেধরে - আমার শরীরটা ভোগ করতো । আমার শরীরটা হলো মানুষপুরুষের - কিন্তু তারা আমাকে - মানুষনারী কল্পনা করে - নারীবাচক শব্দে খিস্তি দিতেদিতে তাদের উত্থিত শিশ্ন দ্বারা বিদ্ধ করতে করতে জখম করে ফেলে - কেনো আমি পুরুষ হয়েও পুরুষের সঙ্গম প্রত্যাশী হয়েছি (তাদের ভাষায় - কেনো পুরুষের চোদা খাইতে এসেছি) - সেই শাস্তি দিতো !!


- এতোটাই ছিলো তাদের রাগ । কিন্তু সেই অদম্য রাগটা ছিলো ঠিক কার উপরে সেইটা আমি স্পষ্ট বুঝতে পারতাম না তখন । ওই সময় পুরুষাঙ্গের ঠোকর খেতেখেতে - আমার সঙ্গীর বিকৃত আচরণের মনোস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষন করার অবস্থা আমার থাকতো না । তাছাড়া - আমি কি আর কোনো পেশাদারী মনোবিৎ বা মনোবিজ্ঞানী ছিলাম যে - এইসব সুক্ষ ব্যাপারগুলা বুঝবো !!


এখন আমি তখনকার ঘটনাটা যেইভাবে ব্যাখ্যা করতে পারছি - তখন তো সেইটা পারতাম না । তাই , তখন আমি অবাক হয়ে লক্ষ করতাম , আমার পুরুষ সঙ্গী যৌনমিলন করছে আমার সঙ্গে অথচ খিস্তি করছে নারীর প্রতি । আমি যেইহেতু মানুষপুরুষ তাই সে আদরের সময় পুরুষবাচক খিস্তি করবে - সেইটাই তো স্বাভাবিক । কিন্তু , তা না , সে প্রতিটা যৌন উদ্দিপক শব্দ বলছে একটা নারীকে উদ্দেশ্যে করে এবং নারীবাচক শব্দে !! আশ্চর্য !!


তাহলে সে কি - আমার শরীরটাকে পছন্দ করছে না । তাহলে কি সে , ঢুকছে আমার শরীরে কিন্তু কল্পনা করছে একজন নারীকে - যাকে সে চায় কিন্তু পাচ্ছে না !! ?? আর পাচ্ছে না বলেই - যৌনকামনা মিটানোর জন্য বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছে সমপ্রেমী বা সমকামী পুরুষের শরীরকে ?? তাহলে পুরুষরা কি আমাকে ভালো নাবেসেই আমার শরীরটা ভোগ করছে ?? হয়তো তাই !!


যৌনমিলনের সময় আমার মানুষপুরুষ সঙ্গীরা আমাকে আদরের নামে ঠোঁট আর দাঁত দিয়ে চুম্বনের ভান করে দংশন করতো - কিন্তু সেই বিকৃত ঠোঁটের চুম্বনে যে ভালোবাসা বা প্রেম ছিলোনা সেইটা আমি ঠিকই বুঝতাম দংশন ও কামড়ের হিংস্রতায় !! মোটকথা - প্রতিবার যৌনমিলনের সময় আমি আদরের নামে পুরুষ সঙ্গীর দ্বারা প্রথমে নির্যাতিত , পরে রীতিমত ধর্ষিত হতাম !!


তখন আমি তাদের বিকৃত যৌন লালসার শিকার হতাম । তারা লালা ঝরিয়ে চুমাচাটিতে দাঁত বসিয়ে আমার শরীর ছিবড়ে খেতো - কিন্তু একটু ভালোবেসে আদরের পরশ বুলিয়ে দিতো না । আচ্ছা , কি এমন পার্থক্য আছে মানুষপুরুষ আর মানুষনারীর শরীরের চামড়ায় !! ?? দুইটা শরীর ঘেটেই তো মানুষপুরুষদের বীর্যপাত হচ্ছে , যৌনলালসা মিটছে - তাহলে ??


যেই মানুষপুরুষ একজন মানুষনারীর চামড়ায় হাত বুলিয়ে আদর করতে পারে , ঠিক সেই একই মানুষপুরুষ কেনো আরেকজন মানুষপুরুষের চামড়াকে অপছন্দের বস্তু বা ঘৃনার বস্তু ভাবছে ?? আশ্চর্য !! কি এমন তফাৎ এই দুই ধরনের শরীরের মধ্যে ?? আপনারা এইখানে বলতে পারেন - পার্থক্যটা পছন্দে ।


যদি তাই হয় , যদি মানুষপুরুষটা আমার শরীর পছন্দই করছে না , তাহলে আমার সাথে যৌন ঘটিত কাজ করতে কেনো এসেছে বা আসতো কেনো !! ?? তারা তো প্রথমেই আমাকে না করে দিতে পারতো বা আমার সাথে যৌনমিলনে অনাগ্রহ প্রকাশ করতে পারতো । সেইটা করতে অভদ্র হবার প্রয়োজন হয় না - ভদ্রভাবেই করতে পারতো ।


কিন্তু সেইটা তো করে নাই । বরং মিষ্টিমিষ্টি কথা বলে আমাকে ভজিয়েভাজিয়ে রাতের অন্ধকারে এসেছে আমাকে ধর্ষণ করতে !! হ্যাঁ , সেই অন্তরঙ্গ মুহূর্তের যন্ত্রণাকে আমি ধর্ষণই বলবো - যা থেকে আমি সুখ বলে কিছু পাই নাই । বরং সুখের নামে তা ছিলো - স্রেফ মরীচিকা !! আরদশ জনের ভাষায় - এইটা এক অন্ধকার জগতের নিষিদ্ধ সুখের হাতছানি !!


আচ্ছা , শুধু মৈথুন করে বীর্য ঝড়ানোতেই কি মানুষপুরুষের সুখ ? আদর , স্নেহ , আন্তরিক চুমু , প্রেম - এই মধুর বিষয়গুলো কি মানুষপুরুষরা বোঝেনা বা শেখে নাই ?? না বুঝলে , না শিখলে - কেনো বোঝে নাই , কেনো শিখে নাই ?? সমস্যাটা কোথায় ? সমস্যাটা শুধু মানুষপুরুষের শরীর বৃত্তীয় ও মানসিক সমস্যা ? নাকি , সমস্যাটা একনায়কতান্ত্রিক বা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অশিক্ষিত পুরুষত্বের অহংকারের !! ??


আমার কৈশোর কালেও কিছু বড় ভাইয়েরা উপহার দেয়ার কথা বলে - আমাকে তাদের ভোগ ও লালসার শিকার করে - সৃজনশীলতা ও শেখার জগত থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে - আমাকে এক ছন্নছাড়া বিশৃঙ্খলা ও দুঃস্বপ্নের জগতে ঠেলে দিয়েছে । "আপনা মাংসে হরিণী বৈরা" - সেইরম হয়েছিলো আমার শৈশব বা বাল্য , কৈশোর ও প্রারম্ভিক যৌবনের কাল !!


আচ্ছা বন্ধু , বলতে পারেন - তারপরেও আমি বেহায়ার মতো শুধু পুরুষের যৌনসান্নিধ্য চাইতাম কেনো !! ?? পুরুষরা আদর করার কথা বলে আমাকে ডেকে নিয়ে - প্রচণ্ড আক্রোশে বিদ্ধ করে যন্ত্রণা দিতো - তারপরেও আমি কেনো পুরুষের একটু উষ্ণ সান্নিধ্য , তাদের ভারী ঠোঁটের মিষ্টি স্বাদ , একটু আদর , আন্তরিক স্নেহ পাবার জন্য ও একদুইটা মিষ্টি কথা বা গালগল্প শোনার জন্য উতলা ও আকাঙ্ক্ষিত থাকতাম !! ?? আমি সমকামী বা সমপ্রেমী বলে ??


আচ্ছা , মানুষপুরুষরা যে - মানুষনারী , মানুষহিজড়া , মানুষসমপ্রেমকামীপুরুষের সাথে এতো এতো খারাপ আচরণ , অত্যাচার , যৌননির্যাতন , দমন , বঞ্চনা করে - তারপরেও আমরা কেনো প্রেম ও যৌনতার জন্য মানুষপুরুষ খুঁজি !! ?? কেনো আমার মানুষপুরুষ দেখলে শরীরের মধ্যে রক্ত খলবলিয়ে ওঠে !! ?? মানুষপুরুষের ভোগের বস্তু হয়ে নির্যাতিত তো কম হলাম না , অপমান , লাত্থি , উষ্ঠা তো কম ভোগ করলাম না , তাহলে !! ??


আমি কি আসলেই শুধু সমপ্রেমী বা সমকামী ছিলাম , নাকি , আমি উভকামী বা উভপ্রেমীও ছিলাম ?? আমি যে শুধু মানুষপুরুষের সান্নিধ্যই চাইতাম , সেইটা তো না । আমি তো মানুষনারীদের সঙ্গও পেতে চাইতাম । যদিও আমার এই জীবনে কোন মানুষনারীর সাথে যৌন সঙসর্গে আসার সুযোগ হয় নাই । হয় নাই বলতে - মানুষনারীরাই আমাকে সেই সুযোগটা কখনো দেয় নাই !! কিন্তু কেনো দেয় নাই !! ??


সেই জন্য মানুষনারীদের প্রতি আমার প্রচণ্ড অভিমান - তখনো ছিলো এবং এখনো আছে !! কারণ , আমার পরিচিত কোনো মানুষনারী আজ পর্যন্ত আমার প্রতি - পরিচিত লোকের গণ্ডি পেরিয়ে বন্ধুদের হাত বাড়িয়ে দিলো না , প্রেম তো দূরের কথা !! কেনো , আমি দেখতে কুৎসিত , আমি কি শারীরিকভাবে মানুষপুরুষ না , আমার কি সক্ষম শিশ্ন নাই , আমি মানসীকভাবে সুস্থ একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ মানুষ না !! ?? কেনো , কেনো , কেনো ??


কোনো মানুষনারী যদি আমার প্রতি আকর্ষণ না দেখায় - তাহলে , আমি মানুষনারীদের বিরক্ত করতে পারিনা , তাই না ? একজন মানুষনারী তার মনের মানুষ নির্বাচন করবে তো নিজের ইচ্ছানুসারে - এই ব্যাপারে তো জোর চলেনা । সুতরাং কোন মানুষনারী যদি তার মনের মানুষ হিসেবে আমাকে নির্বাচন করতে না চায় , তবে আমার কি করার থাকতে পারে , বলেন ?


আমার তো কোনো অধিকার নাই - কোনো মানুষনারীর মতের বিরুদ্ধে তাকে বিরক্ত করার বা মানসিকভাবে যন্ত্রণা দেয়ার । আমি আমার পছন্দের মানুষনারীদের প্রতি দূর থেকে অভিমান করতে পারি , কিন্তু রাগ তো করতে পারি না কিছুতেই - সেই অধিকার শুধু আমার কেনো পৃথিবীর কোনো মানুষেরই তো নাই , থাকতে পারেনা । কারণ , মানুষনারী হলেন - মানুষ - কোনো যৌনবস্তু (Sexual Object) না ।


আমার এই কথাটা শুনে , এখন পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পৃথিবীর যাবতীয় দমন অভিলাষী মানুষপুরুষরা - বত্রিশ পাটি দন্ত বিকশীত করে কেলিয় কেলিয়ে - তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতে হাসতে টিটকারি দিয়ে বলবে - এইরম মাইগ্যা মাইনষের মতো আচরণ করলে , কোনো মানুষনারীই প্রেমীক হিসাবে পছন্দ করবে না ।


এইখানে আমার অকাট্য যুক্তি হলো - তা কোনো মানুষনারী , আমার ব্যক্তিত্ব ও আচরণ দেখে তার প্রেমিক হিসেবে পছন্দ না করলেও , আমি ভুয়া পুরুষত্ব দেখিয়ে কোনো মানুষনারীকে যৌননির্যাতন বা জিহবা বের করে লালা ঝরিয়ে - বিকৃত যৌনাচরণের দ্বারা বিরক্ত করে যন্ত্রণা দিতে পারবো না , কিছুতেই না । এইটা আমার দ্বারা সম্ভব না । ব্যাস !!


তাছাড়া , কোনো মানুষনারী যদি আমাকে পছন্দ না করে তবে আমার কি এমন ঠ্যাকা পড়েছে - তার অনিচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়া তার পিছেপিছে বেহায়ার মতো ল্যাকল্যাকে জিহ্বা বের করে ঘুরঘুর করতে থাকবো !! ?? কেনো , আমার কি কোনো আত্মসম্মানবোধ নাই ?? তারাও মানুষ আর আমিও মানুষ - তাহলে ??


তাহলে , আমার কি কোনো দাম নাই যে - তাদের অমতেও তাদের পিছনে ছ্যাচরার মতো ঘুরঘুর করবো আর প্রত্যাখ্যাত হবার পরেও একই প্রস্তাব দিয়ে বিরক্ত করতে থাকবো ?? যখনই পছন্দের মানুষনারীদের দেখবো তখনই বিকৃত যৌন ইঙ্গিত করবো ? এমনকি সুযোগ পেলে তাদের শরীর হাতাতেও ছাড়বো না ? ছি !!


তাই , সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি - এখন একা থাকতেই ভালো লাগে । তাছাড়া , এখন আমি আমার মনের মানুষ , আমার প্রেমিকমানুষ খুঁজে পেয়েছি । আমার প্রেমীকমানুষ একজন মানুষপুরুষ হলেও সে সমপ্রেমকামী - তাই সে বিষমকামী মানুষপুরুষ-মানুষনারীদের মতো নিষ্ঠুর নির্দয় না । সে মানবতা বোঝে , প্রেম ভালোবাসা আদর সোহাগ সহানুভূতি বোঝে ।


এখন আমি আমার প্রেমিকমানুষের সাথে খুব ভালো আছি - সে আমাকে সম্মান করে , ভালোবাসে - সর্বোপরি মানুষ হিসেবে শ্রদ্ধা করে । - তাই , এখন আমি আর অন্য কারো ভালোবাসা , অন্য কারো সঙ্গ চাই না । আমার প্রেমিকমানুষের সাথে আমি অত্যন্ত সুখি - তার ভালোবাসা পেয়ে এখন আমার জীবন স্বার্থক ।


পুনশ্চঃ বন্ধু , গতকালের লেখাটা শেষ করে মধ্যরাতের পরে ঘুমাতে গিয়েছিলাম তাই , আপনাকে আর এই সম্পর্কে কিছু জানানো হয় নাই । গতকাল লিখতে গিয়েছিলাম একটা গল্প কিন্তু তাজ্জব ব্যাপার হলো - লেখাটা গল্প না হয় স্মৃতিকথা হয়ে গেছে - তাও আবার আমার নিজের না - অন্যের স্মৃতিকথা । হিহিহিহি !!


নিজের কথা লিখতে লিখতে একসময় থমকে গেলাম । লেখা আগাচ্ছিলোই না - দেখলাম আমার নিজের বলার মতো কিছুই নাই । হঠাৎ মনে পড়লো - এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কথা । যিনি তার কিছু ব্যক্তিগত কষ্টকর অভিজ্ঞতা আমার সাথে বিনিময় করেছিলো - ভাবলাম , আজ না হয় তার কথাই লিখি - আমার কথা না হয় আরেকদিন লিখবো ।


তাছাড়া , আমার মতো অধম মাইগ্যাপুরুষের কথা পড়ার জন্য কেই বা আর অধীর আগ্রহে বসে আছে !! ?? কেউ না । তার চাইতে বরং অন্য আরেকটা মানুষের দুঃখকষ্ট বঞ্চনা গুলা তুলে ধরি - হয়তো কারো না কারো জীবনের সাথে মিলে যেতেও পারে ।


আসলে আমরা প্রতিটা মানুষই ভিন্ন হলেও , দিন শেষে সবার জীবনেই তো কিছু সাধারণ ঘটনা থাকে - যা , কমবেশী একই রকম । হয়ত উনিশ , আর না হয় বিশ - এই তো পার্থক্য !! ?? কিন্তু দিনশেষে আমরা সবাই একরাশ কষ্ট নিয়ে ঘুমাতে যাই । যাক , সে কষ্টের কথা -


বন্ধুরা , আপনারা অবশ্যই মন্তব্য করে জানাতে ভুলবেন না যে , কার সাথে আজকের এই তিক্ত গল্পটা মিলে গেলো । আপনারা তো জানেনই আপনাদের বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন মন্তব্য পড়তে আমার কতো ভালো লাগে । সুতরাং প্রত্যেকের পাঠপরবর্তি অনুভূতি চাঈ , চাই ।


যাইহোক , আজকের মতো শেষ করছি - এক দূরের বন্ধুর কাছে খোলা চিঠিতে নিজের ব্যক্তিগত অনেক দিনের জমানো দুঃখের কাসুন্দি গাওয়া । সবাই ভালো থাকুন ।


'অন্য মানুষের গল্প : ব্যক্তিগত কাসুন্দি'

-- খান ওয়াহিদুজ্জামান

(২৫ পৌষ ~ ২৩ মাঘ ১৪২৭ ||

০৯ জানুয়ারী ~ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১)শ্রদ্ধেয় দূরের বন্ধু ,

কেমন আছেন ? আপনার আমন্ত্রণের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ । ঢাকায় আসলে অবশ্যই আপনার সাথে দেখা করার চেষ্টা করবো । তবে - ঢাকায় আমার থাকার জায়গার সমস্যা নাই - ঘনিষ্ট বন্ধুরা আছে , আত্মীয়স্বজনরা আছে - কিন্তু ঢাকায় আমার আসতে ইচ্ছা করে না । কেনো ? - সেই গল্পটা আরেকদিন বলবো ।


কেনো আসতে ইচ্ছা করে না- তার দুইটা কারণ আছে । তার একটা কারণ আজ বলবো না কিন্তু অন্য কারণটা আজকে বলি : তা হলো - আমি হলাম প্রচণ্ড অলস আর ঘরকুনো । আমি ভালো করে কথা বলতে , গল্প করতে পারি না - সুতরাং আমার সান্নিধ্য আপনাদের বিরক্তই করবে । তাই , আমি শত চেষ্টা করলেও আপনাদের আনন্দ দিতে পারবো না , রে বন্ধু ।


অতএব আমার সাথে খাতির করার আগেই জানিয়ে দিচ্ছি যে - আমার মধ্যে মজার কিছুই নাই !! আমার আচরণে বিচিত্র ভাব আছে - যেইটাকে সবাই বলে মেয়েলী আচরণ - এই কারণে মানুষপুরুষ ও মানুষনারী সহ সর্বোপরি সবাঈ আমাকে অস্বাভাবিক ও বাকা নজরে দেখে - বাজে টিটকারী ও ঠাট্টা করে - কেউই বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না ।


এই কারণে - আমিও নিজেকে সংকুচতিত ও গুটিয়ে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি । যদিও আমি আগে খুব মিশুক ছিলাম - যখন ঢাকায় থাকতাম তখন পেশাগত কাজের পরেই সারাটা সময় বাসার বাইরেই থাকতাম - শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আশপাশ সহ , প্রায় পুরো ঢাকা শহরটাই চষে বেড়াতাম - আনন্দ ও উৎসবের খোঁজে , মানুষের স্নেহ , সান্নিধ্য ও ভালোবাসার সন্ধানে -


তীর্থের কাক কিংবা চৈত্রের চাতকের মতো ব্যাকুল নয়নে মানুষ দেখতাম আর বেহায়ার মতো সবার সাথে মিশে মানুষদের মানসিকতা বুঝতে চেষ্টা করতাম - মানুষের মন ও চোখের গভীরে ঢুকতে চেষ্টা করতাম - একটা কাছের মানুষের খোঁজে - একটা মনের মানুষের উষ্ণতার ছোঁয়া পেতে - খুব বেশি না , সামান্য একটু ভালোবাসা পেতে -


কিন্তু মানুষের তাচ্ছিল্য , অপমাণ , ঠাট্টা , টিটকারি , অবহেলা ছাড়া - মানুষ হিসেবে ন্যুনতম সম্মান , ভালোবাসা , স্নেহসান্নিধ্য কিছুই তো পাই নাই - বন্ধু । কিন্তু এর মধ্যেই কারো সান্নিধ্য যে একেবারেই পেতামনা না , তাতো না , পেতাম !! কেউ কেউ দয়া কিংবা ভালোবাসার ভান করে আমার সাথে স্বার্থের খাতির জমাতো - কেন জানেন ? আমার এই শরীরটার লোভে !!


বলছি সে কথা ! বন্ধু , আপনি আজ ঢাকায় আমন্ত্রণ করে তো ভালোই করেছেন - আমন্ত্রণ প্রসঙ্গে আপনাকে উদ্দেশ্যে করে সেই তখন থেকে যে একটা লেখা লিখতে শুরু করেছি - এখনো সেইটাই লিখে যাচ্ছি - - তরতর করে লেখা আগাচ্ছে ! চেষ্টা করছি একটি গল্প লিখতে কিন্তু গল্প হচ্ছে না - হয়ে যাচ্ছে , স্মৃতিচারণ বা আত্মকথা !!


আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও ভালোবাসা জানাই , আমন্ত্রণের জন্য - নাহলে - এই লেখাটা আজকে প্রসব হতো না । যাইহোক , লেখাটা আবার শুরু করি , পরে আবার কথা হবেখন । - প্রথমেই একটা কথা বলে নেই - তা হলো - আমি সমপ্রেমকামীতা-কে অবশ্যই সমর্থন করি এবং সবসময়ই করবো !! আর হ্যাঁ আমি নিজেও একজন সমপ্রেমকামী মানুষ ।


মানুষপুরুষ , মানুষনারী ও মানুষহিজড়া বা মানুষবৃহন্নলা সবার প্রতিই সমান আকর্ষণ বোধ করি অর্থ্যাৎ সবাইকেই পছন্দ করি এবং মানুষ হিসেবে সবাইকে সমান শ্রদ্ধা ও সম্মান করি । সর্বোপরি সবাইকেই ভালোবাসি - - আমি কাউকে ঘৃনা করতে পারি না । মানবতাবাদ ও নারীবাদ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান হবার পর থেকে - কখনই কাউকে ঘৃনা করি নাই ।


আমার যে ভালোবাসার কি এক ক্ষমতা এবং মানুষকে ভালোবাসার কি যে এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিলো (এখনো কি কিছুটা অবশিষ্ট আছে ?) - ভেতরে ভতরে আমি কাউকে ভালোবাসার এবং কারো ভালোবাসা পাবার জন্য - কি তুমুল ও তীব্র প্রত্যাশা , কতটা আকুলিবিকুলি করতাম (এখনো কি করি ?) - তা আমি লিখে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না !!


কথায় আছে না - অতি বড় ঘরনী না পায় ঘর , অতি বড় সুন্দরী না পায় বড় !! আমার হয়েছিলো - সেই মরন দশা , সেই করুন অবস্থা !! আর , আমার এই গোপন আকাঙ্ক্ষাই আমাকে মনের মানুষ খুঁজতে তাড়না দিতো - যেইহেতু মানুষনারীরা আমাকে তখন পাত্তাই দিতো না , তাই যেই মানুষপুরুষই আমার দিকে একটু গভীর চোখে তাকাতো (তাকিয়ে দয়া করতো আর কি) - তার চরণেই নিজেকে সঁপে দিয়ে ধন্যধন্য মনে করতাম ।


এবং আমার সেই দূর্বলতাই আমার জন্য কাল হতো !! সেই নির্মম দূর্বলতার কারণেই - মানুষপুরুষের দিকে আমি ব্যকুল নয়নে বেহায়ার মতো তাকাতাম । আমার সেই নির্দয় একাকীত্ব কি আমার শরীরের ভঙ্গিতে , চবনেবলনে হাহাকারের মতো ফুটে উঠতো ?? আর তাই কি , আমার ভালোলাগার সেই মানুষপুরুষরা - আমার সেই