মানব রূপী জ্বীন ৪র্থ পর্ব
রাত তখন ২টা ৪০। মোবাইলে নেটওয়ার্ক না থাকাতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম এশার নামাজের পর। নেট চালানোর কোনো উপায় নেই। তার মধ্যে ঘুটঘুটে অন্ধকার। জেগে থেকে লাভ নেই। কিন্তু বের হবো সেটা আগে থেকেই প্ল্যান করা ছিল। তাই রাত তিনটায় বের হোলাম। বের হওয়ার সময় কাঠের গেইট খুলে বের হলাম। বাইরে থেকে টান দিয়ে গেলাম। হাতের মোবাইলেও চার্জ নেই। তাই বাসায় রেখেই গেলাম। তবে একটা ছোট টর্চ নিয়ে নিলাম সাথে। বের হয়ে দেখি চার-পাশ ঘুটঘুটে অন্ধকার। টর্চের আলোতে কিছুটা দেখা যাচ্ছিলো। বড় বড় গাছ-পালা। চর এলাকা। যেহেতু রাতের সময়,তাই জোয়ার চলছিলো। পানি বেরে গিয়েছিলো তাই অনেক জায়গায় পানির জন্য যাওয়া সম্ভব হচ্ছিলো না। এছাড়াও আমি সব জায়গা চিনি না। তবে আমার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দুপুরের সেই জায়গাটাতে যাওয়া যেখানে কালোজাদুর সরঞ্জাম পেয়েছিলাম। তাই হাটা শুরু করলাম ঐ জায়গাতে যাওয়ার জন্যে। রাতের অন্ধকারে শিয়াল ডাকছে। আমি হেটে হেটে গেলাম সেখানে। গুইসাপের আস্তানায় পা দেয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ নয়। তাই সাবধানেই চলতে হল। তবে মনের মধ্যে একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করছিলো যে কী হবে কে জানে সেখানে গেলে। মৃত্যুকে ভয় পাই না কখনোই তাই মৃত্যু পাশ দিয়ে এসেও চলে যায়। যারা বাচতে চায় তারাই মরে যায়। যারা বাচতে না জীবন যুদ্ধে তারাই টিকে থাকে। যাইহোক হাটতে হাটতে চলে এলাম সেই জায়গাতে যেখানে পেয়েছিলাম কালোজাদুর জিনিস পত্র। আজ এখানে কিছুই নেই। পুরো জায়গাটাই খালি। তবে একটা বাজে গন্ধ রয়ে গেছে। যেই গন্ধটা আমি সেদিন ইফতির দাদির বাড়িতে পায়েছিলাম। আমি এই গন্ধের সাথে পূর্ব পরিচিত। গন্ধটা মানুষ মরা গন্ধ। এতোটাই বাজে এই গন্ধ যে দম বন্ধ হয়ে আসে। আমি এবারো নাক চেপে ধরলাম। গন্ধের উৎস খুজে বের করার চেষ্টা করলাম পেলাম না কোথাও। এর মাঝে কোনো মানুষ নেই। শুধু জঙ্গল,গাছ-পালা,কিছু বন্য প্রাণী রয়েছে।
লেখক কথন- আপনারা যারা অনেক বেশি আগ্রহী জায়গাটা দেখার ব্যাপারে তারা গুগেল ম্যাপে সার্চ করে দেখতে পারবেন,কিছু ছবিও দেয়া আছে সেখানের। জায়গাটার নাম চর-কুকড়ি মুকড়ি,চরফ্যাশনের সামনেই।
আমি ব্যাক করা শুরু করলাম। আমি কালাম কাকার শ্বশুর বাড়ি ঢুকবো এর মধ্যেই একটা চমক পেলাম। একটা পুরনো বাড়ি যেটা সকাল থেকে নজরে পড়েনি। অনেক বেশি পুরাতন। আমার মনে হলো এই জঙ্গলের মাঝে এতো পুরাতন বাড়ি আছে তাও আবার জনশূন্য। আমি সেই বাড়িটা দেখতে গেলাম। ইন্টারেস্টিং ছিল তাই। আগামীকাল ইফতিকে নিয়ে আসা যাবে আবার। আজকে একাই এর ভেতরটা দেখে নিই। আমি হাতের টর্চটা জ্বালিয়ে এগিয়ে গেলাম। আমি একটা জিনিস প্রথমেই নোটিস করলাম সবকিছু ধুলো মাখা থাকলেও দরজাটা পরিষ্কার এবং হাতের ছাপ আছে যা দেখে নিশ্চিত হয়ে গেলাম কেউ না কেউ এই বাড়িতে যাতায়াত করে। বাড়িটা জনশূন্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই এতো রাতে কেউ ভেতরে থাকলে ডিস্টার্ব হবে। তারপরেও নিজের কৌতুহল সামলে রাখতে ব্যর্থ হলাম। টর্চ জ্বালিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। গেইটের সামনে চলে এলাম। ভেতরে যাকে দেখলাম তাকে দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
সকাল আটটায় ঘুম থেকে উঠলাম। সবাই নাস্তা করে নিলাম।
ইফতি জিজ্ঞেস করলো কাল রাতে কোথায় ছিলাম।
-ঘুরতে তোকে তো বলেছিলামই।
-কালাম কাকা সাথে যাবে জানলে তো আমিও যেতাম। আমি তো ভেবেছি তুই একা যাবি।
-তাই নাকি? তুই যাবি জানলে তো তোকে ডাক দিতাম।
-তা কি কি দেখলি রাতে? আমি দুশ্চিন্তা করছিলাম। পরে অনেক ঘুম আসলো ঘুমিয়ে গেলাম। রাতে কালাম কাকা নেই দেখে দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়েছি কিছুটা।
-হ্যা কালাম কাকা থাকাতে ভালোই হয়েছে।
এর মধ্যে খবর এলো আমাদের যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। আমাদেরকে ফিরতে হবে। কালাম কাকার স্ত্রীও বাড়ি ফিরবে। উনার একটা ছোট ছেলে আছে। পুরো পরিবারই এক কথায়। চর কুকড়ি-মুকড়ি থেকে ফেরার সময় এসে গেলো। ১১টায় আমাদের সবার বের হতে হবে। সেই অনুযায়ী আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে আসলাম। সেই কাজটা পরে বলা যাবে। ১১টায় চলে গেলাম ফেরার উদ্দেশ্যে। ট্রলারে উঠে গেলাম। কালাম কাকার পরিবারের সদস্যরা সকলেই খুব খুশি। এতো বছর পর এক সাথে। আমার কাছে ভালোই লাগছিলো তাদের ভালবাসা দেখে। ট্রলারের শব্দে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে। রাতে ঠিক মত ঘুমানো হয়নি। তাই মেজাজ খিটখিট করছে। এর মধ্যে কালাম কাকার উল্টা পাল্টা কথা শুনলে মারামারি লেগে যাবে আমার সাথে। তাই মাথা ঠান্ডা রেখে চুপ করে প্রকৃতি উপভোগ করছিলাম। ধিরে ধিরে দুপুর ঘনিয়ে বিকেল চলে এলো। ছোট বেলায় প্রতি বছর একবার বাবার সাথে পিকনিকে যেতাম সারাদিন ট্রলার দিয়ে ঘুরতাম। বেরিবাধ দিয়ে উঠতাম তারপর সাভার-টাভারে ঘুরে সন্ধ্যায় আবার বাসায় ফিরতাম মিষ্টি-দই এসব কিনে। অতীত আসলেই একটা সুন্দর জিনিস। যখনই মনে পড়ে তখনই আনন্দ বা বেদনা দিয়ে যায় হৃদয়ে। হঠাৎ সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যাচ্ছিলো। গোধূলির আকাশটা এক অমায়িক রূপ নেয়। ছাদের উপরে বসে গোধুলির সময় চা-খাওয়ার মজাই আলাদা। আজও ভিন্ন এক মজা পাচ্ছি। সন্ধা হয়ে এলো এরপর রাত। আমরাও পৌছে গেলাম আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। রাতের বেলা বাসায় পৌছালাম। আজ পূর্নিমার রাত। আমি আজ রাতের জন্য বেশ কিছু প্ল্যান এটে রেখেছিলাম আগের থেকেই। সেই প্ল্যান কাজে লাগানোর সময় আসছে। প্রচন্ড উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করছি আমি অনাগত ভবিষ্যতের। আশা করি প্ল্যান অনুযায়ী সব কিছুই হবে।
Comments