মহাভারতের কর্ণ চরিত্র খুব বৈচিত্রময়
মহাভারতের কর্ণ চরিত্র খুব বৈচিত্রময়। ধর্ম ছেড়ে অধর্মের পথে গিয়ে তিনি শেষ হন কিন্তু তিনি ছিলেন প্রকৃত দানবীর।
সকলেই জানত তাঁর দানের কথা।
এ বিষয়ে ই একটা গল্পকথা বলি।
মহাভারতে যদি সত্যিকারের দাতা হিসেবে কেউ পরিচিত ছিলেন, তা হলেন কর্ণ। তিনি নিজের মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও কবচ-কুণ্ডল পর্যন্ত দান করতে দ্বিধা করেননি। এ হেন কর্ণকে দানবীর আখ্যা দেওয়ায় একবার বেশ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন অর্জুন। তিনি শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করেন যে কেন কর্ণকেই দাতা বলা হয়। গরীব-দুঃখীকে দান করতে অর্জুন নিজেও যে আগ্রহী সে কথা মনে করিয়ে দেন তিনি।
এর উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে একটা সোনার পাহাড়ের কাছে নিয়ে যান। সেখানে তিনি অর্জুন বলেন 'এই পাহাড়ে যত সোনা আছে, সব গ্রামবাসীদের মধ্যে ভাগ করে দাও। দেখো একটি কণা সোনাও যেন পড়ে না থাকে।' অর্জুন তখন পাশের গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীদের বলেন যে তিনি তাঁদের সোনা বিলি করবেন। সেই কথা শুনে সব গ্রামবাসীরা অর্জুনের নামে জয়ধ্বনি করতে করতে তাঁর সঙ্গে আসেন। দু-দিন দু-রাত ধরে একটুও বিশ্রাম না নিয়ে সোনা বিলি করতে থাকেন অর্জুন। কিন্তু একা হাতে পাহাড়ের বিশেষ কিছুই তিনি তখনও খুঁড়ে উঠতে পারেননি। গ্রামবাসীদের লাইনও তখন আরও দীর্ঘ হয়েছে।
ক্নান্ত অবসন্ন অর্জুন কৃষ্ণকে বলেন যে একটু বিশ্রাম না করে তিনি আর পারছেন না। শ্রীকৃষ্ণ তখন মুচকি হেসে কর্ণকে ডেকে পাঠান। কর্ণকে আরও একটি সোনার পাহাড় দেখিয়ে একই ভাবে গ্রামবাসীদের মধ্যে সোনা বিলি করতে বলেন তিনি। কর্ণ গ্রামবাসীদের বলেন যে এই সোনার পাহাড়টা তোমাদের। আর তারপরই আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে সেখান থেকে চলে যান তিনি।
হতভম্ব অর্জুন ভাবতে থাকেন যে তাঁর মাথায় কেন এমন চিন্তা এল না। তখন শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে বুঝিয়ে দেন যে এই জন্যই কর্ণ দানবীর। অর্জুন সোনা বিলি করেছেন কিন্তু কাকে কতটা দেবেন সেই সিদ্ধান্ত নিজের হাতে রেখেছেন তিনি। সোনা বিলির সময় গ্রামবাসীদের জয়ধ্বনিতে আত্মশ্লাঘা অনুভব করেছেন। কিন্তু কর্ণ কোনও কিছুর প্রত্যাশা না করেই সম্পূর্ণ ভাবে দান করতে পারেন। তাঁর দানের পেছনে প্রতিদানে কিছু পাওয়ার কোনওরকম প্রত্যাশা থাকে না। সেই কারণেই তিনি দানবীর।
জীবনে শ্রীকৃষ্ণর মত একজন সত্যিকারের গুরু,বন্ধু,পথপ্রদর্শক থাকলে আর কিছু চাই না।
Comments