top of page
Writer's pictureJust Another Bangladeshi

মহাভারতে দ্রৌপদীর চিত্রাঙ্কন

দ্রৌপদী (দেবনাগরী:द्रौपदी) হলেন মহাভারত মহাকাব্যের কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র । ইনি পঞ্চপাণ্ডবের সহধর্মিনী । সে মহাভারতের বীরাঙ্গনাদ্রৌপদী পাঞ্চালরাজ দ্রুপদের কন্যা । দ্রুপদের কন্যা বলে তার নাম দ্রৌপদী । কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শেষে যুধিষ্ঠির যখন হস্তিনাপুরের রাজা হন তখন তিনি পুনরায় রাণী হন । তিনি বিভিন্ন নামে পরিচিতা । পাঞ্চালের রাজকুমারী বলে তিনি পাঞ্চালী, যজ্ঞ থেকে তিনি উৎপন্ন হয়েছিলেন বলে যাজ্ঞসেনী, ভরতবংশের কুলবধু বলে তিনি মহাভারতী[১] এবং তিনি সৈরিন্ধ্রী নামেও পরিচিতা কারণ অজ্ঞাতবাস কালে তিনি মৎস্যরাজ বিরাটের স্ত্রী সুদেষ্ণার কেশসংস্কারকারিনী ছিলেন । মহাভারতে দ্রৌপদীকে অনিন্দ্য সুন্দরী ও তার সময়ের শ্রেষ্ঠ নারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে । দ্রৌপদী তার শ্বশ্রূ কুন্তীর মত পঞ্চকন্যার অন্যতমা ।[২] দ্রৌপদী তার শ্বশ্রূ কুন্তীকে খুব ভালবাসতেন । কুন্তী ও পুত্রবধুকে ভালবাসতেন।



দ্রৌপদী হস্তিনাপুরের রাণী দাম্পত্য সঙ্গী


যুধিষ্ঠির


ভীম


অর্জুন


নল


সহদেব


জন্মবিবরণ সম্পাদনা


দ্রোণাচার্যের পক্ষে তার শিষ্য অর্জুন পাঞ্চালরাজ দ্রুপদকে পরাজিত করেছিলেন । দ্রোণ দ্রুপদকে অর্ধরাজ্য ফেরত দিয়ে পুনরায় মিত্রতা স্থাপনে আগ্রহী হন কিন্তু দ্রুপদ এই অপমান ভুলতে পারেননি । এজন্য তিনি দ্রোণবধী পুত্রলাভের জন্য উপযাজ মুনির শরণাপন্ন হলে তিনি তার জ্যেষ্ঠভ্রাতা ঋষি যাজের কাছে নিয়ে যান । যাজ ও উপযাজ ঋষির সাহায্যে যজ্ঞ করে তিনি দ্রোণবধী পুত্র ধৃষ্টদ্যুম্নকে লাভ করেন এবং সেই একই যজ্ঞে দ্রৌপদীর জন্ম হয়।[৩] দ্রুপদের কন্যা বলে তার নাম হয় দ্রৌপদী । তার জন্মের পর আকাশবাণী হয় তার থেকে কুরুবংশ ধ্বংস হবে[৪]


‘নারদ পুরাণ’ এবং ‘বায়ু পুরাণ’ অনুযায়ী, দ্রৌপদী একাধারে ধর্ম-পত্নী দেবী শ্যামলা, বায়ু-পত্নী দেবী ভারতী এবং ইন্দ্র-পত্নী দেবী শচী, অশ্বীনিকুনারদ্বয়ের পত্নি ঊষা এবং শিব-পত্নী পার্বতীর অবতার। বিগত জন্মে তিনি ছিলেন রাবণকে অভিসম্পাত-প্রদানকারী বেদবতী। তার পরের জন্মে তিনি সীতা। তারই তৃতীয় ও চতুর্থ জন্ম দময়ন্তী এবং তার কন্যা নলযানী। পঞ্চম জন্মে তিনি দ্রৌপদী। পূর্বজন্মে দ্রৌপদী ১৪টি গুণসম্পন্ন স্বামীর জন্য তপস্যা করেন। শিব তাকে সেই মতো বরদানও করেন। কিন্তু একটি মানুষের মধ্যে এতগুলি গুণ থাকা সম্ভব নয়। তখন শিব তাকে জানান, পাঁচজন মানুযের মধ্যে এমন গুণের সমাহার ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে তাকে পঞ্চস্বামী বরণ করতে হতে পারে। দক্ষিণ ভারতে দ্রৌপদীকে দেবী কালিকার অবতার মনে করা হয়। তিনি দুষ্ট রাজাদের সংহারকল্পে আবির্ভূতা হন।[৫]


মহাভারতে দ্রৌপদীর বর্ণনাসম্পাদনা


মহাভারতের আদিপর্বের অন্তর্গত চৈত্ররথপর্বের ১৬৬তম অধ্যায়ে এইভাবে দ্রৌপদীর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে :


কুমারী চাপি পাঞ্চালী বেদীমধ্যাৎ সমুত্থিতা ।সুভগা দর্শনীয়াঙ্গী স্বসিতায়তলোচনা ।।৪৪।।শ্যামা পদ্মপলাশাক্ষী নীলকুঞ্চিতমূর্ধজা ।তাম্রতুঙ্গনখী সুভ্রূশ্চারুপীনপয়োধরা ।।৪৫।।মানুষং বিগ্রহং কৃত্বা সাক্ষাদমরবর্ণিনী ।নীলোৎপলসমগন্ধ যস্যাঃ ক্রোশাৎ প্রবায়তি ।।৪৬।।যা বিভর্তি পরং রূপং যস্যা নাস্ত্যুপমা ভুবি ।দেবদানবযক্ষাণামীপ্সিতাং দেবরূপিণীম ।।৪৭।।[৬]


যার অর্থ : তখন যজ্ঞবেদী থেকে এক কুমারীও উৎপন্ন হলেন যিনি পাঞ্চালী নামে পরিচিতা হলেন । তিনি সৌভাগ্যশালিনী, সুদর্শনা এবং কৃষ্ণ আয়তচক্ষুযুক্তা । তিনি শ্যামাঙ্গী, পদ্মপলাশাক্ষী, কুঞ্চিত ঘনকালো কেশবতী এবং তাম্রবর্ণ নখ, সুন্দর ভ্রূ ও স্তনযুক্তা । তিনি মানুষের শরীরে সাক্ষাৎ দেবী । তার নীলপদ্মের ন্যায় অঙ্গসৌরভ একক্রোশ দূরেও অনুভূত হয় । তিনি পরম সুন্দর রুপধারিণী এবং সমগ্র বিশ্বে তুলনাহীনা । এই দেবরূপিনী কন্যা দেব, দানব ও যক্ষেরও আকাঙ্ক্ষিত ।


স্বয়ম্বর ও বিবাহসম্পাদনা


স্বয়ম্বরে অর্জুন দ্রৌপদীকে জয়লাভ করেন।


যদিও দ্রুপদ অর্জুন কর্তৃক পরাস্ত হয়েছিলেন তবুও অর্জুনকেই জামাতারূপে পেতে তিনি এক ভীষণ কঠিন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। শর্ত ছিল শূন্যে ঘুরন্ত মাছের চোখে জলে প্রতিবিম্ব দেখে যে তীর বিদ্ধ করতে পারবে তাকেই কন্যা দান করবেন । ক্ষত্রিয়দের মধ্যে কেউ তা সম্পন্ন করতে পারেননি । কর্ণ এই কাজ সম্পাদন করতে পারতেন কিন্তু তিনি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গেলে দ্রৌপদী উচ্চস্বরে বলে উঠেন " আমি সূতজাতীয়কে বরণ করব না ।" এতে কর্ণ ক্রোধে সূর্যের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে স্পন্দমান ধনু ত্যাগ করেন । যেজন্য ধৃষ্টদ্যুম্ন পিতার অনুমতি নিয়ে সকল বর্ণের পুরুষকে আমন্ত্রণ জানান । ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশী অর্জুন এই কাজ সম্পন্ন করে দ্রৌপদীকে লাভ করেন। কিন্তু বাসায় ফিরে যখন ভীম কুন্তীকে তারা কী এনেছে তা দেখার জন্য বলেন কুন্তী তখন অজ্ঞাতসারে তাদের বলেন তারা যা এনেছে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে এজন্য দ্রৌপদীকে পঞ্চস্বামী গ্রহণ করতে হয়। দ্রৌপদী তার পূর্ব্জন্মে পতি লাভের জন্য তপস্যা করছিলেন এমন সময় মহাদেব তাকে বর দিতে আসেন । দ্রৌপদী এ সময় পাঁচ বার "পতিং দেহি" বলেন যার অর্থ পতি দিন । তখন মহাদেব তথাস্তু বলেন । এজন্য পরবর্তী জন্মে তার পাঁচজন স্বামী হয় ।


##ইন্দ্রপ্রস্থে বসবাস সম্পাদনা


পাণ্ডবদের জীবিত থাকার সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর সিংহাসন নিয়ে সঙ্কট তৈরি হয় । ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের মৃত্যু হয়েছে ভেবে যুবরাজ পদবী দুর্যোধন পেয়েছিলেন । দুর্যোধন তার পদ ছাড়তে রাজি না হওয়ায়, ধৃতরাষ্ট্র তার নিজের পুত্রের কাছ থেকে কোন কিছু কেড়ে নিতে অসমর্থ হওয়ায় এবং দুর্যোধন ও শকুনির বারণাবত অগ্নিকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা ফাঁস হওয়ায় ভীষ্ম রাজ্যকে বিভাজিত করার উপদেশ দিলেন । কৌরবরা হস্তিনাপুর ও পাণ্ডবরা খাণ্ডবপ্রস্থের অধিকার নিলেন । অনুর্বর, সাপের প্রাচুর্য যুক্ত, গাছপালা ও ডোবা - নালায় পূর্ণ খাণ্ডবপ্রস্থ পাণ্ডবদের জন্য খুব ভালো কোন উপহার ছিল না । অবশ্য, কৃষ্ণ, বলরাম ও ময়দানব ( দানবকুলের বিশ্বকর্মা যিনি অর্জুনের কাছে খাণ্ডব দহনের সময় তার জীবন বাঁচানোর জন্য ঋনী ছিলেন ) এর সহায়তায় পাণ্ডবরা খাণ্ডবপ্রস্থকে ইন্দ্রপ্রস্থে পরিণত করেন । এর প্রধান আকর্ষণ ছিল সভাগৃহ যা ময়দানব তার মায়ার সাহায্যে অনবদ্য রূপে গড়েছিলেন ।[৭] শুধু তাই নয় পাণ্ডবরা রাজসূয় যজ্ঞ করার পর ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলের প্রভুত্ব পেয়েছিলেন ।[৮] প্রধান প্রধান শক্তি যেমন মদ্র, দ্বারকা, কাশী, মগধ ও পাঞ্চাল পাণ্ডবদের প্রভুত্ব মেনে নিয়েছিল । পাণ্ডবদের সমৃদ্ধি দেখে কৌরবরা ঈর্ষান্বিত হয়েছিলেন । এইখানে বসবাসকালেই নারদের নির্দেশে প্রতি পান্ডব এক বছর দ্রৌপদীর সাথে সহবাস করতো। পাণ্ডবগণের ঔরসে দ্রৌপদীর গর্ভে পাঁচ পুত্র জন্মায়।


##ইন্দ্রপ্রস্থে দুর্যোধন সম্পাদনা


ইন্দ্রপ্রস্থতে অধিকার লাভের পর পাণ্ডবরা দিগবিজয় করেন । এর পর যুধিষ্ঠির কৃষ্ণ এর পরামর্শমত রাজসূয় যজ্ঞ শুরু করেন এবং সকল রাজাকে নিমন্ত্রণ করেন । দুর্যোধনও সেই যজ্ঞে গিয়েছিলেন । তিনি পাণ্ডব্দের ঐশ্বর্য দেখে ঈর্ষাগ্রস্ত হন । একদিন তিনি মায়াসভায় ঘুরছিলেন এমন সময় স্ফটিকময় স্থানে জল আছে মনে করে পরিধেয় বস্ত্র টেনে তুললেন, পরে ভ্রম বুঝতে পেরে লজ্জায় বিষণ্ণ হলেন । আর এক স্থানে পদ্মশোভিত সরোবর ছিল, স্ফটিক নির্মিত মনে করে চলতে গিয়ে তিনি তাতে পড়ে গেলেন । ভৃত্যরা হেসে তাকে অন্য বস্ত্র এনে দিল । তিনি বস্ত্র পরিবর্তন করে এলে ভীমার্জুন প্রভৃতিও হাসলেন, দুর্যোধন ক্রোধে তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন না । অন্য এক স্থানে তিনি দ্বার আছে মনে করে স্ফটিকময় প্রাচীরের ভিতর দিয়ে যাবার সময় মাথায় আঘাত পেলেন । আর এক স্থানে কপাট আছে ভেবে ঠেলতে গিয়ে সম্মুখে পড়ে গেলেন এবং অন্যত্র দ্বার খোলা থাকলেও বদ্ধ আছে ভেবে ফিরে এলেন । এইরূপ নানা প্রকারে বিড়ম্বিত হয়ে তিনি অপ্রসন্ন মনে হস্তিনাপুরে ফিরে এলেন ।[৯]


এটি মহাভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পরিণতি লাভ করে । এই ঘটনার প্রভাবক ছিল দুর্যোধনের পাণ্ডবদের ও দ্রৌপদীকে নিগৃহীত করার বাসনা এবং তার অপমানের প্রতিশোধ নেওয়া । দুর্যোধন তার মিত্র কর্ণ, মাতুল শকুনি এবং ভাইদের নিয়ে পাণ্ডবদের হস্তিনাপুরে পাশা খেলাতে আনার ষড়যন্ত্র করলেন । প্রধান পরামর্শক শকুনি ছিলেন পাশাক্রীড়ায় নিপুণ । স্থির হল শকুনি যুধিষ্ঠিরের বিরুদ্ধে খেলবেন এবং যুদ্ধে যা জয় করা অসম্ভব তা জয় করবেন । খেলা এগোতেই যুধিষ্ঠির একে একে তার সমস্ত সম্পত্তি হারাতে লাগলেন । সব কিছু হারিয়ে তিনি ভাইদের পণ করলেন এবং তাদেরও হারালেন । শেষে যুধিষ্ঠির নিজেকে পণ রেখে নিজেকেও হারালেন । পাণ্ডবরা সকলে কৌরবদের দাস হলেন । এসময় শকুনি বললেন কিছু ধন অবশিষ্ট থাকতে নিজেকে হারালে পাপ হয় তিনি যেন দ্রৌপদীকে পণ রেখে নিজেকে মুক্ত করেন ।উদ্ধৃতি ত্রুটি: শুরুর <ref> ট্যাগ সঠিক নয় বা ভুল নামে রয়েছে যুধিষ্ঠির তখন দ্রৌপদীকে পণ রেখে তাকেও হারালেন । দ্রৌপদী প্রতিকামীর মুখে এই সংবাদ শুনে প্রশ্ন করলেন যুধিষ্ঠির আগে তাকে না নিজেকে হেরেছিলেন । দ্রৌপদীর প্রশ্ন শুনে দুর্যোধন তাকে সভায় উপস্থিত হয়ে তার প্রশ্ন করতে বললেন । প্রতিকামী আবার গেলে দ্রৌপদী বললেন ধর্মাত্মা নীতিমান সভাসদগণ তার কর্তব্য নির্দেশ করুন । তারা যা বলবেন তিনি তাই করবেন । প্রতিকামী পুনরায় সভায় এসে দ্রৌপদীর প্রশ্ন জানালে সবাই নীরব থাকলেন । দুর্যোধন পুনর্বার প্রতিকামীকে পাঠাতে চাইলে সে ভীত হয়ে বলল দ্রৌপদী না আসলে সে কী করবে । তখন দুর্যোধন তার ভাই দুঃশাসনকে আদেশ দিলেন দ্রৌপদীকে নিয়ে আনতে । দুঃশাসনকে দেখে দ্রৌপদী ব্যাকুল হয়ে ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রবধুদের কাছে চললেন কিন্তু দুঃশাসন তর্জন করে তার কেশ ধরলেন যা রাজসূয় যজ্ঞে মন্ত্রজলে সিঞ্চিত হয়েছিল ।উদ্ধৃতি ত্রুটি: শুরুর <ref> ট্যাগ সঠিক নয় বা ভুল নামে রয়েছে[১০] দ্রৌপদী বললেন তিনি একবস্ত্রা ও রজস্বলা তাকে এই অবস্থায় যেন সভায় না নেওয়া হয় কিন্তু দুঃশাসন তার কথা শুনলেন না । দ্রৌপদী সভায় এসে ভরতবংশের ধর্মকে ধিক্কার দিয়ে বিলাপ করতে লাগলেন । এসময় ভীষ্ম বললেন “ ভাগ্যবতী, ধর্মের গতি অতি সূক্ষ্ম আমি তোমার প্রশ্নের যথার্থ উত্তর দিতে পারছিনা । ” দ্রৌপদী আবারও নিজের বিজিত হবার উপর প্রশ্ন তুললেন । এমন সময় দুর্যোধনের এক ভাই বিকর্ণ সভাসদদের দ্রৌপদীর প্রশ্নের জবাব দিতে বলেন । তিনি বলেন দ্রৌপদী ধর্মানুসারে বিজিতা হননি কারণ তাকে পণ রাখার পূর্বে নিজেকে হারিয়েছিলেন তাছাড়া সকল পাণ্ডবই দ্রৌপদীর স্বামী একা যুধিষ্ঠির নন । এই কথা শুনে কর্ণ ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন যুধিষ্ঠির সর্বস্ব পণ করেছিলেন যার অন্তর্গত দ্রৌপদী; তিনি স্পষ্ট বাক্যে দ্রৌপদীকেও পণ রেখেছিলেন । পাণ্ডবরা তাতে আপত্তি করেননি । তিনি আরও বলেন স্ত্রীদের এক স্বামীই বেদবিহিত যেহেতু দ্রৌপদীর অনেক স্বামী তাই তিনি বেশ্যা । তিনি দুঃশাসনকে পাণ্ডব ও দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে আদেশ দিলেন ।[১১][১২] দ্রৌপদী তার স্বামীদের তাকে রক্ষা করতে অক্ষম দেখে বিষ্ণু, কৃষ্ণ, নর প্রভৃতি দেবতার স্তব করতে লাগলেন । এসময় কৃষ্ণ ধর্মরূপে অবতীর্ণ হয়ে অদৃশ্য হয়ে স্বয়ং বস্ত্ররূপে দ্রৌপদীকে আবৃত করতে লাগলেন । দুঃশাসনের আকর্ষণে নানা রঙের বস্ত্র নির্গত হতে থাকল । ভীম দুঃশাসনের রক্তপানের প্রতিজ্ঞা নিলেন । তখন দুঃশাসন ক্লান্ত ও লজ্জিত হয়ে বসে পড়লেন । সভায় দ্রৌপদীর বস্ত্র রাশীকৃত হল । এরপর দুর্যোধন তার ঊরু দেখিয়ে অপমান করলে ভীম যুদ্ধভূমিতে তার ঊরুভঙ্গের প্রতিজ্ঞা করলেন ।উদ্ধৃতি ত্রুটি: শুরুর <ref> ট্যাগ সঠিক নয় বা ভুল নামে রয়েছে[১৩] কিন্তু বস্ত্রহরণের আরও একটি কাহিনি রয়েছে। ‘শিব পুরাণ’ থেকে জানা যায়, দ্রৌপদী এই চরম অসম্মান থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন দুর্বাসা মুনির বরে। সেই কাহিনি অনুযায়ী, দুর্বাসার চিরবাস গঙ্গাবাহিত হয়ে অপমানিতা দ্রৌপদীর কাছে পৌঁছায়। দ্রৌপদী সেই বস্ত্র থেকে খানিকটা ছিঁড়ে নেন। দুর্বাসার বরে সেই ছিন্ন বস্ত্রখণ্ড অনন্ত বস্ত্রে পরিণত হয়।[১৪]


## জয়দ্রথ কর্তৃক দ্রৌপদীকে হরণের চেষ্টাসম্পাদনা


বনবাসের শেষ বছরে একদিন জয়দ্রথ কাম্যকবনে উপস্থিত হন । তিনি বিবাহ কামনায় শাল্বরাজ্যে যাচ্ছিলেন । তিনি কাম্যকবনে দ্রৌপদীকে দেখে মুগ্ধ হন । সে সময় পাণ্ডবরা ধৌম্য পুরোহিতকে দ্রৌপদীর পাহারায় রেখে শিকারে যান । জয়দ্রথ আশ্রমে আসলে দ্রৌপদী তাকে পাদ্য অর্ঘ্য দিয়ে সম্মান করেন কারণ তিনি দুঃশলার স্বামী ছিলেন । কিন্তু জয়দ্রথ তাকে বল্পূর্বক নিজের রথে তোলার চেষ্টা করলে দ্রৌপদী তাকে ধাক্কা দিয়ে ভূপাতিত করে সাহায্যের জন্য ধৌম্যকে ডাকতে থাকেন । ধৌম্য জয়দ্রথকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন । এসময় পাণ্ডবরা শিকার থেকে ফিরে এসে দ্রৌপদীর দাসীর মুখে সব কথা শুনে তাকে উদ্ধারের জন্য বের হন । ভীমকে দেখে জয়দ্রথ দ্রৌপদীকে রথ থেকে ফেলে দেন । ভীম জয়দ্রথের রথের পিছনে ধাওয়া করে তাকে ধরে ফেলেন । কিন্তু যুধিষ্ঠির ভীমকে জয়দ্রথকে হত্যা করতে নিষেধ করেন কারণ সে তাদের বোনের স্বামী । ভীম জয়দ্রথের মাথা ন্যাড়া করে শুধু পাঁচটি চূড়া রেখে দিলেন এবং বললেন সে যেন নিজেকে পাণ্ডবদের দাস বলে পরিচয় দেয় । জয়দ্রথ " তাই হবে " বললে ভীম তাকে ছেড়ে দেন ।


কীচক ও দ্রৌপদীসম্পাদনা


দ্বাদশবর্ষ বনবাস শেষে পাণ্ডবগণ ও দ্রৌপদী অজ্ঞাতবাসের জন্য বিরাট রাজার দেশ মৎসদেশে গিয়েছিলেন । দ্রৌপদী সেখানে বিরাটের স্ত্রী সুদেষ্ণার সৈরিন্ধ্রী হিসেবে ছিলেন । একবার বিরাটের শ্যালক কীচক দ্রৌপদীকে দেখে ফেলেন এবং মুগ্ধ হয়ে তার বোনের কাছে দ্রৌপদীকে প্রার্থনা করেন । তিনি দ্রৌপদীকে নিজের বাসনার কথা বললে দ্রৌপদী তাকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন পাঁচজন গন্ধর্ব তাকে রক্ষা করেন । কিন্তু কীচক তার লোভ ত্যাগ করতে পারে না । তাই সুদেষ্ণা একদিন সুরা আনবার জন্য দ্রৌপদীকে কীচকের ভবনে পাঠান এবং কীচক তাকে কাছে পেয়ে হাত ধরেন । এতে দ্রৌপদী ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বিরাটের সভার দিকে দৌড়াতে থাকেন । কীচক তার পিছ পিছন গিয়ে তাকে কেশাকর্ষন করে পদাঘাত করেন । দ্রৌপদী বিচার চাইলে বিরাট বিচার করেন না কারণ কীচক তার সেনাপতি ছিল । দ্রৌপদী ভীমকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য উত্তেজিত করেন । ভীম তাকে রাত্রিবেলায় কন্যাদের নৃত্যশালায় কীচককে নিয়ে যেতে বলেন । পরদিন দ্রৌপদীর কথায় কিচক তার সাথে মিলনের আশায় নৃত্যশালায় যান । কিন্তু ভীম সেখানে দ্রৌপদীর ছদ্মবেশে উপস্থিত ছিলেন । তিনি কীচককে দ্বন্দযুদ্ধে বধ করেন । এ সময় বৃহন্নলা রূপী অর্জুন তাদের দ্বন্দের শব্দ ঢাকার জন্য মৃদঙ্গ বাজিয়েছিলেন । পরদিন কীচকের ভাইয়েরা দ্রৌপদীকে মেরে ফেলার চেষ্টা করলে তারাও ভীমের হাতে নিহত হয় ।


কৃষ্ণের প্রতি অগাধ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও সমর্পণসম্পাদনা


দ্রৌপদীকে শ্রীকৃষ্ণ নিজের সখী ও ভগিনী মনে করতেন । কাশীদাসী মহাভারতে দ্রৌপদী বলেন -


তুমি অনাথের নাথ বলে সর্বজনে


চারি কর্মে আমি নাথ তোমার রক্ষণেসম্বন্ধে গৌরবে স্নেহে আর প্রভুপণেদাসী জ্ঞানে মোরে প্রভু রাখিবা চরণে


— কৃষ্ণের প্রতি দ্রৌপদী[১৩]


দ্রৌপদীর কাছে একবার দুর্যোধনের প্ররোচনায় ক্রোধী ঋষি দুর্বাসা তার অযুত শিষ্য সহ পাণ্ডবদের আশ্রমে উপস্থিত হলেন । তার পূর্বেই পঞ্চপাণ্ডব সহ দ্রৌপদী আহার করে ফেলেছিলেন । যুধিষ্ঠির ঋষিদের নদী থেকে স্নান করে আসতে বললেন । অন্নের কী আয়োজন হবে এই ভেবে দ্রৌপদী আকুল হয়ে কৃষ্ণের স্তব করে বললেন " হে দুঃখনাশন, তুমি এই অগতিদের গতি হও, দ্যূতসভায় দুঃশাসনের হাত থেকে যেমন আমাকে উদ্ধার করেছিলে সেই রূপ আজ এই সংকট থেকে আমায় ত্রাণ কর । " তখন কৃষ্ণ হঠাৎ উপস্থিত হয়ে বললেন তিনি খুব ক্ষুধার্ত । দ্রৌপদী তাকে শূন্য পাতিল দিলে তিনি দেখলেন তার পাশে সামান্য শাকান্ন লেগে আছে । তিনি তা খেয়ে বললেন " বিশ্বাত্মা যজ্ঞভোজী দেব তৃপ্তি লাভ করুন । " হঠাৎ পেট ভরে যাওয়ায় এবং পাণ্ডবরা হরির আশ্রিত জেনে দুর্বাসা তার শিষ্যদের নিয়ে পালিয়ে গেলেন ।উদ্ধৃতি ত্রুটি: শুরুর <ref> ট্যাগ সঠিক নয় বা ভুল নামে রয়েছে


মৃত্যুসম্পাদনা


পান্ডবরা এগোতেই দ্রৌপদী পড়ে যান।

মহাপ্রস্থানের পথে সবার আগে হরি পর্বতে দ্রৌপদীর মৃত্যু হয়। কারণ পতিপ্রাণা হলেও তিনি অর্জুনকে বেশি ভালবাসতেন ।

0 comments

Recent Posts

See All

Comentários


Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

lgbt-bangladesh.png
bottom of page