মন বুঝা বড় দায়
সাদিয়া আর রাকিবের প্রেম ছিল। বাসাও ছিল পাশাপাশি। স্কুল কলেজও ছিল একটাই। হঠাৎ করেই একদিন সাদিয়ার মনে হলো রাকিব ক্লাসলেস। সাদিয়া রাকিবকে ছ্যাকা দিয়ে অন্য ছেলের সাথে প্রেম করছে। ছেলের ডিএসএলআর ক্যামেরা আছে।
রাকিব এই অপমান সহ্য করতে পারল না। সে একটা ব্রান্ডের শোরুমে সেলসম্যানের চাকরি নিল। তিন মাসের বেতন দিয়ে সে একটা ডিসএআর কিনে ফেলল। চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাসার ছাদে মেয়েদের ডেকে এনে ডিএসএলআরে ছবি তুলে দিতে দিতে ভাবতে লাগল, পাশের বাসা থেকে সাদিয়া এসব দেখে অনুশোচনায় ভুগবে।
কীসের কী অনুশোচনা, রাকিবের ডিএসএলআরকে পাত্তাই দিল না সাদিয়া। বরং রয়ফ্রেন্ডকে ছেড়ে বাইকওয়ালা এক ছেলের সাথে ভাব জমালো। প্রেমও হয়ে গেল। সেই ছেলে প্রায় দিনই সাদিয়াকে বাসায় দিয়ে যায়। রাকিবের পিত্তি জ্বলে গেল। সে এবার ছয় মাস গাধার মত খেটে বাইকের টাকা জোগাড় করে চাকরি ছেড়ে দিল। বাইকে মেয়েদের নিয়ে রাকিব এলাকায় চক্কর দিতে লাগল। ব্যাপারটা সাদিয়ার চোখে পড়ল। রাকিব আর তার বফের ক্লাস সেইম হয়ে যাওয়াটা সে সহ্য করতে পারল না। সে বফকে ছেড়ে দিয়ে ভার্সিটির টিচারের সাথে প্রেম শুরু করল।
রাকিবের ব্যাপারটা চোখে লাগল। সাদিয়া অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে, আর রাকিব তখন মাস্টার্স ফাইনালে। পিঁপড়ার মত অধ্যবসায় নিয়ে পড়ালেখা করল রাকিব। ফাইনাল আর টিচার্স পরীক্ষায় উতরে গেল ভালভাবে। সাদিয়া তখন অনার্স ফাইনাল ইয়ারে। একদিন রাকিবকে তাদের ক্লাস নিতে দেখে মাথায় বাজ পড়ল। সে ফাইনাল দিয়ে ভার্সিটি ছাড়ল, সাথে প্রফেসর বফকেও৷
সাদিয়া বসে থাকার মেয়ে না। সে তখনি বিসিএস করা এক ভাইয়াকে পটিয়ে ফেলল। গলির মাথায় একদিন রাকিবের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। রাকিবের তো মাথা ঠিক নাই। সে এবার অন্যসব বারের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করল। বিসিএসটা সেবার হয়েই গেল।
বিসিএস হবার পরে রাকিব মিষ্টি নিয়ে সাদিয়াদের বাসায় গেল। সাদিয়া রাগে গজগজ করতে লাগল। রাকিব সাদিয়াকে বলল, 'দেখো সাদিয়া, যা হবার হইছে, আমি তোমাকে হিংসা করেছি, তুমিও আমাকে করেছ। আমরা এসব এখানেই বাদ দেই। আর বিসিএস করার কোন ইচ্ছাও আমার ছিল না। আমার ভিসা হয়ে যাবে শীঘ্রই, মোটামুটি ছয় মাসের মধ্যে আমি প্যারিস চলে যাবো।'
ঠিক দুই মাসের মাথায় রাকিব সাদিয়ার বিয়ের কার্ড হাতে পেল। নাহ সাদিয়া ক্লাসের দিক থেকে এবারো এগিয়ে গেল। ফ্রান্স প্রবাসী এক ভদ্রলোককে সে বিয়ে করতে যাচ্ছে।
বিয়ের দিন রাকিব স্টেজে গেল সাদিয়ার সাথে ছবি তুলতে। সাদিয়া রাকিবের দিকে তাকিয়ে বলল, 'কী বলছিলাম না তুমি ক্লাসলেস, আমি সবসময় ক্লাসের দিক থেকে এগিয়ে থাকবো।'
রাকিব সাদিয়ার জামাইর দিকে ইশারা করে বলল, 'ঐযে তোমার ক্লাস দেখা যাচ্ছে। টাক আর ভুড়ি ওয়ালা আঙ্কেল বিয়ে করতেছ। আর কয়মাস গেলেই দেশে আসার জন্য কান্নাকাটি শুরু করবা।
আর একটা কথা। আমার প্যারিস যাওয়ার কোন প্ল্যানই ছিল না। তোমার পাল্লায় পড়ে আমার ডিএসএলআর, বাইক, গাড়ি, পড়ালেখা, বিসিএস আর একঝাঁক গফ হইছে। এতকিছু ফালায় রেখে কোন পাগলে প্যারিসে যায়?
প্যারিস আমি যাবো, তবে ঘুরতে৷ আসলে আমাকে শহরটা ঘুরায় দেখাইয়ো।'
বলেই স্টেজ থেকে নেমে হাটতে লাগল রাকিব।
সাদিয়ার মন আমরা বুঝতে পারছি না। সাদিয়া তার টাকমাথা ভুঁড়িওয়ালা জামাইর দিকে তাকায়। সাদিয়া কী করবে? ক্লাস ভুলে স্টেজ থেকে নেমে দৌড়ে যেয়ে রাকিবের কাছে ক্ষমা চাইবে? আবার নতুন করে শুরু করবে? নাকি এই টাকমাথার জামাইকে মেনে নিবে?
Comments