ভুল মানুষ, ঠিক মানুষ ২য় পর্ব
আমি এই পর্যন্ত বলে থামলাম। অনু জিঙ্গাসু দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখগুলো বলছে থামলে কেন। “এর পর আর কিছু নেই অনু। আমি ঘটনাটাকে খুব একটা ভালোভাবে নিতে পারিনি। আমার কাছে আমার আবেগগুলো খুব সত্য ছিল। এভাবে এক লহমায় মিথ্যে হয়ে যাওয়াটা সহ্য করতে পারিনি বেশ কদিন। বড় আপা তো বাড়িতে এসেই ঘোষনা দিয়ে বসল সাত দিনের মাথায় আমাকে বিয়ে দেবে। আমি সেই প্রথম বড় আপার মুখের ওপর না বলে দিলাম। অমল পুরো ব্যাপারটা নিতে পারেনি। নীলাকে খুজে বের করবার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। পায় নি, ওরা হয়ত ওদের মতন সুখী হয়ে থেকেছে। অমল দিন দশেক পড়ে আমাকে জড়িয়ে কেদে ফেলেছিল। ওদের পেলে কি কি ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটাতো তাই বলে গেল সারা রাত। অপ্রকৃস্থের মতন বিহেব করল রাতটুকু। সকাল হলেই ওকে নিয়ে বেড়োলাম। শহর আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠছিলো তখন। গরম গরম জিলাপি মুখ পুড়ে বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে ওকে সব ভুলে যেতে বললাম। তারপরের দুবছর একা থেকেছি। কেন থেকেছি জানি না, অপেক্ষা ছিলো না কোনকিছুর। তারপর হুট করে তুমি চলে এলে। খানিকটা আপার জোরে, খানিকটা অস্বস্তি নিয়ে”।
“আমি নীলা আপাকে খুজে ধন্যবাদ দিয়ে আসবো”। অনু আমারে বুকে আঙুল ছোঁয়াতে ছোঁয়াতে বলল। “কেন? ধন্যবাদ কেন?” “বারে সেদিন বিয়ে থেকে না পালালে বুঝি আমি তোমাকে পেতাম”। “আমাকে পেয়ে তুমি খুশি তো অনু?” অনু আমার বুকে মুখ লুকিয়ে ফিসফিস করে বললো, “কেন তুমি বোঝনা?” “তোমার মনে পড়ে বাসর রাতে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলাম?” “হু! আমি তো তোমাকে দেখেই ভয়ে জড়োসড়ো, এত্তবড় একটা লোক। আমার পেটে প্রজাপতি উড়ছিলো, তার মাঝে আবার তোমার ক্ষমা। আমার তো আক্কেলগুড়ুম। বাবা আমার গলায় কোন পাগল ঝুলিয়ে দিল। আচ্ছা শোনো তুমি কিন্তু আমায় এখনো বলো নি কেন ক্ষমা চেয়েছো সেদিন?” আমি একটু হাসলাম। “আমার খুব করে মনে হচ্ছিলো আমি তোমায় ঠকাচ্ছি। আমার তোমাকে দেখে হাত কাঁপছে না। দু পা দুপায়ের সাথে বাড়ি খাচ্ছে না, অমলের ভাষায় হাঁটু খুলে যাচ্ছে না। বিয়ের আগে তোমার চোখদুটো আমায় সারা রাত জাগিয়ে রাখলো না। আমার তো এসব তোমার বেলায় হবার কথা ছিলো। আমার তোমার কাছে কত অভিযোগ করার ছিলো। একটা অভিযোগ পর্যন্ত গড়ে উঠলো না। আমার এই উথাল পাতাল আবেগ গুলো ভুল সময়ে ভুল মানুষের জন্য খরচ হয়ে গেছে অনু। আমি শুধু এই একটি কারনে নীলাকে কখনো ক্ষমা করব না, কখনো না”। আমার গলা বুজে এলো অনু কেঁদে কেঁদে আমার শার্ট ভিজিয়ে ফেললো। উথাল-পাথাল আদরে আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে যেতে বলল, তুমি শুধু আমার থেকো, আমার এই আবেগগুলো আমাদের দুজনের জন্যই যথেষ্ট, যথেষ্ট।
Comments