ভিকটিম ব্লেইমিং পোস্ট
.
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত একটি খবর ফেসবুকে বেশ ভাইরাল হয়েছে। ডাবল ফার্স্টকে রেখে, পিএইচডি করা প্রার্থীকে রেখে নাকি ক্লাসের দশম প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় অনেকে অবাক হয়েছেন; কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। আপনাদের জন্য বলতে চাই—
.
“আপনারা বদ্ধ উন্মাদ”
.
কারণ, আপনারা আশা করে বসে আছেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দিবে। সর্বশেষ ইতিহাসের পাতায় সে ঘটনা কবে ঘটেছে তা খুঁজে পাওয়াটা বেশ দুষ্কর। এটা শুধু ঢাবির সমস্যা না; পুরো বাংলাদেশের সিস্টেমই চলে উপরওয়ালার ফোন কলের উপর। মেধা এখানে হাস্যকর এক উপাদান।
.
অনেকেই ভাবেন ঢাবিতে ফার্স্ট হলেই টিচার হওয়া যায়। আপনারা বুকা। আমি ঢাবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়েছি। আমি সহ অন্তত পাঁচজনকে চিনি যারা আমার বিভাগে ফার্স্ট হয়েও টিচার হতে পারেনি। এদের অনেকেই এখন বেশ নামি-দামী জায়গায় পিএইচডি করছে। বিশ্বের অনেক ল্যাবেই এদের এখন দাম; দাম নেই বাংলাদেশে। সুতরাং, ফার্স্ট হওয়াটাই ঢাবির জন্য মুখ্য নয়।
.
ঢাবির ম্যাথ বিভাগের নিয়োগের সময় স্ট্যানফোর্ড আর ক্যামব্রিজের ডিগ্রিধারী এক বোকা-সোকা ভদ্রলোক আবেদন করেছিলো। তাকে নেয়া হয়নি। তার অপরাধ সে ঢাবির ছাত্র নয়। সুতরাং, আপনার ভালো রেজাল্ট আর অতি ভালো সার্টিফিকেটেরও তেমন দাম নেই। টিচার হতে হলে আপনাকে সঠিক দলের প্রভাবশালী সুপারভাইজারের সাথে মাস্টার্স করতে হবে। হার্ভার্ডের ডিগ্রীও ঢাবি পুছবে না। এটা গ্যাংস্টার লেভেলের থাগলাইফ।
.
অনেকেই বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণা করাটাই মূল কাজ। সেদিক থেকে কথা বলতে গেলে আমার প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয় তো লিস্টের তলানীতেও ঠেকে না। ঢাবির গবেষণার কথা বলতে গেলে সেই ব্রিটিশ আমলের সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কথাই বলতে হয়। এরপর থেকেই আমরা আস্তে আস্তে মলিন। ঢাবির গবেষণা পত্রিকাগুলো এতোটাই সাধা-সিধে এবং সোজা-সাপটা যে বাহিরের মানুষকে এই গবেষণা দেখালে অনেকেই হেসে ফেলে। ভারী ইম্প্যাক্ট রিসার্চ হবার মতো পরিস্থিতি ঢাবিতে নেই। আমাদের শিক্ষকেরা অনেকেই গবেষণা করেন প্রোমোশন পাবার আশায়। ইহা সম্ভবত বিশ্বের সেই বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে যে কোন মানের “n” সংখ্যক পত্রিকা প্রকাশ করতে পারলেই প্রফেসর হওয়া যায়। সুতরাং, “জদুর কানের ময়লার ওজন মদুর কানের ময়লা থেকে ভারী”— জাতীয় গবেষণা পত্রিকা ছাড়া আর তেমন কিছু আশা করাটা কি আমাদেরই বোকামী নয়?
.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে সন্দিহান হবার কোন কারণই নেই। কারণ, শিক্ষার মানটা অনুপস্থিত। হাতেগোনা যে কয়েকজন ভালো শিক্ষক আছেন সেটাকে আমাদের কপাল বলেই মেনে নিতে হবে। অধিকাংশ শিক্ষক ক্লাসে এসে পৃষ্ঠা দেখে পড়ে যান। আমার জনৈক শিক্ষিকা ক্লাসে নির্বিচারে ভুল পড়াতেন। সেটা ধরিয়ে দেয়ার পর উনি ইমো খেয়ে ক্লাস থেকে চলে যেতেন। তারপর আমাকে তার রুমে গিয়ে মাফ চাইতে হতো। কারণ, ভুল তো আমার! আমি কোন সাহসে শিক্ষকের ভুল ধরতে চাই? আমি কি তার থেকে বেশি জানতে পারি? ভাই, আপনারাই বলেন।
.
সুতরাং, এই ধরণের ফালতু খবর দেখে উত্তেজিত হয়ে নিজের মাথার উপর প্রেশার দিবেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোন দিনই আপনাকে বলে নাই যে, সে সবচেয়ে মেধাবী প্রার্থীকে নিবে। তাহলে ঢাবি কাকে নেয়?
.
উত্তরটা সহজ— “এই মুহুর্তে যাকে নিলে ক্ষমতাধারী দলের ভারসাম্য বিনষ্ট হয় না।” সেই ব্যক্তির সিজিপিএ, মেধাক্রম, গবেষণা পত্র কোন বিষয়ই না। ঢাবি একটি রাজনৈতিক সাম্যাবস্থায় থাকে। লা শাতেলীয় নীতি অনুসারে, সাম্যাবস্থা বিনষ্ট করার জন্য বাহ্যিক চাপ, তাপ, ঘনমাত্রা যোগ করা হলে তা ডানে-বামে সরে গিয়ে আবার সাম্যাবস্থায় ফেরৎ আসে।
.
দয়া করে আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে আলতু-ফালতু পত্রিকার প্রকাশিত হাস্যকর খবর নিয়ে গুজব রটনা করবেন না। ইহা একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। এখানে হলে হলে দল থাকে; শিক্ষকদের দল থাকে। দলের মিল না হলে আপনাকে ছাদ থেকেও ফেলে দিতে পারে। নিয়োগ না দেয়াটা তো আপনার সাত কপালের ভাগ্য! আর পড়াশোনা? গবেষণা? হ্যাঁ! ওইটাও হয়। সময় থাকলে
Comments