ভয়ংকর দিঘির মৃত্যু রহস্য
মা দিঘিতে একটি মানুষ ভেসে উঠেছে! তারাতাড়ি এসে দেখে যাও। -"কি সব ফালতু কথা বলছস রাসেল? দিঘিতে মানুষ আসবে কোথায় থেকে? হ্যাঁ মা তুমি বিশ্বাস না হলে দেখে যাও। কাজের সময় যাচ্ছে এখন আসছস দুষ্টুমি করতে.. যা গিয়ে দেখ তো তোর আপু গোসল করে উঠছে কি না? -"আপু তো অনেক আগেই গোসল করে চলে আসছে।
-"মা মা দেখো অনেক মানুষ চিল্লাচিল্লি করছে দিঘিতে একটি মানুষ ভেসে উঠেছে। এখন বিশ্বাস যাবে তো? রেহেনা বিবি এইবার একটু আক্রোশ হলো, গিয়ে দেখলো ১০/১২ বয়স হবে একটি ছেলে দিঘির মাঝখানে ভেসে রয়েছে!
সবাই উপরে দাঁড়িয়েই চিল্লাচিল্লি করছে, কেউ ছেলেটাকে তুলতে পানিতে নামছে না। আর বাড়িতে কোনো পুরুষও নেই যে ছেলেটিকে তুলবে। দুপুর বেলা সব পুরুষরা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত।
আহারে কোন মা'র জাদুটা জানি। -"রেহেনা বিবি পানিতে নেমে ছেলেটাকে বহু কষ্টের পর পাড়ে আনলো। সবাই ধরাধরি করে ছেলেটাকে উপরে এনে শোয়ালো। সবাই ভাবলো ছেলেটি মরে ভেসে উঠেছে।
আশেপাশের অনেক মানুষ চিল্লাচিল্লির আওয়াজ শুনে ছেলেটাকে দেখতে আসে।
-"কেউ বলছে এমন ছেলে তো আমাদের এই এলাকায় নেই। কোথায় থেকে আসলো ছেলেটি? আরেকজন বললো---মনে হয় রাতে ছেলেটিকে মেরে দিঘিতে ফেলে দিয়েছিলো এবং এখন লাশটি ভেসে উঠেছে।
"পাশে দাঁড়ানো একজন বললো-- মনে হয় 'মা' বকা দিয়েছিলো, অল্প বয়সের ছেলো তো মা'র সাথে রাগ করে হয়তো রাতে এসে দিঘিতে ঝাঁপ দিয়েছে।
নানানজন নানা রকম কথাবার্তা বলতে শুরু করলো।
ছেলেটির বুকের দিকে রেহেনা বিবির নজর যায়। দেখে বুক নাড়ছে, তার মানে নিশ্বাস ফেলছে, ছেলেটি বেঁচে আছে।
ছেলেটির পেটে অনেক পানি রয়েছে, পেটে চাপ দিয়ে পানি গুলো বের করলো। ছেলেটা কে নিয়ে শুকনো স্থানে শোয়ালো।
কিছুক্ষণ পর ছেলেটির জ্ঞান ফিরলো।
ছেলেটার জ্ঞান ফেরাতে উপস্থিত সবাই অনেক খুশি। সবচেয়ে বেশি খুশি রেহেনা বিবি। সময় মতো পানিতে নেমে কোনো এক মায়ের সন্তানকে বাঁচাতে পেরে।
ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলো-- বাবা তোমার বাড়ি কোথায়? আর দিঘিতেই বা ঝাঁপ দিলে কেনো? যদি একটা কিছু হয়ে যেত..?
ছেলেটি কিছুই বলে নি। ছেলেটি সবার দিকে তাকিয়ে রইলো এক পলকে। কিছুই বলছে না। "কাউকেই চিনতে পারছে না ছেলেটা। সবাইকে অচেনা অচেনা লাগছে।" রেহেনা বিবি বললো সবাই সড়ে যাও, হয়তো এক সাথে এত গুলো মানুষ জড়ো হওয়াতে ছেলেটা অনেক ভয় পেয়েছে। তাই হয়তো কারো কোনো কথার উত্তর দিতে চাচ্ছে না। আমি বরং তাকে নিয়ে খাবার খাবাই, দেখি পরে কোনো কিছু বলে কি না।
"পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে, তালুকদার বাড়ির দিঘিতে একটি ছেলে পাওয়া গিয়েছে। সে কারো সাথেই কথা বলছে না, আর কেউ তাকে চিনতেও পারছে না। ছিলেটা কার খুঁজে নিয়ে যাও।
দুইদিন পর এই সংবাদ শুনে পাশের বাড়ির অসুস্থ ৯০ বছরের এক বৃদ্ধ ছেলেটাকে দেখার জন্য তালুকদার বাড়িতে চলে আসলো।
"খবরটা শুনে উনার ভিতরে কেনো জানি একটা সন্দেহ সৃষ্টি হলো। দিঘিতে তো আজ ৭৫ বছর ধরে কোনো এমন ঘটনা ঘটে নি, তাহলে এই বাচ্চা টা কি করে ভেসে উঠলো! নিশ্চয়ই এটার কোনো রহস্য রয়েছে।"
-- রেহেনা বিবি কি ঘরে আছো? -"শুনলাম দিঘিতে একটি ছেলে পাওয়া গিয়েছে? কোথায় সেই ছেলেটি? দেখতে চলে আসলাম তোমার বাড়ি, হাঁটতে খুবই কষ্ট হয়েছে, তবুও বৃদ্ধ বয়সে এমন ঘটনা শুনলে কি আর বাড়িতে মন বসে থাকে।
-"রেহেনা বিবি-- আসেন চাচা ঘরে আসেন, বসেন। ছেলেটি তো এখন ঘুমাচ্ছে, আজ দুইদিন- ঘুম থেকে উঠে খেয়ে দেয়ে আবার ঘুমায়। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে ছেলেটি কোনো উত্তরই দিচ্ছে না। শুধু তাকিয়ে থাকে, মনে হচ্ছে অনেক ক্লান্ত। কিছু একটা বলতে চায়, কিন্তু বলে নি।
-- বৃদ্ধ চাচা ঘুমন্ত ছেলেটির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। যেন চোখ কোথায়ও ফিরাচ্ছে না। ছেলেটির গলায় একটি লকেট দেখতে ফেলো। প্রায় ১০ মিনিট তাকিয়ে থাকার পর বললো। -"রেহেনা বিবি আমি ছেলেটিকে চিনতে পেরেছি!
-- রেহেনা বিবি পাশের রুম থেকে এসে বললো, কি বলছেন চাচা! কিভাবে চিনেন আপনি..? হ্যাঁ... আমি চিনি, ওর নাম "জুরা"।
সে ফিরে এসেছে, এটা ভেবে নিতে পারছি না!
রেহেনা বিবি--ফিরে আসছে মানে? চাচা কিছুই বুঝলাম না আপনার কথা!
হ্যাঁ....মা, 'জুরা' ফিরে এসেছে।
"জুরার নানার বাড়ি পাঠান বাড়ি। জুরা আহসান পাঠানের নাতি। জুরা ছোট থেকেই নানার বাড়িতে থাকতো।"
১৭৪৫ সালের ঘটনা।
"তখন খুবই ভয়াবহ ছিলো এই দিঘিটি। জুরা দিঘিতে গোসল করার সময় তারা জুরা কে নিয়ে যায়।"
ঐ দিন জুরা সহ ওরা ৫ জন দিঘিতে ডুবডুবি করছিলো। ৩ জনকে মৃত পাওয়া গিয়েছিলো। একজন জীবিত ফিরে এসেছিলো। দুই দিন পর সে মারা যায়। আজ এত বছর পর জুরা ফিরে এসেছে, সত্যি খুবই অবাক হওয়ার বিষয়।
-'রেহেনা বিবি--- চাচা কি সব অজান্তা কথা বলছেন?
এত বছর পর কেউ জীবিত ফিরে আসবে কি করে?
" ও যদি জুরা হয়ে থাকে, জুরা রাতে দিঘিতে ঝাঁপ দিয়েছে,।ভাগ্য ক্রমে জুরা বেঁচে যায়, জুরা পানিতে ভেসে উঠে।"
বৃদ্ধ চাচা--- না রে মা বয়স হয়েছে ঠিকই কিন্তু এতটা স্মৃতি ভুলার মানুষ নয়। -- মা তুমি কি জুরার গলার লকেটির দিকে নজর দিয়েছো? -রেহেনা বিবি- হ্যাঁ....চাচা। কিন্তু এটা দ্বারা কি বুঝাতে চাচ্ছেন?
"-বৃদ্ধ চাচা---শুনো মা, এটা জুরার ছোট থাকা অবস্থায় ওর নানা একজন হাকিমের কাছ থেকে "পড়া লকেট" এনে জুরার গলায় দিয়েছিলো।
জুরাদের বাড়িতে এক ডায়রিয়া রোগ দেখা দিয়েছিলো। পুরো বাড়িটার অনেক মানুষই সেই ডায়রিয়ায় মরেই ছাপ। ডায়রিয়া রোগে জুরার বাবা কে ও ধরেছিলো। জুরার বাবাও মারা যায়। জুরার মা জুরা কে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে। সেই যাত্রায় জুরাকে ঐরোগে ধরতে পারে নি।
জুরার নানার বাড়ি ছিলো গাছগাছালি ও জঙ্গলে ভরা। জুরার মা'র শ্বাসের রোগ ছিলো। জুরার মা'র জন্মের পর থেকেই "আলগা'র আঁচড়" (জ্বিন ছিলো, তৎকালিক গ্রাম্য ভাষা) ছিলো। একদিন জুরার মা'র প্রচুর শ্বাস উঠে, চোখ মুখ অনেক লাল হয়ে যায়।
রাতেই জুরার মা মারা যায়।
জুরার কোনো ক্ষতি যাতে না হয়, সে করণে জুরার নানা এক হাকিমের কাছ থেকে গলার এই লকেট টি এনে জুরাকে পড়িয়ে দিয়েছিলো।
জুরা যখন আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলো। আমরা সবাই জুরাকে মেয়েদের লকেট পরে হাঁটে বলে দুষ্টুমি করে অনেক খেপাতাম। আমাদের কারনে, একদিন জুরা লকেটটি খুলে রাখে ঘরে, সেইদিনই জুরার সাথে একটি ঘটনা ঘটে।
জুরার পুরো শরীর লালচে বর্নের হয়ে পড়ে, এতে সবাই অনেক ভয় পায়। জুরার নানা জুরাকে সেই হাকিমের কাছে নিয়ে গেলে উনি বলে জুরাকে দেওয়া ছোটকালের সেই লকেটটি খোলার কারনে তার এমন হয়েছে। জুরাকে তার মা'র সাথে থাকা সেই আলগাটি আঁচড় করতে চেয়েছিলো।
তারপর থেকে আমরা আর জুরা কে মেয়েদের লকেট পরে ঘুরছে বলে খেপাই নি।
-"রেহেনা বিবি-- কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
চাচা সব কিছু বুঝতে পেরেছি। কিন্তু তখন কি এমন ঘটেছিলো এই দিঘিতে, যার ফলে এত বছর পর জুরা ফিরে এসেছে?
"বৃদ্ধ চাচা -- হ্যাঁ....মা, তা'হলে শুনো সেই দিন ঘটে যাওয়া দিঘির ঘটনা
গল্পটি চমৎকার ছিল
এরকম আরো ভালো ভালো গল্প শোনার জন্য আপনার নতুন নতুন পোস্টের অপেক্ষায় রইলাম
দারুন লিখেছেন দাদা
আপনার গল্পগুলো সত্যিই অসাধারণ দাদা
ভীষণ ভালো লাগলো গল্পটি পড়ে