বৃষ্টি বিলাস
স্যার, আসবো?
স্যার আমার দিকে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, আসো!
স্যার একটা কথা ছিলো।
বসো।
বসবো না স্যার। কথাটা বলেই চলে যাবো।
বসো। আই অর্ডার্ড ইউ টু সিট।
জ্বি স্যার বসছি।
হুম,এখন বলো কি বলতে চাও?
স্যার। বড় স্যার এসেছিলেন। তিনি বললেন, কথাটা আপনাকে বলে দিতে!
কি বলে দিতে বলেছে? সেটা তো বলবা!
আলালপুরে আপনাদের যে ফার্ম হাউজটা আছে সেখানে একবার যেতে হবে। স্যার আপনাকে যেতে বলেছেন,যদি একা না যান তবে অফিস থেকেও কাউকে নিয়ে যেতে পারেন।
আচ্ছা। বুজলাম। কিন্তু আলালপুরে কেন? কি করতে হবে সেটা কি ড্যাডি বলে নি?
স্যার, সেটা তো আমি ঠিক বলতে পারবো না। আপনি বরং স্যারকে একবার কল করে জেনে নিন।
ঠিক আছে,সেটা নয় জেনে নেওয়া যাবেখন।
আমি তবে যাই স্যার?
ওয়েট।
জ্বি স্যার।
তোমাকে আমি একটা কথা বলেছিলাম, মনে আছে কি?
সরি স্যার। কি যেন বলেছিলেন স্যার?আমার মনে নেই।
তোমাকে বলেছিলাম, তুমি আমাকে স্যার বলে ডাকবে না। তুমি স্যার বলে ডাকলে মনে হয় ষাঁড় বলে ডাকছো!
সরি, স্যার। তবে কি বলে ডাকবো? আপনার নাম ধরে তো ডাকতে পারবো না,আপনি আমাদের অফিসের বস। বসকে তো আর নাম ধরে ডাকা যায় না।
তুমি বরং আমাকে মাহতিম ভাই বলে ডেকো।
সরি স্যার। আমি আপনাকে ভাই বলেও ডাকতে পারবো না। শুনতে খারাপ লাগবে। অফিসের বসকে ভাই বলে ডাকতে দেখে অন্যান্য কর্মচারীরা মনে মনে হাসাহাসি করবে, নয়তো আমাকে অনেক বড় কিছু মনে করবে। এর চাইতে বরং আপনাকে আমি সাহেব বলে ডাকবো! এতে আপনাকে ষাঁড় বলে ডাকার সমস্যাটাও হবে না,আর অন্যরাও কিছু মনে করবে না! ঠিক বলেছি না সাহেব?
মাহতিম সাহেব খকখক করে হেসে উঠলেন। তারপর বললেন, তুমি মজা করছো নিশ্চয়ই!
জ্বি না স্যার!
এখনকার সময় কেউ সাহেব বলে ডাকে না। সেটা এখন অতীত হয়ে গেছে,রুপালী অতীত। আর সেটা এখন একমাত্র রূপালী সিনেমাগুলোতেই দেখা যায়। কয়েকজন কাজের লোক থাকে যারা মালিককে সবসময় সাহেব বলে ডাকাডাকি করে।
স্যার। আমাদের পাড়ার করিম চাচা রয়েছেন, যিনি এখনও তার বসকে সাহেব বলে ডাকেন।
মাহতিম সাহেব আমার দিকে একনভাবে তাকালেন যেন আমি কোনো খারাপ কথা বলে ফেলেছি। তার চোখের ভাষায় বুজা যাচ্ছে তিনি বলতে চাইছেন, এই কথাটা না বললেও হতো কিন্তু । সব কথা সবখানে বলতে নেই। আর চাকরি বাচাতে হলে উচিত কথা পরিত্যাগ করতে হয়।
স্যার। আমি কি এবার যাবো?
হ্যা যাও। আর হ্যা শুনো, কয়েক পিস কাপড়-চোপড় প্যাক করে নাও। আলালপুরে যেতে হবে।
স্যার আমাকেই কি যেতে হবে? যাবার মতো কি আর কেউ নেই?
আছে। কিন্তু তাদের কাউকেই নিবো না। আচ্ছা, তুমি আমাকে স্যার বলে ডাকো আবার স্যারের মুখে মুখে কথা বলো এটা কি ঠিক?
সরি স্যার। আর বলবো না।
মাহতিম স্যার আবারো মুচকি হাসি দিলেন। গুড বয়।
ওকে স্যার যাই।
ওয়েট ওয়েট ,রবি।
জ্বি স্যার।
আচ্ছা বলো তো। আমার সাথে এই সার্টটা কি স্যুট করেছে?
জ্বি স্যার বেশ ভালোভাবেই স্যুট করেছে।
তুমি তো সার্টের দিকে তাকালেই না,তবে বুজলে কি করে?
স্যার,আমি আগেই দেখে নিয়েছিলাম। আপনি তখন অফিসে প্রবেশ করছিলেন।
লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলে?
জ্বি স্যার।
তোমার কি ভয় নেই? স্যারের দিকে লুকিয়ে লুকিয়ে তাকিয়ে থাকো?
জ্বি স্যার। সেই কারণেই তো লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি।
কেন দেখো?
আপনাকে কোন দিন কেমন দেখতে লাগে তাই পরখ করতে দেখি।
আর লুকিয়ে লুকিয়ে দেখবে না। ওকে?
জ্বি স্যার,আর দেখবো না।
দেখতে তো মানা করি নাই। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে মানা করেছি। আমি যখন ডাকবো তখন আমার সমনে এসে একদম সামনা-সামনি দাড়িয়ে সামনে থেকে দেখবে। ওকে? আমি কোনো উত্তর দিলাম না। মাহতিম সাহেবের দিকে শেষ বারের মতো তাকিয়ে দেখে নিলাম। তার চোখ দুটো চকচক করছে।
উত্তর দিচ্ছো না যে!
আমি কি যেতে পারি স্যার?
ওয়েট।এখনও আমার কথার উত্তর দাওনি।
ঠিক আছে স্যার। আপনি যা করতে বলবেন তাই করবো!
আচ্ছা,ঠিক আছে যাও।
তিনি কথা শেষ করেই ল্যাপটপের মনিটরে মনোযোগ দিয়েছেন। তিনি চশমা ছাড়া চোখে স্পষ্ট দেখলেও কম্পিউটারে কাজ করার সময় চশমা ব্যবহার করেন। এতে নাকি চোখ বেশি সুরক্ষিত থাকে।
মাহতিম সাহেব আমাদের কোম্পানির বস রায়হান খানের একমাত্র ছেলে। রায়হান খান এখন বয়সের দিক দিয়ে ওভারডেটেড হয়ে যাচ্ছেন বলে মাহতিম সাহেবকে তার স্থানে বসানোর যোগ্য করে তুলছেন। তিনি প্রতিদিন অফিসে আসলেও দেড়-দু ঘন্টা অফিসে থেকেই বাড়ি ফিরে যান।
আমরা আলালপুর যাচ্ছি। গাড়ির সামনের সিটে মাহতিম স্যার বসে আছেন আর আমি বসেছি পিছনের সিটে। আমার আশে-পাশের সিটে আর কেউ না থাকাতে বেশ মজাই লাগছে। নিজের গাড়ি গাড়ি বলে মনে হচ্ছে,আর সামনে যে বসে আছে সে হলো আমার ড্রাইভার,ড্রাইভার মাহতিম। হঠাৎ করেই মাহতিম স্যার গাড়ি দাড় করালেন!
রবি! গাড়ি থেকে নামো!
আমি খুবই বিশ্মিত হলাম। তিনি কি ট্যালিপ্যাথি জানে নাকি, আমি মনে মনে যা বলছিলাম সে কি সব শুনতে পেলো নাকি! আমি গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম।
দরজা আটকাও। সামনে এসে বসো।
কেন স্যার?
যা বলছি তাই করো। এত কেনর উত্তর দেবার সময় নেই। আমি মাহতিম স্যারের পাশের সিটে বসলাম। তিনি এক হাত দিয়ে আমার সিট বেল্ট ঠিক করে দিলেন।
তুমি কেমন একটা নিরামিষ টাইপের ছেলে। যত সবজিই দেওয়া হোক না কেন,স্বাদ একই থাকে।
হয়তো।
এবার ভালো লাগছে না?
কি স্যার?
এই যে সামনের সিটে বসে আছো!
জ্বি স্যার। ভালো লাগছে!
আচ্ছা, তুমি না আমাকে সাহেব বলে ডাকবে বললে!
স্যার, আপনি তো এই নামটায় অনুমোদন দেননি তাই ডাকছি না।
ওহ। তাই তো। আচ্ছা, এখন আমার দিকে একটু ভালো করে তাকাও তো?
ওকে স্যার।
কি ব্যাপার,তোমার চোখ এত মিটমিট করছে কেন? আমার চোখের দিকে তাকাও, এক দৃষ্টিতে তাকাও!
স্যার, গাড়ি এক্সিডেইন্ট করবে তো!
করলে করুক।
কেন স্যার,আপনি কি সেটাই চান? আপনার কি ভয় করছে না?
না। ভয় করবে কেন? আমি তো একা নেই,তোমাকে সাথে নিয়ে এসেছি। ভয় পাবার কি আছে?
স্যার সেটা বলছি না। গাড়ি এক্সিডেন্ট করলে তো আপনার শরীরের ক্ষতি হবে,রক্ত বের হবে। মারা যেতেও পারেন। এই নিয়ে কি আপনার ভয় করছে না?
আমার তো একা হবে না।তোমারও তো হবে।
সেই কারণেই তো স্যার সামনে তাকিয়ে চালাতে বলছিলাম।
এবার এসব কথা রাখো। আমি যা বলছিলাম শুনো!
জ্বি স্যার!
আচ্ছা, তোমার ধারনা কি আমাকে চশমা পড়লে কি হাদা টাইপের মনে হয়?
জ্বি না স্যার।
তো?
স্যার, আপনাকে চশমা পড়লে বিজ্ঞানীদের মতো মনে হয়?
সিরিয়াসলি? কোন বিজ্ঞানীর মতো বলো তো! আমি তো কোনো বিজ্ঞানীকে চশমা পড়তে দেখিনি একমাত্র স্টিফেন হকিং ছাড়া।
বিজ্ঞানী আল-খোয়ারেজমি, আল- বিরুনি,ইবনে সিনা তারাও চশমা ব্যবহার করতেন স্যার!
কেন?
তারা প্রচুর বই লেখতেন বলে তাদের চোখের জোতি কমে গিয়েছিলো। তাই তারা চশমা পড়তেন!
তখন কি চশমা আবিষ্কৃত হয়েছিলো নাকি?
হয়তো হয়নি।
মানে, তবে তারা চশমা পড়লো কিভাবে!
সেটা জানি না। তবে আমার মনে হলো তাই বললাম!
সবুজে শ্যামলে ঘেরা একটি গ্রাম। খোলা প্রান্তরের চারিপাশে শুধু সবুজ রঙের ক্ষেত-খামার দেখা যাচ্ছে। ক্ষেতেরগুলির ঠিক মাঝখান দিয়ে সাপের মতো আঁকা-বাঁকা হয়ে একটা সরু রাস্তা চলে গেছে। রাস্তার এক পাশে কয়েকটা বড় বড় তালগাছ এক পায়ে দাড়িয়ে আছে। আর অন্যপাশ খালি। রাস্তাটির ঠিক মাঝখান বরাবর একটা মাঝারি টাইপের কালভার্ট(ছোট ব্রিজ) বসানো। তার নিচ দিয়ে পানি এ ক্ষেত থেকে ও ক্ষেতে যাতায়াত করে। ক্ষেতের পরেই মাহতিম স্যারদের ফার্মহাউজ অর্থ্যাৎ খামাড়বাড়ি। বিরাট জায়গা নিয়ে ফল বাগান করা হয়েছে, নানারকমের ফল। আর তারই এক পাশে বিশাল উঠানযুক্ত একটি বাগানবাড়ি। মেঝে পাঁকা করা বারন্দাযুক্ত করোগেটেড টিনের তৈরি দুইটি লাগোয়া চৌচলা ঘর। ঘরের সামনেই কয়েক ধরনের ফুল গাছ। থরে বিথরে সাদা সাদা বেলি ফুলও ফুটে আছে সেখানে। তার সাথেই একটা মাঝারি সাইজের পেয়ারা গাছ। তাতে কয়েক জোড়া ছোট ছোট পেয়ারাও ঝুলে আছে। বাড়িটার আরেকপাশেই একটা বিশাল পুকুর। শান বাধানো ঘাট, পুকুরে একদম পরিষ্কার স্বচ্ছ জল। তাতে প্রাকৃতিকভাবে কিছু মাছ চাষ করা হয়। পুকুরটার অন্য পাশে একটি বিশাল গরুর খামার। দুজন রাখাল গরু পালনের কাজেই সর্বদা নিয়োজিত আছে। এই পুকুর থেকেই গরুদের খাবার পানির ব্যবস্থা করা হয়। পুকুরের পানি গরুর স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
মাহতিম স্যার আর আমি বাগান যুক্ত খামাড়-বাড়িতে প্রবেশ করলাম। একজন বয়স্ক লোক বাগানবাড়ির দায়িত্বে ছিলেন, তবে আজ তার শরীর অসুস্থ থাকায় সে আসেনি তার বদলে তার ছেলেকে পাঠিয়েছে। ছেলেটির নাম মধু, তবে সে মোটেও মধুর মতো নয় বরং দেখতে কালোজিরার মতো একদম কুচকুচে কালো। আমাদের দেখতে পেয়েই মধু ছোটাছোটি করতে লাগলো। তাকে দেখে প্রচুর ব্যস্ত একটি মানুষ মনে হচ্ছে। সে এক মুহুর্তেই আমাদের লাগেজগুলো নামিয়ে ঘরে রেখে আসলো।
সে আমাদের সাথে একটা কথাও বললো না,এমনকি আমাদের সামনে এসে দাড়ালোও না। তার পরিবর্তে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা এসে আমাদের সাথে কথা বলতে লাগলো। মাহতিম স্যারকে তার জন্য বরাদ্দ করা রুমটিতে রেখে আমি অন্য রুমে চলে আসলাম। তবে একটুও বিশ্রাম নিতে পারলাম না। মুহুর্তেই মাহতিম স্যারের ডাক পড়লো।
জানো রবি, ড্যাডি আমাকে এখানে কেন পাঠিয়েছে?
জ্বি না স্যার!
এটা হচ্ছে তার এক ধরনের মৌনশাস্তি। তিনি মানুষকে শাস্তি দিতে পছন্দ করেন।
আপনাকেও কি শাস্তি দিচ্ছেন?
হ্যা। আমি গ্রামীনজীবন একদমই পছন্দ করি না, তাই সে আমাকে গ্রামে পাঠিয়েই শাস্তি দিচ্ছেন। এছাড়া বিশেষ কোনো কারণই নেই।
স্যার, আপনি এখানে কতদিন থাকবেন? অর্থ্যাৎ আপনার শাস্তির মেয়াদ কতদিন?
সিউর নেই। ভালো না লাগলে আজও চলে যেতে পারি।
স্যার, সামিরা ম্যামকে কি ফোন করে ডেকে নিবো?
কেন?
যাতে করে আপনার ভালো লাগে। গ্রামীণ জীবনে বোর হয়ে না পড়েন।
দরকার নেই। ও আসলে যতটুকু ভালো লাগছে সেটুকুও লাগবে না।এখানে এসে আমার মোটেও খারাপ লাগছে না। বরং বেশ ভালো লাগছে! কত সুন্দর-শান্ত পরিবেশ, কতটা ফ্রেশ বাতাস। ফুলের গন্ধ,পাখির গান। অপূর্ব।
সামিরা ম্যাম আসলে হয়তো আরো ভালো লাগতো!
একদমই না। ওর কথাটা উঠছে কেন রবি? আর তুমি ওকে ম্যাম বলেই ডাকছো বা কেন?
স্যার,বড় স্যার বলেছেন ওনার সাথেই নাকি আপনার বিয়ে দিবেন। তবে তো তিনি আমাদের ম্যামই হয়,তাই না?
বিয়ে তো হয়নি এখোনো?
জ্বি না।
তবে ,ম্যামও ডাকবে না! ওকে!
আচ্ছা স্যার।
বিকেলে ঘুরতে যাবো। এখন গোসল করবো, দেখোতো পানি আছে কোথায়?
স্যার, ডোবায় গোসল করবেন?
ডোবায়! নোংরা পানি না তে?
জ্বি না স্যার।
বেশ বড় সাইজের একটি পুকুর। সূর্যের আলোয় পানি চিকচিক করছে। পানির উপরিতলটা খুবই গরম হয়ে গিয়েছে। মাহতিম স্যার পানিতে নেমেছেন। তার লুঙ্গিটা বার বার করে পানিতে ভেসে উঠছে।সে এই নিয়ে বেশ বিব্রত হয়ে আছে।
স্যার,লুঙ্গি কাচা দিয়ে পড়েন।
কাচা দেয় কিভাবে?
লুঙ্গিটা ছোট করে কিছু অংশ বাড়িয়ে দুইপায়ের মাঝ দিয়ে নিয়ে পিছনে গেথে ফেলুন।
ওকে। ট্রাই করছি!
রবি,হচ্ছে নাতো! তুমি পড়িয়ে দাও তো,প্লিজ।
জ্বি স্যার।
রাতে খাবার খাওয়ার পরে বাইরে এসে বসে রয়েছি। মাহতিম স্যারও বাইরে এসেছেন। তার এই গ্রামটা খুবই ভালো লেগেছে। বিকেলে গ্রাম ভ্রমণটা তার আরো ভালো লেগেছে। এখন বাইরের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিটাও ভালো লাগছে!
কোথায় যাচ্ছো রবি?
বৃষ্টিতে ভিজবো, তাই ড্রেস খুলতে যাচ্ছি স্যার।
বৃষ্টিতে ভিজবে কেন? গরম লাগছে?
জ্বি না স্যার। এটা হচ্ছে বৎসরের প্রথম বৃষ্টি, আর এই বৃষ্টিতে ভিজলে নাকি অনেক পূণ্য হয়। আফ্রিকার উপজাতিরা এই সময় নগ্ন হয়ে স্নান করে থাকে,তারা বিশ্বাস করে প্রথম বৃষ্টিতে ভিজলে নাকি জীবনের সব পাপ ধুয়ে যায়।
তুমিও কি নগ্ন হয়ে স্নান করবে নাকি?
জ্বি স্যার।
তুমি কি এইসব কুসংস্কারে বিশ্বাস করো নাকি?
যে সংস্কার মানুষের ক্ষতি করে তাকে কুসংস্কার বলে।কিন্তু এই বৃষ্টি স্নানে তো কারো কোনো ক্ষতি হচ্ছে না স্যার। আপনি কি হুমায়ুন আহমেদের হিমু গল্পটা পড়েছেন? সেখানে একজন লোক বেলি ফুলের মালা গলায় দিয়ে নগ্ন হয়ে বৃষ্টিতে স্নান করেছিলো,এরপরেই তার ভেতর একটা আধ্যত্মিকতা চলে আসে।
তুমি কি তাই চাও নাকি!
খারাপ কোথায় স্যার। যদি হই তো ভালো হবে!
আমরা বৃষ্টিতে ভিজছি। আমার পরনে একটা সর্ট প্যান্ট। মাহতিম স্যারের শরীরে সব পোশাকই রয়েছে। বৃষ্টির গতি বৃদ্ধি পেয়েছে! আমরা ভিজে একদম একাকার হয়ে গেছি। আমার গলায় একটা বেলি ফুলেে মালা, বৃষ্টির ভাব দেখেই মালাটা বানিয়ে রেখেছিলাম।.
রবি! আমাকে লুঙ্গি পড়লে কি গ্রাম্য ছেলেদের মতো মনে হয়?
জ্বি না স্যার।
কেন?
যারা গ্রামের ছেলে তাদের চেহারাতেই লেখা থাকে। পোশাকে কিছু যায় আসে না। আপনাদের গোয়ালের রাখাল ছেলেটাকে যদি কোর্ট টাই পড়িয়ে দেন তারপরেও তাকে রাখাল বলেই মনে হবে। এটা হচ্ছে মানুষের পার্সোনালিটির ব্যাপার।
একটা কথা বলবো রবি?
জ্বি স্যার বলুন!
না থাক।
ওকে স্যার। স্যার আপনার ঠান্ডা লাগতে পারে,চলেন ঘরে যাই!
না যাবো না,তুমি যাও।
জ্বি না স্যার। আপনাকে একা রেখে যাবো না।
মাহতিম স্যার শুয়ে আছেন।জ্বরে তার গা পুড়ে যাচ্ছে। আমি তার মাথায় জলপট্টি দিয়ে জ্বর কমানোর চেষ্টা করছি। কাজের মহিলাটা কিছুক্ষন বসে থেকেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। বয়স্ক মানুষ বলে ডেকে তুলতেও মন চাচ্ছে না।তাই আমিই জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছি। একটা প্যারাসিটামল খাওয়াতে পারলে ভালো হত। জ্বর কিছুটা হলেও কমতো।গ্রামে ভালো কোনো ডাক্তার খানা নেই। আর যেটা আছে সেটাও বেশ দূরে। এত রাতে কোনো ডাক্তারই পাওয়া যাবে না।
সকালের সূর্যের আলোয় মাহতিম স্যারের ঘুম ভেঙে গিয়েছে। তার শরীরে একফোটাও জ্বর নেই। সকালের আলো পেয়েই হয়তো সব জ্বর চলে গিয়েছে।
রবি। এই রবি!
আমি ঘুম থেকে উঠে পড়লাম। এতক্ষন তার পাশেই খাটে হেলান দিয়ে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি টেরও পাইনি!
রাতে কি আমার জ্বর এসেছিলো?
জ্বি স্যার। সামান্য জ্বরই ছিলো।
বেশ তো।
কাজের মহিলাটা খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে। হয়তো খাবার তৈরি করছে।
তুমি কি একাই থাকো?
জ্বি স্যার। একা না থাকলে তো আপনার সাথে আসতে সমস্যা হতো।
আচ্ছা, তোমার ধারনা কি তোমার সঙ্গে থাকতে কি আমার ভালো লাগছে?
হয়তো না।
কেন?
জানি না স্যার। আপনি প্রশ্ন করলেন তাই উত্তর দিলাম।
সকালের খাবার খেয়ে দীঘিরপাড়ে বসে আছি। দীঘির একপাশে কিছু বাঁশগাছ রয়েছে। আর সেখান থেকেই বাঁশপাতা ঝড়ছে। প্রথমে সোজা হয়ে পড়ে, ঘুরঘুর করে ঘুরে পড়ছে। দীঘের মাঝে একটি লাল পদ্ম,যদি একটি নৌকা থাকতো সেটা ধরতে যেতাম। হঠাৎ দীঘির জলে কারো ছায়া ফুটে উঠলো। বাঁশ পাতা পড়াতে সেই ছায়াটা অস্পষ্ট হয়ে উঠছে। ঠিক বোঝা যাচ্ছে না, কে!
আমি সামনের দিকে তাকালাম। মাহতিম স্যার দাড়িয়ে আছেন।
দীঘির জলে কার ছায়া গো?
জানি না স্যার। হয়তো আপনারই হবে!স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না।
পদ্মটা খুব সুন্দর লাগছে তাই না?
জ্বি স্যার।
ওইখানে কি দেখছো? আমার হাতে দেখো!
আপনার হাতেও পদ্ম? কোথায় থেকে আনলেন?
এনেছিলাম একখান থেকে।
ওহ।
রবি তোমার ধারনা কি, আমি মনের কথা পড়তে পারি? আই মিন ট্যালিপ্যাথি পাড়ি?
জ্বি স্যার।
তার মানে আমি যা ভেবেছিলাম সবই সত্যিই!
জানি না স্যার!
তোমাকে যখন নিয়ে আসতে চাইছিলাম, তখন তুমি বেশ উৎফুল্ল ছিলে! কিন্তু মুখে তুমি নিষেধ করেছিলে!
জ্বি স্যার।
গাড়ির সামনের সিটে বসার পরে তোমার নাচতে মন চাইছিলো, তাই না?
জ্বি স্যার।
তুমি কাল সামিরাকে কল দিতে বললেও কল না দিয়েই বলতে সে আসতে পারবে না। এম আই রাইট?
জ্বি স্যার!
এসবের কারণটাকি জানতে পারি? তুমি আমায় বশ করে রাখতে চাইছো,ঠিক বলেছি!
জ্বি স্যার!
তুমি চাইছো যে তোমার চাকরির পজিশনটা যেন আরো আপ করি, তাই কাল সারা রাতভর জেগে জেগে আমায় সেবা করেছো?
জ্বি স্যার!
তুমি কি আমায় ভালোবাসো?
আমি অবাক হয়ে গেলম। কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে এলো! তাই কিছুই বললাম না।
এতক্ষন তুমি যা যা বলেছো তার সবটাই মিথ্যে ছিলো। আর এখন যেটা বলছো না সেটাই সত্যি। এম আই রাইট?
স্যারের গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। বাড়ি ফিরতে হবে। খুব জলদী ফিরতে পারলে ভালো হয়। বাড়ি ফিরেই প্রথমে একটা লিভিং লেটার লিখতে হবে,তারপর সেটা অফিসে পোস্ট করে দিতে হবে। অনেক কাজ বাকি আছে। নতুন একটা কাজের এপ্লাইও করতে হবে। হয়তো সহজেই পাবো না, কিন্তু করতে তো হবেই।
সরু রাস্তার মাঝখানে একটা কালভার্ট ছিলো, সেখানে এসেই গাড়িখানা থামলো। বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আমি স্যারের পাশেই বসে আছি। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছেন।
রবি,গাড়ি থেকে নামো!
বৃষ্টি হচ্ছে তো স্যার। একটু পরে নামলে হয় না। এখোনো তো অনেকটা পথ বাকি! ভিজে চুপসে যাবো!
মাহতিম স্যারও গাড়ি থেকে নেমে গেলেন। তিনি হয়তো কাল রাতের জ্বরের কথা ভুলে গেছেন। তিনি আমার হাত ধরেও টেনে নামালেন! উরু বাতাসের কারণে বৃষ্টির ফোটারাও তীর্যকভাবে বেঁকে বেঁকে পড়ছে। ভারী বৃষ্টির কারণে একটুতেই ভিজে চুপসে উঠেছি।
স্যার আপনার তো আবারো জ্বর আসবে।
সমস্যা নাই, তুমি আছো তো!
আমি তো ডাক্তার নই স্যার।
সমস্যা নাই। তুমি থাকলেই হবে,ডাক্তারের দরকার নেই।
কেন স্যার!
ওই যে দেখছো একটা ঘুঘু পাখি বসে আছে।কেমন ঝুবুথুবু হয়ে। ওদের কি ডাক্তারের দরকার আছে?
আপনি তো আর পাখি না স্যার।
রবি। তুমি তো জানো, সমুদ্রে হাজারও ঢেউ থাকে। কিন্তু কিছু ঢেউ তীরে পৌছাবার আগেই বিলীন হয়ে যায়।
জ্বি স্যার।
আমিও হচ্ছি সেই ঢেউ,যে কিনা তীরের নাগাল পাবে না।সমুদ্রেই বিলীন হয়ে যাবে। তাই আমাদের এখানেই থেমে যাওয়া উচিত! তুমি যদি চাও তো আমার সাথে ফিরে যেতে পারো,আর নয়তো এখান থেকেই নিজের পথ ধরতে পারো।
জ্বি স্যার।
তুমি কি তবে চলে যাচ্ছো?
জ্বি স্যার! আমি চলে যাবো! আপনি বৃষ্টিতে ভিজবেন না স্যার, জ্বর এসে পড়বে। আর এখানে কোনো ডাক্তারও নেই স্যার।
বৃষ্টির গতি বেড়েছে। হাওয়ার গতিও বেড়েছে। সরু রাস্তাটি ধরে বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছি। কেননা আমি সব অধিকার হারিয়ে ফেলেছি। কেউ একজন পিছু থেকে হাত টেনে ধরলো।
রবি! আমার জ্বর আসলে যে ডাক্তারের প্রয়োজন পড়বে।ডাক্তার পাবো কোথায়?
জ্বি স্যার।আমি শহরে গিয়ে আপনার জন্য ডাক্তার পাঠিয়ে দিবো।
আমার যে ওই ডাক্তারে চলবে না।
স্যার আমাকে জরিয়ে ধরলেন। স্যারের চোখ থেকে গলগল করে পানি পড়ছে,কিন্তু বৃষ্টির জলে সে জল দেখা যাচ্ছে না।
তোমার কি ধারনা, এই বৃষ্টিতে তোমাকে আমি একা একাই ছেড়ে দিবো? ইমপসিবল! কখোনোই না। আমি তোমাকে ভালোবাসি,রবি! প্লিজ যেও না।
স্যার সরু রাস্তাটি দিয়ে দৌড়াচ্ছেন, আর তার হাতে আমার হাত রাখা। আমিও তার সাথে দৌড়াচ্ছি! বৃষ্টি বেড়েছে। চারিদিকের ধানক্ষেতগুলো পানিতে চইচই করছে। আমাদের গাড়িটা এখোনো ব্রিজের উপর দাড়িয়ে।
শুয়োরের বচ্চা তোরাই, পুটকি মারতে মারতে শালা স্যারের পুটকিও চুদ্দতাসস।। খানকি শালা এতো এতো মানুষ মরে তুই মরস না কে? তোদের হায়া নাই ঠিক আছে কিন্তু তোদের কলিজ্বা দেখলে তো শরীরে আগুন জলে, ৯৫% মুসলমানদের দেশে তোরা কিভাবে এইসব লেখার সাহস পাস। আমার খালি ক্বিরিমিরি করে তর পুটকিদিয়া গরম রড ডুকাইবার লায়।।।।।