বাংলাদেশের হিন্দুদের অর্থনৈতিক অবস্থান ( পূর্বে ও বর্তমান )
বাংলাদেশের ৩ জন অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ গোলাম কবীর, মোজাফফর আহমেদ ও রেহমান সোবহান পাকিস্তান আমলে পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের অর্থনৈতিক অবস্থান নিয়ে যা লিখেছেন তাতে দেখানো হয়েছে, দেশ বিভাগের আগে বাংলাদেশের প্রতিটি শহরের ৮৫ শতাংশ দালান কোঠা ও সম্পত্তির মালিক ছিল হিন্দুরা। আর শহুরে জনসংখ্যার ৬০ শতাংশই ছিল হিন্দু। ঢাকা ও চট্টগ্রামে নয়টি সুতাকলসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিল্প, ২টি গ্লাস ফ্যাক্টরি, ৪টি ম্যাচ ফ্যাক্টরি, একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরির মালিক ছিলো হিন্দুরা। ব্যাংকিং ব্যবসাতেও ছিলো উল্লেখযোগ্য মালিকানা। তারা দেখান ১৬৫ সাল পর্যন্ত ওকালতি, চিকিৎসা , শিক্ষকতা ও শিল্পে ছিলো হিন্দু ব্যবসায়ীদের আধিপত্য। ১৯৫৯ সালেও হিন্দুদের শিল্প সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩৩ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা তাদের বইয়ে দেখান, শত্রু সম্পত্তি আইনের পর হিন্দুরা কার্যত অর্থনীতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে হয়। বাংলাদেশে হিন্দুদের অবস্থার কি আসলে উন্নতি হয়েছে এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ আর এম দেব নাথ বাংলাদেশের ধর্মীয় সমাজ ইতিহাস ও বিবর্তন নামের বইয়ে কিছু তথ্য দেন। তিনি বিজিএমইইর সদস্য তালিকা থেকে একটি হিসাব দিয়ে দেখান গার্মেন্ট ব্যবসায় মোট ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সংখ্যা ৬৭ জন। যা মোট মালিকদের ২ দশমিক ৫ শতাংশ। এই এসোসিয়েশনের পরিচালনা পরিষদে কখনোই কোন হিন্দু নেই। ব্যাংকের ক্ষেত্রে দেখান, ২০০২ সালের ২২ টি বেসরকারি ব্যাংকের ৩৫০ জন পরিচালকের মধ্যে ৫ জন হিন্দু। ফেডারেশন ও অব চেম্বার এন্ড ইন্ডাস্ট্রি ও ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের ১৮৯টি চেম্বার ও ট্রেড এসোসিয়েশনের একটির প্রধান হিন্দু। সেটি জুয়েলারি মালিক সমিতি। শেয়ার বাজারে যেসব কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা হয় তার একটিরও নিয়ন্ত্রণ বা মালিকানা হিন্দুদের নয়। বাংলাদেশের বড় শপিং কমপ্লেক্সের একটিরও মালিক হিন্দুরা নয়।
এরপরে দেন চাকরির হিসাব, তিনি দেখান কেরাণি থেকে অফিসার পর্যন্ত হিন্দু চাকরিজীবীর সংখ্যা ৩ শতাংশ। ২০০১ সালের বিসিএস পরীক্ষার ফলাফল দিয়ে দেখান, ২০০৩ জন বিসিএস কর্মকর্তার মধ্যে হিন্দু কর্মকর্তা নেয়া হয়েছে ২১৯ জন। দেশের ৩০টি রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থার প্রধান কখনো কোন হিন্দু হয়নি। উকিলের মধ্যে ঢাকা বারের ৭৫ জন আজীবন সদস্যর মধ্যে হিন্দু মাত্র ২জন। সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের ২০১৯ সালের কমিটিতে হিন্দু সদস্য ১জন। ২০০১ সালে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ছিলো ৭০০ জন। এরমধ্যে হিন্দু ছিলেন ৭৮ জন। শিক্ষকতায় ২০০২ সালের হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৯১জন শিক্ষকের মধ্যে হিন্দু শিক্ষক হলেন ৫৮ জন। ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রধান ১৫টি পত্রিকার সম্পাদকদের মধ্যে ১ জন হিন্দু।
Comments