top of page
Writer's pictureJust Another Bangladeshi

বৈদিক ধর্ম অতুলনীয়


লেখক– স্বামী চৌধুরী চরণ সিংহ (প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, ভারত)

[চৌধুরী চরণ সিংহ ছিলেন ভারতের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী। তিনি রাজনীতিতে তৎকালীন কংগ্রেসের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং ধর্মীয় মতাদর্শে আর্যসমাজের অনুসারী ছিলেন। এক দীপাবলিতে তাঁর আর্যসমাজ সম্পর্কিত এই লেখাটি "আত্ম-শুদ্ধি-পথ" নামক মাসিক পত্রিকা থেকে সংগ্রহ করে অনুবাদ করে দেওয়া হলো]


আমি যেখানে রাজনীতি ক্ষেত্রে মহাত্মা গান্ধীকে নিজের গুরু অথবা প্রেরক মান্য করি, সেখানে ধার্মিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে আমাকে সবচেয়ে অধিক প্রেরণা মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী দিয়েছেন। এই দুই বিভূতিদের দ্বারা প্রেরণা প্রাপ্ত করে আমি ধার্মিক ও রাজনীতিক ক্ষেত্রে পদার্পণ করেছিলাম। এক দিকে আর্য সমাজের মঞ্চ থেকে হিন্দু সমাজে ব্যাপ্ত কুরীতিসমূহের বিরুদ্ধ আমি সক্রিয় ছিলাম, অপরদিকে কংগ্রেসের কার্যকর্তা রূপে ভারতের স্বাধীনতার যজ্ঞে আমি যথাশক্তি আহুতি অর্পণের প্রয়াস করেছিলাম।

"মঙ্গলাচরণ স্বদেশী, স্বভাষা ও স্বধর্মের গৌরব"

ছাত্র জীবনে, প্রায় ১৯-২০ বছর বয়সে আমি স্বামী সত্যানন্দ লিখিত মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর জীবনী পড়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিলো যে, অনেক সময়ের পর ভারতে সম্পূর্ণ মানবীয় গুণ দ্বারা যুক্ত এক তেজস্বী বিভূতি মহর্ষির রূপে প্রকট হয়েছেন। তাঁর জীবনের প্রত্যেক ঘটনা আমায় প্রভাবিত করেছে, প্রেরণা দিয়েছে। স্বধর্ম (বৈদিক ধর্ম), স্বভাষা, স্বরাষ্ট্র, ঐক্যতা, সকল ভাবনার মাধ্যমে ওতপ্রোত ছিলো মহর্ষির জীবন। রাষ্ট্রীয়তার ভাবনা তো যেন ওনার শিরায় শিরায় প্রবাহিত হয়েছিলো। এই সব গুণের সাথে তেজস্বিতা তাঁর জীবনের বিশেষ গুণ ছিলো। এজন্য আর্য সমাজের নিয়মে সত্যের গ্রহণ এবং অসত্যকে তাৎক্ষণিক ত্যাগ করে দেওয়াকে উনি প্রাধান্য দিয়েছিলেন। মহর্ষি দয়ানন্দের একটি বিশেষতা এটি ছিলো যে তিনি কারও কাঁধের উপর ভর করে অগ্রসর হননি। ইংরেজি একটিও শব্দ না জানার পরও হীন-ভাবনা তাঁকে বর্তমান দিনের নেতাদের মতো গ্রাস করতে পারেনি। নিজের হিন্দী ভাষা, সরল ও আমজনতার ভাষায় তিনি 'সত্যার্থপ্রকাশ' এর মতো মহান গ্রন্থ লিখেছিলেন। এই মহান গ্রন্থে তিনি সবার প্রথমে নিজের হিন্দু সমাজে ব্যাপ্ত কুরীতিসমূহের উপর তীব্র থেকে তীব্রতর প্রহার করেছেন। বাল্যবিবাহ, পর্দাপ্রথা, মহিলাদের শিক্ষার উপেক্ষা, অস্পৃশ্যতা, ধর্মের নামে পালিত পাখণ্ড প্রভৃতির উপর যতটা তীব্রভাবে প্রহার স্বামীজী করেছেন, ততটা অন্য কোনো ধার্মিক নেতা অথবা আচার্য কখনও করেন নাই। নিজের সমাজে ব্যাপ্ত গলিত-দুর্গন্ধযুক্ত কুরীতিসমূহের উপর প্রহার করার পরও স্বামীজী রাজা রামমোহন রায় প্রভৃতি পশ্চিম দ্বারা প্রভাবিত নেতাদের ন্যায় বৈদিক ধর্মকে সেই দোষসমূহের জন্য দোষী দাবী করেন নাই। বরং স্পষ্ট করেছেন যে, বৈদিক হিন্দূ ধর্ম সকল প্রকারের খারপ ও কুরীতিসমূহের ঊর্ধ্বে, বৈদিক ধর্ম বৈজ্ঞানিক ধর্ম ও দোষমুক্ত ধর্ম, তথা এর তুলনা অন্য কোনো ধর্মের সাথে করা যেতে পারে না।

স্বামীজী নিকের বৈদিক ধর্মের পুরুরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে আর্যসমাজ স্থাপনা করেন। তিনি এর নামও আকর্ষক ও প্রেরক নির্বাচন করেন। 'আর্য' অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ সমাজ, এর মধ্যে না কোনো জাতির সংকীর্ণতা রয়েছে, না কোনো সমুদায়ের। যে ব্যক্তিই আর্যসমাজের ব্যাপক ও মানবমাত্রের জন্য হিতকারী নিয়মসমূহে বিশ্বাস রাখে, সেই ব্যক্তিই আর্যসমাজী। 'আর্যসমাজ' নাম দ্বারা দূরদর্শী, ব্যাপক ও সংকীর্ণতা থেকে সর্বথা মুক্ত দৃষ্টিরই আভাস হয়। স্বামীজী স্বদেশী ও স্বভাষা উপর অহংকার করার জন্যও দেশবাসীদের প্রেরণা দিয়েছিলেন। ইংরেজদের তিনি বিদেশী নিজের ভাষা তথা নিজের বেশভূষা অনুশীলনের জন্য বল প্রয়োগ করেন। যে পরিবারসমূহে তিনি অবস্থান করতেন, তাদের বাচ্চাদের বেশভূষর উপর লক্ষ রাখতেন তথা প্রেরণাও দিতেন যে, আমাদের বিদেশীদের নকল করা ছেড়ে দিয়ে নিজের দেশে তৈরি কাপড় পরা উচিত, নিজের কাজ-কর্ম 'সংস্কৃত ও হিন্দি' ভাষায় করা উচিত। গরুকে স্বামীজী ভারতীয় কৃষি ব্যবস্থার মূখ্য আধার মানতেন। এজন্য তিনি 'গোকরুণানিধি' লিখেছিলেন তথা গোরক্ষার জন্য গণসাক্ষর করিয়েছিলেন। তিনি গ্রামের উত্থান, কৃষকদের শিক্ষার দিকে লক্ষ দেওয়াকে অনেক জরুরি মানতেন।

"জাতি প্রথার বিরুদ্ধে হুংকার"

স্বামীজী দূরদর্শী ছিলেন। তিনি ইতিহাসের গভীর অধ্যয়ন করে এই নিষ্কর্ষ বের করেছিলেন যে, যখন পর্যন্ত হিন্দু সমাজ জন্মগত জাতি প্রথার কুরীতিতে আচ্ছন্ন থাকবে, হিন্দুধর্ম বরাবর পিছিয়ে জাবে। এজন্য তিনি 'সত্যার্থপ্রকাশ'-এ তথা নিজের প্রবচনসমূহে জাতিপ্রথা ও অস্পৃশ্যতার উপর তীব্র থেকে তীব্রতর প্রহার করেছিলেন। তিনি দূরদর্শী ছিলেন, তাই তিনি প্রথমেই এটি ভবিষ্যবাণী করে দিয়েছিলেন যে, যদি হিন্দু সমাজ জাতিপ্রথা ও অস্পৃশ্যতার কারণে নিজের ভাইদের ঘৃণা করা না ছাড়ে, তবে হিন্দুসমাজ দ্রুত বিপথগামী হয়ে যাবে, যার মাধ্যমে বিধর্মী স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাভবান হবে। তিনি এই হুংকারও দিয়েছিলেন যে, অস্পৃশ্যতার কলঙ্ক হিন্দু ধর্মের সাথে সাথে দেশের জন্যও ঘাতক হবে। মহর্ষির প্রেরণার উপর আর্য সমাজের নেতাসমূহ লালা লাজপতরায়, ভাই পরমানন্দ প্রভৃতি অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধ অভিযান চলিয়েছেন। আর্য সমাজ জন্মগত জাতিপ্রথার ক্ষতিকর দিক জনগণকে বোঝানোর প্রয়াস করেছে। কিন্তু আজ তো জাতিপ্রথার ভাবনা ধর্মে নামে সীমাবদ্ধ নেই, বরং 'রাজনীতিক মঠাধীশদের' দ্বারা রাজনীতিক লাভের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। আজ আর্য সমাজকে এই দিকে আরও দ্রুততার দিকে সক্রিয় হওয়া জরুরি।

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী দ্বারা প্রতিপাদিত সিদ্ধান্তসমূহ অথবা আর্য সমাজের দশ নিয়মের পূর্ণাঙ্গ ভাবে পালন ব্যক্তিকে অত্যন্ত নির্ভীক, সংযমী ও তেজস্বী করতে পারে। আর পরন্তু আমি এই দিকে যথাসম্ভব কিছু কিছু নিয়ম পালন করার প্রয়াস অবশ্য করেছি। আমি সাত বছর পর্যন্ত নিরন্তর গাজিয়াবাদে ওকালতি করার সময় একজন হরিজনকে রান্নার কাজে রেখে ব্যক্তিগত জীবনে জাতিগত ভাবনার মূলোৎপাটনের প্রয়াস করেছিলাম। এরপর উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী রূপে প্রদেশের শিক্ষাসংস্থার সাথে ব্যবহৃত ব্রাহ্মণ, জাট, অগ্রবাল, কায়স্থ প্রভৃতি জাতিবাচক নামসমূহ দূর করার জন্য দৃঢ়তার সাথে আইন বানিয়েছিলাম। আমার অনেক বন্ধুগণ সেই সময় বলেছিলেন যে, এর ফলে অনেক লোক অখুশি হয়ে যাবে। আমি স্পষ্ট উত্তর দিয়েছি যে, 'অখুশি হয়ে যাক, আমি শিক্ষা ক্ষেত্রে জাতিগত সংকীর্ণতা কখনও সহ্য করতে পারি না।' যেদিন আমার এলাকা বড়ৌতের 'জাট ইন্টার কালেজ'-এর নাম বদলিয়ে জাট এর জায়গায় 'বৈদিক' শব্দ যুক্ত, সেই দিন আমায় সন্তোষ প্রাপ্ত হয়েছে যে, অন্তত মহর্ষির আদেশের পালন করার বিষয়ে আমি কিছু তো যোগদান করতে পেরেছি। এভাবে নিজের পুত্রী অর্থাৎ ধেবতীর অন্তঃজাতীয় বিবাহ করিয়ে আমার আত্মসন্তোষ হয়েছে।

আমার এটি দৃঢ় বিশ্বাস যে ভারত মহর্ষি দয়ানন্দ তথা গান্ধীর আদর্শসমূহের উপর চলার মাধ্যমেই প্রকৃত গৌরব প্রাপ্ত করতে পারে। উভয় মহাপুরুষ ভারতকে প্রাচীন ঋষিদের সময়ের ঐক্য, সত্যতা, ন্যায় ও নৈতিকতা গুণসমূহ দ্বারা যুক্ত ভারত বানানোর আকাঙ্ক্ষী ছিলেন। 'মহর্ষি' ও 'মহাত্মা' উভয়ই এই উদ্দেশ্য পূর্তির জন্য প্রাচীন সংস্কৃতি ও ধর্মকে জীবনে মহত্ত্ব দিয়েছিলেন। ধর্মের নামে সকল প্রকারের প্রবেশিত কুরীতিকে প্রহার করেছেন। তাঁর স্পষ্ট মত ছিলো যে, আমরা বিদেশীদের অন্ধানুকরণ করে ভারতের উত্থান কখনও করতে পারব না। আজ আমাদের সেই দিককে গ্রহণ করে এই লক্ষ্য প্রাপ্তির জন্য এগিয়ে চলতে হবে।

দীপাবলী জ্যোতি পর্ব। এই দিন আমরা অন্ধকার অর্থাৎ অস্পৃশ্যতা, অনৈতিকতা, ভ্রষ্টাচার প্রভৃতির ঊর্ধ্বে উঠে জ্যোতির মার্গে চলার প্রেরণা নিতে পারি। ধার্মিকতা তথা নৈতিকতাকে আপন করা বিনা আমরা সংসারে সম্মান কখনও প্রাপ্ত করতে পারব না।

0 comments

Comments


Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

lgbt-bangladesh.png
bottom of page