বেদ আমাদের আদি ধর্মগ্রন্থ।স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণই বেদের দাতা।
বেদের জ্ঞানে প্রভূত অপশনের কথা বলা হয়েছে।বেদের জ্ঞান দুই ভাগে বিভক্ত প্রবৃত্তি মার্গ এবং নিবৃত্তি মার্গ।তাছাড়া বেদে স্তরভিত্তিক জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে প্রথমে কর্মকান্ড, পরে জ্ঞানকান্ড এবং শেষে উপাসনাকান্ড।
মূলতঃ বেদ শ্রুতি।ভগবান বংশীধ্বনির মাধ্যমে বা তাঁর নিশ্বাসের মাধ্যমে এই জ্ঞান ব্রহ্মাকে প্রদান করেন তাই শাস্ত্রে একে যশ্বৈকনিশ্বাস বলা হয়েছে।পরে ব্রহ্মা তা চারটি শ্লোকে নারদ মুণির কাছে বিস্তার করেন।নারদ মুণি তা আরও বিস্তারে ব্যসদেবকে বর্ণণা করেন।এভাবে শ্রুতি পরম্পরা চলছিল। পরে ব্যাসদেব চিন্তা করেন যেহেতু মানুষের মস্তিষ্ক কালক্রমে শ্রুতি বিদ্যা ধারণে অক্ষম হবে তাই তিনি তা আরও বিস্তার লিপিবদ্ধ করেন এবং উপরিল্লিখিত পন্থায় স্তরভেদে তা প্রদান করেন।যার উদ্দেশ্য ছিল জীবকে পর্যায়ক্রমে ধর্ম,অর্থ, কাম এবঙ মোক্ষের দিকে নিয়ে যাওয়া।কিন্তু তিনি লক্ষ্য করলেন বেশিরভাগই প্রবৃত্তি মার্গেই আটকে যাচ্ছেন অর্থাৎ তাদেরকে বেদের উপসংহার তথা উপাসনাকান্ড পর্যন্ত নিয়ে আসা যাচ্ছে না। এরই ধারাবাহিকতা আমরা গীতায় দেখতে পাই যখন অর্জুন তাঁর যুদ্ধ না করার পেছনে বেদের যুক্তি প্রদর্শন করতে থাকেন।তখন ভগবান তাকে বোঝান যে তিনি যে জ্ঞান দিচ্ছেন তা নতুন নয়ঃ ইমং বিবস্বতে যোগং প্রোক্তবান অহমব্যয়ম বিবস্বান মনুবে প্রাহু মুণির ইক্ষাকু অব্রবীৎ।৪.১ অর্থাৎ আমি যা বলছি তা নতুন নয় বরং মৃষ্টির প্রারম্ভে তা আমি সূর্যদেব বিবস্বান,মনু এবং ইক্ষাকুকে প্রদান করেছি। এবং তিনি অর্জুনকে সাবধান করে দিয়ে বলেন-
যামিমাং পুষ্পিতাং বাচ প্রবদ্যন্তে বিপশ্চিত বেদবারতা পার্থ নান্য দস্তীতি বাদিনঃ ২.৪২ হে পার্থ বেদের পুষ্পিত বাক্যে মোহিত হয় না।
ত্রৈগুণ্যাবিষয়া বেদা নিস্ত্রৈগুণ ভবার্জুন নিদ্বন্দ্বো নিত্যসত্ত্বস্থ নির্যোগক্ষেম আত্মবান।২.৪৫ বেদে শুধুমাত্র ত্রিগুণ নিয়েই বলা হয়েছে কিন্তু এর উর্ধ্বেও জ্ঞান রয়েছে যাকে শুদ্ধসত্ত্ব স্তর বলা হয় যা সমস্ত দন্দ্বের উর্ধ্বে তুমি নিজেকে সেই স্তরে নিয়ে যাওযার চেষ্টা কর।
বেদেষু যজ্ঞেষু তপসু চৈব দানেষু যৎ পুণ্যফলং প্রদিষ্টম অত্যেতি তৎ সর্বমিদং বিদিত্বা যোগী পরং স্থানম উপৈতি চাদ্যম।৮.২৮ ভক্তিযোগ অবলম্বন করলে তুমি কোন ফলেই বঞ্চিত হবে না।বেদপাঠ,যজ্ঞ অনুষ্ঠান, তপস্যা,দান সমুদয়ের যা ফল তা তুমি ভক্তিযোগ দ্বারাই লাভ করবে।
জ্ঞানম তে অহম সবিজ্ঞানম বক্ষ্যামি অশেষতঃ যজজ্ঞাত্বা নেহ ভূয়ঃ অন্যৎ জ্ঞাতব্যম অবশিষ্যতে।৭.২ আমি তোমাকে যে জ্ঞান প্রদান করছি তা জনা হলে এ জগতে আর কিছুই জানার বাকি থাকে না।
রাজবিদ্যা রাজগুহ্যম পবিত্রম ইদম উত্তমম প্রত্যাক্ষাম অবগমং ধর্মম সুসুখঙ কর্তুম অব্যয়ম। ৯.২ এই জ্ঞান সমস্ত জ্ঞানের রাজা,গোপন এবং প্রত্যক্ষ অনুভূতির দ্বারা আত্ম উপলদ্ধি প্রদান কারী।এই জ্ঞান অব্যয় এবং সুখসাধ্য।
সর্বস্য চাহম হৃদি সন্নিবিষ্ট মত্ত স্মৃতির্জ্ঞানম অপোহনঞ্চ বেদৈশ্চ সর্বৈ অহম এব বেদ্য বেদান্তকৃৎ বেদবিদেব চাহম। ১৫.১৫ আমিই বেদকর্তা,বেদবিৎ
এসব বিবেচনা করলে বেঝা যায় বেদকে প্রমাণিক বলা হয়েছে কিন্তু এর উর্ধ্বেও তত্ত্ব রয়েছে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুও গীতাকে আঁধার করে প্রচার করেছেন। বেদ আমাদের আদি ধর্মগ্রন্থ কিন্তু শ্রীমদভগবদগীতা আমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ।
না,একথা আমার নয় শ্রীপাদ শঙ্করাচার্যের একো শাস্ত্র দেবকীপুত্রগীতম একো দেব দেবকীপুত্র এব একি মন্ত্র তস্য নামানি যানি কর্মপি একম তস্য দেবস্য সেবা। সারা মানবজাতির জন্য একটিই শাস্ত্র হোক তা হচ্ছে দেবকীপুত্র গীতম অর্থাৎ শ্রীমদভগবদগীতা। আপনার পোষ্টে অনেকে লিখেছেন গীতায় পূর্ণ জীবনাদর্শ নেই।তাদেরকে বলব ভাল করে পড়ে ভেবে বলুন।আরে ভাই গীতার একটি শ্লোক ধারণ করতে গেলে পুরো লাইফ চলে যাবে।আর তারা আসছে পূর্ণাঙ্গ খুঁজতে। আর আমরা আঠার অধ্যায়ের গীতাই পড়াতে পারি না সেখানে আবার বেদ।যা পড়ার মেধা বা মানসিকতা আমাদের নেই।তাই মহাপ্রভু বেদকে এড়িয়ে গেছেন কারণ গীতা বেদের উপসংহার নিয়ে আলোচনা করেছে।
দাদা আপনাকে ধন্যবাদ এই পোষ্টের কারণে আরেকটু ভাল করে গীতাটা পড়া হল।
Comments