বিজ্ঞানের ছাত্র কেন ধার্মিক হচ্ছে ?
কোরআন ও হাদিস থেকে কিছু সৃষ্টি তত্ত্ব বিজ্ঞানের ছাত্রদের জ্ঞ্যাতার্থে উল্লেখ করা হইল।
১-বাইবেলের মতে 4000 BCতে হযরত আদম (আ:) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল। যা ইসলাম সমর্থন করে । কিন্তু বিজ্ঞানীরা লক্ষ লক্ষ বৎসর পূর্বের মানুষের ফসিলের সন্ধান পেয়েছেন । ২- আদম এবং হাওয়াকে বেহেশ্ত থেকে পৃথিবীতে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল । মহাশূন্য কোন কিছু ফেলে দিলে তা কখনোই পৃথিবীতে এসে পড়বে না । তাহা মহাশূন্যেই ভাসতে থাকবে । ৩- বিশ্বব্রহ্মাণ্ড মোট সাতটি আসমান রয়েছে। কিন্তু অনন্ত অসীম এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র, গ্লাক্সি, ক্লাস্টার সহ সমস্ত কিছু শূন্যের উপর ভাসমান । বিভিন্ন অত্যাধুনিক টেলিস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেও সাত আসমানের কোন সন্ধান পান নাই । ৪- সমস্ত কিছুই আল্লাহর হুকুমে পরিচালিত হয় । কিন্তু বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়মে চলছে ।এখানে কারো কোনো হস্তক্ষেপ ও হুকুম বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন নাই । ৫- আদমের বাম পাজরের হাড় থেকে বিবি হাওয়া কে সৃষ্টি করা হয়েছিল । কিন্তু প্রকৃতির নিয়মে স্ত্রী এবং পুরুষ আলাদা আলাদাভাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সৃষ্টি হয়েছে । ৬- অদমস ৬০ হাত লম্বা এবং ১০০০ বৎসর জীবিত ছিলেন । কিন্তু ৬০ হাত লম্বা মানুষ ও 1000 বৎসর জীবিত থাকার কোন প্রমাণ বিজ্ঞ্যানীরা পান নাই । উপরন্ত মানুষের বর্তমান স্ট্রাকচার অনুযায়ী ৬০হাত লম্বা হওয়া সম্ভব নয় । ৭- নবী মোহাম্মদ চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করিয়াছিলেন । কিন্তু নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে কোন ফাটল দেখেন নাই । ৮- শবে মেরাজের রাত্রে গাদায় চড়িয়া নবী আল্লাহ সাথে সাক্ষাত করেন । কিন্তু গাদার পূটকীতে ইঞ্জিন লাগানোর কোন তথ্য পাওয়া যায় নাই। তাহলে সেটি আকাশে উড়বে কিভাবে ? ৯- পৃথিবী সমতল এবং কাবা শরিফের অবস্থান হলো পৃথিবীর কেন্দ্রে । বিজ্ঞানের মতে এটি হাস্যকর বিষয় । ১০- সূর্য সন্ধ্যার পর আল্লাহর আরশে নিচে চলে যায় এবং সারারাত আল্লাহর আরশের নিচে সিজদারত অবস্থায় থাকে । এটি সর্বশক্তিমান ও মহাজ্ঞানী নামধারী আল্লাহর চরম মূর্খতা । ১১- চাঁদের নিজস্ব আলো আছে । বিজ্ঞানের মতে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হওয়ার কারণে আমরা চাঁদকে আলোকিত দেখি। ১২- হঠাৎ কিয়ামতের দিন সূর্য পশ্চিম দিক হতে উদিত হবে । কিন্তু ইহা হাস্যকর বিষয় । ১৩- সূর্য পূর্ব দিকের একটি দেশ হতে উদিতে হয় এবং পশ্চিম দিকে কর্দমাক্ত অস্ত যায় । এটি চরম হাস্যকর ব্যাপার। ১৪- কালিজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ঔষধ। তাহলে হাজার হাজার রকমেরঔষধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, নানাবিধ চিকিৎসা পদ্ধতির কোন প্রয়োজন আছে ? ১৫- আকাশের উল্কাপিণ্ড হল শয়তানকে বিতারনের অস্ত্র । ১৬- সাত আসমানের উপর রয়েছে পানির বিশাল ভান্ডার । পৃথিবীতে বৃষ্টিপাতের উৎস সেই পানি । বিজ্ঞানীরা মহাকাশে এত বিশাল আকৃতির পানির ভান্ডার খুঁজে পান নাই। ১৭- আকাশের সমস্ত তারকা হলো প্রথম আসমানের ছাদে অংকিত আলোকিত ডিজাইন সমূহ । ১৮- জ্বর হলো দোযখের উত্তাপ । ১৯- পৃথিবী পৃষ্ঠের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য পাহাড় সমূহকে কীলক সরূপ ভূপৃষ্ঠের সাথে সংযুক্ত করা হইয়াছে । 2০- ভূপৃষ্ঠে মানুষের চলাচল এবং সমুদ্রে জাহাজ চলাচলের সুবিধার্থে আল্লাহ আকাশের তারা সমূহকে নির্মাণ করেছেন । কিন্তু বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের নিকট পৃথিবী বালুকনার চেয়েও ক্ষুদ্র এবং তারকা সমুহ পৃথিবীর চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণ বড় । সুতরাং এই রকম তত্ত চরম হাস্যকর।
ধর্মে এই জাতীয় আরো কিছু সৃষ্টিতত্ত্ব রয়েছে । এই সমস্ত বিষয় সমুহ বিশ্বাস না করলে কোন মুসলমানের ঈমান থাকবে না । এছাড়া বিবর্তনবাদ ধর্মীয় সৃষ্টিতত্ত্বের সাথে সাংঘর্ষিক । তাই বিবর্তনবাদ মানলে কোন ঈমানদার ব্যক্তির ঈমান থাকবেনা । পক্ষান্তরে বিজ্ঞান কখনোই এই সমস্ত ধর্মীয় সৃষ্টিতত্ত্বের সত্যতা খুঁজে পাই নাই । তাই একজন বিজ্ঞানের ছাত্র কখনোই এই গুলোকে মানতে পারেনা ।
তারপরও একজন বিজ্ঞানের ছাত্র কি করে ধার্মিক হচ্ছে তা নিচে বর্ণিত হইল । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে যে বিশাল পরিমাণ পণ্য ও দ্রব্য সামগ্রী মানুষের জীবনে স্বচ্ছন্দ এনেছে, তার সংস্থান করতে গিয়ে মানুষকে পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ অর্থ উপার্জন তথা শ্রম ব্যায় করতে হয় । প্রতিযোগিতামূলক পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের জীবনের প্রদান লক্ষ্যই হলো অর্থ উপার্জন । অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই আশা পূরণের পূর্বেই বার্ধ্ক্য এসে যায় ।
আমি H.S.C পর্যন্ত বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম । আমরা তখন পরীক্ষায় পাস করার জন্য তোতা পাখির মত বিজ্ঞান মুখস্থ করেছিলাম । ফলে বিজ্ঞানের মর্মার্থ না বুঝার কারণে বিজ্ঞানের সূত্রাবলীকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করার পদ্ধতি জানতে পারি নাই । ওই বয়সে ধর্ম সম্পর্কে আমার যেমন জ্ঞান ছিল না । কারণ জ্ঞান অর্জন করতেও সময় লাগে ।
অথচ লেখাপড়া শেষ করে সার্টিফিকেট অর্জন করে কর্মজীবনে চলে যাবার পর অধিকাংশ লোকেরই জ্ঞান অর্জনের স্পৃহা আর থাকেনা । কারণ জ্ঞান অর্জনের জন্য সময় ব্যয় মানুষকে অর্থ দিবে না বরং অর্থ উপার্জনের প্রচেষ্টার পথকে গতিহীন করবে । একজন বিজ্ঞানের ছাত্রকেও জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ ও পাঠ্যপুস্তক বহির্ভূত ধর্ম নিয়ে লেখাপড়া করার সময় কোথায় ? কথায় বলে - আধা শিখলে হয় গাধা ।
ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলো খুবই শক্তিশালী । দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় স্বল্প জ্ঞানী হুজুররা অবৈজ্ঞানিক, মিথ্যা ও অমানবিক তথ্য সমূহকে পরিহার করে তাদের মত করে অতি সূন্দর ও চমৎকার ভাবে ইসলামকে উপস্থাপন করে থাকেন, যাহা ইসলাম সম্পর্কে অতি উন্নত একটি কৃত্রিম ধারণার জন্ম দেয় । বাংলা কোরআন শরীফ পড়াকে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে হুজুররা বলেন, বাংলায় কোরান পড়ে সহজে তার অর্থ বুঝা যাবে না । কারণ আরবি ভাষার সঠিক বাংলা তরজমা হয়না । এই ধরনের কথা একমাত্র মুসলিম আলেম ব্যতীত দুনিয়ার আর কেউ কখনোই বলেন না ।
সৌদি আরব ও ইসলামী সংস্থা সমূহের অর্থায়নে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত কিছু শিক্ষিত লোকদের জন্য দ্বিতীয় আরেকটি পদ্ধতি চালু হয়েছে । প্রতি বৎসর সৌদি আরব হজ্ব থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আনুমানিক ৩ লক্ষ কোটি টাকা উপার্জন করে । এত বড় উপার্জনের কিছু অংশ কিছু স্বনামধন্য ব্যক্তি, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যয় করে একটি ধর্মীয় প্রভাব বলয় সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই সমস্ত সংগঠন দিয়ে ইসলাম প্রচারের পাশাপাশি পরকালের বেহেস্ত ও দোজখের ন্যায় ইহকালেও জিহাদের নামে মুক্তমনা ও বুদ্ধিজীবীদের ভয় দেখানো এবং কিছু লোককে হত্যা করার মাধ্যমে তাদেরকে সত্য ও ধর্মীয় মিথ্যাচার প্রচার করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে । বেহেশতের ন্যায় লোভ দেখাইয়া জাকির নায়েক ,মরিস বুকাইলি এবং কিছু উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিবর্গেকে নিজেদের সঙ্গী বানানো হচ্ছে । তাদের সাহায্যে কোরআনকে বিজ্ঞানের গ্রন্থ বানানোর লক্ষ্যে বিজ্ঞানের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা ও নানা প্রকার ভিডিও তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছেড়ে দিচ্ছে । মুখস্ত বিদ্যার জ্ঞানহীন বিজ্ঞানের ছাত্র, শিক্ষক ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ এইগুলোকে রেফারেন্স হিসাবে গ্রহন করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে ও বলছে কোরআন বিজ্ঞানময় ।
এই সকল বিষয়ের সমাধান তখনই হবে যখন মানুষ হুজুর এবং ইসলামী স্কলার নামধারী কিছু বাটপার নির্ভর না হয়ে বরং সত্য অন্বেষণের লক্ষ্যে যুক্তিনির্ভর হয়ে নিজেরাই বাংলায় কোরআন ও হাদিস সম্পর্কে পড়াশোনা করবে ।
যথার্থ লিখেছেন দাদা…
চমৎকার আর্টিকেল
ভালো লিখছেন
পোস্ট করার জন্য ধন্যবাদ …
আপনার প্রতিটি কথা যুক্তিযুক্ত…