বাঙালির দৈন্যতার কারণ শুধু বাঙালি নয়
একটি জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্য, জাতি হিসেবে তার সর্বোচ্চ দুর্বলতা প্রকাশ করে দেয়। ১৯৭১ সালে আজকের এই দিনে পাকিস্তানিরা চেয়েছিল আমাদেরকে বুদ্ধি আর চিন্তাশক্তির জায়গা থেকে পঙ্গু করে দিতে। মজার ব্যাপার হলো এই, বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী এ জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক পঙ্গুত্ব আনয়নের জন্য কোনো বহিঃশক্তির প্রয়োজন নেই, কারণ তারা নিজেরাই এ কাজে উদ্যত।
না হলে ২০২০ সালে এসে আপনি কেন দেখবেন বেগম রোকেয়াকে মিয়া খলিফার সাথে তুলনা দেয়া হচ্ছে? কেন দেখবেন আপনার দেশের মুসলমানেরা নিজেরা ধর্ম ও শাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা ও যাচাই বাছাই না করে এ ব্যাপারে পুরোপুরিভাবে নির্ভর করে তার এলাকার বা ইউটিউবের কোনো হুজুরের ওয়াজের উপর। আপনার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন আইডিয়া বা গবেষণা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথা হচ্ছে না। চাকরি, প্রেম, ট্যুর, কনসার্ট, হ্যাংআউট, এসবের মাঝে গবেষণা ও নতুন ধারায় চিন্তা করাও যে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর জীবনের অংশ এ ধারণাই অনেকের মাঝে নেই। এটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের চেয়ে বরং গোটা পরিবেশটাই দায়ী, আমরাই তাদের সেরকম চিন্তার সুযোগ হয়তো করে দিতে পারছি না। সমাজে চলাচলের ক্ষেত্রে মানুষ মানুষকে তার চিন্তাশক্তি বা মস্তিষ্কের জন্য সম্মান করছে না, সম্মান করছে তার অর্থ, বিত্ত ও ক্ষমতার জন্য। মানুষ কেন চিন্তায় উন্নত হতে যাবে? আপনার নারীরা প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদের উপর ভর করে একজন সম্পদশালী স্বামী হাসিল করাকেই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে ঠিক করছে নিজের আত্মসম্মানবোধকে বিসর্জন দিয়ে। তবে আত্মসম্মানবোধ অনুধাবনের জন্য যে বিবেক ও মনন দরকার তা কি তাদের দিতে পারছি? এ বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে।
পৃথিবীকে দেখার তরিকা বদলাতে হবে। মানুষের মাঝে অন্যের মতামত ও চিন্তার প্রতি সহনশীলতা বাড়াতে হবে। বুঝতে হবে আমার মতটিই সর্বশ্রেষ্ঠ নয়। আমাদের জ্ঞানার্জন যেন আমরা কোন ডিপার্টমেন্ট, ইন্সটিটিউট বা প্রতিষ্ঠানে পড়ছি বা পড়েছি, তার উপর নির্ভরশীল না হয়। দিনশেষে একজন ডিগ্রিওয়ালা শিক্ষিত মানুষ আর একজন চিন্তাশক্তিতে উন্নত মানুষ, এ শব্দগুচ্ছদ্বয় সমার্থক নয়। মানুষের চিন্তা হবে সার্বজনীন ও চিরন্তন।
আজ মহান বুদ্ধিজীবী দিবসে সকল মানুষ চিন্তায় উন্নত হোক এই কামনা করি। সবাইকে মহান বুদ্ধিজীবী দিবসের শুভেচ্ছা।
Comments