পৈতা কী বর্ণ বৈষম্য সৃষ্টি করে
পৈতা বর্ণ বৈষম্য সৃষ্টি করে, তাই এটা তুলে দেওয়া উচিৎ। এমটাই মনে করে তথাকথিত আধুনিক কিছু মানুষ!
এই প্রকৃতির মানুষের উদ্দেশ্যে আমার কিছু প্রশ্ন ও পরামর্শ, যদি পারেন এগুলো করে দেখান। তাহলে আমিও পৈতা তুলে দেওয়ার পক্ষে কথা বলবো।
১) আদালতে উকিল ও বিচারকের কালো কোট এবং চতুর্থ শ্রেণীর লোকদের সাদা পোশাক তুলে সবার একই রকম পোশাকের ব্যবস্থা করতে পারবেন?
২) ব্যাংক ও অফিস গুলোতে অফিসার, গার্ড ও পিওনের পোশাক পরিবর্তন করে একই করতে পারবেন?
৩) স্কুল কলেজগুলোতে শিক্ষক ছাত্র ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের পোশাক পরিবর্তন করে একই করতে পারবেন?
৪) সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পোশাক ও ব্যাচ একই করতে পারবেন?
৫) ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মালিক ও শ্রমিকের পোশাক একই করতে পারবেন?
এতক্ষণ বললাম পোশাকের বৈষম্যের কথা, এখন আসুন পদে বসার বৈষম্যের ব্যাপারে!
১) উপরের সবাই কি যখন ইচ্ছা তখন তাদের চেয়ার ছেড়ে দিয়ে ইচ্ছে মত যে যার চেয়ারে বসতে পারে?
২) যোগ্যতা অর্জন না করা পর্যন্ত কি কেন এমপি বা মন্ত্রী প্রধান মন্ত্রীর পদে বসতে পারে?
৩) প্রধান মন্ত্রী কি স্পিকারের চেয়ারে বসে? স্পিকার কি প্রধান মন্ত্রীর চেয়ারে বসে?
৪) রাষ্ট্রপতি কি প্রধান মন্ত্রীর চেয়ারে বসে? প্রধান মন্ত্রী কি রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসে?
৫) ডাক্তার কি ইন্জিনিয়ার এর পদে বসতে পারবে?
এই প্রশ্নগুলোর সবগুলোর উত্তরই হল "না"। কারণ, এতে কর্মের ও গুণের বৈষম্যতা আছে। আর তা বুঝানোর জন্যই তাদের পোশাক ও পদ আলাদা করা হয়েছে। অবাক করা ব্যাপার হল বর্তমান তথাকথিত আধুনিক সমাজ এই পোশাক ও পদ জনিত বৈষম্য ঠিকই মেনে নেয়। এমনকি উচ্চ পদে বসতে পারলে ও ভালো পোশাক পরতে পারলে গর্ব ও অহংকার অনুভবও করে৷ কিন্তু এই মানুষগুলোই সনাতন সমাজের লোকজন পৈতা পরলে তাকে বৈষম্যের দৃষ্টিতে দেখে! এরা অহিন্দু নয়, এরা হিন্দুই কিন্তু!
কর্মগুণে বৈষম্য সৃষ্টির শুরু হতেই ছিল, আছে ও থাকবে। আর এগুলোকে বর্তমানে বিভিন্ন প্রতীকের(পোশাক বা পদ) মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। অতীতে সনাতন সমাজ পৈতারূপী চিহ্ন(চার বর্ণ ব্যবস্থা) এর মাধ্যমে উপস্থাপন করতো। আর সেই পৈতা ধারণের কিছু আধ্যাত্মিক ও সামাজিক আবেদন প্রচুর ছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রচলীত প্রতীকের কোন আধ্যাত্মীক আবেদন নেই। যার কারণে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যাও বর্তমানে বৃদ্ধি পাচ্ছে, অতীতে এত বৃদ্ধাশ্রম ছিল না। কারণ, পৈতার আধ্যাত্মিক আবেদন প্রচুর। যা প্রতিনিয়ত স্মরণ করে দেয় ব্যক্তি তিনটি ঋণে আবদ্ধ এবং তা শোধ করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত অতিআধুনিক প্রতীক এমন কোন ঋণের কথা বলে না। বর্তমানে প্রচলীত প্রতীকরূপী পেশাক ও পদ কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, হিংসা বৃদ্ধি করে। কিন্তু পৈতাতে বিদ্যমান পাঁচটা গিট এই পাঁচটিকে উপরোক্ত তিনটি ঋণ পালনে বাঁধার হিসেবে স্মরণ করিয়ে দেয়।
তবে সবকিছুর মূল কথা হল, এই পৈতা ধারণ অবশ্যই গুণ ও কর্ম অনুসারে হওয়া উচিৎ। কারণ শাস্ত্রে গুণ কর্ম অনুসারে পৈতা নেওয়ার কথা পাওয়া যায়। জন্মসূত্রে নয়।
Comentários