পশুর রক্ত আল্লাহর দরবারে পৌঁছায় না
প্রতিটা গুরুকে আল্লাহর রঙে রঞ্জিত হতে হয়। সকল মানুষ মুসলমান না হয়ে ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও বিভিন্ন জাতি-উপজাতিতে বিভক্ত হওয়ার পরও আল্লাহ যেমন সকলকে তার নিয়ামত থেকে বঞ্চিত করেন না, তেমনি ভক্তদের মধ্যে কেউ-কেউ গুরুকর্ম না করলেও তাঁদেরকে দয়ার নজর থেকে দূরে রাখা যায় না। আল্লাহর বন্যার জল যেমন হিন্দু-মুসলীম ভেদাভেদ না করে দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে, তেমনি একজন কামেল গুরুকে ভালভক্ত-মন্ধভক্ত ভেদাভেদ না করে প্রতিটা ভক্তের ক্বলবে রূহানী ফায়েজের আগুন জ্বালিয়ে মরণ জ্বালা উঠিয়ে দেওয়া উচিত।
গতকাল আমার এক বেয়াদব ভক্ত কুরবানির গোরু কিনে সেলফি তুলে আমাকে পাঠাইছে। আজকে ফোন করে বলতেছে, "আব্বা! গোরু কুরবানি কেমনে করব! ঈদগাহ ময়দানে পানি, মাদরাসা মাঠে পানি, মসজিদের ভিতরে পানি, সবজায়গায় পানি! এমন অবস্থায় কেমনে কুরবানি করব? নামাজ না হয় পানিতে ডুব দিয়েই পড়া যাইবো। কিন্তু কুরবানি?"
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার যখন মসজিদ-মন্দির সহ রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্র ও বিভাগে লকডাউন ঘোষণা করেছিল, তখন ভক্ত আমার আন্দোলনে যেতে চেয়েছিল 'আল্লাহর ঘর মসজিদ বন্ধ রাখা যাবে না' দাবি নিয়ে। সকল বাঁধা উপেক্ষা করে সে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিল। আইনভঙ্গ করার কারণে ভক্তকে সেদিন পুলিশ লেংটা করে পিটিয়ে ছিল। পিটানি খাওয়ার পর আমাকে ফোন করে বিষয়টি বলছিল। আমি ওকে বলেছিলাম, "বাপরে! আনুষ্ঠানিক উপাসনা বেহুদা লোকদেখানো অভিনয়! এগুলো ছেড়ে দাও। এগুলো যদি আল্লাহর দরকার হইতো, তাহলে বিশ্ব মুসলমানের মিলনমেলা মক্কার কাবাঘরের দরজা করোনার ভয়ে বন্ধ হইতো না!"
ভক্তের কান্নাকাটি আজকে আর সহ্য করতে পারিনি। ওকে ক্ষমা করে দিয়েছি এবং পরকালের দায়ভার নিয়েছি। বলেছি - আনুষ্ঠানিক ইবাদত বন্দেগি না করার কারণে যদি তোকে দোজখে যেতে হয়, তবে সে দোজখে আমি যাব। হাতের কাছেই আরবি কোরআন ছিল। কোরআনটা হাতে নিয়ে আল্লাহর কসম দিয়ে বলেছি, "বাপ! চিন্তা করিস না। কোরআন যদি সত্য হয়, তাহলে এই কোরআনের কসম - আমি হাশরের ময়দানে তোর জিম্মাদার হইবো! তবে আমার কিছু আদেশ তোকে মেনে চলতে হবে। যেমন : চুরি করবি না, ডাকাতি করবি না, খুনখারাবি করবি না, প্রতিবেশিকে ভালবাসবি, আত্মীয় স্বজনের হক আদায় করবি, রাষ্ট্রের আইন মেনে চলবি, কম খাবি, পর্যাপ্ত ঘুমাবি, ধ্যান ও যোগ করবি নিয়মিত, শ্রেণীমত মানুষকে প্রেম, আদর, স্নেহ ও শ্রদ্ধা করবি এবং সাধুসঙ্গ করবি...."
প্রতিটা দরবারের প্রতিটা গুরুর উচিৎ তার ভক্তকে জানানো যে, পশুর রক্ত আল্লাহর দরবারে পৌঁছায় না ; পৌঁছে যাঁর যাঁর আত্মিক ভক্তি ও প্রেম। আমার ভক্তদের বলে দিয়েছি, "বাবারা, তোমরা যদি আল্লাহ পরিষদের সদস্য হইতে চাও অথবা আল্লাহর উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য হইতে চাও, তাহলে আনুষ্ঠানিক বন্দেগি পরিত্যাগ করে জ্ঞান অর্জন করো। মনে রাখবা, ইবাদতকারীর ইবাদতের চেয়ে জ্ঞানীর ঘুম উত্তম!
Comments