top of page
Writer's pictureJust Another Bangladeshi

ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত- এক বিস্মৃত ভাষাসৈনিক

এই বায়ান্নোর একুশে ফেব্রুয়ারির বীজ রোপন করে গিয়েছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ, আটচল্লিশের ফেব্রুয়ারিতে। অথচ, আজ মানুষটা বিস্মৃত। তবে আমরা তাকে মনে রাখি বা না রাখি, তিনি ভাষা সংগ্রামের প্রথম সৈনিক হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন ইতিহাসের পাতায়..





ভাষা দিবস আসে, ভাষা দিবস যায়। বিবর্তনের ধারা মেনে কত ইংরেজি শব্দ, ফেসবুকীয় শব্দ নিত্য ব্যবহারের তালিকায় চলে আসে। ধীরে ধীরে ভাষা নতুন মাত্রা নেয়। কত শব্দ হারিয়ে যায় বিরল প্রজাতির প্রাণীর মতো। একই ভাবে বোধহয় হারায় মানুষও। বলছি, একজন বিস্মৃত ভাষাসৈনিকের গল্প। তিনি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। নামটা আজকে আমি গুণে গুণে দশজনকে বলেছি। কি আশ্চর্য! কেউ চেনে না তাকে! সাতচল্লিশ সালের কথা। দেশভাগ হলো। ভারত গেলো একদিকে, পাকিস্থান হলো দুই ভাগ। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পূর্ব বাংলায় থেকে গেলেন। তিনি ছিলেন পাকিস্থান সংবিধান সভার সদস্য। এই সংবিধান সভা আবার একই সাথে পাকিস্থানের গণপরিষদ হিসেবেও কাজ করতো।

গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। এই অধিবেশনটি একটি বিশেষ কারণে গুরুত্ববহ এবং স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই অধিবেশনে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত একটি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন। গণপরিষদ এর সরকারি ভাষা সংক্রান্ত মূল প্রস্তাব ছিলো, ইংরেজির সাথে ঊর্দু হবে পরিষদের সরকারি ভাষা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উত্তরে রামরাইল গ্রামের সন্তান ধীরেন্দ্রনাথ যিনি আশৈশব ছিলেন আগাগোড়া সংস্কৃতিমনা, যার রাজনৈতিক হাতেখড়ি হয়েছিলো বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন করে তিনি ভাষা সংক্রান্ত প্রস্তাবটি মানতে পারলেন না কিছুতেই। হৃদয়ে যার বাংলার নেশা, কন্ঠে যার বাংলা, মস্তিস্কে যার বাঙ্গালি চেতনা তিনি কি করেই বা মানবেন এই প্রস্তাব কিংবা বাংলার প্রতি বৈষম্য!

তিনি প্রস্তাব দিলেন, বাংলাকেও রাখতে হবে পরিষদের সরকারি ভাষার তালিকায়! প্রস্তাবটি ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮ সালে দেওয়ার দুইদিন পর পরিষদে এটি নিয়ে আলোচনা হয়। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত জীবনীর টীকাভাষ্যে বলা হয়েছে : ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮৬-১৯৭১) আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ। ১৯৪৬ সালে কংগ্রেসের সদস্য হিসেবে বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭-এ দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি পাকিস্তান গণপরিষদে ইংরেজি ও উর্দু ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষাকেও সমান মর্যাদা দানের দাবি জানান। এই দাবি প্রত্যাখ্যাত হয়। এই সূত্রে পূর্ববাংলার ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।



আমরা একটু দেখি, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে দেখতে চাওয়ার স্বপ্নদ্রষ্টার প্রস্তাবটির ফলাফল কি হলো। ‘আজাদ’ পত্রিকায় ৪ মার্চ, ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত হাবীবুল্লাহ বাহার বিবৃতি দিয়েছিলেন। তার বিবৃতি থেকে জানা যায় যে, গণপরিষদের আলোচনার আগে মুসলিম লীগ সংসদীয় দলের সভায় বিষয়টি আলোচিত হয়েছিল। হাবিবুল্লাহ বাহার এবং মুসলিম লীগ দলীয় আরও কোনো কোনো সদস্য– তাদের মধ্যে উর্দুভাষী সদস্যও ছিলেন– তারা সমর্থন করেছিলেন প্রস্তাবটি। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত গণপরিষদে যখন ভোট হলো, ভোটে তাঁরা হেরে যান এবং সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয় ওই সংশোধনীর পক্ষে কিছু না বলার জন্যে। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত তার প্রস্তাবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার তুলে ধরেছিলেন।

প্রথমে বলেছিলেন, সরকারি কাগজপত্রে মুদ্রায়, নোটে, মনিঅর্ডার ফরমে, ডাকটিকিটে– বাংলা ভাষা অবহেলিত, তাতে জনগণের দুর্ভোগ হচ্ছে। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পরিষদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, "পাকিস্তানের ৬ কোটি ৯০ লাখ মানুষের মধ্যে ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাংলায় কথা বলে, তাই আমার বিবেচনায় বাংলা হওয়া উচিত রাষ্ট্রভাষা।" কিন্তু ভোটাভুটিতে প্রস্তাবটি গৃহীত না হওয়ায় ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্ররা ধর্মঘটের ঢাক দেয়। ছাত্রদের ধর্মঘটে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে অভিনন্দন জানানো হয়। তিনি বীরের মর্যাদাও পান।

২৯ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ছাত্রধর্মঘট ও প্রতিবাদসভা হয়। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাব এবং সেটি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ভাষা বৈষম্য ও ভাষা অধিকারের ব্যাপারটি লাইমলাইটে চলে আসে দ্রুতই। ১১ মার্চে সমগ্র প্রদেশে আবার ধর্মঘট হয়। মোটামুটি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন শুরু হয়ে যায় তখন থেকেই। ১৫ মার্চ নাজিমুদ্দীনের সঙ্গে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ৮ এপ্রিলে পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক পরিষদে পূর্ব বাংলায় সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলাকে গ্রহণ এবং যথাসম্ভব শীঘ্রই বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন খাজা নাজিমুদ্দীন।

কিন্তু, সেই ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত আবার সংশোধনী নিয়ে আসেন। এবার তিনি গণপরিষদের পূর্ব বাংলার সদস্যদের বলেন, বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে। কিন্তু, দু:খজনক এই প্রস্তাবটিও পাস হয়নি। এই প্রস্তাবটি পাস করতে অপেক্ষা করতে হয়েছিলো আরো অনেকদিন, বিনিময়ে দিতে হয়েছিলো তাজা কিছু টকটকে রক্ত। এই বায়ান্নোর একুশে ফেব্রুয়ারির বীজ রোপন করে গিয়েছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ, আটচল্লিশের ফেব্রুয়ারিতে। অথচ, আজ মানুষটা বিস্মৃত। তবে আমরা তাকে মনে রাখি বা না রাখি, তিনি ভাষা সংগ্রামের প্রথম সৈনিক হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন ইতিহাসের পাতায়.

0 comments

コメント


Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

lgbt-bangladesh.png
bottom of page