দ্বিতীয় অধ্যায় সাংখ্য – যোগ
শ্লোক ০১
তং তথা কৃপয়াবিষ্টমশ্রুপূর্ণাকুলেক্ষণম্।
বিষীদন্তমিদং বাক্যমুবাচ মধুসূদনঃ।।১।।
তম্ –অর্জুনকে ; তথা―এভাবে ; আবিষ্টম্―আবিষ্ট হয়ে; ঈক্ষণম্―চক্ষু ; বিষীদন্তম্―অনুশোচনা করে ; ইদম্― এই ; বাক্যম্ কথাগুলি ; উবাচ― বললেন ।
অনুবাদঃ সঞ্জয় বললেন― অর্জুনকে এভাবে অনুতপ্ত , ব্যাকুল ও অশ্রুসিক্ত দেখে , কৃপায় আবিষ্ট হয়ে মধুসূদন বা শ্রীকৃষ্ণ এই কথাগুলি বললেন।
তাৎপর্যঃ জাগতিক করুণা , শোক ও চোখের জল হচ্ছে প্রকৃত সত্তার অজ্ঞানতার বহিঃপ্রকাশ । শাশ্বত আত্মার জন্য করুণার অনুভব হচ্ছে আত্ম উপলব্ধি । এই শ্লোকে ' মধুসূদন' শব্দটি তাৎপর্যপূর্ণ । শ্রীকৃষ্ণ মধু নামক দৈত্যকে হত্যা করেছিলেন এবং এখানে অর্জুন চাইছেন , অজ্ঞতারূপ যে দৈত্য তাঁকে তাঁর কর্তব্যকর্ম থেকে বিরত রেখেছে , তাকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হত্যা করুন।

মানুষকে কিভাবে করুণা প্রদর্শন করতে হয় , তা কেউই জানে না । যে মানুষ ডুবে যাচ্ছে , তার পরনের কাপড়ের প্রতি করুণা প্রদর্শন করাটা নিতান্ত ই অর্থহীন। তেমন ই , মানুষ ভবসমুদ্রে পতিত হয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে , তার বাইরের আবরণ জড় দেহটিকে উদ্ধার করলে তাকে উদ্ধার করা হয় না। এই কথা যে জানে না এবং যে জড় দেহটির জন্য শোক করে , তাকে বলা হয় শূদ্র , অর্থাৎ যে অনর্থক শোক করে । অর্জুন ছিলেন ক্ষত্রিয় , তাই তাঁর কাছ থেকে এই ধরনের আচরণ আশা করা যায় না। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মানুষের শোকসন্তপ্ত হৃদয়কে শান্ত করতে পারেন, তাই তিনি অর্জুনকে ভগবদ্গীতা শোনালেন। গীতার এই অধ্যায় জড় দেহ ও চেতন আত্মার সম্বন্ধে বিশদভাবে আলোচনার মাধ্যমে পরম নিয়ন্তা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন― আমাদের স্বরূপ কি , আমাদের প্রকৃত পরিচয় কি । পারমার্থিক তত্ত্বের উপলব্ধি এবং কর্মফলে নিরাসক্তি ছাড়া এই অনুভূতি হয় না।