দুই সমুদ্রের পানি একত্রিত না হওয়া কুরআনের মিরাকল?
মুসলিম এপোলোজিস্টরা দাবি করেন, কুরআন ৫৫:১৯-২০ এবং কুরআন ২৫:৫৩ প্রমাণ করে যে কুরআন অলৌকিক গ্রন্থ।
আসুন তাদের দাবীগুলো আগে জেনে নিই,
আধুনিক বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, যেসব স্থানে ভিন্ন দুটি সমুদ্র মিলিত হয়েছে সেসব স্থানে দুটি সমুদ্রের মাঝে (অদৃশ্য) অন্তরাল রয়েছে, যা ঐ সমুদ্র সমূহের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করে এবং উভয়ের মাঝে নিজ নিজ গভীরতা, লবণাক্ততা ও ঘনত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, ভূমধ্যসাগর তারেক পাহাড় বা জিব্রাল্টার হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে। তা প্রায় ১০০০ মিটার গভীরতাসহ আটলান্টিক মহাসাগরের ভেতরে কয়েকশো মাইল পর্যন্ত বয়ে গেছে। অথচ, তার ভেতরে বর্তমান রয়েছে নিজ নিজ তাপমাত্রা, লবণাক্ততা ও ঘনত্ব।
এসব সমুদ্রে উত্তাল তরঙ্গমালা, প্রবল স্রোত এবং জোয়ারভাটা থাকা সত্ত্বেও তাদের পানি একত্রিত হয় না এবং তাদের মধ্যকার অন্তরালকে অতিক্রম করে না।
আল্লাহ্ তা’আলা এই অন্তরালের ব্যাপারে বলেন, পাশাপাশি বয়ে যাওয়া দুই সমুদ্র তাদের মধ্যকার অন্তরালকে অতিক্রম করে না।
সূরা আর-রাহমান আয়াত ১৯
مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ
মারাজাল বাহরাইনি ইয়ালতাকিয়া-ন।
তিনি পাশাপাশি দুই দরিয়া প্রবাহিত করেছেন।
সূরা আর-রাহমান আয়াত ২০
بَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لَا يَبْغِيَانِ
বাইনাহুমা-বারঝাখুল লা-ইয়াবগিয়া-ন।
উভয়ের মাঝখানে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করে না।
তবে কুরআনে যখন মিষ্টি ও লবণাক্ত পানির ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে তখন উভয়ের মধ্যকার অন্তরালের সাথে সাথে ‘প্রতিবন্ধক বাধা’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ্ বলেন,
সূরা আল-ফুরকান আয়াত ৫৩
وَهُوَ الَّذِي مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ هَٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ وَهَٰذَا مِلْحٌ أُجَاجٌ وَجَعَلَ بَيْنَهُمَا بَرْزَخًا وَحِجْرًا مَحْجُورًا
ওয়া হুওয়াল্লাযী মারাজাল বাহরাইনি হা-যা-‘আযবুন ফুরা-তুওঁ ওয়া হা-যা-মিলহুন উজা-জুওঁ ওয়া জা‘আলা বাইনাহুমা-বারঝাখাওঁ ওয়া হিজরাম মাহজূরা-।
তিনিই সমান্তরালে দুই সমুদ্র প্রবাহিত করেছেন, এটি মিষ্ট, তৃষ্ণা নিবারক ও এটি লোনা, বিস্বাদ; উভয়ের মাঝখানে রেখেছেন একটি অন্তরাল, একটি দুর্ভেদ্য আড়াল।
কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, “কেন আল্লাহ্ তা’আলা মিষ্টি ও লবণাক্ত পানির মধ্যকার অবস্থা সম্পর্কে অন্তরালের সাথে পর্দা তথা বাধার কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু দুই সমুদ্রের মাঝখানের অবস্থা সম্পর্কে অন্তরালের সাথে বাধার কথা উল্লেখ করেননি?”
আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, নদী সমূহের একত্রিত হওয়ার স্থান তথা মোহনায় যেখানে মিষ্টি ও লবণাক্ত পানি মিলিত হয় সেখানকার অবস্থা দুই সমুদ্রের পানির মিলিত হওয়ার স্থানের অবস্থা থেকে ভিন্ন হয়। প্রমাণিত হয়েছে যে, মিষ্টি পানি ও লবণাক্ত পানির ঘনত্বে রয়েছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য; যা তাদের দুটি স্তরকে মিশে যাওয়া থেকে বাধা প্রদান করে। আর এই পার্থক্যস্থলের লবণাক্ততার মাত্রা বাকি অংশের মিষ্টি ও লবণাক্ত পানির বৈশিষ্ট্য থেকে ভিন্ন হয়।
চিত্রটি মোহনাস্থলের লবণাক্ততার মাত্রা দেখাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে এটা আবিষ্কৃত হয়েছে অত্যাধুনিক তাপ, লবণ, ঘনত্ব এবং অক্সিজেন মাপক যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা চালানোর পর। কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় দুই সমুদ্রের মধ্যকার সেই বাধাকে খালি চোখে দেখা। সেসব দেখলে আমাদের কাছে মনে হবে, সমুদ্র একটিই, দুটি নয়। অনুরূপভাবে, নদী ও সমুদ্রের মোহনাকে মিষ্টি পানি, লবণাক্ত পানি এবং প্রতিবন্ধক এই তিনটি ভাগে ভাগ করা অসম্ভব। (১)
জবাব:
ভূমধ্যসাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগর বা যেকোনো দুটি সমুদ্রের একত্রিত হওয়ার স্থানে তাদের পানি একে অপরের সাথে মিশে না তাদের ঘনত্ব, লবণাক্ততা এবং তাপমাত্রার ভিন্নতার কারণে। তবে এই না মেশার ঘটনাটি স্থায়ী নয়। ভিন্ন ঘনত্ব, লবণাক্ততা এবং তাপমাত্রার পানি এক সময় একে অপরের সাথে মিশে যায়। ঘটনাটি সাময়িক এবং কেবল তখনই পর্যবেক্ষণযোগ্য যখন দুই সমুদ্রের পানি মিলিত হয়। এটা একটি কফির কাপে দুধ ঢালার মতো। যে কেউই দেখতে পারেন যে কফির কাপে দুধ ঢালা হলে দুধকে সাময়িক সময়ের জন্য কফি থেকে আলাদা মনে হয় এবং এক সময় তারা মিশে পুরোপুরি এক হয়ে যায়। কুরআন যেখানে বলে দুই সমুদ্রের পানি তাদের মধ্যকার অন্তরায় বা বাধা অতিক্রম করতে পারে না সেখানে প্রকৃতপক্ষে ঘনত্ব, লবণাক্ততা এবং তাপমাত্রার ভিন্নতার কারণে দুই সমুদ্রের পানি না মিশলেও একসময় তারা মিশে যায় আর এটি নিঃঃসন্দেহেই কুরআনের ভুল।
নদীর পানি যখন সমুদ্রের পানির সাথে মিলিত হয় তখন তা সমুদ্রের পানির মধ্যে মিলিয়ে যায় বা একত্রিত হয়ে যায়। নদী এবং সমুদ্রের মিলিত হওয়ার স্থান বা মোহনায় যা ঘটে কুরআন পুরোপুরি তার বিপরীত তথ্য দেয়। মোহনায় যেখানে নদীর মিষ্টি হালকা পানি সমুদ্রের লবণাক্ত ভারী পানির সাথে মিশে যায় সেখানে কুরআন দাবি করে, নদী ও সমুদ্রের পানির মিলনস্থলে রয়েছে এক দুর্ভেদ্য দেয়াল বা বাধা, যা ভেদ করে নদীর পানি সমুদ্রে মিশে যেতে পারে না বা সমুদ্রের পানি নদীতে মিশে যেতে পারে না। পরিষ্কারভাবেই কুরআন যা বলে তা মিরাকল নয় বরং, বৈজ্ঞানিক ভুল। নদীর মিষ্টি এবং সমুদ্রের লবণাক্ত পানির মিলনস্থলে উভয় ধরনের পানির মিশ্রণ পাওয়া যায়। ইসলামিস্টরা বলেন এবং বলবেন যে এই উভয় ধরনের পানির মিশ্রণই নদীর পানি এবং সমুদ্রের পানির মিলনস্থলে থাকা দুর্ভেদ্য দেয়াল বা বাধা, যা খুবই হাস্যকর। নদী এবং সমুদ্রের পানির মিলনস্থলের উভয় ধরনের পানির মিশ্রণই প্রমাণ করে যে তারা কোনো বাধার কারণে একে অপর থেকে পৃথক থাকে না এবং মিশে যায়।
সূরা আর-রাহমান এর ১৯ এবং ২০ নং আয়াত কিংবা সূরা আল-ফুরকান ৫৩ নং আয়াত প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে এই ঘটনা কি আরবদের কাছে অজানা ছিলো? না। কারণ এই ঘটনা একটি পর্যবেক্ষণযোগ্য ঘটনা। একজন মানুষ যিনি দুটি ভিন্ন রঙের নদী বা দুটি সমুদ্র মিলিত হতে দেখেছেন তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথক থাকতে দেখতে পারেন। নদী ও সমুদ্রের ব্যাপারে এই তথ্যটি সকল নাবিকের জানা ছিলো এবং এটাই স্বাভাবিক যে এই প্রাকৃতিক ঘটনার ব্যাপারে মানুষের জ্ঞান ছিলো। তাই কুরআনের কথায় মিরাকলের কিছু নেই।
পৃথিবীর বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক সংস্থা নাসা ( National Aeronautics and Space Administration (NASA), ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা। এই সংস্থা পৃথিবীর মহাসাগরগুলোর পানির গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণের জন্য অতি ক্ষুদ্র কিছু কনা বিভিন্ন পানিতে ছেড়ে দিয়েছিল। যেই কনাগুলো স্যাটেলাইটের কাছে সিগন্যাল প্রেরণ করে, যার মাধ্যমে বিজ্ঞানীগণ পৃথিবীর সমুদ্রগুলোর পানির চলাচল, সেগুলোর গতি প্রকৃতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পান। সেই কনাগুলোর চলাফেরা থেকে সহজেই বোঝা যায়, সমুদ্রের পানি মেলে নাকি মেলে না। পানি যদি না মিশতো, তাহলে কণাগুলোর গতি পর্যবেক্ষণ করলেই দেখা যেত, কোন নির্দিষ্ট জায়গায় সেগুলো গিয়ে থেমে যাচ্ছে। আসুন দেখে নিইঃ
যথার্থ লিখেছেন দাদা…
অসাধারণ লিখেছেন ।
খুবই চমৎকার লিখেছেন…
দুর্দান্ত
আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক কিছু সম্পর্কে জানতে পারলাম